তারিখ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

পবিত্র কুরআন নিয়ে গবেষণা করেই মুক্তির পথ পেয়ে যাই

পবিত্র কুরআন নিয়ে গবেষণা করেই মুক্তির পথ পেয়ে যাই
[ভালুকা ডট কম : ১৯ জুন]
ন্যায়বিচার, শান্তি, বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব এবং চারিত্রিক ও নৈতিক সৌন্দর্য মানুষের প্রকৃতিগত আরাধ্য বিষয়। আর এসব বিষয় ইসলামী শিক্ষা ও আইনের ছায়াতলে পাওয়া যায় বলেই মানব জাতির মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে এই মহান ধর্ম। পাশ্চাত্য ইসলামকে উগ্র ও সহিংসতাবাদী ধর্ম বলে তুলে ধরার চেষ্টা করলেও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এটা বুঝতে পারছেন যে, ইসলাম শান্তি, ভ্রাতৃত্ব, সাম্য, মুক্তি ও সৌভাগ্যের ধর্ম এবং এ ধর্ম মানুষের প্রকৃতিগত চাহিদাগুলো মেটাতে পারে।

বেলজিয়ামে অবস্থিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জরিপ সংস্থা সি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১১ সালে ইউরোপে ইসলামে দীক্ষিতের হার ছিল শতকরা ১৭। অতীতের যে কোনো বছরের তুলনায় ইউরোপে ইসলামে দীক্ষিতের এই হার ছিল সবচেয়ে বেশি।

ফ্রান্সের জনমত জরিপ সংস্থা ‘আইএফওপি’ ইউরোপের সবচেয়ে বড় গবেষণা সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম। সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, “গত দশ বছরে ইউরোপের বিপুল সংখ্যক মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। ব্রিটেন, জার্মানি, হল্যান্ড ও ফ্রান্সের বিপুল সংখ্যক নাগরিক ইসলামকে ইউরোপের চিরাচরিত খ্রিস্টান পরিচিতির প্রতি হুমকি বলে মনে করা সত্ত্বেও এবং ইউরোপের ইসলামীকরণের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়া সত্ত্বেও এই মহাদেশে ইসলামে দীক্ষিতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের ৩৫ বছরের কম বয়সী যুব সমাজের একটা বিশাল অংশ মনে করেন ইসলাম তাদের জীবনের সাংস্কৃতিক দিক জোরদার করছে। তাদের মতে, ইসলাম ইউরোপকে এমন এক নতুন যুগে উন্নীত করতে পারে যার অভিজ্ঞতা ইউরোপ অতীতে কখনও লাভ করেনি।”

মার্কিন নও-মুসলিম “অ্যারোন সেলার্স” মনে করেন আল্লাহ চেয়েছিলেন বলেই তিনি মুসলমান হতে পেরেছেন। কারণ, আল্লাহই মানুষের অন্তরে বিপ্লব সৃষ্টি করেন এবং মানুষকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেন। কয়েকটি মানসিক বা আত্মিক ঘটনার পর খ্রিস্টান পরিবারে বড় হওয়া সেলার্স একটি আশ্রয়ের প্রয়োজন অনুভব করছিলেন। তিনি বলেছেন, “শৈশবে জন্ম নেয়ার সময়েই আল্লাহ-পরিচিতির প্রথম বীজ বোনা হয়েছিল আমার অস্তিত্বের মধ্যে। মা বাইবেলের কাহিনীগুলো শোনাতেন ছোটবেলায়। কিন্তু কৈশোর শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের লগ্নে শৈশবের সেই আধ্যাত্মিক শিক্ষার রঙ্গ ম্লান হয়ে গিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটা জায়গা যেখানে হয় ধর্মীয় পরিমণ্ডলে বড় হওয়ার সুবাদে অর্জিত ধর্মীয় জীবন সবাই ভুলে যায়, কিংবা আমার মত সেই জীবনকে সাময়িকভাবে স্থগিত রাখে। এরপর হোস্টেল বা ছাত্রাবাসে রাত জাগা, লাগামহীন জীবন, মদ ও পার্টির সহজলভ্যতা-এসবই জীবনকে সংকীর্ণ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে গির্জাও ছিল না বলে তা নিয়ে আগ্রহও জাগত না। ফলে রোববারগুলো হয়ে উঠেছিল অন্য দিনগুলোর মতই।”

অ্যারোন সেলার্স আরো বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে শিখেছি অনেক কিছুই, তবে একটি শিক্ষার অভিজ্ঞতা হয়েছিল মৃত্যুর মুখোমুখি অবস্থায়। অপ্রত্যাশিত সেই সময়ে শরীর ও মনের সব শক্তি ক্ষয়ে আসছিল এবং আত্মহত্যাকেই সমস্যার একমাত্র সমাধান বলে ভাবছিলাম। জীবনে আর কখনও এতটা শূন্যতা অনুভব করিনি। আমার অবস্থা ছিল যেন হযরত মুসা (আ.) ও বনি-ইসরাইলের মত যাদের পেছনে ছিল ফেরাউনের সেনাদল ও সামনে নীল নদ এবং বুঝতে পারছিলাম না যে কিভাবে দরিয়া পাড়ি দেব। ফলে মুসা (আ.)’র মত প্রার্থনার হাত তোলা ছাড়া আমারও কোনো উপায় ছিল না।”

মার্কিন নও-মুসলিম অ্যারোন সেলার্স আরো বলেছেন, “জীবনের অর্থহীনতা, উদ্দেশ্যহীনতা ও শূন্যতার ধারণা যখন আমাকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিচ্ছিল তখন আবারও ওয়াশিংটনে আমার কৈশোরের সেই গির্জায় ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার মধ্যে আবারও ধর্ম-বিশ্বাস জোরালো হওয়ায় আত্মহত্যার চিন্তা বাদ দেই। মনে হয় স্বল্প সময়ের জন্য আত্মহত্যার সেই চিন্তাটা এসেছিল স্রস্টা বা আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার জন্যই। পরিবর্তিত এ অবস্থা আমার মধ্যে জীবনের নতুন লক্ষ্য সৃষ্টি করে ও বেড়ে যায় আমার উতসাহ। বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়ে কোনো ধরনের পূর্বানুমান বা অযৌক্তিক ভাবাবেগমুক্ত আচরণ করতে লাগলাম। আমার মনে হয় আমার এই অবস্থার কারণেই নিরেট সত্য তথা ইসলাম গ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল আমার মনের মধ্যে।”

মার্কিন নও-মুসলিম অ্যারোন সেলার্স নিতান্ত কৌতূহল বা আনন্দের জন্যই বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করেন। প্রথমেই ‘মানুষের ধর্ম’ শীর্ষক বইটি তার হাতে আসে। বইটির প্রথম অধ্যায়ে ইসলাম সম্পর্কিত আলোচনা সেলার্সকে স্তম্ভিত করে। এ আলোচনায় উল্লেখিত ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্মের মধ্যে ব্যাপক সম্পর্ক তার কাছে ছিল অবিশ্বাস্য। বইটির ওই অধ্যায়ে প্রামাণ্য তথ্য তুলে ধরে বলা হয় যে ইসলাম হযরত ইব্রাহিম (আ.)’র আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত সত্য ধর্ম। আর এই ধর্ম প্রচারিত হয়েছে ওই মহান নবীর বড় ছেলে হযরত ইসমাইল (আ.)’র বংশধর হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র মাধ্যমে। এইসব তথ্য ইসলাম সম্পর্কে আরো গভীরভাবে জানার আগ্রহ জাগিয়ে তোলে সেলার্সের মধ্যে। এরপর তিনি বৌদ্ধ, হিন্দু, ইহুদি ও অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে পড়াশুনার সিদ্ধান্ত নেন। বৌদ্ধ ধর্মে পার্থিব জীবনকে খুব বেশি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়েছে, অন্যদিকে পরকাল সম্পর্কেও এ ধর্মের স্পষ্ট বক্তব্য নেই। হিন্দু ধর্মে ইবাদত বা উপাসনা খুবই অগোছালো প্রকৃতির এবং এসব উপাসনার কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট পরিকাঠামো নেই। এ ছাড়াও হিন্দুদের ইশ্বর বা উপাস্যগুলো অনবরত বিভিন্ন রূপ ধারণ করেন।

সেলার্সের কাছে ইহুদি ধর্মের মূলনীতিগুলোকে সঠিক মনে হয়েছিল, তবে ধর্মটির মধ্যে খুব মাত্রাতিরিক্তভাবে জাতিগত বিদ্বেষও তার চোখে পড়েছে। অন্যদিকে ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস বা চিন্তাধারা ও আচার-অনুষ্ঠানগুলো তার কাছে সত্যিকার অর্থেই বিশ্বজনীন বলে মনে হয়েছে। তা সত্ত্বেও সে সময় পর্যন্ত সেলার্সের কাছে ইসলাম সম্পর্কে যেসব তথ্য ছিল তা ধর্মান্তরের জন্য যথেষ্ট ছিল না বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু পবিত্র কুরআন পড়ার পর এ মহাগ্রন্থের বক্তব্য তার কাছে এমন জ্যোতির্ময় আলো বলে মনে হয়েছে যে মনে-প্রাণে মুসলমান হওয়ার জন্য খুব একটা দূরত্ব আর অবশিষ্ট থাকেনি।

মার্কিন নও-মুসলিম “অ্যারোন সেলার্স” সঙ্গীত সামগ্রীর একটি দোকানে চাকরি করতেন। একদিন এক পুরোনো ও স্থায়ী ক্রেতা তাকে ইংরেজীতে অনুদিত পবিত্র কুরআনের একটি কপি উপহার দেন। “অ্যারোন সেলার্স” এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “কুরআন পেয়ে আমি খুব পুলক অনুভব করেছিলাম। দেরি না করেই কুরআনের মাঝামাঝি যায়গা খুললাম যাতে হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কিত আয়াত পড়া যায়। আমি হযরত ঈসা (আ.)’র ভালোবাসা নিয়ে বড় হয়েছিলাম। তাই কুরআন এ মহাপুরুষ সম্পর্কে কি বলে তা জানার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল। মনে মনে বললাল, কুরআনে যদি ঈসা (আ.)-কে কোনোভাবে সমালোচনা করা হয় বা তার ওপর অনাস্থা আনা হয় তাহলে কুরআন পড়া বন্ধ করে দেব এবং ইসলাম নিয়ে আমার আর কোনো আগ্রহই থাকবে না। কিন্তু কুরআনে পড়লাম, আল্লাহ কেবলই এক, তাঁর কোনো শরিক নেই ও নেই কোনো তুলনা এবং ঈসা (আ.) আল্লাহর একজন নবী ও বান্দা বা দাস। এভাবে কুরআনে অত্যন্ত সম্মানজনকভাবে ঈসা (আ.)’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে দেখে কুরআন অধ্যয়নের ও ইসলাম সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। বেশ কিছু দিন ধরে গভীর পড়াশুনা, আলোচনা ও গবেষণায় মেতে রইলাম। আমার আত্মাই শুরু করেছিল নানা প্রশ্নের জবাব খোঁজার কাজ। চাচ্ছিলাম সত্য স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত অনুসন্ধান ও গবেষণা অব্যাহত রাখব যাতে নিশ্চিত হতে পারি যে ইসলামকে সঠিকভাবেই বুঝতে পারছি। ফলে পবিত্র গ্রন্থ সম্পর্কে আরো গভীরভাবে পর্যালোচনা বা পুনর্মূল্যায়ন শুরু করি এবং মুক্তির পথ পেয়ে যাই।”

পবিত্র কুরআনের সুরা ইউনুসের ৫৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবাণী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং এতে রয়েছে অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত বিশ্বাসী বা মুসলমানদের জন্য।

কুরআনের এই আয়াত পড়ার পর নিজের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন অনুভব করেন সেলার্স। আর এ সময়ই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বাসার অদূরে অবস্থিত মসজিদে গিয়ে সাক্ষ্য দেন যে, এক আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ বা উপাস্য হওয়ার যোগ্য কেই নেই, মুহাম্মাদ (সা.) মানবজাতির জন্য তাঁর সর্বশেষ নবী এবং কিয়ামত বা পুনরুত্থানের আগ পর্যন্ত কুরআন সর্বশেষ খোদায়ী গ্রন্থ বা ওহি। যখন ঘরে ফিরে এলেন তখন অনুভব করছিলেন অপার প্রশান্তি। সেদিনই জীবনে প্রথমবারের মত প্রকৃত প্রশান্তি অনুভব করেছিলেন বলে সেলার্স উল্লেখ করেন।

ধীরে ধীরে জোরদার হল তার ঈমান। আর ইসলামী বিধানগুলো মেনে চলতে চলতে তিনি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, “পশ্চিমা প্রচারণার বিপরীতে ইসলাম নরঘাতক ও সন্ত্রাসী গড়ে তোলে না। বরং ইসলাম মানুষ ও প্রকৃতির এবং জানা ও অজানা সব সৃষ্টির আসল ধর্ম। যারা আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করে শান্তি ও সৌভাগ্যের সন্ধান করে তারাই মুসলমান।” “আর এভাবেই আমি সত্যিকারের সাফল্য ও মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছি” বলে মার্কিন নও-মুসলিম সেলার্স উল্লেখ করেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ইসলামীক বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই