তারিখ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

রাণীনগরের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়

১০৩ বছর পেরিয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে
রাণীনগরের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়
[ভালুকা ডট কম : ১২ জানুয়ারী]
কথায় আছে “ ধ্যানের চর্চা হয় গুহায়, ধর্মের চর্চা হয় মসজিদ, মন্দির, গির্জায় ও প্যাগোডায়, নীতির চর্চা হয় নিজ পরিবারে আর বিদ্যার চর্চা হয় বিদ্যালয়ে”।আর বিদ্যা চর্চার এমন একটি শতবর্ষী বিদ্যাপিঠ নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার রাতোয়াল গ্রামে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়টি ১০৩ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। বিদ্যালয়টি রবীন্দ্র নিদর্শন এবং সমগ্র বাংলাদেশের মধ্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে তৎকালিন সময়ে একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়টিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করা হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর এই বিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে যুক্ত করা হয় বিশ্বকবি শব্দটি।

বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৩শত ৮০জন শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহন করে। এরমধ্যে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩শত জন শিক্ষার্থী পাঠগ্রহণ করে। বিদ্যালয়ে মোট ৮জন শিক্ষক ও ৪জন কর্মচারী কর্মরত আছেন। বিদ্যালয়ে নতুন ও পুরাতন মিলে মোট ৭টি কক্ষে চলে পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যালটিতে বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে যে টুকু উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছিল। বিদ্যালয়ের উত্তর দিকের দুই তলা ভবনটি তৈরি হয়েছিল ১৯৯৫ সালে, পূর্বদিকের দুই তলা ভবনটি তৈরি হয়েছিল ২০০৬ সালে ও পশ্চিম দিকের টিন শেটের জোড়া তালি দেওয়া পুরাতন কক্ষগুলোতেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা, ১৮৮৫ সালের শুরুর দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কালীগ্রাম পরগনার জমিদারি দেখাশুনার জন্য রাতোয়াল গ্রামে আসতেন। তিনি (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) বিশ্বাস করতেন প্রজাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষার আলো ছাড়া প্রজাদের সার্বিক উন্নয়ন একেবারেই সম্ভব নয়। সে উপলব্ধি থেকেই সেই সময়ের কিছু পন্ডিতদের সহায়তায় এই রাতোয়াল গ্রামে বিশ্বকবির নামে আদর্শ এই বিদ্যাপিঠের পথ চলা। সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যানেজার শ্যামানন্দ গুহ কালিগ্রাম পরগনার এই মূল জমিদারি (পতিশর ষ্ট্রেট) দেখাশুনা করতেন এবং তার ছেলে নিত্যানন্দ গুহ ( নিতাই বাবু) দেখাশুনা করতেন (সাবষ্ট্রেট) তথা এই এলাকা।

তাদের সার্বিক সহযোগিতায় তৎকালিন রাতোয়াল গ্রামের আক্কাছ আলী পন্ডিত, শমসের আলী আকন্দ, কফিল আলী আকন্দ এবং এরফান আলী আকন্দকে সঙ্গে নিয়ে এই ঐতিহ্যবাহি বিদ্যালয়টির পথচলা শুরু হয়। বিদ্যালয়টি তৎকালিন সময়ে আজিজুল্লাহ আকন্দের বৈঠকখানায় শুরু হলেও পরবর্তিতে রবীন্দ্র ষ্ট্রেটের নিজস্ব সম্পত্তির উপড় মাটির ক’টি ঘর তৈরি করে ১৮৮৫ সালে (অনুমান) প্রাথমিক ভাবে শিক্ষাদান শুরু হয়।

তখন হেড পন্ডিত হিসেবে রাতোয়াল গ্রামের আক্কাছ আলী পন্ডিত এর উপড় বিদ্যালয়টির দায়িত্ব অর্পন করা হয়। পরবর্তিতে আরও অনেকেই ঐতিহ্যবাহি এই বিদ্যালয়টির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিদ্যালয়টি ১৯১৩ সালে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। বিশ্বকবির স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টিতে আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে অনেক পিছিয়ে।

আদর্শ এই বিদ্যাপিঠ থেকে শিক্ষা নিয়ে এলাকার অনেকেই আজ দেশ-বিদেশ সহ নিজ দেশের বিভিন্ন বিভাগে উর্দ্ধতন পদে কর্মরত থেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলছেন আর বিশ্বের মাঝে আলোকিত করেছেন এই অজপাড়া গ্রামের এই আদর্শ বিদ্যালয়টির নাম। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর অধ্যাপক জুলু চৌধুরী, প্রকৌশলী মুজিবুর রহমান ছিলেন বিসিআইসির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, ৫ম শ্রেণির গণিত বইয়ের লেখক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লুৎফুত জামান ও বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা: মোখলেছুর রহমানসহ আরোও অনেকেই ছিলেন এই আদর্শ বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থী।

পরবর্তি সময়ে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শান্তি নিকেতনের প্রতিনিধিবৃন্দ। এছাড়াও দেশের মন্ত্রি, এমপি, সরকারি উর্দ্ধোতন কর্মকর্তা, রবীন্দ্র গবেষক, কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিকসহ নানা গুনিজন। কিন্তু শত বছরের ঐতিহ্য নিয়ে গৌরব উজ্জ্বল মুকুট মাথায় পড়ে দাঁড়িয়ে আছে যে বিদ্যাপিঠ সেই ঐতিহাসিক বিদ্যালয়টিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগানোর কোন প্রদক্ষেপ আজ পর্যন্ত গ্রহন করা হয়নি।

বিশ্বকবিকে প্রত্যক্ষভাবে দেখার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী রাতোয়াল গ্রামের শরফরাজ আলী আকন্দ (১০০) স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বলেন, বিশ্বকবি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর শেষ বারের মত যখন তার পতিসরের জমিদারি দেখতে আসেন তখন তিনি এই বিদ্যালয়টিতে ৫ম শ্রেণিতে পড়তেন। বিশ্বকবিকে প্রত্যক্ষ ভাবে দেখার জন্য এই বিদ্যালয় থেকে তিনি সহ আরও অনেক ছাত্ররা পতিসরে পায়ে হেঁটে গিয়েছেন। বিশ্ব কবিকে দেখতে পতিসরে গেলে সেখানে আগত মানুষদের যে খাবার খাওয়ানো হয়েছিল তার স্বাদ এখনো জিহ্বায় লেগে রয়েছে বলে তিনি জানান।

এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো: আকতার আহমেদ বলেন, আমি এই আদর্শ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম বলে গর্বিত। আমি বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হয়ে চেষ্টা করে যাবো এই ঐতিহ্যবাহী আদর্শ বিদ্যাপিঠের সার্বিক উন্নয়ন করার জন্য।

এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শুকবর আলী জানান, আমি কখনো ভাবতে পারিনি যে আমি এই ঐতিহ্যবাহী আদর্শ বিদ্যাপিঠের ছাত্র থেকে শিক্ষক হবো। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমি সবসময় চেষ্টা করি এই বিদ্যাপিঠ থেকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে শিক্ষার্থীদের আগামীর জন্য তৈরি করার জন্য।#
 



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই