তারিখ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

বিশ্ব ইজতেমা শুক্রবার প্রথম পর্ব শুরু

বিশ্ব ইজতেমা শুক্রবার প্রথম পর্ব শুরু
[ভালুকা ডট কম : ১১ জানুয়ারী]
টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব এজতেমার  প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৩ জানুয়ারী শুক্রবার ফজরের নামাজের পর থেকে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ।

এবার প্রথম পর্বে অংশ নেবে ঢাকার একাংশ ও ১৬টি জেলার তাবলিগ কর্মীরা। ১৫ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাত শেষে চার দিন বিরতির পর ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে। দ্বিতীয় ধাপেও অংশ নেবে আরও ১৬টি জেলার তাবলিগ কর্মীরা। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে বিশ্ব ইজতেমা। এবারে বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম ধাপে ঢাকার অংশবিশেষসহ ১৭টি  জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জয়পুরহাট, মানিকগঞ্জ, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বি বাড়ীয়া, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, সাতক্ষীরা, যশোর।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদ জানান, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিংয়ের জন্য র‌্যাবের ৯টি ও জেলা পুলিশের ৫টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। যে কোনো প্রকার পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

ইজতেমা মাঠের মুরুব্বী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা আশা করছি ৮০টিরও বেশি দেশের মুসল্লীরা এবার ইজতেমা ময়দানে শরীক হবেন। তিনি বলেন, ২৫ হাজার বিদেশী মেহমান অংশগ্রহণের সকল প্রকার প্রস্তুতি ইনশাআল্লাহ আমাদের রয়েছে। বিদেশী মেহমানগন বিদেশী কামরায় অবস্থান করবেন। ইতিমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে দাওয়াতি কাজে নিয়োজিত বিদেশী মেহমানগণ ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন।

ইজতেমার ইতিহাস ও অবকাঠামো॥
১৯৬৭ সালে টঙ্গীর পাগাড় গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্ব ইজতেমা। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টঙ্গীর বিভিন্ন মৌজায় বিশ্ব ইজতেমার জন্য ১৬০ একর ভূমি বরাদ্দ দেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশে ইজতেমাস্থলের রাস্তাঘাট, অসমতল ভূমি সমতলকরণ, ৮ হাজার ১০৬টি পাকা শৌচাগার, পাকা গোসলখানা, ওজুুখানা, বিদেশি মুসল্লিদের জন্য পয়ঃপ্রণালি, রান্নাবান্না, থাকার জন্য স্থায়ী পাকা টিনসেড ঘর নির্মাণ ইত্যাদির আধুনিক ব্যবস্থা, এজতেমা সড়ক নির্মাণ, ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণ ও অন্যান্য উন্নয়নের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাহিদ আহসান রাসেল ইজতেমার সার্বিক উন্নয়নে তদারকি করছেন।

তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতি বছর এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় টঙ্গীর তুরাগ তীরে। বিস্তৃত ইজতেমা মাঠে বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের অনুসারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশ নেন। তারা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শুনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্বব্যাপী  পৌঁছে দেয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ও কলকারখানার শ্রমিক-মালিকসহ বিভিন্ন পেশার মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্ব ইজতেমার মাঠে প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করেছেন। ময়দানে মুসল্লিদের কাতারবদ্ধ হওয়ার জন্যে পুরো মাঠে দাগ কাটা হয়েছে। এছাড়া ইজতেমা ময়দানে জেলাওয়ারি মুসল্লিদের স্থানও (খিত্তা) নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

ইজতেমা মাঠ প্রস্তুতির একাংশের দায়িত্বে নিয়োজিত তাবলিগের মুরব্বি অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সব কাজ করা হচ্ছে মোশাআরার (পরামর্শ) মাধ্যমে। বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বিদেশি মেহমানদের জন্য ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে বিশেষ কামরা তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লিদের তুরাগ নদ পারাপারের জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের সদস্যরা তুরাগ নদের ৭টি স্থানে ভাসমান সেতু নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেছে।

২৬টি খিত্তা ও বিদেশী মেহমানদের জন্য আলাদা মেহমানখানা॥
ইজতেমা মাঠের মুরুব্বী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্রথম পর্বে ২৬টি খিত্তা প্রস্তুত করা হয়েছে। বিদেশী মেহমানদের জন্য ইজতেমা মাঠের পশ্চিম উত্তর দিকে আলাদা মেহমানখানা থাকবে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদেশী মেহমানদের জামাত মানুষকে দ্বীনের পথে দাওয়াত দিচ্ছেন। আগামী বুধবার থেকে দেশের ভেতরে থাকা বিদেশী মেহমান এবং বিদেশের মেহমানগণ ইজতেমা মাঠে অবস্থান নিতে শুরু করবেন।

নিরাপদ পানি॥
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী জোনের প্রকৌশলী জানান, এজতেমা মাঠে স্থাপিত নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন তিন কোটি লিটারেরও বেশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ওজু-গোসলের হাউজ ও টয়লেটসহ প্রয়োজনী স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পাকা দালানে প্রায় ৬ হাজারের মতো টয়লেট ইউনিট রয়েছে। এদের মধ্যে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত অজু-গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে।

তিনি জানান, ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রস্তুতি রয়েছে। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে মূল ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হবে, যাতে যেকোন একটি গ্রিড অকেজো হলেও সামগ্রিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত না হয়। ইজতেমা এলাকায় ৪টি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর এবং ৫টি ট্রলি-মাউন্টেড ট্রান্সফরমারও সংরক্ষণ করা হবে।

অগ্নিনিরাপত্তা॥
ফায়ার সার্ভিসের টঙ্গীর স্টেশন অফিসার মোর্শেদ আলম জানান, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুমও স্থপন করা হয়েছে। যেখানে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা থাকবেন। ময়দানের প্রতি খিত্তায় ফায়ার এস্টিংগুইসারসহ ফায়ারম্যান, গুদাম ঘর ও বিদেশি মেহমানখানা এলাকায় ৩টি পানিবাহী গাড়ি, ৩ সদস্যের ডুবুরি ইউনিট, ১টি স্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট এবং ৫টি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে।  তিনি আরও জানান, ইজতেমা মাঠের ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে তাদের উদ্যোগে ইজতেমা মাঠের আশেপাশের এলাকায় পানি ছিটানো হবে।

স্বাস্থ সেবা॥
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খান জানান, তাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিকেল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে মন্নু  গেট, এটলাস গেট, বাটা কারাখানার গেট ও টঙ্গী হাসপাতাল মাঠসহ ৬টি অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, অ্যাজমা, ট্রমা, বার্ন, চক্ষু এবং ওআরটি কর্নারসহ বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ চিকিৎসা দেবেন। রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা॥
এদিকে, পন্টুন ব্রীজ নির্মাণ ও মুসুল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে কামারপাড়া ব্রীজ থেকে টঙ্গী ব্রীজ পর্যন্ত তুরাগ নদের সকল ধরনের নৌ-যান চলাচল নোঙ্গর করা ৮ জানুয়ারি রোববার থেকে ১৬ জানুয়ারি বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে নৌ-যানগুলো টঙ্গী ব্রীজের পূর্ব পাশে এবং কামারপাড়া সেতুর উত্তর পাশে নোঙ্গর করতে পারবে।

গাড়ি পার্কিং॥
ইজতেমা চলাকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ৮ জানুয়ারি সকাল ৬টা থেকে বিভিন্ন স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে আগত মুসুল্লিদের বহনকারী যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য মহাসড়ক পরিহার করে টঙ্গীর কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল কম্পাউন্ড, মেঘনা টেক্সটাইল মিলের পাশে রাস্তার উভয় পাশে শফিউদ্দিন সরকার একাডেমি মাঠ প্রাঙ্গন ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে টিআইসি মাঠ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ, চান্দনা চৌরাস্তা হাইস্কুল মাঠ, তেলিপাড়া ট্রাকস্ট্যান্ড এবং নরসিংদী-কালীগঞ্জ হয়ে আগত মুসুল্লিদের বহনকারী যানবাহন টঙ্গীর কে-টু ও নেভী সিগারেট কারখানা সংলগ্ন খোলা স্থান ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসনসুত্র জানায়, ১১ জানুয়ারী সন্ধ্যা ৬টা থেকে উল্লেখিত সড়ক পরিহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহত্তর জেলাগুলো থেকে ঢাকাগামী সকল যানবাহন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী হয়ে ডিএমপি এলাকায় প্রবেশের পরিবর্তে চান্দনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী, কালিয়াকৈর-চন্দ্রা, বাইপাইল, নবীনগর, আমিনবাজার হয়ে চলাচল করবে।

ইজতেমা চলাকালে নামাজের সময় তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ে ইমামের সামনে না দাঁড়িয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবার দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমায় দেশি-বিদেশি ৩৫ থেকে ৪০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে ঢাকার অংশবিশেষসহ ১৬টি জেলার মুসুল্লিরা অংশ নেবেন। দ্বিতীয় ধাপে অংশ নেবেন আরও ১৬টি জেলার মুসুল্লিরা।

ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতকিাজে নিয়োজিত টাঙ্গাইল জেলার কাঁকড়াজান গ্রামের আব্দুর রহমান (৫৫) বলেন, তাবলীগ জামাতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ধর্মীয় শৃঙ্খলা মেনে চলা। তাবলীগ জামাতের দেশ বিদেশের শীর্ষ মুরুব্বীদের নির্দেশনা অনুযায়ী ইজতেমায় অংশগ্রহনই উদ্দেশ্য। আমরা মুলত মানুষকে দাওয়াতা দেই আর বছর শেষে মাশোআরার মাধ্যমে জামা তৈরী করে ইজতেমাস্থল থেকে দেশে বিদেশে মুসল্লেিদর পাঠাই।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ইসলামীক বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই