তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাত রবিবার

বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাত রবিবার
[ভালুকা ডট কম : ১৪ জানুয়ারী]
কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগ পাড়ের বিশ্ব ইজতেমাস্থল এখন দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত। শিল্প নগরী টঙ্গী এখন যেন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবার আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-বিধান ও রাসুল (সঃ) প্রদর্শিত তরিকা অনুযায়ী জীবন গড়ার আহ্বান জানিয়ে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জিকির আসকার, ইবাদত বন্দেগী আর ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র কোরআনের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ানের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মুসলিমবিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত এবারের ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বি দিল্লির মারকাজের শূরা সদস্য হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছে আয়োজক কমিটি। ইজতেমা ময়দানে বিদেশী নিবাসের পূর্বপার্শ্বে বিশেষভাবে স্থাপিত মঞ্চ থেকে এ মোনাজাত পরিচালনা করা হবে। এরআগে অনুষ্ঠিত হবে হেদায়তি বয়ান। রবিবার হেদায়তি বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার তিন দিনের প্রথম পর্ব।

এরপর চারদিন বিরতি দিয়ে আগামি শুক্রবার শুরু হবে তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। আখেরি মোনাজাতে মুসল্লীদের আসা ও যাওয়া নিরাপদ করতে শনিবার দিবাগত মধ্য রাত থেকে মোনাজাত অনুষ্ঠাণ পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানগামী সড়কে যানবাহ চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে পুলিশ। এদিকে গতবছরের মতো এবারও বিশ্বইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুক বিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়নি।

মহান আল্লাহতাআলার নৈকট্য লাভের ব্যাকুলতায় দ্বীনের দাওয়াতে মেহনত করার জন্য ইসলামের মর্মবাণী সর্বত্র পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলে দলে ছুটে আসছেন টঙ্গীর তুরাগ তীর ইজতেমা ময়দানে। শনিবারও টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। রবিবার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। মূল প্যান্ডেলে স্থান না পেয়ে অনেক মুসুল্লী নিজ উদ্যোগেই প্যান্ডেলের বাইরে পলিথিন সিট ও কাপড়ের সামিয়ানা টানিয়ে তাতেই অবস্থান নিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার বন্দনা, আরজ-গুজার, শোকরানা আর ইবাদত বন্দিগীতে মশগুল মানুষের কলরব। সৃষ্টিকর্তার দিদার লাভের জন্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পায়ে হেঁটে, র‌্যাব ও পুলিশ পাহারায় বাস ও ট্রেনে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্বএজতেমা ময়দানে সমবেত হয়েছেন। এদিকে ২০১৫ সাল হতে দেশের মোট ৬৪টি জেলাকে দু’বছরে চার পর্বে বিভক্ত করে ইজতেমার আয়োজন করায় এবারের প্রথম পর্বের ইজতেমায় আগত মুসল্লীরা স্বস্তিতে ও নির্বিঘ্নে সময় কাটিয়েছেন। এলাকাবাসিও নানা ভোগান্তি থেকে অনেকটা মুক্ত ছিল।

এদিকে এবারও তাবলিগের শীর্ষ মুরুব্বীরা রেডিও-টিভিতে আখেরি মোনাজাত সরাসরি সম্প্রচারে অনুমতি দেননি। ক্যামেরাও মুরুব্বীদের ছবি তোলাও বারণ করে দিয়েছে ইজতেমা কর্তৃপক্ষ। তারপরও কিছু কিছু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইজতেমা কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতে আখেরি মোনাজাত সম্প্রচার করার উদ্যোগ  নিয়েছেন।

দ্বিতীয় দিন (শনিবার) যারা বয়ান  করলেন ॥
নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবার মুসুল্লীদের উদ্দেশ্যে বাদ ফজর বয়ান করেন পাকিস্তানের হযরত মাওলানা মোহাম্মদ জমশেদ। এসময় বাংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। এরপর বাদ জোহর বাংলাদেশের মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন, বাদ আসর ভারতের হযরত মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ ও বাদ মাগরিব দিল্লির হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ বয়ান করেন। দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করে ফজিলতপূর্ন এ বয়ান শুনেন।  

যা বয়ান করলেন- তাবলিগ জামাতের মুরুব্বীগণ ইজতেমার সুবিশাল ময়দানে সমবেত দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশ্যে তাবলিগের ছয় উসুল যথা কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমিন, তাসহিয়ে নিয়ত এবং তাবলিগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন। বয়ানে তাবলীগ মুরব্বীরা বলেন, যতদিন দ্বীন থাকবে, তত দিন দুনিয়া থাকবে। আর দ্বীন টিকে থাকবে দাওয়াতের মাধ্যমে। যুগে যুগে নবী-রাসুলগণ দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করে গেছেন। ফেরাউনের কাছেও দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে আল্লাহ্ হযরত মুসা (আ:) কে পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহ যাল্লে জালালুহু নবী-রাসুলদেরকে তাদের নিজের পরিবার ও বিভিন্ন গোত্রের মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:) কে সারা দুনিয়ায় দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। আজ তিনি নেই। এ কাজের জিম্মাদারী এখন তার উম্মতের ওপর।

বয়ানে আরো বলা হয়, দুনিয়ার জিন্দেগী ক্ষণস্থায়ী, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের দিল থেকে আসবাবের (সম্পদের) এক্বিন বের না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার দিলে কুদরতি এক্বিন পয়দা হবে না। সকলকে দ্বীনের জন্য মেহনত করতে হবে। আল্লাহর কাছে আমল ছাড়া এ দুনিয়ার জিন্দেগীর কোন মূল্য নেই। বয়ানে আরো বলা হয়, দীনের দাওয়াতের মাধ্যমে ঈমান মজবুত হয়। ঈমান মজবুত হলে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এ সম্পর্ক গড়ে ওঠলে দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াবি হাসিল হয়।  

বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ ॥
বিশ্বইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের ১৫-২০জন শুরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান পেশ করেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরুব্বী মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান। মূল বক্তা বয়ানের একটি নির্দিষ্ট অংশ শেষ করার পর অনুবাদের জন্য বিরতি দেন। অনুবাদ শেষ হলে তিনি আবার বয়ান শুরু করে। এভাবেই ইজতেমা ময়দানে তাবলীগ জামাতের মুরব্বীদের বয়ান চলে।

তাশকিলের কামরায় চিল্লাভুক্ত মুসুল্লী ॥
ইজতেমার প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন খিত্তা থেকে বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় অংশ গ্রহনেচ্ছু মুসুল্লীদের এ কামরায় আনা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। পরে কাকরাইলের মসজিদের তাবলিগি মুরুব্বীদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ি এলাকা ভাগ করে তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাবলিগি কাজে পাঠনো হবে।

আখেরী মোনাজাতের প্রস্তুতি ॥
আজ রবিবার ইজতেমার মূল আকর্ষণ আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ইজতেমা মাঠের বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে বিশেষ মোনাজাত মঞ্চ থেকে রবিবার বেলা ১১ টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বী মাওলানা গিয়াস উদ্দীন। এর আগে হবে হেদায়তি বয়ান। রবিবার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লীদের ঢল অব্যাহত থাকবে। ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে বিপুল সংখ্যক মহিলা টঙ্গীর আশপাশে এসে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকে তাদের আত্মিয় স্বজনদের বাড়িতে উঠেছেন।রবিবার হেদায়তি বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার তিন দিনের প্রথম দফা। আগামি শুক্রবার শুরু হবে তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দফা।

এবার প্রায় ৬ হাজার জামাত তাবলিগের দাওয়াত নিয়ে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে ॥
তাবলিগ জামাতের অন্যতম মুরব্বি বলেন, তাবলিগের একমাত্র কাজই আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকা। রাসূল (সাঃ)-এর বিদায় হজের ভাষণের মূল বাণী হিসেবে আমরা আল্লাহর পথে ডেকে থাকি। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই এর একমাত্র লক্ষ্য। একমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের একক আনুকূল্যে এই ইজতেমা হয়ে থাকে। টঙ্গীর এই ইজতেমা থেকেই বিশ্বের অন্ততঃ ১৫০টি দেশে দাওয়াতের এই কাজ করা হয়। প্রতি বছর টঙ্গী ইজতেমা থেকেই পাঁচ থেকে ছয় হাজার জামাত বিশ্বব্যাপী পাঠানো হয়। আগত বছরের বিশাল কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা টঙ্গী থেকেই হয়। তিনি সকল মুসলমানদের কিছুটা সময় হলেও ইজতেমায় ব্যয় করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এবারো প্রায় ছয় হাজার জামাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাবলিগের কাজে বেরিয়ে যাবে।

আরো এক মুসল্লির মৃত্যু ॥
বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে শনিবার ভোর ৫টা ৫৩ মিনিটে আরো এক মুসল্লি ইন্তেকাল করেছেন। তার নাম তারা মিয়া (৬৫)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের জগতশাহ গ্রামের মৃত হাসান মিয়ার ছেলে। তিনি শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছিলেন। এ নিয়ে গত দুই দিনে ইজতেমা ময়দানে ৭ মুসল্লি মারা গেছেন।

এবারও যৌতুকবিহীন বিয়ে হয়নি ॥ বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আছর ইজতেমা ময়দানে কণের অনুপস্থিতিতে যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন করা হতো। গত বছরের মতো এবছরও ওই বিয়ের আয়োজন থাকছেনা বলে জানিয়েছেন বিশ্বইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন।

তিনি জানান, বিগত বছরগুলোতে বিশ্বইজতেমা ময়দানে কণের অনুপস্থিতিতে বিয়ে অনুষ্ঠিত হতো। গত বছর তা হয়নি। এবছরও ওই বিয়ের আয়োজন থাকছেনা। ইজতেমা ময়দানে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হলে তা কেবল এই ময়দানে আসা তাবলিগি সদস্যরা ও মুসুল্লীরা জানতে পারেন। এলাকার লোকজন এমনকি অনেক স্বজনরাও তা জানতে পারেন না। ফলে ওই বিয়ের আকর্ষণ কমে যায়। এজন্য গত বছর থেকে ইজতেমা ময়দানে যৌতুকবিহীন বিয়ের জন্য তালিকা ভুক্ত হলেও তাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ওই বিয়ের আয়োজন করতে বলা হয়েছে। তাই গত বছরের মতো মাঠে ওই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা নেই।  

তিনি আরো জানান, বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ ছিল যৌতুক বিহীন বিয়ে। সম্পূর্ণ শরীয়ত মেনে তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ি ইজতেমার দ্বিতীয় দিন (শনিবার) বাদ আছর ইজতেমার বয়ান মঞ্চের পাশেই বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর বসতো। কনের সম্মতিতে ও তার অনুপস্থিতিতে বর এবং কণে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হত ওই বিয়ে। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হতো ‘মোহর ফাতেমী’র নিয়মানুযায়ী। এ নিয়ম অনুযায়ী মোহরানার পরিমান ধরা হয় দেড়শ’ তোলা রুপা বা উহার সমমূল্য অর্থ।

চিকিৎসা সেবা ॥
গাজীপুর সিভিল সার্জনের অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের তুলনায় ইজতেমায় আগত রোগীর সংখ্যা শনিবার বেড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় সিভিল সার্জনের নিয়ন্ত্রণাধীন স্বাস্থ্য ক্যাম্পগুলোতে ৫হাজারের বেশী মুসল্লীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন মেডিকেল ক্যাম্পের প্রতিটিতেই রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে সকাল পর্যন্ত ২৩জনকে টঙ্গী সরকারী হাসপাতলে ভর্তি এবং ১৭ মুসুল্লিকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। ইজতেমার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকগণ জানান, এসব মুসুল্লীদের অধিকাংশই হৃদরোগ, অ্যাজমা, পেটেরপীড়া ও ঠান্ডায় আক্রান্ত হন। এছাড়া ইজতেমাস্থলের আশে-পাশের বিনামূল্যে বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্র গুলোতেও  কয়েক হাজার মুসুল্লী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পে চিকিৎসা ॥ শনিবার সকাল থেকে ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে মুসুল্লিদের চিকিৎসা নিতে ভিড় দেখা গেছে। মুসুল্লীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য ময়দানের আশপাশে ও মন্নু নগর এলাকায় বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি পরিষদ, র‌্যাব’র ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প, গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস, হামদর্দ ওয়াক্ফ, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিকেলস, টঙ্গী ঔষধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, রওশন জাহান ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক কলেজ, বাংলাদেশ হোমিও প্যাথিক পরিষদ, জাতীয় ইমাম সমিতি, ইসলামি ফাউন্ডেশনের ইসলামি মিশন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনেরসহ বিভিন্ন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। এলোপ্যাথি ছাড়াও মুসুল্লীরা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিতে তাদের ক্যাম্পে ভিড় করেছেন। অসুস্থ্যদের অধিকাংশই ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, আমাশয়, শ্বাসকষ্টের রোগী।   

হকার ও পকেটমার আটক ॥
বিশ্ব ইজতেমা ও আপপাশ এলাকা থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত হকার ও পকেটমারকে আটক করেছে পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যরা।

জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত ॥
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রাহেনুল ইসলাম জানান, শনিবার দুপুর পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমান আদালত ইজতেমাস্থলের আশে-পাশে বিভিন্ন খাবার দোকান ও হোটেলে অভিযান চালিয়ে ভেজাল খাবার পরিবেশন ও বিক্রির দায়ে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইনে এবং অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে ৩৬টি প্রতিষ্ঠাণ ও ব্যাক্তিকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা ও আদায় করেন। এজতেমাস্থলের আশে-পাশে ৫টি করে দু’শিফটে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের মোট ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ওইসব আদালত পরিচালনা করছেন।

মোনাজাতের দিন চলবে শ্যাটল বাস ॥
গাজীপুরের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে রবিবার আখেরি মোনাজাতের সময় পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে কুড়িল বিশ্বরোড, আব্দুল্লাহপুর-কালিয়াকৈর সড়কে সাভারের বাইপাইল থেকে আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গীর স্টেশন রোড থেকে মীরের বাজার পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি ছাড়া সাধারন যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে আখেরি মোনাজাতের দিন রবিবার সকাল থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে ইজতেমাস্থল পর্যন্ত  মুসুল্লীদের সুবিধার্থে প্রায় অর্ধশত বিআরটিসি বাস ও ব্যাক্তি মালিকানাধীন আরো প্রায় অর্ধশত (ইজতেমার স্টিকার লাগানো) শ্যাটল বাস চলাচল করবে।

বিশেষ ট্রেন ॥
বিশ্বইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে ২১ টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া আখেরি মোনাজাতের আগে ও পরে সকল ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে। টঙ্গী রেলওয়ে জংশন সূত্রে জানা গেছে, রবিবার আখেরি মোনাজাতের দিন জামালপুর-টঙ্গী একটি, আখাউড়া-টঙ্গী একটি, টঙ্গী-ময়মনসিংহ, লাকসাম-টঙ্গী রুটে বিশেষ ট্রেন যাতায়াত করবে। এছাড়াও আখেরি মোনাজাতের আগে-পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে বলে জানিয়েছেন টঙ্গীর রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা মোঃ হালিমুজ্জামান।

বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসল্লি ॥
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, শনিবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বের অন্ততঃ ৯২টি দেশের প্রায় ৮ হাজার বিদেশী মুসল্লি ইতোমধ্যে ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। আরো বিদেশী মেহমান টঙ্গীর পথে রয়েছেন। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশী মেহমানদের জন্য পৃথক বিদেশী নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ভিআইপিরা কে কোথায় মোনাজাতে অংশ নেবেন ॥
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে একাধিক ভিআইপি বয়ান মঞ্চে বসে মোনাজাতে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  এছাড়াও প্রতিবারের মতো এবারো দোয়া মঞ্চের পাশে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং হোন্ডা (এটলাস) কারখানার ছাদে বিশেষভাবে তৈরি মঞ্চে বসে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আখেরি মোনাজাতে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। তবে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশির এবারও টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান এলাকায় বসে মোনাজাতে অংশ গ্রহনের পরিবর্তে মুসুল্লীদের ভিড় এড়াতে ও নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকায় অবস্থান নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় এবারও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মোনাজাতে অংশ নিতে পারেন বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে আখেরী মোনাজাতে ভিআইপিদের অংশ গ্রহনের জন্য ইজতেমাস্থলে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকসহ মন্ত্রী পরিষদের একাধিক সদস্য, জাতীয় সংসদের সদস্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের কর্মকর্তাগন জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোলরুমসহ ময়দানের বিভিন্ন স্থানে উপস্থিত হয়ে মোনাজাতে অংশ নেবেন।  

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি’র প্রেস ব্রিফিং ॥
বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা বিষয়ে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান শনিবার দুপুরে  ইজতেমা ময়দানের মিডিয়াসেলের সামনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জানান, ইজতেমা ময়দানে যাতে কোন ধরনের নাশকতা কেউ করতে না পারে সেজন্য এবারের ইজতেমা ময়দানে আরো বেশী সতর্ক অবস্থা নেয়া হয়েছে। নাশকতার বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে এবার বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইজতেমা ময়দানে সে সকল বিদেশী মুসুল্লি অংশ নিয়েছেন, তাদের ব্যপারে পূর্ব থেকে খোঁজ খবর নিয়ে ইজতেমায় আসার অনুমতি দিয়েছে সরকার।

আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে বাড়তি নিরাপত্তা ॥
রবিবার টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাত। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে গাজীপুর পুলিশ প্রশাসন বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। শনিবার দুপুরে ইজতেমাস্থলে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সামনে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো: হারুন অর রশিদ জানান, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আমরা বাড়তি নিরাপত্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মোনাজাতের দিন অন্যান্য দিনের চেয়ে দ্বিগুন ফোর্স (দুই শিফটের ফোর্স এক শিফটে) মোতায়েন করা হবে। গত শুক্রবার  লাখ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটেছে। মুসল্লিরা রাস্তায় নামাজ আদায় করেছেন। আমরা আশা করছি, আখেরী মোনাজাতের দিনও প্রচুর লোকের সমাগম ঘটবে। সেই কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। তিনি জানান, শনিবার টঙ্গী ব্রীজ থেকে ভোগড়া বাইপাস, টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে মীরেরবাজার পর্যন্ত এবং কামারপাড়া সড়কে কোন যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকায় ৫ স্তরের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। ইজতেমা মাঠে প্রবেশের রাস্তাগুলোতে ৫ স্তরে নিরাপত্তা তল্লাশী পেরিয়ে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে হচ্ছে। বিদেশী নিবাসসহ প্যান্ডেলের ভিতর ও বাইরে মুসল্লি বেশে রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় সহস্রাধিক সদস্য। তারা ৫টি স্তরে নিরাপত্তা দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ইজতেমা ময়দানের সব প্রবেশপথে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপিত পর্যবেক্ষন টাওয়ার ফুট পেট্রল, রিভার পেট্রলের মাধ্যমে সর্বক্ষনিক মনিটরিং করা হচ্ছে।। ভ্রাম্যমান আদালত সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে।

যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা ॥
গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদ জানান, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লিদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত ও সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য ট্রাফিক বিভাগ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে নানা মুখী পরিকল্পনা রয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু রাখতে এবার ডিজিটাল নজরদারী তিনগুন বাড়ানো হয়েছে। প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে আজ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালিগঞ্জ সড়কে দুপুর পর্যন্ত যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। এছাড়া টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় কলকারখানা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব ইজতেমার জন্য ১ দিন কারখানা বন্ধের ঘোষনা দিয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিকরা যাতে করে আখেরী মোনাজাতে শরীক হতে পারে সে জন্য এ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

যে সকল এলাকায় গাড়ি পার্কিং করা যাবে না ॥
ইজতেমার আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে মুসল্লিদের সুবিধার্থে শনিবার বিকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মহাখালি ক্রসিং থেকে টঙ্গী হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তার পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে, টঙ্গী-কালিগঞ্জ সড়কের টঙ্গী হতে মীরের বাজার পর্যন্ত, আব্দুল্লাহপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে, প্রগতি স্বরণিস্থ মধ্যবাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রগতি স্বরণিস্থ রাস্তার দুই পাশে যানবাহন পার্কিং করা যাবেনা।

বিআরটিসি বাস সার্ভিস ॥
ইজতেমাস্থলে মুসল্লীদের যাতায়তের সুবিধার্থে বিআরটিসি ২২৮টি স্পেশাল বাস সার্ভিস চলাচল করেছে। এসব সার্ভিস দ্বিতীয় পর্বের মোনাজাতের পরদিন ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে।

গাড়ি পার্কিং ॥
ইজতেমার মুসল্লিদের বহণকারী যানবাহগুলো গাজীপুরের নির্ধারিত স্থানগুলোতে পার্কিং করার জন্য বলা হয়েছে। টঙ্গীর কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলের খোলা জায়গা, মেঘনা টেক্সটাইল মিলের পাশের রাস্তার উভয় পাশে, সফিউদ্দিন একাডেমির মাঠ, সফিউদ্দিন একাডেমির উত্তর পাশে টিআইসি মাঠ, জয়দেবপুর থানাধীন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ, চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, চৌরাস্তা  ট্রাক স্ট্যান্ড, টঙ্গীর কে-টু  (নেভি) সিগারেট কারখানার পাশে খোলা জায়গায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইজতেমায় জমেছে জ্যাকেট-কম্বলের ব্যবসাও ॥
শুক্রবার থেকে রাজধানীর উপকণ্ঠ টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এদিকে বুধবার রাত থেকেই রাজধানীর তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। বইছে শৈত্য প্রবাহ। তবে শীতকে উপেক্ষা করেই ইজতেমাতে যোগ দিয়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা।

এদিকে, প্রচণ্ড শীতকে কেন্দ্র করে টঙ্গি ইজতেমার আশপাশে অস্থায়ীভাবে বসেছে কম্বল-জ্যাকেটের দোকান। মুসল্লীদের আনাগোনায় জমেছে দোকানগুলো। মুসল্লীরা বয়ানের ফাঁকে ফাঁকে এসে এগুলো কিনে মাঠে যাচ্ছেন। অনেকে আবার ইজতেমা মাঠে প্রবেশের আগেই এগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দোকানগুলোতে সর্বনিম্ন ৬’শ টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার ২’শ টাকা পর্যন্ত দামের কম্বল বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, ৬’শ টাকার কম্বল চাইনিজ কাপড়ের আর বেশি দামেরগুলো কোরিয়ান। চাইনিজ লেপের দাম ১ হাজার ৪’শ টাকা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রচণ্ড শীত থাকলেও এবার কম্বলের চাহিদা কম।

কম্বল ব্যবসায়ী রাব্বি হোসেন বলেন, এবার মানুষ কম এসেছে। কেনা-বেচা কম। গতবার যেগুলো ৭’শ-৮’শ তে বিক্রি করেছি, এবার সেগুলো ৬’শ টাকাতেও বিক্রি করতে পারছি না। তিনি জানান, যারা বাড়ি থেকে ইজতেমায় এসেছেন তারা সঙ্গে কম্বল-বিছানা নিয়ে এসেছেন। আর যারা চিল্লা ও জামাত থেকে সরাসরি ইজতেমায় এসেছেন তারাই কেবল কম্বল কিনছেন। এবার তাদের সংখ্যা তুলনামূলক কম।

কম্বলের পাশাপাশি ইজতেমা ময়দানের পাশে জমে উঠেছে জ্যাকেট ও বে¬জারের দোকানগুলো। সর্বনিম্ন ৬’শ থেকে ৯’শ টাকা দামে ঢাকার কালিগঞ্জে তৈরি জ্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে। বে¬জারের দাম ১৫০ থেকে শুরু।

শীতকাল শেষ দিকে থাকায় পাইকারী ও তুলনামূলক কম দামে জ্যাকেটগুলো বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতা আব্দুস সামাদ। রবিন নামের একজন বলেন, জ্যাকেটের মানের তুলনায় দাম কম।

তিনদিনব্যাপী ইজতেমায় অংশ নিতে ইতোমধ্যে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে দেশের নির্দিষ্ট ১৬ জেলা থেকে আসছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লী। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হবে রোববার। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রায় ৩০টি দেশ থেকে আসা মুসল্লীরা ইজতেমায় অংশ নেবেন।

দ্বিতীয় পর্বে মুসল্লিরা খিত্তা ওয়ারি যেভাবে অবস্থান নেবেন ॥
আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবে ১৫টি জেলাসহ ঢাকা জেলার বাকী অংশের তাবলিগ অনুসারী মুসল্লীরা। ওইসব জেলা ও খিত্তাগুলো হলো- ঢাকা জেলা ১  থেকে ৫ নং খিত্তায়, মেহেরপুর জেলা ৬ নং খিত্তায়, ঢাকা জেলা ৭ নং খিত্তায়, বাগেরহাট ৮ নং খিত্তায়,  রাজবাড়ি ৯ নং খিত্তায়, দিনাজপুর ১০ নং খিত্তায়, হবিগঞ্জ ১১নং খিত্তায়, মুন্সীগঞ্জ ১২ ও ১৩ নং খিত্তায়, কিশোরগঞ্জ ১৪ ও ১৫ নং খিত্তায়,  কক্সবাজার ১৬ নং খিত্তায়, নোয়াখালি ১৭ ও ১৮ নং খিত্তায়, বাগেরহাট ১৯ নং খিত্তায়, চাঁদপুর ২০ নং খিত্তায়,  পাবনা ২১ ও ২২ নং খিত্তায়, নওগা ২৩ নং খিত্তায়, কুষ্টিয়া ২৪ নং খিত্তায়,বরগুনা জেলা ২৫নং খিত্তায় এবং বরিশাল জেলা ২৬ নং খিত্তায়।

আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর কাকরাইল জামে মসজিদে প্রথম বিশ্ব ইজতেমার প্রচলন শুরু হয় ১৯৪৬ সালে। এরপর ১৯৪৮ সালে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে। ১৯৫৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। ১৯৬৬ সাল থেকে গাজীপুরের শিল্প নগরী টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সব মিলিয়ে ধারবাহিকভাবে প্রায় ৫২ বছর বিশ্ব ইজতেমা পরিচালিত হচ্ছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ইসলামীক বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই