তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

আর কত দূর.........? পর্ব -০৫

আর কত দূর.........? পর্ব -০৫
[ভালুকা ডট কম : ২৮ অক্টোবর]
বিভ্রান্তি:ঈদুল আয্হা। বড় ঈদ বলে কথা। পুরুষদের কোরবানির পশু ক্রয় যেমন যথা সময়ে যথোপযোগী পশু ক্রয় করা জরুরী ঠিক তেমনিভাবে বাড়ির, আত্বীয়স্বজনের জন্যও কাপড় চোপড়, সাজগোছ ক্রয় করা কম জরুরি নয়। গত ঈদুল আয্হার কথা বলছি। ঈদ উপলক্ষে আমার এক আত্বীয়ার স্বামী স্ত্রীকে ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ সোনার হার কিনে দিলেন। তো ভদ্র মহিলা একটু সাজগোছ করে স্বামীর দেয়া খাঁটি সোনার হারটা পরে সন্ধ্যার পর ননদিনীকে সাথী করে মনের আনন্দে শপিং এ গেলেন।

মনের আনন্দে শপিং ও করছেন। কিন্তু হলো কি শপিং শেষে সীঁড়ি বেয়ে নীচে নামার সাথে সাথে তিনজন বোরখা পরা মহিলা তাকে ঘিরে একজন আরেকজনের সাথে তুমুল ঋগড়া। এক পর্যায়ে হাত লেগে গলা থেকে স্বামীর দেয়া ভালবাসার নিদর্শন খাঁটী সোনার হার মাটিতে পরে যাওয়া আর চোখের পলকেই হারটি তুলে নিয়ে বিদ্যুৎ বেগে পালানো। পালানোর সময় যদিওবা একজনকে ধরে গনধোলাই দেয়া হলো কিন্তু শখের আর ভালবাসার হারটি উধাও হয়ে গেল। বেচারির মনের কষ্ট আর চোখের জলে আনন্দের ঈদটাই মাটি হলো। এই যে বোরখা যাকে আমরা ইসলামী পোশাক হিসেবে ব্যবহার করি। যা মুসলিম মহিলাদের পর্দাশীল রাখে। এই মুসলিম নারীকুলের নারীত্ব বজায় রাখার জন্য পর্দা করা মহান আল্লাহ'র নির্দেশ। ধর্মীয় আলোচনায় আমি যেতে চাই না শুধু এইটুকু বলতে চাই আপনারা যারা আলেম সমাজ, যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে থাকেন তাঁরা কী কখনো দেখেছেন আমাদের দেশে রাস্তাঘাটে, বাজরে, স্কুল কলেজে বা অফিস আদালতে আমাদের মা বোনেরা ইসলামী বিধান না জানার কারনে এক ধরনের লীলেন কাপড়ের বোরখা পরছে যা পর্দানশীন হওয়া তো দূরের কথা পর্দাহীনতাকেও হার মানছে। যেখানে একজন নারীকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এত সৌন্দর্যে সাজিয়ে দিয়েছেন তার স্বামীর জন্যে। আর এ জন্যই পর্দাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন।

নারীরা স্কুল কলেজ, বাজার, অফিস আদালতে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পর্দা করে যাওয়া আল্লাহর নির্দেশ। কিছু কিছু মহিলাকে দেখা যায় পায়ের পাতা থেকে শুরু করে সকল কিছুই ঢাকা শুধু চোখে কালো চশমাপরা। আবার কিছু কিছু মহিলা বডি ফিটিংস বোরখা। এমনও দেখা যায় ডাক্তারদের এপ্রোন না বোরখা বুঝা মুশকিল। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় ছেলেদের শার্টের মত একটা কিছু পরে, মাথায় পাতলা একটা ওড়না বাতাসে উড়ছে। ইদানীং এক ধরনের বোরখা নারীদের পরতে দেখা যায় একেবারে পাতলা কাপড়ের যা শরীরের ভিতর সহজেই দৃষ্টিতে আসে। আমার প্রশ্ন হলো বোরখা তো আর আধুনিক ফ্যাশন নয়। এটা যেহেতু ইসলামি পোশাক এবং একমাত্র মুসলিম নারীরাই পরে থাকেন। মহান আল্লাহ আর আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) এর নির্দেশ। মুসলিম প্রতিটি নারী পর্দা করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই আমি মনে করি আমাদের দেশের বিজ্ঞ আলেম সমাজ এই বিষয়টি গভীর ভাবে চিন্তা করা উচিৎ। প্রয়োজনে সরকার বাহাদুরের সাথে বসে রাষ্ট্রীয় ভাবে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একজন নারীকে বোরখা পরলে কী ধরনের কাপড়ের বোরখা পরতে হবে বা কতটুকু অবশ্যই ঢাকা থাকতে হবে তা বর্তমানে আলেম ওলামাদের ব্যাপক ভাবে প্রচার করা উচিৎ। আমি মনে করি বর্তমান সরকার নারী বান্ধব সরকার। নারীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা বর্তমান সরকার দিয়েছে। এই নারী বান্ধব সরকার যদি বোরখার ডিজাইন এবং নির্দেশনা সরকারী ভাবে বাধ্যতামূলক করে দেন তাহলে যে নারী বোরখা পরে তাঁর সম্মান রক্ষা পাবে। সম্মান রক্ষা পাবে বললাম এ কারনে যে, এই বোখরা পরে ছিনতাই করছে, এই বোরখা পরে ডাকাতি করছে, এই বোরখা পরে মলম লাগাচ্ছে আর এই বোরখা পরেই জঙ্গিবাহিনীতে কাজ করছে। এখন এমন একটা অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে বোরখা পরা কাউকে দেখলেই ভয় লাগে, এই বুঝি ছিনতাইকারীর খপ্পরে পরলাম। ইয়াবাসহ ধরা পরছে বোরখা পরা নারী, চোরাচালানীতে ধরা পরছে বোরখা পরা নারী, ফেনসিডিল, গাজা সহ ধরা পরছে বোরখা পরা নারী। তাহলে ঈমানদার মুসলিম নারী যারা আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য বোরখা পরে তারাও দূর্ভাগ্যক্রমে সন্দেহের আওতায় এসে যাচ্ছে। একটা কথা প্রচলন আছে সমাজে" একলোক সারারাত আল্লাহ'র ইবাদত করে ফজরের নামাজের আগে পুকুরের একঘাটে গোসল করছে আর এক লোক সারারাত চুরি করে পুকুরের আরেক ঘাটে গোসল করছে। যে লোক সারারাত আল্লাহ'র ইবাদত করে গোসল করছে সে মনে মনে বলছে লোকটা আমার মত সারারাত এবাদত করে পরিশ্রান্ত হয়ে গোসল করছে। আবার যে লোক সারারাত চুরি করল। সে ভাবছে ব্যাটা আমার মত সিঁধী চোর। সারারাত সিঁধ কেটে চুরি করে গায়ে কাদা পরিষ্কার করার জন্য আমার মত গোসল করতে এসছে "।

এ রকম হওয়াটা বা ভাবতে পারাটা বা চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক নয় কী? তাই আমি মনে করি একটি নির্দেশনা বা আইন সরকারী ভাবে জারি করলে অনেক ঈমানদার মুসলিম নারী উপকৃত হবে পাশাপাশি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, ছিনতাইকারী, মলমপার্টী, মহিলা ডাকাত, মাদক ব্যবসায়ী অনেকাংশে হ্রাস পাবে। আমি আমাদের শ্রদ্ধাভাজন আলেম ওলামাদের অনুরোধ করি আপনারা সরকার বাহাদূর এর সাথে বসে সুন্দর একটি ইসলামি বোরখা নীতি প্রনয়ন করুন। এই সকল বিভ্রান্তি দূর করে সমাজকে সুপথে পরিচালিত করার সর্বোচ্চ দায়িত্ব নিতে পারেন আমাদের বিজ্ঞ আলেম সমাজ। আমাদের দেশে প্রতিবছর শীতকালে হাজার হাজার ইসলামি জলসা হয়। এ ইসলামী জলসায় দেশের হাজার হাজার ওলামায়ে কেরামগন হাদিছ এবং কোরআনের আলোকে ওয়াজ নসিহত করে থাকেন। আপনারা যদি প্রত্যেকেই এক/দুই ঘন্টা ওয়াজ নসিহত এর মাঝখানে মাত্র পাঁচ/দশ মিনিট পর্দা তথা বোরখা বিষয়ে আলোচনা রাখেন দেখবেন সাধারন মানুষ যারা না বুঝে না শুনে এ কাজ করেছে তাদের ধারনা সম্পূর্ণ রূপে পাল্টা যাবে। আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করব আপনারা এ কাজটি করবেন। বাংলার হাজার হাজার সাধারন মানুষ আপনাদের কথা শুনার জন্য প্রচন্ডশীত মাথায় নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটায়। আপনাদের ওয়াজ নসিহতে এরা দুচোখের পানি ফেলে। হাজার হাজার খারাপ লোক ভাল হয়ে আল্লাহ'র কোরআন মজিদ ও আমাদের প্রিয় নবী (স:) হাদিছ অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুন। আমিন

ঘোর অন্ধকার। লোকজনশুন্য রান্তা। বড় বড় গাছের সারি যেন এক একটা দৈত্য আকাশে মাথা হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝেমাঝে দূর থেকে ভেসে আসা শিয়ালেরডাক। এমন লোমহর্ষক পরিবেশে চলছি লাশবাহী ভ্যান নিয়ে অজপাড়া গাঁয়ে। পুলিশ খবর পেয়েছে ঐ গাঁয়ে একটা মহিলা ফাঁসিতে ঝুলে মরে আছে। আমার উপর ন্যাস্ত হলো দায়িত্ব লাশ বহনের। এ কথাগুলো বলছিলেন একজন লাশবাহী ভ্যান চালক। চলছি লাশ বহনের উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে ভাবছি রাতভর লেগে যাবে হয়ত। ভাল একটা টাকার অংক ও পেতে পারি। যাই হওক রাত এগারোটার দিকে গন্তব্যস্থলে গিয়ে পোঁছলাম। গাছ থেকে দড়ি কেটে লাশ নামিয়ে ভ্যানে তোলে পূনরায় জেলাসদরের উদ্দেশ্যে একাকী রওয়ানা দিলাম। পুলিশ আমাকে কয়টা সিগারেট দিয়ে বলল তুই চলে আয়আমরা যাচ্ছি। একাকী আন্ধকারে পিছনে লাশ নিয়ে চলছি। চলতে চলতে যখন ব্রীজের উপরে উঠতেছিলাম তখন পিছনে আমার ভ্যানে হাঁড় খাওয়ার কড়মড় শব্দ শুনতে পেলাম। পিছনে না তাকিয়ে ব্রীজের উপরে উঠতেই ছিলাম। কিন্তু আবারো হাঁড় খাওয়ার কড়মড় শব্দ। পিছনে লাশের দিকে তাকিয়ে দেখি ফাঁসির লাশটাকে পায়ের দিক থেকে কড়মড়িয়ে খেয়ে আসছে আরেকটা লাশ। পরে আর আমার খেয়াল নেই, আমার জ্ঞান ফিরেছিল দুইদিন পর। এ রকম একটা গল্প গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া হলো। গ্রামের লোকজন তো বেলা থাকতেই যে যার মত করে কাজ কর্ম গুছিয়ে ভয়ে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ঘর দরজা বন্ধ করে শুয়ে পরত। কিন্তু ঐ যে রাস্তার পাশে দৈত্যের মত বড় বড় গাছ কয়েক দিনেই উজার হয়ে গেল। লোকজন যখন বুঝতে পারল যে আসলে এটা একটা বানোয়াট গল্প ততক্ষণে রাস্তার পাশের অধিকাংশ গাছ চোরে কেটে নিয়ে গেছে অর্থাৎ চুরির সুবিধার্থে লোকজনকে ভয় দেখিয়ে ঘরে আটকিয়ে রাখাই ছিল মূল লক্ষ্য। এই যে বিভ্রান্তি এই যে ধোকাবাজি। এতে গ্রামের হাজার হাজার মানুষ কোন না কোন ভাবে ক্ষতির সম্মোখিন হচ্ছে। ছোট বেলায় আমার মত আপনারা সকলেই দেখেছেন পূর্ব আকাশে সন্ধ্যার পর যখন বিদ্যুৎ চমকাতো তখন একটা হৈ হৌল্লা, ডাকাডাকি, ঢোল, পিতলের বাটি, কলসি অর্থাৎ যে যা পেয়েছে সকলেই শব্দ করছে। বলা হতো সাগর থেকে এক দৈত্য উঠেছে। সবাই আওয়াজ করলে অন্যদিকে চলে যাবে।

আওয়াজ করতাম আর ক্লান্ত হয়ে যখন ঘুমিয়ে পড়তাম বা সকলেই ঘুমিয়ে পরত আর তখনি শুরু হয়ে যেত চুরি আর ডাকাতি। চারদিক পানিতে থৈ থৈ করত। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে গেলেও নৌকা বা ভেলা বা কোন্দা ছাড়া চলা যেত না। আর লোকজনকে বিভ্রান্ত করে ফয়দা লুটত খারাপ মানুষ। আমাদের একটা ঘটনা বলি" আমি তখন ছোট সম্ভবত দশ কি বার বছর বয়স। আমার বাবা আমার দাদাদাদির একমাত্র ছেলে। আমাদের বাড়িতে যে পুকুরটা আছে এটা ব্রিটিশ আমলের। এই পুকুরে অনেক বড় বড় মাছ। একদিন ভোর বেলা একলোক আমাদের বাড়িতে এসে মা 'কে বলছে" বুজি (বোন) গো, গতকাল রাতে আপনাদের পুকুরপাড়ে মারাই গিয়েছিলাম। মা জিজ্ঞেস করল কীভাবে ভাই। আর বলবেন না আমি রাতে বাজার থেকে যখন আপনাদের পুকুরপাড় হয়ে বাড়িতে যাই তখন দেখি একটা গরু পুকুরপাড়ে ঘাস খাচ্ছে একটু পরেই চেয়ে দেখি হাতি হয়ে গেছে আর কতক্ষণ পরে দেখি মাটি আর আকাশে ঠেক দিয়ে আছে। বুজি গো বুজি যদি ন্যাংটী কেছে দৌড় না দিতাম তাহলে আজকে আর আপনাদের সাথে দেখা হতো না। এতক্ষণ কবরে থাকতাম। পনারা একটু সাবধানে থাকবেন। কি যে পুকুরপাড়ে আসল আর কাকে জানি নিয়ে যায় বলা তো যায় না? বাবাকে তো এমনিতেই সন্ধ্যার পর বের হতে দেয় না আর এখন আমাদের ও সন্ধ্যার পর বের হতে মানা হয়ে গেল। মাত্র কয়েক দিন পর পুকুরে মাছ ধরতে আমাদের কাজের লোকজন জাল ফেলেছে বড় মাছ তুলতে হবে বাবার নির্দেশ। আত্বীয় স্বজন এসেছে বড় মাছ লাগবেই লাগবে। পুকুরের বড় বড় মাছ তো নাই, জালে তো আসেনা কাজের লোকজন বলল। বাবা তো বুঝতে পেরে এই" ওকে ডেকে নিয়ে আসতো? পরে অবশ্য মা কিছুই বলতে বা করতে দেয়নি ও ব্যাটাকে। তাহলে বুঝতে পারছেন খারাপ মানুষ গুলি কীভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে স্বার্থ উদ্ধার করে।

আমি বলছিলাম লোকজনকে ভয় দেখিয়ে বিভ্রান্তিতে ফেলে কীভাবে স্বার্থ উদ্ধার করে। এ রকম হাজারো অভিজ্ঞতা আপনাদের আছে এটা আমি জানি। যেমন এক লাশবাহী ভ্যানচালক এক বর্ষার রাত্রিতে পূন পোস্টমর্টেম এর জন্য কবর থেকে লাশ তুলে জেলাসদরের উদ্দেশ্যে রাত এগারটার দিকে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি শুরু হলো। চোখে কিছুই দেখা যাচ্ছিলনা। কিছু না ভেবে সে লাশবাহী ভ্যানটা পাশে রেখে এক ঘরের দেয়ালের পাশে আশ্রয় নিল। কিন্তু তার বিবেকে লাগছিল কেন লাশটাকে এ ভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে দিচ্ছি। তারপর সে বাঁশের পাটীতে মোড়ানো লাশটি ভ্যান থেকে তোলে তার পাশে নিয়ে রাখল এ সময় ছাতা মাথায়, টর্চ হাতে দুই লোক ঐ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। কাছাকাছি এসে টর্চ জ্বালিয়ে লাশ এবং একাকী লাশবাহী ব্যাক্তিকে দেখা মাত্রই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। লাশবাহী ব্যক্তিটি দিশাবিশা হয়ে দ্রুত লাশটাকে ভ্যানে তোলে ঐ স্থান ত্যাগ করল। পরদিন তো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল এ ঘটনা। আর এ সুযোগটা নিল কুমতলবপূর্ণ কিছু মানুষ। পরদিন শোনা গেল এক বাড়িতে একটি যুবক মারা গিয়েছে। এমন প্রতিদিনই একটা করে অদ্ভুত ঘটনার জন্ম হচ্ছে। গ্রামের ভয়েরচিহ্ন। ঘর থেকে মানুষ বের হতে সাহস পায়না। সুযোগ বুঝে এক ভন্ডপীরের আগমন ঘটল গ্রামে। পীরসাহেবের কেরামতিতে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গ্রামের লোকজনের ভয়ভীতি কেটে শান্তি ফিরে এলো। এদিকে পীর সাহেবের নাম-ডাক চারদিকস্থ ছড়িয়ে পড়ল। বিভিন্ন গ্রামের লোকজন মান্নত, শিন্নী নিয়ে আসতে লাগল। ভাগ্যক্রমে ঐ লাশবাহী ভ্যানচালক ও একদিন এই পীরবাবার দরবারে উপস্থিত হলো। পীরবাবার কদমবুসি ও ঝাড়ফোক মনের আনন্দে গ্রহন করল। বিদায় বেলায় একটি দোকানে বসে চা পান করছে। পীরবাবার কথা উঠার সাথে সাথে তার সকল ইতিহাস দোকানদার বলতে লাগল। আর লাশবাহী ভ্যানচালক মনোযোগী হয়ে সকল কথা শুনিতেছিল। এক পর্যায়ে সত্য ঘটনা বলতে চেয়ে এ পরিমান বাঁধার সম্মোখিন হয়েছিল যে শেষ পর্যন্ত কোন মতে প্রাণে রক্ষা পেল। সত্য ঘটনা আড়ালে চলে গেল আরপীরবাবার এখনো হয়তবা ঐ কাজই করছেন।

তখন সকাল বেলা। সকলেই যার যার কাজেরউদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। ছেলেমেয়েরা স্কুল, কলেজে যার যার বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। এমন সময় খবর হলো দশম শ্রেণির একটি মেয়ে বাবা মায়ের সাথে অভিমান করে গলায় দড়ি দিয়েছে। পরনে স্কুলের ইউনিফর্ম। মানসিক প্রতিবন্ধী একটি ভাই। প্রতিবন্ধী ভাইটি আদরণীয় বোনটির পানে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে দু' চোখেরজলে কপোল গড়িয়ে পড়ছে আর বোনটির এপাশওপাশ করছে। কি যেন বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা। পুলিশ তাদের যথাবৎ কর্ম শেষ করে লাশ হস্তান্তর করল। নিয়মনানুযায়ী দাফনকাজ শেষ হলো। প্রতিবন্ধী ভাইটি কবরের পাশে পাথরের মত বসে রইল। সবাই বলাবলি করছিল পাগল ছেলেটা ওখানে কি করে। কেহই পাগল ছেলেটার মনের আকুতি বুঝতে চায়নি। দাফন শেষে সকলেই যার যার বাড়ি চলে গেল কিন্তু প্রতিবন্ধী ভাইটি কবরের পাশেই বসে রইল। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামল তখনো সে ওখানেই বসে রইল। প্রতিবন্ধী ছেলেটার প্রতি মা বাবা, আত্বীয় স্বজন কেহই গুরুত্ব দেয়নি বা সামান্যতম করুনাও করেনি। ছেলেটি রাত্রিবেলায় যথানিয়মে খাবার শেষে তার নির্দিষ্ট বিছানায় শুয়ে রইল। সকলেই তখন ঘুমে কখন যে বিছানা থেকে ছেলেটি উঠে গেল কেউ জানেনা। ভোরবেলা ফজরের নামাজ শেষে চারদিক ফর্সা হতে লাগল। কেউ কেউ বাঁশবাগানের ধারে কবর দেখতে যাচ্ছে। হঠাৎ একজন চিৎকার দিয়ে বলল কবরে তো লাশ নাই ।খবর শুনে এদিক সেদিক থেকে লোকজন আসতে লাগল। লাশ তো নাই। খুঁজাখুঁজি শুরু হলো। কিন্তু লাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কে নিল, কীভাবে নিল এধরনের নানাপ্রশ্ন। লাশ খুঁজতে খুঁজতে দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল তখন কাকের গতিবিধি দেখে একভিটার পর আরেক ভিটায় ঘন জঙ্গলে লাশ পাওয়া গেল। লাশের পাশেই বসেছিল প্রতিবন্ধী ভাইটি। দেখা গেল কবর থেকে লাশটি তোলে পাশের বিলের পানিতে লাশটি নামিয়ে অনেকদূর অতিক্রম করে ওপাড়ের ভিটায় নিয়ে লাশটি তুলেছে। এই যে সারারাত যাবৎ লাশটি একাকী বহন করল এবং পাশেই বসে রইল। বোনটি হয়তবা প্রতিবন্ধী ভাইটিকে মায়া মমতা, স্নেহ আদরে খাইয়ে দিত বা আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দিত। আজ বিছানায় শুয়ে যখন দেখল বোনটি তো আজ আদর করে ঘুম পাড়াতে আসছেনা। ও বাঁশঝাড়ের পাশে কবরে শুয়ে আছে তখন হয়ত পাগল ভাই ঠিক থাকতে পারেনি। পূন: দাফনকাজের পর প্রতিবন্ধী ভাইটিকে ঘরে শিকলে বেঁধে রাখা হতো। আজও প্রতিবন্ধী ভাইটির অন্তর বোনের স্নেহময় মুখটি, আদরমাখা হাতের স্পর্শ আর ঘুম পাড়ানো গান শুনার জন্য মনটা আকুলিবিকুলি করে কিনা, জানি না। এই যে একটা মেধাবী মেয়ে আত্বহত্যার পথ বেছে নিল, ভাইটি মানসিক প্রতিবন্ধী হলো কেন -এর উত্তর কেউ কি কখনো খুঁজতে চেয়েছি বা জানতে চেয়েছি? পারিবারিক বিভ্রান্তি না সামাজিক বিভ্রান্তি কোনটা দায়ী? আমি আমার লেখায় বার বার বুঝাতে চেয়েছি যে শিশুদের ব্যাক্তিত্বকে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। এদের চাহিদাটুকু বুঝতে পারা উচিৎ। শিশুকালে কিন্ডারগার্ডেন এ পড়ার চাপ, বাবা মায়ের পড়া শিখানোর চাপ, মোবাইলে গেইমস খেলার চাপ, মোটা হয়ে যাচ্ছে তাই খাওয়ার চাপ। এত চাপের চাপাচাপিতে শিশু পরিনত হচ্ছে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, আর মানসিক প্রতিবন্ধীতে। কেউ কেউ ভূগছে হতাশায়। আর পরিনতি ভয়াবহ। যারা শিশুদের নিয়ে কাজ করেন তাদের প্রতি আমার অনুরোধ পারিবারিক শিক্ষা এবং প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বয়স এবং পাঠ্যপুস্তক নির্দারনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন এবং যতœশীল হওয়া উচিৎ। কিন্ডারগার্ডেন গুলির পাঠ্যবই এবং সিলেবাস সম্পর্কে অবহিত হওয়া উচিৎ। প্রচার মাধ্যমগুলি পারিবারিক এবং প্রাথমিক শিক্ষার বয়স, সম্পর্ক, আচরণ, মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির বয়স ইত্যাদি সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো উচিৎ। স্বল্প ব্যয়এ পুষ্টিকর খাবার বিষয়েও প্রচারণা জরুরি।  

আমরা সাধারনতচলাচলপথ ব্যবহার করার সময় অবান্তর সমস্যাদির সম্মোখিন হই।আপনি সেজেগোজে বিয়ে বা অন্য কোন দাওয়াতে যাচ্ছেন, পথিমধ্যে অবাঞ্চিত দ্রুতগামী কোন গাড়ী এসে আপনার জামাকাপড় কাদাজলে ভিজিয়ে দিয়ে গেল। সাইকেল বা মোটরবাইক নিয়ে বের হয়েছেন জরুরি কোন কাজে, দ্রুতগামী সাইকেল বা মোটরবাইকের সামনে দিয়ে কোন ছোট বাচ্চা বা বৃদ্ধলোক দৌড় দিল আর আপনি তাকে বাঁচাতে নিজেই সাইকেল বা মোটরবাইক থেকে ছিটকে পরলেন। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো আপনাকে। আর পুরো দূষী ও কিন্তু আপনি। ওখানে যতই নিজেকে নির্দোষ দাবী করবেন ততবেশী বিপদের সম্মুখীন হবেন। আপনি যে লোকটাকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিলেন এটা কেউ দেখবেনা। শুধু এখানেই শেষ নয় আপনি সমাজে নিজের ব্যাক্তিত্ব আর সম্মান বজায় রেখে চলার চেষ্টা করবেন। কীভাবে আপনাকে সমাজের চোখে দোষী এবং অসম্মানী করা যায় এ জন্য নিজের পকেটের টাকা খরচ করে হলেও চেষ্টায় লিপ্ত হবে। আপনার কাজের ভালো দিকগুলি না দেখার ভান করে যথেচ্ছ খারাপ দিকগুলি সমাজে উপস্থাপন করবে। আর আপনাকে অপেক্ষাই থাকতে হবে কবে কখন সত্য উদঘাটিত হয়। জীবদ্দশায় দেখতেও পারেন আবার নাও পারেন। ঐ দিন facebook এ এক ভাইয়ের একটা স্ট্যাটাস আমার অভিজ্ঞতাকে আরো একটু বাড়িয়ে দিয়েছে। ভাইটি নয় এর নামতা লিখে শুধু একটি জায়গায় একটি মাত্র ভুল লিখেছে। সবাই ভূলটাই দেখল। নামতার দশটি লাইনের মধ্যে একটি লাইনের ভুল সবার চোখে ধরা পড়ল। সবাই comment করল একটা ভুলের কথা। কেউ একজনও বলল না যে এখানে নয়টি লাইনই সত্য। আপনি আপনার কর্মস্থল বা সমাজে নয়টা কাজ ভাল করেছেন মাত্র একটি কাজ ভুলক্রমে করে দেখেন। কেউই আপনাকে ছাড়বেনা। অথচ এতগুলি ভাল কাজ ঢাকা পরবে একটি মাত্র মিথ্যার আড়ালে। মিথ্যা শক্তিশালী না এর প্রচারক?

বিভ্রান্তি পর্ব লিখতে লিখতে আমি নিজেই যে কখন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে গেছি জানিনা। কিন্তু এইটুকু জানি আমি কারো বিভ্রান্তি ধারনাকে পাল্টাতে গিয়ে নিজেই স্বীকারে পরিনত হয়েছি। জমিজমা সম্পর্কীয় ধারনা পূর্বে থেকেই আমার ছিলনা বা আমি কোনদিন ও বুঝতে চাইনি। পারিবারিক ভাবে বড় ভাই জমিজমা সংক্রান্ত বিষায়াদি দেখাশোনা করে থাকেন। গতপরশু আমার একমাত্র ভাতিজা আমাদের পুরাণ বাড়ি থেকে খবর দিলো আমাদের কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে জমির মালিক দু'জন একজন আরেক জনের কাজে বাধা দিচ্ছে। বড় ভাই তাদের দু'জনকেই ডেকে আনলেন। আমিও উপস্থিত। আমার উপস্থিতিতে বড় ভাই জমিজমার দলিল পত্র দেখলেন। দলিল পত্র দেখার পর বড় ভাই তাদের উদ্দেশ্যে বললেন তোমাদের দু ' জনের তো কোন সমস্যা নেই। আমি বললাম তাহলে তারা ঝগড়া করে কেন? অনেক আলোচনা আর বড় ভাইয়ের সাথে পরামর্শের পর বুঝলাম " ঝিকে মেরে বউকে শিক্ষা দেওয়া " এর মত ঘটনা। অর্থাৎ একজনের কাঁধে বন্দুক রেখে গুলি করার মত। এত প্যাঁচগোছ বুঝিনা। আমি অবশ্য আমার কর্ম ক্ষেত্রে কে কীভাবে তার উদ্দেশ্য হাসিল করবে তা দেখেছি। কিন্তু এটা কেমন জানি ভিন্ন। পুরোটাই মিথ্যা। এই পুরোটা মিথ্যা জেনেও একটা লোককে কীভাবে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলছে। গ্রাম্য শালিস, থানা পুলিশ সবশেষে যার জমি তারই রয়ে গেল। আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম টাকা তো বাদী বিবাদী দুজনেরই গেল, সম্মান ও নষ্ট হলো। তাহলে এ রকম করার মানেটা কী বা উদ্দেশ্যটা কী? কোন উত্তর না পেয়ে বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম এ রকম হলো কেন বা এরা এরকম করে কেন? বিজ্ঞ ব্যাক্তি আমার বড় ভাই এক কথায় উত্তর দিলেন খারাপ লোক এবং সমাজের নষ্ট চরিত্রের মানুষের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো তার মুখের খারাপ " ভাষা "। এরা বিভিন্ন খারাপ ভাষা প্রয়োগ করে স্বার্থ উদ্ধার করে। এরা ভালভাবে বুঝে ভদ্র লোকেরা খারাপ কথা সহ্যকরতে পারবে না আর তারা ঠিকঠাকমত স্বার্থটা উদ্ধার করবে। আর তাই হচ্ছে।চলবে... ...
আর কত দূর.........? পর্ব -০১আর কত দূর.........? পর্ব -০২ আর কত দূর.........? পর্ব -০৩আর কত দূর.........? পর্ব -০৪

লেখক
মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক তালুকদার
প্রধান শিক্ষক
গোয়ারী ভাওয়ালিয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়
ভালুকা, ময়মনসিংহ।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

কলাম বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই