তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

আলোকিত এক নারী কবি সেলিনা রশিদ

আলোকিত এক নারী কবি সেলিনা রশিদ
[ভালুকা ডট কম : ২৯ নভেম্বর]
আমার ব্যক্তিগত জীবনে অনেকের সাথেই চলার সুযোগ হয়েছে। যে সমস্ত গুণী জনের সাথে চলেছি তার মধ্যে কবি সেলিনা রশিদ একজন। তিনি একজন কিন্তু তাঁর কাজ অনেক। সমাজের নানাক্ষেত্রে রেখে চলেছেন তাঁর কাজের অমূল্য প্রতিভার স্বাক্ষর। সমাজ নারীদের প্রতি যে অমানবিক আচার-আচরণ করা হয় তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অনুধাবনকারী তিনি। সমাজরে নিন্ম পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে তাঁর বিচরণ।

আমাদের সাহিত্য সমাজে যে কয়েকজন নারীবাদী লেখিকা রয়েছে তিনি তাদের অন্যতম। যদিও তাঁর সাহিত্য জগতে জোড়ালো ভাবে প্রত্যাবর্তন মাত্র কয়েক বৎসর। আর এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তাঁর নিজ কর্মগুণে শত গুণের পরিচয় তুলে ধরেছেন আমাদের দেশে। তিনি হলেন কবি সেলিনা রশিদ। যার রয়েছে নানাবিধ কার্যক্রম। তিনি একাধারে সংগঠক, কবি, ছড়াকার, গল্পকার, গীতিকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কণ্ঠশিল্পী এবং সমাজ সংস্কারক। সমাজকল্যাণের প্রায় সকল শাখাতেই তার উল্লেখযোগ্য অবদান। কবি সেলিনা রশিদ গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার অন্তর্গত মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামে ইংরেজী ১৯৬৩ সালের ২৭ শে নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।

কবি সেলিনা রশিদ এস এস সি পাশ করার পর ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার অধিবাসী আবদুর রশিদের সাথে ১৯৮০সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তার স্বামীসহ ভালুকার মাষ্টার বাড়ী স্বামীর ভিটায় কৃষি কাজ শুরু করেন।  কৃষি কাজে তিনি জাতীয় ভাবে কলা ও পেঁপে চাষের জন্য ১৯৮৬-১৯৮৭ তে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন। তাঁর এলাকায় কলা ও পেঁঁপে চাষে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টির মাধ্যমে সকলের ঘরে ঘরে এই চাষে উদ্ধুদ্ধ করেন। কিছুদিনের মধ্যে এই কলা ও পেঁপে চাষ এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এর কিছুদিন পর তিনি বাচ্চাদের লেখা-পড়ার জন্য গ্রাম ছেড়ে ভালুকা উপজেলা সদরে চলে আসেন। এখানে এসেও তার সংগ্রাম থেমে থাকেনি। কৃষিকাজ এবং বনায়ন প্রকল্পে কাজ করার সময় ভালুকা থানায় বি.আর.ডি.বি’র সাথে জড়িত হন, পরে বি আর ডি বি এর ইসি ম্যামবার হন। তার পর তিনি বনায়ন বিভাগের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের থানা কর্মকর্তা হিসেবে দুই বছর কাজ করেন।

তিনি বি.আর.ডি.বি’র সাথে জড়িত থাকাকালীন থানা পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন।  যেমনঃ- পরিবার পরিকল্পনা, লাইফ স্টক বিষয়ক, বি.ডি.পি, সেলাই, বিভিন্ন হাতের কারুকার্যের, নার্সারী প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কৃষি কাজের উপর প্রশিক্ষণএবং গ্রাম্য ডাক্তারী  ( খ.গ.অ.ঋ ) প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যার ফলাফল এলাকার লোকজন নানা ভাবে ভোগ করছেন। তিনি বাচ্চাদের পড়ানোর পাশাপাশি নিজেও ইতিহাসে এম এ এবং এম বি এ ডিগ্রী অর্জন করেন। এরি মধ্যে বিভিন্ন  আন্দোলন ও সংগঠনে নিরপেক্ষভাবে যোগ দেন এবং বিভিন্ন সভা সমিতিতে নিরলসভাবে কাজ করে যান। কিছুদিনের মধ্যে তার সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। নির্যাতিতা ও বিধবা নারীদের মধ্যে সচেতনতার ও আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। কারণ তিনি দেখেছিলেন তার বিধবা মায়ের প্রতি সামাজিক অত্যাচারের করুন দৃশ্য।  সেলিনা রশিদ মহিলাদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যেমন যৌতুক প্রথা রহিত, বাল্য বিবাহ রোধ, স্যানিটেশন কার্যক্রম, নিরক্ষরতা মুক্ত সমাজ, নারীর অধিকার, নারী শিক্ষা, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সহ অসংখ্য কার্যক্রম।

কবি সেলিনা রশিদের কার্যক্রম ভালুকা উপজেলার প্রায় ৫০ জন (পরে ২০০জন ছাড়িয়ে যায়) এই সব মহিলাদেরকে নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন, যার উদ্দেশ্য গ্রামের নারীদেরকে বিভিন্ন পর্যায়ে কুসংস্কারমুক্ত, আর্থিকভাবে সঞ্চয়ী সচেতন ও এদেরকে নিরক্ষরমুক্ত করা। এতে ঐ সমস্ত মহিলারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে আয় রোজগারে স্বাবলম্বী হয়ে উঠে। বর্তমানে “সেভ দ্যা ওম্যান ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন” নামক একটি বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এর  প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক। “সেভ দ্যা ওম্যান ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন” এর মাধ্যমে তিনি নারীদের নানাভাবে সহযোগীতা করে আসছেন। সে সাথে তিনি দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের জন্য ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা করে তাদের কর্মমুখী ও স্বাবলম্বী করে তুলছেন। তাছাড়া ভালুকা থানার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এবং কার্যক্রমের সাথে জড়িত। তিনি ‘সেলিনা এডুকেশন এন্ড কালচারাল সোসাইটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, যার মাধ্যমে বিভিন্ন গুণীজনদের মধ্যে এওয়ার্ড ও সম্মাননা দেবার ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও তিনি ভালুকায় নারীদের জন্য একটি ‘মহিলা ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছেন যার মাধ্যমে নারীদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করা হয়।  তিনি দেশের প্রায় ৮০টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিশু কিশোর ও স্বেচ্ছাসেবী মূলক সংঘঠনের সাথে জড়িত হয়ে সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজে সহযোগীতা করে আসছেন। তিনি মেয়েদের শিক্ষার জন্য “ কবি সেলিনা রশিদ বৃত্তি ফাউন্ডেশান” করেন, যার মাধ্যমে প্রতি বছর টেলেন্টপুল বৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্রীদের মাঝে সংবর্ধনার আয়োজন করে থাকেন এবং শিশু- কিশোরদের জন্য বিনামূল্যে বই, খাতা, কলম বিতরণ করছেন। কবি সেলিনা রশিদ প্রতি বছর ভালুকা উপজেলার দরিদ্র, প্রতিবন্ধী মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য আর্থিক সাহায্য সহ সংবর্ধনা দিয়ে থাকেন। তাছাড়া  তিনি শিশুদেরকে শিক্ষায় উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন প্রাইমারী স্কুলে গিয়ে পরিদর্শন, ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করা, বিভিন্ন ক্রিড়া প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করা এবং তাদের উন্নয়নের জন্য নিজের লেখা  ও অন্যান্য শিক্ষামূলক বই, খাতা, কলম মেধাবীদের মধ্যে বিতরণ করে থাকেন এবং স্কুলের লাইব্রেরীতে ৫০টি করে বই দেন।

তিনি  ভালুকা থানার মুক্তিযোদ্ধা মহিলা কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হিসেবে “ শহীদ পরিবার ফাউন্ডেশন” করেন যার মাধ্যমে তিনি প্রতি বছরই ১৬ ই ডিসেম্বর শহীদ পরিবারের বিধবাদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ  করে থাকেন।

তিনি সাহিত্য জগতে কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ , গল্প, ছড়া, কিশোর ছড়া, বড় কবিতা, কিশোর গল্প, নারী বাদী বই, গান, গজল, নাটক,  লেমিরিক, হাইকু,  ক্লেরিহিউ, গ্র“কস্, শব্দ ধাঁধাঁ, প্রবাদ বাক্য, বাণী, ছবি ঘর ইত্যাদি লিখছেন। যার ফলে সাহিত্য জগতে বর্তমানে তার নাম আলোর মত ঝল ঝল করছে। তিনি প্রতিনিয়ত সামাজিক ও ধর্মীয় গোড়ামীর বিরুদ্ধে এলাকার অসচেতন নারীদের নিয়ে  বাস্তব ভিত্তিক প্রবন্ধ ও নাটক রচনা করে যাচ্ছেন। তিনি সাহিত্যের আবাদে নিবেদিত প্রাণ। তিনি ভালুকা থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্র মানবতা পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি, ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত সতন্ত্র পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক, ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক অগ্রগামী পত্রিকার ষ্টাফ রির্পোটার এবং সাহিত্য পত্রিকা সাপ্তাহিক চত্ত্বরের বিভাগীয় সম্পাদক। তাঁর এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩৮৫ এর উপরে।
 

সেলিনা রশিদ তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ দেশের বিভিন্ন সংঘঠন ও বিশিষ্ট্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০টির অধিক পুরষ্কার, সম্মাননা ও সংবর্ধনা পেয়েছেন। সে সাথে তিনি পেয়েছেন দেশ বরেণ্য নানা গুণীজনের সান্নিধ্য। তার মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য অগ্রগামী গুণিজন সম্মাননা/০৩, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদ এর গুণীজন সংবর্ধনা/০৬, বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস্ সোসাইটি কর্তৃক স্বর্ণপদক/০৬, শ্রীপুর লেখনী সাহিত্য পরিষদ কতৃক দেশ বরেণ্য কবি শামসুর রাহমানের হাত থেকে শ্রীপুর লেখনী সাহিত্য পুরষ্কার/০৫ ও সংবর্ধনা, তারকাঙ্গন স্বর্ণ পদক/০৬, ময়মনসিংহ সেবা নিকেতন কর্তৃক সেবা রত্ন/০৬ ইত্যাদি।

ব্যক্তিগত জীবনে কবি সেলিনা রশিদ ৪ পুত্র সন্তানের জননী। স্বামী ও ছেলেদের প্রতি তিনি তার দায়িত্ব পালন করছেন ঠিকমত। তাঁর স্বামী আবদুর রশিদ স্বেচ্ছাসেবী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আসপাডা পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক।

লেখকঃ-
আবুল বাশার শেখ
ভালুকা/ময়মনসিংহ



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ব্যাক্তিত্ব বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই