তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

রাণীনগরের কামতা এস,এন উচ্চ বিদ্যালয়

১০৩ বছর পেরিয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে
রাণীনগরের কামতা এস,এন উচ্চ বিদ্যালয়
[ভালুকা ডট কম : ২১ ফেব্রুয়ারী]
কথায় আছে “ ধ্যানের চর্চা হয় গুহায়, ধর্মের চর্চা হয় মসজিদ, মন্দির, গির্জায় ও প্যাগোডায়, নীতির চর্চা হয় নিজ পরিবারে আর বিদ্যার চর্চা হয় বিদ্যালয়ে”। আর বিদ্যা চর্চার এমন দ্বিতীয় শতবর্ষী বিদ্যাপিঠ নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ভান্ডার গ্রামে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহি কামতা এস,এন (সত্যেন্দ্রনাথ) উচ্চ বিদ্যালয়টি ১০৩ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। বিদ্যালয়টি রবীন্দ্র নিদর্শন এবং সমগ্র বাংলাদেশের মধ্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৃষ্টপোষকতায় তৎকালিন সময়ে দ্বিতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়টিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করা হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৃষ্টপোষকতায় ১৯১৩ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৫শত ৩০জন শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহন করে। এর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪শত জন শিক্ষার্থী পাঠগ্রহণ করে। বিদ্যালয়ে মোট ১৪জন শিক্ষক ও ৬জন কর্মচারী কর্মরত আছেন। বিদ্যালয়ে নতুন ও পুরাতন মিলে মোট ১৮টি কক্ষের মধ্যে পাঠদান চলে ১০টি কক্ষে। বিদ্যালটিতে বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে যে টুকু উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছিল। বিদ্যালয়ের মেয়েদের জন্য পুরাতন জরাজীর্ণ মাটির কক্ষ কমনরুম হিসাবে ব্যবহার করছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই জরাজীর্ণ কমনরুম বার বার রং ও জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে ব্যবহার করা হচ্ছে। কখন যে শিক্ষার্থীদের উপড় ভেঙ্গে পড়ে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। একাধিকবার উপড় মহলে লিখিত আবেদন করেও আজ পর্যন্ত কোন লাভ হয়নি বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান ।  

বিদ্যালয় সূত্রে জানা, ১৮৮৫ সালের শুরুর দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কালীগ্রাম পরগনার জমিদারি দেখাশুনার জন্য ভান্ডার গ্রামে স্থাপন করেন দ্বিতীয় কাচারী বাড়ি। এই কাচারী বাড়ি এলাকার জমিদারীর ম্যানেজার ছিলেন শিক্ষানুরাগী বাবু প্যারী মোহন রায়। তারই সার্বিক প্রচেষ্টার ফলে এই বিদ্যালয়টি অত্র এলাকার মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বাস করতেন প্রজাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষার আলো ছাড়া প্রজাদের সার্বিক উন্নয়ন একেবারেই সম্ভব নয়। সে উপলব্ধি থেকেই স্থানীয় কিছু শিক্ষানুরাগী তৎকালীন সমাজ সেবক ও পঞ্চপ্রধান মৌলভী মো: ইকিমুল্লাহ ও স্থানীয় পন্ডিতদের সহায়তায় এই প্রত্যন্ত ভান্ডার গ্রামে বিশ্বকবির ভাই সত্যেন্দ্রনাথের (এস,এন) নামে আদর্শ এই বিদ্যাপিঠ প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার সময় রবি ঠাকুরের ভাই এই বিদ্যালয়য়ের নামে ১একর ৯৪শতক জমি দান করেন। তাই তার নাম অনুসারে এই বিদ্যালয়ের নাম করন করা হয় কামতা সত্যেন্দ্রনাথ (এস,এন) উচ্চ বিদ্যালয়।

আদর্শ এই বিদ্যাপিঠ থেকে শিক্ষা নিয়ে এলাকার অনেকেই আজ দেশ-বিদেশ সহ নিজ দেশের বিভিন্ন বিভাগে উর্দ্ধতন পদে কর্মরত থেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলছেন আর বিশ্বের মাঝে আলোকিত করেছেন এই অজপাড়া গ্রামের এই আদর্শ বিদ্যালয়টির নাম। এই আদর্শ বিদ্যাপিঠ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন বর্তমানে রংপুরের মহিলা এমপি ডালিয়া, ডাক্তার ইফাত নাইনি ফারাহ, বাংলা ভিশন টেলিভিশন ও মানবকণ্ঠ পত্রিকার নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি মো: বেলায়েত হোসনসহ আরোও অনেকেই ছিলেন এই আদর্শ বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থী।

পরবর্তি সময়ে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শান্তি নিকেতনের প্রতিনিধিবৃন্দ। এছাড়াও দেশের মন্ত্রি, এমপি, সরকারি উর্দ্ধোতন কর্মকর্তা, রবীন্দ্র গবেষক, কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিকসহ নানা গুনিজন। কিন্তু শত বছরের ঐতিহ্য নিয়ে গৌরব উজ্জ্বল মুকুট মাথায় পড়ে দাঁড়িয়ে আছে যে বিদ্যাপিঠ সেই ঐতিহাসিক বিদ্যালয়টিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগানোর কোন প্রদক্ষেপ আজ পর্যন্ত গ্রহন করা হয়নি।

বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে বিদ্যালয়ের নিজ অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছিল শহীদ মিনার। কিন্তু শহীদ মিনারটি অর্থের অভাবে দীর্ঘদিন কোন সংস্কার না করায় তাতে এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। তবে শিক্ষার্থীদেও সংখ্যায় বিদ্যালয়টিতে আধুনকি মান সম্মত পাঠদান কক্ষের ব্যাপক সংকট। ২০০৩ সালের পর থেকে এই বিদ্যালয়ে আর কোন নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়নি। যার কারণে পুরাতন কক্ষেই শিক্ষার্থীরা তাদেও পাঠগ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে।

বিদ্যালয়টিতে ২০০৪সাল থেকে খোলা হয় ভোকেশনাল (কারিগরি) শাখা। প্রত্যন্ত এলাকার শত শত শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যাপিঠ থেকে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এই কারিগরি শাখাটি এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় এই বিভাগের শিক্ষক ও কর্মচারীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। কারিগরি শাখার শিক্ষক মো: ওয়াদুদ হোসেন জানান, আমাদের এই শাখাটি এক দশকেও এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় আমরা ৪জন শিক্ষক ও ২জন কর্মচারী পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। এত প্রতিক’লতার পরও প্রতিবছর আমাদের এই শাখায় শত ভাগ পাশের হার অব্যাহত আছে।    
 
এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো: সামছুর রহমান বলেন, আমি এই আদর্শ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম বলে গর্বিত। আমি বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হয়ে চেষ্টা করে যাবো এই ঐতিহ্যবাহী আদর্শ বিদ্যাপিঠের সার্বিক উন্নয়ন করার জন্য।

এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক সরদার মো: আব্দুল হামিদ জানান, আমি কখনো ভাবতে পারিনি যে আমি এই ঐতিহ্যবাহী আদর্শ বিদ্যাপিঠের ছাত্র থেকে শিক্ষক হবো। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমি সবসময় চেষ্টা করি এই বিদ্যাপিঠ থেকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে শিক্ষার্থীদের আগামীর জন্য তৈরি করার জন্য।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই