তারিখ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

ভালুকায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
[ভালুকা ডট কম : ২৭ সেপ্টেম্বর]
ভালুকা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে স্লিপের টাকায় শিক্ষা সামগ্রির বাণিজ্য,স্কুল সংস্কারের টাকা,বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় টুর্নামেন্টের টাকা,আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতার টাকা,বিশেষ বরাদ্দের অর্থ আত্নসাৎ এর অভিযোগ ওঠেছে। বদলী বাণিজ্য ও অসুস্থ শিক্ষককে কর্মস্থলে যোগদান করতে না দেয়া,শিক্ষকদের নানা ভাবে হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁকে এ সব কাজে সহযোগিতা করেন অফিসের পিয়ন রতন ও তারই আস্থাভাজন কয়েক জন শিক্ষক।

জানাযায়,২০১৬ সালের সরকারী বরাদ্দ স্লিপের টাকা ফ্রেব্রুয়ারী মাসে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দের নির্দেশ থাকলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার(ইউ,ই,ও) মোহাম্মদ শহিদুজ্জামান সময় ক্ষেপন করে জুন মাসে উপজেলার ১৬৮টি প্রতিষ্ঠানে এ বরাদ্দ দেন। বিলম্বে টাকা বরাদ্দ পাওয়ায় এখনো পর্যন্ত অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষা সামগ্রী ক্রয় করতে পারেনি। যেখানে কাজের গুরুত্বের জন্য এ বরাদ্দকৃত টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় অগ্রিম বিল হিসাবে গণ্য করার নির্দেশনা দেয়। শহিদুজ্জামান সরকারী নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে প্রতি স্কুলে ৪০হাজার টাকা স্লিপের বরাদ্দ থাকলেও ৩৭হাজার ৬শত টাকা করে বরাদ্দ দেন। একই ভাবে গত ২০১৫সালে স্লিপের ৩০হাজার টাকার স্থলে ২৮হাজার ২শত টাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করেন। স্লিপের টাকা থেকে প্রতি স্কুল থেকে ২হাজার-থেকে ১৫হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন কি মাহার বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা খাতুন স্লিপের ৩৭হাজার,৬শত টাকা থেকে ১৫হাজার টাকা শহিদুজ্জামানের জন্য পিয়ন রতনকে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এসব টাকা আদায় করার জন্য বিভিন্ন ইউনিয়নের শিক্ষক প্রতিনিধিদের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে। ইউ,ই,ও এর অপকর্মের সাথে সহযোগিতা করেন বিভিন্ন ক্লাস্টারের শিক্ষক ফজলুল করিম,হারুন অর-রশিদ,তোফায়েল আহাম্মেদ,জসিম উদ্দিনসহ আরও অনেকই।

স্লিপের টাকার কিছু শিক্ষা সামগ্রী বাণিজ্য ইউ,ই,ও নিজে না করে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক,এ,ইউ,ই,ও এবং অফিসের পিয়নের সহযোগিতায় করেন। চলতি বছরের মূল্যায়নপত্র বাণিজ্য নিয়ে সদ্য বিদায়ী সহকারী শিক্ষা অফিসার আবু রায়হানের সাথে শহিদুজ্জামানের দ্বন্দ্বের সূত্র হয়। দ্বন্দ্বের কারণে মিথ্যা অভিযোগ এনে আবু রায়হানকে তিনি ভালুকা থেকে স্ট্যান্ড রিলেইজ করিয়েছেন বলে আবু রায়হান দাবি করেন। অপর এক সূত্র জানান,আস্থাভাজন শিক্ষকগণ ইউ,ই.ও কে খুশি করার জন্য চাটুকারিতা করে বিনামূল্যে সেবা দিয়ে থাকেন।

আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের পৌরসভা ও ইউনিয়নের বরাদ্দ কৃত টাকা। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুনন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় টুর্নামেন্টের সংশ্লিষ্ট ১২টি ভ্যানু স্কুলের বরাদ্দকৃত টাকা শহিদুজ্জামান আত্নসাত করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এসব খেলার ব্যয় বহন করেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণ।এ ছাড়াও প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীদের জন্য সামগ্রি ক্রয়ের বিশেষ চাহিদার গত ২০১৪,২০১৫ ও ২০১৬সালে বরাদ্দকৃত ১লাখ ৫০হাজার টাকা থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কিছু সামগ্রি কিনে দিয়েছেন। বাকি টাকার কোন হদিস নেই।

শিক্ষকদের বদলী বাণিজ্য ও প্রতিষ্ঠানের সরকারী বরাদ্দের অর্থ থেকে টাকা আদায়ের জন্য তিনি তার অফিসের পিয়ন রতনকে ব্যবহার করেন। তিনি শিক্ষকদের সরাসরি কিছু না বলে তার পিয়ন রতনকে দিয়ে তার চাহিদার কথা অবগত করান। রতনের মাধ্যমে ঘুষ আদায় করে শিক্ষক বদলী ও স্কুল মেরামত এবং স্লিপের বরাদ্দকৃত সরকারী অর্থ ছাড় দেন। টাকা হলে জৈষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে তিনি শিক্ষক বদলী করেন । প্রতিটা বদলীর ক্ষেত্রে ২০হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। এ সব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকগণ শাস্তি ও বিভাগীয় মামলার ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ।

নব্য সরকারী রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছে থেকে স্কুল মেরামতের সরকারী বরাদ্দকৃত টাকা থেকে খুব সহজে কমিশনের টাকা আদায় করে নেন। নতুন সরকারী হওয়ায় প্রধান শিক্ষকগণ ভয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের চাহিদা পূরণ করতে বাধ্য হয়েছেন। এমনটিই প্রমান মেলেছে পাচগাঁও ঢাকিরভিটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ স্কুলের বরাদ্দকৃত ১লাখ টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে শহিদুজ্জামানকে ১০হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানিয়েছে। স্কুল সংস্কারের জন্য চলতি বছর ২৪টি প্রতিষ্ঠানে ১লাখ টাকা করে বরাদ্দ হয়েছে।

ধলিয়া ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসার মনিরা রহমান গত প্রায় ১০মাস যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেই তিনি ছুটিতে আছেন না,অনুপস্থিত রয়েছেন স্বাক্ষরের ঘরে কিছুই লেখা নেই। মনিরা রহমানের স্বাক্ষরের ঘর গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখ থেকে চলতি (সেপ্টেম্বর)মাসের ১৪তারিখ পর্যন্ত সাদা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের জনৈক কর্মকর্তা বলেন,অসৎ উদ্দেশ্যেই শহিদুজ্জামান,মনিরা রহমানের স্বাক্ষরের ঘর খালি রেখেছেন।
 
পাঁচগাও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল খালেক ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পায়ে আঘাত জনিত কারণে স্কুল থেকে ছুটি নেন। তিনি প্রথমে ভালুকায় পরে ঢাকায় বারডেম এবং সবশেষ ডেলটা মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালে প্রফেসার ড.হাসান মোঃ আব্দুর রউফ এর কাছে চিকিৎসা নেন। এ পর্যন্ত তার পায়ের ৪বার অপারেশন হয়েছে এতে ৫লাখ টাকার অধিক খরচ হয়েছে। তিনি এখনো পর্যন্ত বাম পা নিয়ে হাঁটতে পারেন না। গত ২৬/০৫/২০১৬ইং তারিখ মোঃ আব্দুল খালেক ডাক্তারের (কর্মক্ষম) প্রত্যয়নপত্র নিয়ে প্রতিষ্ঠানে যোগদানের আবেদন করলে যোগদানের অনুমতি না দিয়ে শহিদুজ্জামান তাঁকে প্রতিষ্ঠানে যেতে নিষেধ করেন।
 
এক বছর যাবত অসুস্থ শিক্ষক মোঃ আব্দুল খালেক কোন বেতন না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মোঃ আব্দুল খালেকের বিষয়টি বিভাগীয় উপ-পরিচালক(ডি,ডি)অবগত হওয়ার পর ডিডি অফিস থেকে মোহাম্মদ শহিদুজ্জামানকে দুটি কারন দর্শানোর নোটিশ করেন। নোটিশের জবাবের মাঝে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তিনি বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছেন।

৮নং ডাকাতিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আতিকুজ্জামান লস্কর ভালুকা ডট কম কে জানান,আমার ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ও ক্রীড়া প্রতিযোগীতার জন্য সরকারী কোন বরাদ্দ পাইনি। আঙ্গারগাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফায়েল আহাম্মেদ বলেন,আমাকে সরকারী বরাদ্দকৃত টাকা দেয়া হয়নি, ইউ,ই,ও স্যার রেখে দিয়েছেন।

১নং উথুরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এসহাক আলী ভালুকা ডট কম কে বলেন,খেলা বাবদ আমি সরকারী কোন টাকা পাইনি, নিজের পকেটের টাকা দিয়ে খেলার সব ধরণের খরচ বহন করছি।

মেদিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফ উদ্দিন ভালুকা ডট কম কে বলেন,ক্রীড়া প্রতিযোগীতার সরকারী কোন বরাদ্দের টাকা পাইনি। আমরা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পুরস্কার ক্রয় ও খেলার ব্যয় বহন করেছি।

অভিযুক্ত শিক্ষক ফজলুল করিম সাথে কথা বললে,তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে ফজলুল করিম অডিটের কথা বলে স্লিপের টাকা থেকে অডিটের কথা বলে টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করেন। প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিনকে বারবার তার সরকারী নম্বরে ফোন করে পাওয়া যায়নি।

এ সব অভিযোগের ব্যাপারে শহিদুজ্জামান ভালুকা ডট কম কে বলেন,আমার বিরুদ্ধে অর্থ আত্নসাৎ,বিধি ভঙ্গ করে শিক্ষক বদলী, পিয়নের মধ্যমে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ সত্য নয়। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মনিরা রহমান উপস্থিত স্বাক্ষর লিপি খাতায় কোন কিছু না লিখে সাদা রাখা ও স্লিপের টাকা থেকে অগ্রিম ভ্যাট কর্তন করে রাখাটা আমার গ্যাফ রয়েছে। ক্রীড়া অনুষ্ঠানের টাকা আত্নসাতের ব্যাপারে বলেন, ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসারকে আমি টাকা দিয়ে দিয়েছি। আমি ২০১৬ সালে প্রতিবন্ধিদের বরাদ্দের টাকা পেয়েছি এবং প্রতিবন্ধিদের উপকরণ কিনে দিয়েছি।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই