তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

রাণীনগরে থাই জাতের পিয়ারা চাষ করে স্বাবলম্বী শফিকুল

রাণীনগরে থাই জাতের পিয়ারা চাষ করে স্বাবলম্বী শফিকুল
[ভালুকা ডট কম : ১১ আগস্ট]
দেশের উত্তর জনপদের ধান উৎপাদনের জেলা নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় অন্যান্য কৃষি ফসলের পাশাপাশি মুখরোচক বাংলার আপেল খ্যাত ভিটামিন সি’তে ভরপুর রসালো ফল থাই জাতের পিয়ারা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুড়ালেন উপজেলার শিয়ালা গ্রামের মৃত সায়েদার রহমানের শিক্ষিত ছেলে একেএম শফিকুল ইসলাম রবু (৪৮)।

শফিকুলের পিয়ারা বাগানে গেলে চোখ ফিরাতে মন চায়না। ছোট-বড় সুবজ গোল আকৃতির পিয়ারা প্রায় প্রতিটি গাছে নিচ থেকে কান্ড পর্যন্ত ধরে আছে। দিন যতই যাচ্ছে ততই আকৃতিতে বড় হয়ে ওজন বাড়ার সাথে সাথে মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুখোরচক ফল হিসেবে স্থাণীয় বাজার সহ দেশে বিদেশে সর্বত্রই এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পিয়ারা চাষের শুরুতে কৃষক শফিকুল খুব ভাল করতে না পারলেও হাল ছেড়ে না দিয়ে এর প্রসার বৃদ্ধি লক্ষ্যে বেশি লাভের আশায় বানিজ্যিক ভাবে পিয়ারা চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন তিনি।

১৯৮৯ সালে ডিগ্রী পরীক্ষায় উর্ত্তীন্ন হতে না পেরে কিছুটা হতাশায় পরিবারের লোকজনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রথমে তিনি পেঁপে, করলা, ঢেঁড়শের আবাদ শুরু করলেও আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় স্থানীয় কৃষি বিভাগের প্রত্যক্ষ পরামর্শ ও সহযোগীতার অভাবে বানিজ্যিক ভাবে সে সফল হতে না পেরে ২০১৩ সালে তার বড় ভাই প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের পরামর্শে তাদের পৈত্রিক ২বিঘা জমিতে প্রায় ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট করে পিয়ারা সহ অন্যান্য শাক-সবজি চাষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সবজি চাষে কোন রকমে পুঁজি ফেরত পেলেও পিয়ারা চাষে ভাল ফলন হওয়ায় এক বছরে আশানুরুপ লাভ করে পিয়ারা চাষে শফিকুল এখন স্বাবলম্বী।

জানা গেছে, উপজেলার একডালা ইউনিয়নের শিয়ালা গ্রামের মৃত-সায়েদার রহমানের তৃতীয় ছেলে একেএম শফিকুল ইসলাম রবু (৪৮)। পড়ালেখা পুরোপুরি শেষ করতে না পারলেও ১৯৯২ সালে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু সংসার জীবনে বেকারত্বের অভিশাপের বেড়াজালে কঠিন এক মহুর্তে নিজ ইচ্ছায় ৯৬ সালে প্রতারক এক আদম ব্যাপারির খপ্পরে পড়ে মালোয়েশিয়ায় পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রায় ৬মাস ধরে মানব পাচার দালাল চক্রের প্রভাবশালী সদস্যরা থাইল্যান্ডের জঙ্গলে আটকে রেখে পুণরায় অতিরিক্ত টাকার দাবি করলে সেটাও পরিষদ করে কোনো ভাবে মালোয়েশিয়ায় পৌঁছলেও অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে আত্নগোপনে থাকা অবস্থায় অনেক চেষ্টা করে উপযুক্ত কাজকর্ম হাতে না পেয়ে আর্থিক তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা তার ভাগ্যে জোটেনি। খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টের এক পর্যায়ে দেড় বছরের মাথায় দেশে ফিরতে হয়েছে তার। এর পর সংসার জীবনে আবারও অন্ধকার।

পারিবারিক পরামর্শে ২০০০সালের দিকে নিজের দু’টি পুকুর ও অন্যের দু’টি পুকুর ১লক্ষ টাকায় লীজ নিয়ে মাছ চাষের মধ্য দিয়ে ভাগ্য বদলের চেষ্টায় মাছ চাষসহ পুকুরের পার্শ্বের জমিতে পেঁপে, ঢেঁড়শ, করলা নানা জাতের শাকসবজি ও বগুড়ায় প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবসা শুরু করে। প্রায় এক দশক ধরে লাভ-লছের মধ্যে দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ব্যবসা চললেও বিধির বাম সেগুলোতেও সফলতা না পেয়ে উল্টো তার বড় অংকের লোকসান গুনতে হয়। জীবনের সফলতা না পেলেও হতাশায় তাকে দেবে রাখতে পারেনি।

শফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালে আমার বড় ভাই সাইফুল ইসলামের পরামর্শে পুণঃরায় জীবনের শেষ ঝুঁকি হিসেবে পৈত্রিক ২ বিঘা জমিতে প্রায় ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট করে ২০১৫ সালে অর্ধেক জমিতে পিয়ারা চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করি। সেই লক্ষ্যে প্রথমে বগুড়া জেলার মহাস্থান থেকে উন্নতমানের থাই জাতের ১শ’ ৪৮ টি ৩০ টাকা দরে পিয়ারার চারা কিনে জমি লাগাই। গাছের বয়স দুই মাসের মাথায় ফুল আসলে বাগানে নিজেসহ মাঝে মধ্যে দিন হাজিরায় ৩/৪জন শ্রমিক নিয়ে নিবিড় পরিচর্যা শুরু করেন। বৃষ্টি বাদল এবং নানান রোগবালায়ের কারণে স্থানীয় কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কারিগরি পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ করার ফলে বাগানের অবস্থা উন্নতি হওয়ায় গাছের ডালে ডালে সবুজ রং এর পিয়ারা শোভা পাচ্ছে। বর্তমানে প্রতি মণ পিয়ারা প্রায় ২ হাজার টাকা মণে জমি থেকে পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এবছর প্রথম বিক্রিতেই ভাল মূনাফার আশা করছেন। সারা বছর এই বাগান থেকে পর্যায়ক্রমে পিয়ারা বিক্রয় হবে। তখন মূনাফা বেশি আর খরচ কমিয়ে আসবে। কোন ফরমালিন কিংবা মেডিসিন প্রায়োগ ছাড়াই তার বাগানে উৎপাদিত থাই জাতের পিয়ারা গাছ থেকে নামানোর পর প্রায় ৫/৬ দিন থাকলেও ভিতরে ও বাহিরে কোন পঁচন ধরে না। খেতে খুব সুস্বাদু মিষ্টি হওয়ায় এর চাহিদা বিদেশেও রয়েছে। দেশি পিয়ারার চেয়ে বেশি গুনাগুন সর্ম্পূণ হওয়ায় স্থাণীয় জাতের চেয়ে এর দাম প্রায় তিন গুন। পিয়ারা ছাড়াও লেবু, বেদেনা, ঢেঁরশ সহ বেশকিছু শাক-সবজি চাষ করেন তিনি।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, শফিকুলের পিয়ারা বাগান খুব ভাল হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক পরামর্শ দেওয়ার কারণে যথা সময়ে ভাল পরিচর্চা করার ফলে রোগ-বালাই কম হওয়ায় থাই জাতের পিয়ারা চাষে ভাল ফলন হবে এবং ভাল মূনাফা পেয়ে ধীরে ধীরে সে স্ববলম্বী হবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

কৃষি/শিল্প বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই