তারিখ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

উল্লাপাড়ায় সৈয়দ বাহিনীর হুমকিতে গ্রামছাড়া ৪৫ পরিবার

দুই পুলিশ কর্মকর্তার দুই ধরণের প্রতিবেদন
উল্লাপাড়ায় সৈয়দ বাহিনীর হুমকিতে গ্রামছাড়া ৪৫ পরিবার
[ভালুকা ডট কম : ১০ জানুয়ারী]
রাজাকারপুত্র সৈয়দ বাহিনীর হুমকিতে প্রায় এক বছর যাবত গ্রাম ছাড়া উল্লাপাড়া উপজেলার খাদুলী গ্রামের ৪৫টি আওয়ামীলীগ সমর্থক পরিবার। এব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দুই পুলিশ কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্ত করেছেন। তদন্ত শেষে দুই কর্মকর্তা পরস্পর বিরোধী তথ্য উল্লেখ করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। একই ঘটনায় পরস্পর বিরোধী প্রতিবেদন হওয়ায় ৪৫টি ভুক্তভোগী পরিবারসহ সুধীমহলে পুলিশ বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়ে নানা ধরণের প্রশ্ন উঠছে। শাহজাদপুর সার্কেল এএসপি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিলেও উল্লাপাড়া থানার ওসি সৈয়দ আলীর পক্ষে প্রতিবেদন দিয়েছেন।

জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের খাদুলী গ্রামে প্রায় আটশ পরিবারের মধ্য রাজাকার সাইফুল ইসলামের পরিবার সবচেয়ে প্রভাবশালী। জীবিত অবস্থায় প্রভাব খাটিয়ে রাজাকার সাইফুল ইসলাম খাদুলী গ্রামের নান্নু ও জাহাঙ্গীর গংয়ের মালিকানাধীন ও সরকারী সম্পত্তি মোট ৫৪ একর জমি টেম্পারিংয়ের মাধ্যম জাল-জালিয়াতি করে দখল করে নেন। পরে ১১ একর ৮১ শতক সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করে কোটি টাকা আত্মস্যাত করেন। এ নিয়ে গ্রামে একাধিকবার শালিস বৈঠক হলে ওই সময়ের চেয়ারম্যানের নির্দেশে সাইফুল রাজাকার গং দোষী সাব্যস্ত হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

২০১২ সালে সাইফুল রাজাকার মারা গেলে তার ছেলে সৈয়দ আলী, শহিদুল ইসলাম ও ভাই আবু সিদ্দিক ওরফে হুকুম, জালাল উদ্দিন, নবীর হোসেন গংয়েরা নানা ধরণের ষড়যন্ত্র শুরু করেন। ২০১৬ সালে স্থানীয় এমপির নির্দেশে পুলিশ তাদেরকে গ্রামে পুনর্বাসন করেন। গ্রামে ঢুকেই সৈয়দ বাহিনী প্রভাব খাটিয়ে ও পুলিশের সহযোগিতায় নান্নু ও জাহাঙ্গীরসহ ৪৫ পরিবারকে মারপিট করে গ্রাম ছাড়া করেন। একই সময়ে বসতবাড়ীতে হামলা চালিয়ে মারপিট-ভাংচুর করাসহ পুকুরের প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাছ লুটপাট করে নেয়। এ অবস্থায় প্রায় ১২ মাস যাবত ৪৫টি পরিবার বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে থেকে মানবেতর জীবন করছে। তাদের পৈত্রিক  সম্পত্তিতে  চাষাবাদে চাষাবাদ করতে বাধা দেয়ায় প্রায় শতাধিক বিঘা জমি পতিত রয়েছে। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আইজিপি বরাবর আবেদন করলে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দুই পুলিশ কর্মকতা কয়েক দফা তদন্ত করেন।

গত বছরের ৮মে উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান কৌশিক আহমেদ তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে সৈয়দ বাহিনী সাত বছর গ্রাম থেকে বাইরে থাকাবস্থায় সৈয়দ বাহিনীর ৮০ বিঘা সম্পত্তি খাস হিসেবে দাবী করে নান্নু বাহিনী মসজিদের উন্নয়নের নামে দখল করে টাকা আত্মসাত করেছেন। পরবর্তীতে সংসদ সদস্য তানভীর ইমামের নির্দেশে তাদেরকে গ্রামে যেতে সহায়তা করা হয়। সৈয়দ গং গ্রামে গেলেই নান্নু গং আত্মগোপনে চলে গিয়ে নকশাল বাহিনীসহ বিভিন্ন অস্ত্রধারীদের সংগ্রহ করে গ্রামবাসীদের উপর হামলা করবে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী নান্নু গংয়ের সকল অভিযোগ অসত্য এবং তারা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এরপর ঘটনার পুণঃ তদন্তের জন্য শাহজাদপুর সার্কেলের এ.এসপি আবুল হাসনাতকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি সরেজমিন কয়েক দফা  তদন্ত করে ৫টি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি সৈয়দের বাবা সাইফুল স্বাধীনতা বিরোধী উল্লেখ করেছেন। সে সরকারী সম্পত্তি টেম্পোরিং করে দখল করেছে এবং বিভিন্ন জনের কাছে সরকারের ১১ একর ৮২ শতক জমি বিক্রি করেছে। এনিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সৈয়দসহ তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে দুটি মামলাও করা হয়েছে।

এ সকল বিষয় নিয়ে দু-পক্ষের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কার সালিশের মাধ্যমে সৈয়দ আলী বাহিনীকে গ্রাম থেকে বাইরে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত দেন। সাত বছর পর স্থানীয় এমপির নির্দেশে গ্রামে ঢুকে সৈয়দ বাহিনী দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে ৪৫ জন পরিবারকে গত বছরের ফেব্র“য়ারী মাসে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করে।

গ্রাম থেকে বিতাড়িত মন্টু প্রামানিককে সৈয়দ বাহিনী তান্ডবে মেয়ে ও নাতির জানাযায় অংশগ্রহন করতে দেয়নি নান্নুর পক্ষের জাহাঙ্গীর আলমের ৫৫ শতাংশ জলার মাছ লুট করে নিয়ে গেছে। ইরি ধানকাটা ও তিনটি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ইরি ধানের প্রজেক্ট দখলের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও তাদেরকে গ্রামে ফিরে যেতে হলে সৈয়দ বাহিনীকে ৪২ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে চাপ রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। একই ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বশীল দুইজন কর্মকর্তার পরস্পর বিরোধী প্রতিবেদন নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারসহ নানামহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, তদন্ত প্রতিবেদন গুলো পুলিশের আভ্যন্তরীন বিষয়। যে কারণে এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না। তবে যেহেতু জমিজমা নিয়ে বিরোধ। সেক্ষেত্রে পুলিশ নয় সিভিল প্রশাসন এটি নিরসন করতে পারবেন। #



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই