তারিখ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

গৌরীপুর শিক্ষা অধিদপ্তর দুই মাসেও তদন্ত শুরু করতে পারেনি অস্তিত্বহীন বিদ্যালয়ের

গৌরীপুর শিক্ষা অধিদপ্তর দুই মাসেও তদন্ত শুরু করতে পারেনি অস্তিত্বহীন বিদ্যালয়ের
[ভালুকা ডট কম : ২৮ নভেম্বর]
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের অধিনে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে চলতি প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় দু’টি বিদ্যালয়ের হলে পরীক্ষার্থী থাকলেও এলাকা ঘুরে বিদ্যালয়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি। অভিযোগ রয়েছে প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষা দিতে ভাড়া করা হয়েছে জেএসসি পরীক্ষার্থী ও অন্যান্য বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। এ দু’টি বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের লক্ষ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিস ও সংশ্লিষ্ট সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে লাখ টাকায় ম্যানেজ করেই ডিআরভুক্ত হয়েছে এসব ভুয়া শিক্ষার্থী। রোববার (২৭ নভেম্বর/১৬) সমাপনি পরীক্ষার শেষ দিনে গণিত পরীক্ষা দিয়েছে ।

অক্টোবর মাসের ২তারিখে মডেল টেস্টে এসব পরীক্ষার্থী নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে অস্তিত্ববিহীন এ দু’টি স্কুলের শিক্ষার্থী নিয়ে এ প্রতিবেদন সরজমিন পরিদর্শন করেন। সেই দিন বিকালে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জুয়েল আশরাফ জানান, আগে অবগত ছিলাম না। এখন যেহেতু জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, একটি চক্র এ দুটি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ ও ২টি বিদ্যালয়ের ৮জন শিক্ষকের চাকুরি সরকারিকরণের জন্য প্রায় ৪৮লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে বিদ্যালয়বিহীন স্কুলের পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। তাদের অভিমত, শুধু শিক্ষা দপ্তর নয় স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা অধিদপ্তরের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশেই এসব ভুয়া বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের জন্য নেয়া হয়নি কোন তদন্তের উদ্যোগ!

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পাওয়া গেলো সহনাটী ইউনিয়নের মাসকান্দা গ্রাম। কাঁধে ও বুকে বই জড়িয়ে বাড়ি ফেরা এই গ্রামের রোকেয়া আক্তার, সাইফুল ইসলাম, নয়ন মিয়া, হাদিউল ইসলাম সবাই যোগীরডাঙ্গুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। নিজ গ্রামে মাসকান্দা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, তা শুনে সবাই হতবাক! এই গ্রামের সন্তান নুরুল ইসলাম (৫৫), আয়শা আক্তার (৪২) ও কলেজ ছাত্রী নুরুন নাহারও জানে না এ বিদ্যালয়টি কোথায়? অবশেষে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুল হকের সন্ধান করতে গিয়ে তার বাড়ির সামনে টিনশেড একটি ঘরের সন্ধান পাওয়া যায়। নতুন টিন, ভিটে মাটি ভরাট, দরজা-জানালার কাজ চলছে। এ ভিটেতে ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকের পদচি‎হ্ন আজও লাগেনি। গরু-ছাগলের বিষ্টা ও গো-খাদ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাহলে পাছার উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে ৮জন পরীক্ষার্থী এলো কোথায় থেকে এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এসব পরীক্ষার্থী শিক্ষকদেরও নাম জানে না, প্রবেশপত্রে নিজের নাম বলতে পারলেও পিতা-মাতার নামও সঠিক বলতে পারেনি। এ দিকে প্রাথমিক মডেল টেস্টে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের সাথে প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীর মিল খোঁজে পাওয়া যায়নি। পাছার উচ্চ বিদ্যালয়ের জেএসসি শিক্ষার্থী বদলিয়ে এবার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কুমারুলি উচ্চ বিদ্যালয়ের জেএসসি পরীক্ষার্থী ভাড়ায় এনে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে বলে নিশ্চিত করেন মাসকান্দা গ্রামের দুই কলেজ ছাত্র। এ ব্যাপারে শিক্ষক সাইদুল হক বলেন, ওরা মূলত মাদরাসার শিক্ষার্থী এখন স্কুল তৈরি করা হচ্ছে।

এরচেয়েও ভয়ানক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে সানিয়াপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোঁজতে গিয়ে। এ বিদ্যালয়ের নাম শোনে বাঁকা চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে থাকেন সকলে, ছুঁড়েন উল্টো প্রশ্ন! কোথায় শোনছেন? এই বিদ্যালয়ের নাম। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, নবধারা কিন্ডার গার্টেন এন্ড কোচিং সেন্টারের পরিচালক নূর মোহাম্মদ। তিনিই এ কিন্ডার গার্টেনের ছাত্রছাত্রীদের ভাড়া দিয়েছেন সানিয়াপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তবে ওই বিদ্যালয়ের কোন সাইন বোর্ড, বিদ্যালয় ও শিক্ষক কিছুই পাওয়া যায়নি। অস্তিত্ববিহীন এ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরাও অবশেষে এ প্রতিনিধিকে জানান, তারা এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে নাই। স্যার তাদেরকে সানিয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বলতে বলেছে। পরীক্ষার্থী মোঃ সারোয়ার হোসেন প্রবেশপত্রে (রোল নং ৩৪৭০) লিখা বাবা ও মায়ের নামের সাথে মিলিয়ে বলছে পারেনি পিএসসি পরীক্ষার্থী সারোয়ার হোসেন। এ বিদ্যালয়ের ১১জন পরীক্ষার্থীর মাঝে ৯জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে গিধাউষা হাসন আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। সাইনবোর্ড লিখা পরিচালককে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য এলাকাবাসী ও শিক্ষা অফিস কোন নাম্বার দিতে পারেনি।

এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাহিদুল ইসলাম জানান, স্কুলগৃহ বা কোন স্কুল আছে কি-না আমার জানা নেই তবে ডিআর জমা দিয়েছে। অফিস সহকারী রেখা আক্তার জানান, উপজেলায় এই দু’টি নামে বিদ্যালয় নেই। তবে পরীক্ষার হলে ১৭জন ছাত্রছাত্রী এলো কোথায় থেকে এনিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি মডেল টেস্ট পরীক্ষার সময়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জুয়েল আশরাফকে জানানো হয়েছিলো। এবারও তিনি সেইবারের মতো বললেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শফিউল হক জানান, ভুয়া শিক্ষার্থী প্রমাণিত হলে ডি.আরভুক্তির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই