তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁয় বানভাসি কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা

নওগাঁয় বানভাসি কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা
[ভালুকা ডট কম : ১৫ সেপ্টেম্বর]
বানের পানি নেমেছে কিছুদিন আগে। তবে ঘা এখনো শুকায়নি বানভাসিদের। বসত বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে নওগাঁর বন্যাদূর্গত এলাকার মানুষ। জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতেও শুরু করেছেন তারা। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে জেলার ১১টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। ফলে আমন ও সবজি সহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বানের পানি নেমে যাওয়ায় বানভাসি কৃষকরা এখন ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছেন। তবে ধানের চারা সংকট থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক নতুন করে জমিতে ধান রোপন করতে পারছেন না। অনেক কৃষক সরকারি সহযোগীতা পাননি বলেও অভিযোগ করেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বন্যায় এ বছর জেলায় ৫৪ হাজার ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে প্রায় ৫০৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরবর্তী করণীয় ১১ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ ৮০০ কৃষককে বিনামূল্যে ৫ কেজি করে বীজ দেয়া হয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত ৬০০ কৃষককে ধানের চারা বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ধামইরহাট উপজেলায় ২৫০ জন, পত্নীতলায় ১৯০ জন, মান্দায় ১০০ জন এবং সাপাহারে ৬০ জন কৃষক।

গত ১৩ আগষ্টের বন্যায় জেলার ১১টি উপজেলায় ৭২টি ইউনিয়নের ৫শ’ ৮১টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়। ফলে এসব এলাকার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৭৮৬ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ জমিতে পুনরায় ফসল রোপনের জন্য চেষ্টা করছেন তারা। তবে ধানের চারা সংকটে কারণে অনেকেই আমনের ধান রোপন করতে পারছেন না। অনেকেই চড়া দামে ধানের চারা কিনে রোপনের চেষ্টা করছেন।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা এখনো অনেক এলাকায় সরকার থেকে কোন সহযোগী পাননি। ব্যাক্তি উদ্যোগ যে টুকু সহযোগীতা পেয়েছেন তা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা করছেন তারা। তবে কৃষি কার্ড না থাকায় অনেকে সরকারি কোন সহযোগী পাননি।

নওগাঁ সদর উপজেলার গাংজোয়ার গ্রামের বর্গাচাষী ইদ্রিস আলী বলেন, বর্গা নিয়ে তিন বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। বন্যায় সব জমি তলিয়ে ফসল নষ্ট হয়ে পঁচে গেছে। বাজারে ধানের চারা দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পুন (৮০আটি)। যেখানে খাবারের সমস্যা। সেখানে এতো টাকা দিয়ে ধানের চারা কেনা সম্ভব না। বর্গাচাষী বলে কৃষি কার্ড না থাকায় সরকারি কোন সহযোগীতা পাচ্ছিনা।

কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগ থেকে কিছু ধানের চারা পেয়েছিলাম। তা দিয়ে চার কাঠা জমিতে নতুন করে রোপন করলাম। বীজের অভাবে এখনো তিন বিঘা পরিমাণ জমি অনবাদি ফেলে রাখতে হচ্ছে। বাজারে ধানের চারা যেটুকু আছে উচ্চমূল্য হওয়া কিনাও সম্ভব না।

একই গ্রামের হাসিনা বানু বলেন, দুই বিঘা ধানি জমি ডুবে যাওয়া হতাস হয়ে পড়েছিলাম। পানি নেমে যাওয়ার পর সেখানে ব্যক্তি উদ্যোগ থেকে পাওয়া শাকসবজির বীজ পেয়ে উপকৃত হয়েছি। এখন সেগুলো জমিতে লাগানোর চেষ্টা করছি। কিছুটা হলেও ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারব। তবে সরকার থেকে ঋণ এবং সহযোগিতা পেলে আমরা বানভাসিদের জন্য সুবিধা হতো।

বদলগাছী উপজেলার বালুভরা গ্রামের কৃষক ইমরান হোসেন বন্যায় নষ্ট হওয়া পটলের মাচা ভেঙে নতুন করে তৈরী করছেন। তিনি বলেন, ১ বিঘা জমির পটলের ক্ষেত থেকে মৌসুমে প্রায় ১ লাখ টাকার উপর বিক্রি হয়ে থাকে। যেখানে মাত্র কয়েক হাজার টাকা বিক্রির পর বন্যায় সম্পন্ন পচে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া ১০ কাঠা জমির মরিচ ও ১ বিঘা জমির পাট নষ্ট হয়ে গেছে।

সমাজসেবী তাসলিমা ফেরদৌস বলেন,বন্যায় চারিদিকে সবকিছুই প্লাবিত। বানভাসিরা যেখানে খেতে পাচ্ছেনা সেখানে ফসলের উপকরণ কেনাও তাদের পক্ষে সম্ভব না। এমন ধারনা থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে আমাদের ক্ষুদ্র চেষ্টায় কৃষকদের মাঝে ধানের চারা ও শাকসবজির বীজ বিতরণ করেছি। যাতে তারা ঘুরে দাঁড়ানো শক্তি ও সাহস পায়। আমাদের দেখাদেখি যেন অন্যরা সহযোগীতায় এগিয়ে আসেন।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কৃষক যেন আরো পুষিয়ে নিতে পারে এজন্য কৃষি অফিসের মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রনোদনার মাধ্যমে চারটি ফসল ভুট্টা, সরিষা, মুগ ও গুটি বেগুনের বরাদ্দ আসছে। পূর্নবাসন বা প্রণোদনা কমিটির মাধ্যমে বিভাজন করে যে উপজেলায় এবং যেসব কৃষক প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে কৃষি প্রনোদনা দেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র কৃষি কার্ড ধারীদের কৃষি প্রনোদনা দেয়া হবে। আর যেসব কৃষক কার্ডের অন্তভুক্ত হয়নি বা যারা বর্গাচাষী তারা যোগাযোগ করলে তাদেরও কার্ডের আওতাভুক্ত করা হবে। কারণ হিসেবে যারা কৃষি কার্ডধারী না তাদের প্রণোদনা দেয়া হলে কোন প্রমাণ থাকেনা।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই