তারিখ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

সখীপুরে বয়স জালিয়াতি করে স্কুলছাত্রী ইউপি সদস্য!শপথ স্থগিত

সখীপুরে বয়স জালিয়াতি করে স্কুলছাত্রী ইউপি সদস্য!শপথ স্থগিত
[ভালুকা ডট কম : ১৩ জুন]
টাঙ্গাইলের সখীপুরের হাতীবান্ধা ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভুয়া জন্মসনদ দাখিল করে একজন স্কুল ছাত্রী ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৬ এপ্রিল নির্বাচনে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী কানিজ ফাতেমা দুই হাজার ৬৯৮ ভোট পেয়ে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে নির্বাচিত হন।

নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক তদন্তে ওই সদস্যের জন্মসনদ ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় শপথ পড়ানো থেকে বিরত রাখা হয়েছে ও তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের আইডি লক (তালাবদ্ধ) করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত ওই সদস্য উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের রাজাবাড়ি গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। গত ২৮ মার্চ কানিজ ফাতেমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শেফালী আক্তার ও গত ৪ এপ্রিল উপজেলার হতেয়া রাজাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আবদুল করিম খান বাদী হয়ে কানিজ ফাতেমার সদস্যপদ বাতিল চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

ওই অভিযোগ বিশ্লেষণ করে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই কানিজ ফাতেমার মা শাহীনুর আক্তার ২০১৬ সালে ৩০ মে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদের পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মহিলা সদস্য পদে  নির্বাচিত হয়ে ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর মারা যান। মায়ের মৃত্যুকালীন সময়ে ফাতেমা অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। জেএসসির সনদে নাম ছিল ফাতেমা তাজ ও জন্ম তারিখ লেখা ২০০৩ সালের ১৭ জুলাই। ফাতেমার বাবা মিজানুর রহমান মেয়েকে মায়ের আসনে উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার ভাবনায় সখীপুর নির্বাচন কার্যালয়ে এসে মেয়ের নাম সামান্য বদলিয়ে কানিজ ফাতেমা করে ভুয়া জন্মসনদ দিয়ে বয়স ১৮ বানিয়ে ভোটার ও জাতীয় পরিচয়পত্র (আইডি নং ১৯৯৮৯৩১৮৫৪০০০০২৯৬) বানিয়ে ফেলেন। ওই জাতীয়পত্রে জন্ম তারিখ দেখানো হয় ১৯৯৮ সালের ১ জুলাই।

আবার মিজানুর রহমান বুঝতে পারে বয়স ১৮ বানিয়ে মেয়েকে শুধু ভোটার বানানো গেছে কিন্তু ২৫ বছর না হলে প্রার্থী হওয়া যায় না।বাবা মিজানুর রহমান ওই মেয়েকে নিয়ে ছুটে যান ঢাকার আগার গাঁও নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগে। সেখানে আরেকটি ভুয়া জন্মসনদ জমা দিয়ে জন্ম তারিখ ১৯৯১ সালের ১ জুলাই দেখিয়ে আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্র (আইডি নং ১৯৯১৯৩১৮৫৪০০০০৪২৯) তৈরি করেন।

সর্বশেষ তৈরি করা ২৫ বছর বয়সের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিয়ে কানিজ ফাতেমা মায়ের আসনে নির্বাচন করার লক্ষে গত ২০ মার্চ সখীপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দেন। গত ১৬ এপ্রিল নির্বাচনে কানিজ ফাতেমা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও দ্বিগুন ভোট পেয়ে পাশও করেন।

নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শেফালী আক্তার বলেন, ১৫ বছর বয়সী মেয়েটি জন্মসনদ পর পর দুইবার জালিয়াতি করে বয়স ২৫ বানিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। মায়ের মৃত্যুর কারণে ও ফাতেমার কান্নাকাটি দেখে দয়া করে ভোটাররা ভোট দিয়ে দেয়। ওই সময় মনোনয়ন বাতিল চেয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করলেও কর্মকর্তা বিষয়টি আমলেই নেননি।

আরেক অভিযোগকারী আবদুল করিম খান বলেন, চোখের সামনে বয়স জালিয়াতি দেখে সহ্য না হওয়ায় একজন নাগরিক হিসেবে ওই অপ্রাপ্তবয়সী মেয়ের লেখাপড়া যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য ওই মেয়ের ইউপি সদস্যপদ বাতিল চেয়েছি।”উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের উপপরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিকের  ১৮ মে সই করা চিঠিতে কানিজ ফাতেমার জাতীয় পরিচয়পত্রের (আইডিনং ১৯৯১৯৩১৮৫৪০০০০৪২৯) সাময়িকভাবে লক (তালাবদ্ধ) করার জন্য নির্বাচন কমিশনের সহকারী প্রোগ্রামারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিকে পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত  নির্বাচিত  ওই ইউপি সদস্য যাতে শপথ নিতে না পারে এজন্য নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মিজানুর রহমানের গত ২২ মে সই করা একটি চিঠি টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া হয়। এর ফলে গত ২৪ মে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সবাই শপথ নিলেও নির্বাচিত কানিজ ফাতেমা শপথ নিতে পারেনি।

নির্বাচন কর্মকর্তা আরও বলেন, মেয়েটি জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে গিয়ে আমার কার্যালয়ে যে জন্মসনদ জমা দিয়েছেন তা তদন্তে ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। জাল জন্মসনদ জমা দিয়ে পরিচয়পত্র নেওয়ায় মেয়ে ও মেয়ের বাবার বিরুদ্ধে মামলা হবে।

হাতীবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোশারফ হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া জন্ম সনদের সঙ্গে আমাদের কার্যালয়ে থাকা সনদের কোনো মিল নেই। কমিশনে জমা দেওয়া কানিজ ফাতেমার সনদটি জাল।

হাতীবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, মেয়েটির বয়স ২৫ না হওয়ায় ও জাল জন্ম সনদ দিয়ে নির্বাচন করার অপরাধে নির্বাচিত হয়েও গত ২৪ মে  ফাতেমা শপথ নিতে পারেনি বলে শুনেছি।

কানিজ ফাতেমার বাবা মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ভুয়া জন্মসনদ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমার মেয়েকে গত এক সপ্তাহ ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মনে হয় মেয়েটি অপহৃত হয়েছে। সখীপুর থানায় এ নিয়ে কেন এখনো জিডি করেননি জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, আজ-কালের ভেতরে জিডি করা হবে।

এ ব্যাপারে সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকছুদুল আলম জানান, ইউপি সদস্যকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাঁর বাবা আমাকে মৌখিকভাবে জানালেও থানায় এসে এখনো কোনো সাধারণ ডায়েরি করেননি।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

নির্বাচন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই