তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

লোকবল অবকাঠামোর অভাবসহ নানা সংকটে চলছে চিকিৎসা সেবা

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
লোকবল অবকাঠামোর অভাবসহ নানা সংকটে চলছে চিকিৎসা সেবা
[ভালুকা ডট কম : ০৪ ডিসেম্বর]
গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় লোকবল ও অবকাঠামোর অভাবসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। আগের ১’শ শয্যা গাজীপুর সদর হাসপাতালের জনবল দিয়েই চলছে ৫’শ শয্যার এই হাসপাতালটি। ফলে কাংখিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গাজীপুরবাসী। বেলা ৩টার পর অপারেশন বন্ধ থাকছে। সারাদিন দালালদের দৌরাত্মে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ৫’শ শয্যার জন্য অনুমোদিত জনবল নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র প্রক্রিয়াধীন। পর্যায়ক্রমে নতুন পদগুলো পূরণ করা হবে। ৫’শ শয্যা হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলে আর সমস্যা থাকবে না। দালালদের দৌরাত্ম রোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এদিকে, রোগীদের অভিযোগ, বর্তমানে হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০টি করে বিভিন্ন প্রকার অপারেশন হচ্ছে। বেলা তিনটার পর বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জরুরীভাবে আসা রোগীরা হাসপাতালে অপারেশন না করে দালালদের খপ্পরে পড়ে চলে যেতে হচ্ছে বিভিন্ন ক্লিনিকে। জটিল রোগীরা চলে যাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে। এতে রোগীদের দুর্ভোগ যেমন বাড়ছে, তেমনি জরুরী চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী পথেই মারা যাচ্ছেন।

রোগীদের স্বজনরা অভিযোগ করেন, নিয়ম অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসকদের নিজ নিজ কক্ষে থাকার কথা। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে সকাল ১০টার আগে আউটডোরে কোনো চিকিৎসকের দেখা মেলে না। ফলে যেসব রোগী সকালে সেবা নিতে হাসপাতালে যান, তাদের অপেক্ষায় থাকতে হয়। রোগীদের অভিযোগ হাসপাতালের চিকিৎসক নেতারা রোগীদের সেবা না দিয়ে সারাক্ষণ তাদের কক্ষে দলবাজি, আড্ডা, নিজেদের নানা উৎসব পালন, চিকিৎসা সেবা বাদ দিয়ে অফিস সময়ে হাসপাতালের বড় কর্তাদেরকে তোষমোদে ব্যস্ত থাকছেন। হাসপাতালের ভিতরে ও বাইরে বহিরাগত দালালদের দৌরাত্ম চরম আকার ধারণ করেছে। তারা ভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে ভাগিয়ে নিয়ে যায় রোগীদের। এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষন দাস জানান, জনবলের অভাব ও সিকিউরিটি না থাকায় তাদের প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আরো অভিযোগ করেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বেশির ভাগ রোগীকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার করা হয়। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, ইনজেকশন থেকে শুরু করে অধিক মূল্যের ওষুধগুলো সব রোগীকেই বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়।

শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সদ্য যোগদানকৃত পরিচালক ডাঃ সৈয়দ হাবিবউল্লা জানান, চিকিৎসকদের সঠিক সময়ে উপস্থিতি রোগী দেখা এবং দালালদের দৌরাত্ম রোধ করতে সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। আগের চেয়ে পরিস্থিতি অনেক উন্নত হয়েছে। আউটডোরে ওষুধের সংকট নেই। বরাদ্দ অনুযায়ী রোগীদের মধ্যে তা বিতরণ করা হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট জয়দেবপুর থানা হেলথ কমপ্লেক্স নামে হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৪ সালে একই ভবনে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট থানা হেলথ কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে ‘জেলা সদর হাসপাতাল, গাজীপুর’-এ রূপান্তর করা হয়। ভৌত অবকাঠামো ঠিক রেখে এমনকি জনবল না বাড়িয়ে রোগীদের সেবার স্বার্থে ২০০৪ সালের জুলাই থেকে এটিকে ৫০ থেকে ১’শ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১৩ সালের ২২ আগস্ট ১’শ থেকে ৫’শ শয্যায় রূপান্তরিত করে নাম দেওয়া হয় “৫’শ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টার-গাজীপুর”। ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর থেকে হাসপাতালের নতুন নামকরণ করা হয় “শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল-গাজীপুর”। পরবর্তী সময়ে সদর হাসপাতালের জন্য সম্প্রসারণ করা ভবনেই শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়।

গাজীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষন দাস জানান, ১’শ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়েই ৫’শ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চলছে। বর্তমানে হাসপাতালে ৮৮টি মঞ্জুরীকৃত পদের মধ্যে ৪৭টি পদ পূরণ করা হয়েছে। ৪১টি চিকিৎসকের পদ এখনো শুন্য রয়েছে। হাসপাতালটির পুরো চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে কমপক্ষে আরো ১’শ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। এখানে ২টি সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ২টি জুনিয়র প্যাথঃ ডেন্টিন্ট্রী স্কিনভিডি, ১টি জুনিয়র কনসালট্যান্ট চক্ষু, ৫টি আবাসিক চিকিৎসক/সার্জন, ২টি মেডিকেল অফিসার, ২টি এ্যানেসথেসিওলজীস্ট, ১টি রেজিষ্টার সার্জারী, ৩টি সহকারি রেজিষ্টার সার্জারী, ১টি সহকারী অর্থোপেডিক্স, ৫টি সহকারি রেজিষ্টার গাইনী, ৪টি সহকারি রেজিষ্টার শিশু, ১টি রেজিষ্ট্রার মেডিসিন, ৪টি সহকারি রেজিষ্টার মেডিসিন, ৫টি আইসিইউ/সিসিইউ২টিইএমও পদ শুন্য রয়েছে।

হাসপাতালে কোনো ইনডোর মেডিকেল অফিসার না থাকায় আউটডোরের মেডিকেল অফিসাররাই পালাক্রমে জরুরি বিভাগ ও ইনডোর মেডিকেল অফিসারের কাজ করে থাকেন। প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় ৭’শ ও জরুরি বিভাগে দুই থেকে আড়াই’শ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়ে থাকে। এ বিপুল সংখ্যক রোগীর ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা দিতে প্রতি পদের বিপরীতে আরও চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। বর্তমানে হাসপাতালের ১’শ টি শয্যা রয়েছে। স্থান ও শয্যার অভাবে শতাধিক রোগীকে বারান্দার মেঝেতে রেখেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। দুই’শ রোগীকে প্রতিদিন খাবার দেয়া হচ্ছে। গত বছর গাজীপুর সদর হাসপাতালের নতুন ভবনে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ায় রোগীদের এ স্থানাভাব আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়া চিকিৎসকদের আবাসন সুবিধা না থাকায় প্রায় সব চিকিৎসকই গাজীপুর ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।

জানা গেছে, প্রতিমাসে এ হাসপাতালের মর্গে কমপক্ষে অর্ধশত লাশের পোস্টমর্টেম হয়ে থাকে। ফ্রিজিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও এটি বিদ্যুতের লোড না থাকায় বেওয়ারিশ লাশগুলো বেশিদিন মর্গে রাখা সম্ভব হয় না। হাসপাতালে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও একটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য অধিক ভাড়ায় বাইরের অ্যাম্মুলেন্স ভাড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা। হাসপাতালের চিকিৎসকদের যাতায়াতের জন্য কোনো যানবাহন নেই। এখানে নেই কোনো ট্রমা সেন্টার।

৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫’শ শয্যাবিশিষ্ট ১৫ তলা হাসপাতাল ভবনের মধ্যে আটতলা নির্মাণের কাজ ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল। আটতলা ভবন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে ফিনিশিংয়ের কাজ। আশা করা যায় দ্রুততম সময়ে ভবনটি হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমের পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ৫’শ শয্যার জন্য অনুমোদিত জনবল নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র প্রক্রিয়াধীন। পর্যায়ক্রমে নতুন পদগুলো পূরণ করা হবে। ৫০০ শয্যা হাসপাতালের অবকাঠামোও নির্মাণাধীন। আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই সমস্যা সমাধান হবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই