তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

রাণীনগরে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে প্রভাবশালী ইউপি মেম্বারের পুকুরচুরি

রাণীনগরে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে প্রভাবশালী ইউপি মেম্বারের পুকুরচুরি
[ভালুকা ডট কম : ০৯ সেপ্টেম্বর]  
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মধুপুর গ্রামে প্রায় ৩শত ৪০টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে স্থানীয় প্রভাবশালী ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে প্রতি সংযোগের জন্য ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বর্তমানে ওই গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে পুকুর চুরি করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের মন্তব্য। যেখানে বর্তমান সরকার দেশের প্রত্যন্ত এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার অঙ্গিকারাবদ্ধ অথচ এক শ্রেণির অসাধু দালাল শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিরা গ্রামের এই সব অসহায় মানুষদের কে বিভিন্ন বাহানায় জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা আর প্রতারিত হচ্ছে গ্রামের সাধারণ মানুষ। অপরদিকে রাণীনগর বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন ওই গ্রামে গ্রাহকদের মাঝে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ এখনো প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। তাই অফিসিয়ালী টাকা নেওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।

সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা, উপজেলার কালীগ্রাম ইউপির ৬নং ওয়ার্ড মধুপুর গ্রামে প্রায় ৩শত ৪০টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে স্থানীয় প্রভাবশালী ইউপি সদস্য মো: বাচ্চু সরদার ও তার ৩ সহযোগি প্রায় ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে বিদ্যুতের পোল বাবদ প্রায় ২০ হাজার থেকে ৩০হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত ওই গ্রামে মেম্বার বিদ্যুৎ পৌছে দিতে না পারায় গ্রামবাসীদের মাঝে মিশ্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আবার অনেকেই অভিযোগ করে বলেন বাচ্চু মেম্বারের তেমন কোন সম্পদ নেই তাই সে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের নাম করে অর্থ তুলে তার নির্বাচনে ব্যয় করেছেন। সে কারণে টাকাগুলো বিদ্যুৎ অফিসে না পৌছায় আজ অবধি এই গ্রাম অন্ধকারে রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন প্রভাবশালী বাচ্চু মেম্বারকে বিদ্যুৎ আসতে দেরি হচ্ছে কেন এই প্রশ্ন করলে সে তালিকা থেকে ওই প্রশ্নকারী ব্যক্তিদের নাম বাদ দিয়েছে।

মধুপুর গ্রামের মৃত- কাজেম আলী সরদারের ছেলে হেলাল উদ্দিন ( ৪৫) জানান, আমাদেরকে দুই মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ এনে দওয়ার নাম করে বাচ্চু মেম্বার কয়েক দফায় প্রায় ৭ হাজার টাকা নিয়েছে অথচ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নতুন করে বিদ্যুৎ পৌছে গেলেও আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ আসার নামে কোন খবর নেই।

একই গ্রামের আলহাজ্ব আফছার আলীর ছেলে আফজাল হোসেন (৫৫) জানান, বাচ্চু মেম্বার ও তার সহযোগিরা আমাদের সহ গ্রামের ৩শত ৪০জন মানুষের কাছ থেকে ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা কয়েক দফায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছে। বাচ্চু মেম্বারকে এই বিষয়ে বলতে গেলে আজ নয় কাল এভাবে ছয় মাস অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত আমরা বিদ্যুৎ পাইনি। আদৌ এই গ্রামবাসীরা বিদ্যুৎ পাবে কিনা তা নিয়ে আমরা ভুক্তভুগিরা সংশয়ের মধ্যে রয়েছি।

একই গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে প্রবাসী মোত্তালেবের বাড়ি গ্রামের শেষ প্রান্তে হওয়ায় বিদ্যুতের পোল বেশি লাগার অজুহাতে তার ভাই মোকসেদের কাছ প্রায় ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে প্রভাবশালী বাচ্চু মেম্বার। এরকম একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে বাচ্চু মেম্বার প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গ্রামের অনেক অসহায় মানুষ দু:খ্য প্রকাশ করে বলেন এই সব কথা বলে কোন লাভ নেই। বাচ্চু মেম্বার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। গ্রামের এই সব অসহায় মানুষদের ঠকানোর দায়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কি কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবে । সব কিছু বাচ্চু মেম্বারের হাতের মুঠোর মধ্যে।  

এবিষয়ে বাচ্চু মেম্বারের কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনাদের যা ইচ্ছে তাই করেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খাঁন বাবলু জানান, আমি বার বার এলাকার মানুষদের বলেছি যে বিদ্যুৎ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সাথে কোন প্রকার অর্থের লেনদেন করবেন না। তবে বিষয়টি আমি জেনেছি। এই বিষয়ে আমি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

রাণীনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম মুতাসিম বিল্লাহ জানান, ওই গ্রামে সবেমাত্র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সরকারের চুক্তি মোতাবেক লাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছে। সংযোগের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। বিদ্যুৎ বিষয়ে সরাসরি অফিসে যোগাযোগ করার জন্য মাইক দিয়ে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে সচেতনতা মুলক প্রচার-প্রচারনা চালিয়েছি। তবুও কোন দালাল শ্রেণির লোক যদি এরকম প্রতারণা করে থাকে তাহলে লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

নওগাঁ জেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের জিএম এনামুল হক প্রামাণিক জানান, যেখানে বর্তমান সরকার বিনা খরচে ভুর্তকি দিয়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার জন্য অঙ্গিকারাবদ্ধ সেখানে কোন ব্যক্তি বিদ্যুৎ সংযোগের নাম বলে একটি টাকাও নেওয়ার কোন অধিকার রাখে না। যদি কোন অসাধু দালাল শ্রেণির ব্যক্তিরা বিদ্যুৎ বিষয়ের নাম ভেঙ্গে কোন প্রকারের অর্থ নিয়ে থাকে তাহলে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তর মুলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।#





সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই