তারিখ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

আজও নওগাঁর ধামইরহাটের গণকবর ও বধ্যভূমি গুলো অবহেলিত

আজও নওগাঁর ধামইরহাটের গণকবর ও বধ্যভূমি গুলো অবহেলিত
[ভালুকা ডট কম : ০৭ ডিসেম্বর]
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত স্বাধীনতাকামী মানুষের গণকবর ও বধ্যভূমি গুলো আজও অবহেলিত। গণকবর গুলো সঠিক ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নিলে কালের আবর্তে এক দিন দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। এলাকাবাসী এসব গণকবর ও বধ্যভূমি গুলো যথাযথ ভাবে সংরক্ষণের জোর দাবী জানিয়েছেন।

নওগাঁ জেলা সদর থেকে ৫৬ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের কোল ঘেঁষে ধামইরহাট উপজেলার অবস্থান। স্বাধীনতা যুদ্ধে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাক বাহিনী তাদেরকে সহযোগিতায় করার জন্য রাজাকার, আল সামস ও আলবদর বাহিনী গঠন করে এলাকার মুক্তিকামী জনসাধারণকে নির্মম নির্যাতন চালায়। এসব বাহিনী কর্তৃক গণ নির্যাতনের ফলে এলাকার নিরীহ মানুষকে হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকলে গ্রামবাসী দলে দলে প্রাণ ভয়ে উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথ পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। এছাড়া এ পথ দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য আশ্রয় নিয়েছিল। তাই পাক-হানাদার বাহিনী মুক্তি বাহিনীকে দেশে ঢুকতে না দিতে এবং দেশ থেকে ভারতে আশ্রয় ঠেকাতে এ উপজেলার ফার্শিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও জমিদার বাড়ীর পরিত্যাক্ত অংশে সেনা ক্যান্টনমেন্ট গড়ে তোলে ১৯৭১ সালের মার্চের শেষ দিকে।

হানাদার বাহিনীর সাথে এ দেশীয় রাজাকার, আল সামস ও আল বদর বাহিনী যোগ দিয়ে ব্যাপক নির্যাতন অগ্নি সংযোগ, নারীর ইজ্জত হরণসহ গণহত্যা চালিয়ে যায়। যদিও এ উপজেলা হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। কিন্ত তাদের নির্মম অত্যাচার এবং মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে নিরীহ গ্রামবাসীদের ধরে এনে গুলি করে হত্যা করা হয় নির্বিচারে। অনেক লাশের পরিচয় না পাওয়ায় প্রধান সড়কের ধারে এবং ক্যান্টনমেন্টের আশপাশে পড়ে থাকতে দেখা যায়। অনেক লাশ শিয়াল-কুকুরের পেটে যায়। গন্ধে ওই এলাকার আশপাশের বাতাস বিষাক্ত হয়ে ওঠেছিল। এসব হত্যার নজির ফার্শিপাড়া গ্রামের দক্ষিণ ধারে দু’টি এবং উত্তরে বেশ কয়টি গণকবর রয়েছে।

অন্যদিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী কুলফৎপুর গ্রামের ১৪ জনকে একই দিনে কুলফৎপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে পাক বাহিনী। এই নির্মম ও বর্বরোচিত হত্যার পর তাদের লাশ যত্রতত্র পড়ে থাকলেও গ্রামবাসীর পাক সেনাদের সকল ভয়ভীতিতে উপেক্ষা করে লাশগুলোর উদ্বার করে কোন রকমে মাটিচাপা দেয়। এস্থানটিতে উমার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে পাক বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত ১৪ জনের একটি নাম ফলন স্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে এ উপজেলার পাগল দেওয়ান মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমির স্মৃতি চিহৃ আজও মুছে যায়নি। গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো আজ গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

দীর্ঘ ৪৫ বছরে এগুলোর স্মৃতি ধরে রাখার কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় নাই সরকারীভাবে। খোঁজ নেয়া হয়নি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নিহত মানুষগুলোর অসহায় পরিবারগুলোর হাল হকিকত। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব হত্যাকান্ডের কে কার খোঁজ রাখে? তাই নীরবে নিভূতে গণকবর ও বধ্যভূমি গুলোর স্মৃতি চিহৃ দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবী এসব বধ্যভূমি ও গণকবর গুলো সরকারী ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে। নচেৎ এক সময় নতুন প্রজন্ম তাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার যুদ্ধে নিহত মানুষ গুলো সম্পর্কে কোন ধারণা থাকবে না।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই