তারিখ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

বাবা জানে না,আজ বাবা দিবস

বাবা জানে না,আজ বাবা দিবস
[ভালুকা ডট কম : ২০ জুন]
রোববার। ২১জুন ২০১৫। জন্মদাতা পিতার সম্মানে বাবা দিবস। এ দিবসে কিছুই লিখা হয়নি। গতবছর যা লিখেছিলাম। প্রকাশ হয়নি তাই আজ প্রকাশ করছি।

আর মাত্র দিন বাকী। বারবার শ্বাস-প্রশ্বাস, বাড়ছে-কমছে। ষাটোর্ধ্ব সেই মানুষ। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। চোখে পানি ঝরছে। বাঁচাও-বাঁচাও বলে কাতরাচ্ছেন। আমি হতবিহ্বল। এ ডাক্তার, ও ডাক্তারকে ফোন দিচ্ছি। ওষুধ বদলাচ্ছি। থামছে না শ্বাসকষ্ট। অসহায় আমরা। বাবার শরীর কাঁপচ্ছে। ঝাপটে ধরেছি আমি। তখন আমিও কাঁদছি। এবারের বাবা দিবসে কী? বাবাকে হারাতে হবে?  তবু শান্তনার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছি। একটু ধৈর্য্য ধরুন।

পাল্টানো হলো ওষুধ। স্নেহের চোখ। আদরের হৃদয়। ভালোবাসার সেই বাবা আমার চোখের পানি দেখতে পেলেন। আমার শত চেষ্টা ব্যর্থ। নিজের চোখের পানি আড়াল করতে পারলাম না। আমার সঙ্গে যোগ দিলেন আমার সহধর্মিনীও। একটু শান্ত হলো শ্বাসকষ্ট। বাবা বিছানায় শুয়ে পড়লেন।

পাশে বসেই বাবার স্মৃতি কথা ভেসে আসছিল। গভীর রাত। বাবা আমাদের ঘুমাতে বললেন। আমি পাশেই ঘুমালাম। এভাবেই কেটে গেল ৩/৪টি দিন। এলো রোববার। জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ। ১৬জুন ২০০৪। বাবা দিবস। শ্বাসকষ্টের সেই আক্রমণ এখনও থামেনি। তবে আজকের আক্রমণ মনুষ্যের। যেতে হবে জেলা শহর ময়মনসিংহ। কোর্টের কাটগড়ায় আমি, বাবা আর পরিবারের সবাইকে নিয়ে হাজির হলাম। আমরা সবাই আসামী। বাদি পক্ষের সাক্ষি হচ্ছে। এ দিন না গেলে বাবার নামে, নিয়ম অনুযায়ী গ্রেফতারি পরোয়ানা হতো। এ জন্যই বাবাকে নিয়ে গেলাম। সোজা হয়ে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। শ্বাসকষ্টে কাঠগড়ায় ঠিকতে পারছিলেন না।

চোখ এড়ালো না বিজ্ঞ বিচারক নাঈম ফিরোজের, তিনি উপলদ্ধি করলেন। মমতা, মানবিক আর ন্যায় বিচারের যিনি কা-ারি। আদেশ দিলেন কাঠগড়া থেকে বেড়িয়ে যেখানে ভালো লাগে এমন স্থানে বসতে। নিচে নেমে, একটি বেঞ্চে বসলেন। তখনও শ্বাসকষ্ট থাকছে না।

এরপূর্বেই আমার মনুষ্যত্ব শূন্যের কোটায়। বনের হিংস্র পশুর মতো চিন্তা করতে লাগলাম। প্রতিহিংসা মনের ভিতর প্রতিশোধের স্পিহা জাগিয়ে তুলল। কিছু না করেই যদি এখানে আসতে হয়, কিছু করে আসব! বাবার শরীর কঙ্গালসার। শ্বাসকষ্টের আক্রমণে নুয়ে পড়েছে জীবনটা। যে মানুষটা মঞ্চে উঠে উচ্চ কন্ঠে নাটকের সংলাপ দেন, সেই মানুষটি কোন কথা বলতে পারছেন না। পাশে ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত চাচার একই অবস্থা। দীর্ঘ সময় সাক্ষির জেরা হলো। আমরা সবাই কাঠগড়া থেকে নেমে এলাম। সেদিন ভুলে গেলাম, বাবাকে উপহার দেয়ার বিষয়টি।

নিচে নেমে চা পান শেষে সবার সাথে নানা বিষয়ে কথা হলো। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যে পশুত্ব ভাবনা এসেছিল, তা মুছে যেতে লাগল। বাড়িতে এসে সব ভুলে গেলাম। সন্ধ্যায় বাবার জন্য একটি নূতন লুঙ্গি কিনে, উপহার দিলাম। বাবা বললেন, আমারতো অনেক লুঙ্গি আছে। কেন এনোছো, বাবা জানে না, আজ বাবা দিবস।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

কলাম বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই