তারিখ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

পত্নীতলায় ক্লিনিক,ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রমরমা ব্যবসা

লোক দেখানো অভিযান চললেও বহাল তবিয়তে চলছে তাদের ব্যবসা
পত্নীতলায় ক্লিনিক,ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রমরমা ব্যবসা
[ভালুকা ডট কম : ২৬ অক্টোবর]
নওগাঁ জেলা সদরের পরই অতিগুরুত্বপূর্ন পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও অসাধু কিছু স্টাফদের গড়ে তোলা ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চলছে রমরমা ব্যবসা। মাঝে মধ্যেই প্রশাসন সহ সিভিল সার্জনের লোক দেখানো অভিযান চললেও বহাল তবিয়তে চলছে তাদের ব্যবসা।

পত্নীতলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি কয়েকবার মা ও শিশু সেবা প্রদানে (ইওসি)তে বাংলাদেশের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ হওয়ায় স্বর্ণ পদকে ভূষিত হয়েছে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে সদর উপজেলা সহ পাশ্ববর্তি সাপাহার, পোরশা, ধামইরহাট উপজেলার রোগীরাও প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য সেবা নেয়ার জন্য এখানে আসে। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কিছু ডিপ্লোমা ধারী অসাধু ডাক্তার ও স্টাফদের কারনে দীর্ঘদিন ধরে আগত রোগীদের নাম মাত্র কিছু সেবা দিয়ে তাদেরই পরিচালিত ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দিয়ে রুগীদের হয়রানী ও প্রতারণা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরজমিনে দেখাগেছে, গত ২৪ অক্টোবর সোমবার সড়ক দূর্ঘটনায় আহত মটরসাইকেল আরোহীদের তাৎক্ষনিক সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কা জনক হওয়ায় রাজশাহীতে পাঠানো  হলেও অপর একজনের অবস্থা গুরুত্বর না হলেও জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার দুজনকেই নাম মাত্র সেবা দিয়ে রেফার্ড করে।

ঐ দিন দুপুরে হঠাৎই ঝটিকা সফরে আসেন নওগাঁ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোজাহার হোসেন বুলবুল। তিনি জরুরী বিভাগে ঢুকে রোগীদের খোজ খবর নেন। এসময় সামান্য আহত একটি রোগীকে রেফার্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে কর্তব্যরত ডাক্তারের কোন সদউত্তর না পেয়ে সিভিল সার্জন ঐ রোগীকে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সেই সেবা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। এধরনের ঘটনা প্রতিনিয়তই এই স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ঘটছে বলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন কর্তব্যরত ডাক্তারদের নানা ভৎসনা দিয়ে সঠিক চিকিৎসা সেবা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।

অপরদিকে প্রশাসনের নিরব ভূমিকা পালনের কারনে ডিপ্লোমা ধারী কমিউনিটি ডাক্তার ও পল্লী চিকিৎসকদের চলছে যেমন রমরমা ব্যবসা তেমনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরিরত স্টাফদের ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রমরমা ব্যবসায় সাধারন রোগীরা বিভ্রান্তির স্বীকার হয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিরত রোগী সহ রোগীর লোকজন অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তিরত ও আগত রুগীদের কর্তব্যরত ডাক্তাররা চিকিৎসার নামে বিভিন্ন পরিক্ষা নিরিক্ষা করার পরামর্শ দেয়ায় রোগীরা সরকারী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সেই সেসব পরীক্ষা নিরিক্ষা করার চেষ্টা করলেও স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের লোকজন সহ দালালদের খপ্পরে পড়ে তাদের বাহিরের ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য হতে হচ্ছে।

৫০শয্যা বিশিষ্ট পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রায় সব উপকরন গুলোর সুব্যবস্থা থাকলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরিরত অবস্থায় কিছু অসাধু স্টাফ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসা গড়ে তুলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারী সু-ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত করে কৌশলে রোগীদের দালাল চক্রের মাধ্যমে তাদের নিজেদের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পাঠানোয় প্রতিনিয়ত প্রতারনার স্বীকার হচ্ছে অসহায় রোগীরা। অপরদিকে দালাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঐসব অসাধু স্টাফরা এম.আর, ডিএনসি, সিজার থেকে শুরু করে অন্যান্য অপারেশনের জন্যও কৌশলে ব্যবসা ভিত্তিক ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে তোলা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে রোগীদের পাঠিয়ে তাদের এক প্রকার জিম্মি করে প্রতারিত করছে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলা সদরে গড়ে ওঠা প্রায় শতাধিক পল্লী চিকিৎসক সহ প্রায় অর্ধশত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রায় বেশির ভাগই পরিচালনা করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরিরত স্টাফরা। এরা সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে সাধারন রোগীদের নিয়ে প্রতিযোগীতা মূলক ব্যবসা শুরু করেছে। এদের কারোরই কোন প্রকার স্বাস্থ্য সেবার মানসিকতা নেই, আছে শুধু সাধারন রোগীদের নিয়ে ব্যবসার প্রতিযোগীতা।

অপরদিকে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, প্রশিক্ষন প্রাপ্ত প্যাথলজিষ্ট দ্বারা রোগীদের বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা সহ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত নার্স থাকার কথা থাকলেও এর কোন কিছুই মানা হয়না। নেই কোন অবস করন (এনেস্থেসিয়া) ডাক্তার। এমনকি অনেক সময় এসব রোগীদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অনুপস্থিতে নিজেরাই দায়সারানো সিজার সহ ছোট-খাটো অপারেশন গুলো করে থাকে বলেও রোগীদের অভিযোগ রয়েছে।

এসব ক্লিনিক গুলোতে নানা অনিয়মের মধ্যে ছোট-বড় অপারেশন করাই প্রতিনিয়তই রোগীদের জীবন পর্যন্ত হারাতে হয়। কিন্তু রাজনৈতিক ছত্রছায়াই এবং অর্থের বিনিময়ে এসব ক্লিনিকের সাথে জড়িতরা পার পেয়ে যায়। পত্নীতলায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে হাসপাতাল চলাকালীন সময়ে হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তাররা অনিয়ম করে রোগী দেখা ও ডায়াগনিস্টিক কাজ করার অপরাধে ইতিপূর্বে নওগাঁ সিভিল সার্জন কয়েকজন ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও অদ্যবধি অন্যান্য স্টাফদের অনিয়ম কোন ক্রমেই বন্ধ না হওয়ায় সাধারন রোগীরা হতাশাগ্রস্থ। রাজনৈতিক ছত্রছায়া সহ টাকার বিনিময়ে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উক্ত ক্লিনিক গুলি পরিচালিত হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ এসব ক্লিনিকে মাত্র একজন ডাক্তারই নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অবসকরন সহ অপারেশনের যাবতীয় কাজ একাই করে থাকে বলেই এধরনের দূর্ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটিয়ে চলেছে।

এবাদেও ডায়াগনিস্টিক সেন্টার গুলোতে সঠিক ভাবে কোন প্যাথলজি পরীক্ষা করা হয়না বলেও রোগীদের অভিযোগ রয়েছে। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে দালাল সহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু অসাধু স্টাফরা টাকার বিনিময়ে প্রতিদিনই রোগীদের পাঠিয়ে প্রতারনা করে চলেছে। এছাড়াও অবৈধ ভাবে এসব ক্লিনিকে এম.আর, ডি.এন.সি সহ নানা ধরনের অপকর্ম চালানো হচ্ছে বলেও স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ রয়েছে।  

এদিকে পল্লী চিকিৎসকরা নিজেদের অবস্থান ভুলে সাইনবোর্ডে শিশু চিকিৎসক, বিশেষ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহ নানা কথা লিখে রোগীদের প্রতারিত করছে। এসব পল্লী চিকিৎসকদের বেশির ভাগই সহযোগীতা করছে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। পল্লী চিকিৎসকরা নিজেদের অবস্থান ভুলে যেয়ে এসব ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের খপ্পরে পড়ে শিশু সহ বড়দের জটিল রোগের চিকিৎসা করে রোগীদের আরো অসুস্থ করে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জটিল করে তুলেছে। এসব অনিয়ম দেখার যেন কেউই নেই।

পাশাপাশি হোমিও সহ বিভিন্ন হারবাল চিকিৎসার নামে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানও রোগীদের নানাভাবে প্রতারিত করছে। এসব কবিরাজ ও হোমিও ডাক্তাররা সাধারন রোগীদের ভুল বুঝিয়ে হারবাল সহ বিদেশী হোমিও ঔষধের নামে প্রতারনা করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ইতিপূর্বে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সহ পল্লী চিকিৎসকদের আইনের আওতায় এনে কিছুটা নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করলেও বর্তমানে প্রশাসনের নিরবতার কারনে এসব মোবাইল কোর্টের তৎপরতা বন্ধ হওয়ায় পত্নীতলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও র‌্যাব-৫ জয়পুরহাট এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত উপজেলার দুটি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিশেষ অভিযান চালিয়ে অর্ধ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। নজিপুর-নওগাঁ সড়কের পালশা এলাকার ইসলামিয়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে মেয়াদ উত্তির্ন লাইসেন্স ও ক্লিনিকে কোন ডাক্তার, নার্স না থাকা সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে মেডিকেল ও ভোক্তা আইনে ৩৫ হাজার টাকা ও উপজেলা সদর নজিপুর নতুন হাট এলাকার স্কয়ার ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে মেয়াদ উত্তির্ন লাইসেন্স ও ক্লিনিকে কোন ডাক্তার, নার্স না থাকা সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে মেডিকেল ও ভোক্তা আইনে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁ সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মোজাহার হোসেন বুলবুল সোমবার আবারো ঝটিকা অভিযান চালিয়ে নজিপুর-নওগাঁ সড়কের পালশা এলাকার ইসলামিয়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং নজিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার মেছের হোমিও হল বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বন্ধ ঘোষনা করলেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠান গুলো বহাল তবিয়তে চলছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের মানুষ দেখানো অভিযান মাত্র। প্রতিনিয়ত এধরনের অভিযানে সাধারন মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এবিষয়ে পত্নীতলায় অপরিকল্পিত ক্লিনিক, ডায়াগনিস্টিক সেন্টার সহ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার কথা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রঞ্জন চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রশাসন সহ সিভিল সার্জনের অভিযানে বন্ধ স্কয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইসলামিয়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেছের হোমিও হল আবারো খোলার বিষয়টি তিনি জানেন না। এব্যাপারে তিনি পদক্ষেপ নিবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।

তবে উপরোক্ত বিষয়ে নওগাঁ সিভিল সার্জন ডাঃ মোজাহার হোসেন বুলবুল এর মোবাইল ফোনে (০১৭১১৫৭৮৩৭৮)এ অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তার ফোন বন্ধ পাওয়ায় উক্ত বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই