তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

হালুয়াঘাটের সোনই বিলে চলছে ফের হরিলুট

হালুয়াঘাটের সোনই বিলে চলছে ফের হরিলুট
[ভালুকা ডট কম : ১৭ নভেম্বর]
হালুয়াঘাটের শাকুয়াই মৌজায় ২৪.২৮ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত ‘খ’ তালিকার অন্তর্ভুক্ত সরকারী পুকুরে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলছে ফের হরিলুট। এই পুকুর নিয়ে দুর্ণীতি দমন কমিশনে মামলা রয়েছে ১০ টি।  আনুমানিক ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি এই সোনই বিল।

বৃহঃপতিবার সরেজমনে গিয়ে দেখা যায়, এই কোটি টাকার সোনই বিলে বর্শী শিকারীদের উপচেপড়া ভিড়। প্রতি টিকেট ১৫ হাজার টাকার বিনীময়ে দূরদূরান্ত থেকে বর্শী শিকারী এসেছেন মাছ ধরতে। কথা হয় রুস্তম আলী নামে এক মাছ শিকারীর সাথে। তিনি স্থানীয় শাকুয়াই গ্রাম থেকে এসেছেন  মৎস্য শিকার করতে। ১৫ হাজার টাকায় টিকেট কিনেছেন। এইভাবে প্রথম দিনেই ৪৫ জন মৎস্য শিকারীর কাছে বিক্রি করেছেন ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। চলবে কয়েকমাস পর্যন্ত। প্রতি বছর এইভাবেই এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে কোটি  টাকার ফয়দা লুটে নিচ্ছে একটি অসাধু চক্র।

দু’দকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই পুকুরটি এক শ্রেনীর ভুমি দস্যুদের দখলে রয়েছে। তারা অবৈধভাবে ভুয়া কাগজ পত্র তৈরি করে নিজেদের দখলে নিবার পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে। গত ২ হাজার সালের ৩০ নভেম্বর সর্বপ্রথম দুর্ণীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেন মৃধা বাদী হয়ে হালুয়াঘাট থানায় ভুয়া কাগজপত্র সৃজণ করায় এসিল্যান্ডসহ ৪ জনকে আসামী করে প্রথম মামলাটি(মামলা নং-১৯) দায়ের করেন। এর পর থেকে একে একে মামলা করতে থাকে দুদক। আসামী করা হয় বিল দখলকারী রহিম খান, ভূপেতি, সজল সরকার, সুমেশ, সুলতান ডাক্তার, আলাউদ্দিন বেগ, আনসার উদ্দিন বেগ, প্রভুত সরকার, আনিছুর রহমান, আরব আলী চেয়ারম্যান সহ ৩০ জনকে। মামলার জটে হাজতে গিয়ে জামিনে বের হয়ে আসেন সজল সরকার, রহিম খান, ভুপেতি ভট্টাচার্য ও সুমেশ সরকার। বাকীরাও জামিনে রয়েছে। আর এ পর্যন্ত মামলার নিস্পত্তি হয়েছে ৩টি। বাকী মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা যায়। অপরদিকে বছরের পর বছরেও দখল থাকলেও এখনো উদ্ধার হয়নি সরকারের “খ” তালিকায় থাকা এই সরকারী সম্পত্তি। যার কারনে সকার প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আর অপরদিকে দু’দকের মামলার জাল থেকে বের হয়ে আসার জন্যে লড়াই চালিয়া যাচ্ছেন স্থানীয় দখলকারীরা। তাদের দাবী- সোনই বিলের এই সম্পত্তি সরকারের “খ” তালিকায় উঠলেও তা সঠিক নয়। এই বিল তারা ভারত চলে যাওয়া হিন্দুদের ওয়ারিসানরা পাওয়ার অফ এটর্নি দিয়ে তাদের নিকট বিক্রি  করেছেন। এই ভুমিতে তারা অবৈধ কোন দখল নেননি। কিন্তু মামলার বিবরনী ও বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়-দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল এই বিল থেকে কোটি কোটি টাকার ভানিজ্য করে আসছে। এই বিলের চারদিকে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকৃতির পুকুর। যার পুরোটায় রয়েছে জলমহল। এখানে মাছ চাষ করে কোটি কোটি টাকার মুনাফা নিচ্ছে দখলদারীরা।

স্থানীয়রা জানান- মাছ চাষ করে সরকারের চক্ষুর আড়ালে বরশী শিকারীদের নিকট টিকেট ও  মাছ  বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে মূলহোতা শাকুয়াই বন্দকোনার শহিদুল ইসলাম সবুজ, শাকুয়াই বাজারের মীর্জা আলাউদ্দিন বেগ, বন্দের পাড়ার সুমেশ সরকার সহ সংগবদ্ধ একটি চক্র। এলাকার লোকজন কিছু বলার সাহস পায় না চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায়।

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে একটি চক্র কিছু জাল জালিয়াতি করে নিজেদের নামে কাগজপত্র করে নিবার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। দুদকের মামলার বিবরনী থেকে জানা যায়- বর্তমানে  কুচক্রিমহল ভিপি তালিকার জমি ভূয়া কাগজপত্র সৃজন করে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার আশায় রেজিষ্ট্রি সম্পাদন করে মালিক হয়েছে। অধিকাংশ মালিক দাবিদার ভূমির কোন কাগজ পত্র না থাকায় দখল ক্রেতা হিসাবে প্রভাব বিস্তার করছে। এবং সরকারের “খ” তালিকায় থাকা অর্পিত সম্পত্তি বে-আইনিভাবে দখল করে আছে। এই বিলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- এই বিলের প্রকৃত মালিক ছিলো তৎকালীন হিন্দু জমিদার জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য, রমেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য, নিপেন্দ্র চক্রবর্তী সহ বেশ কিছু হিন্দু জমিদার। যাদের কাউকে  যুদ্ধের সময় মেরে ফেলা হয়েছে। আবার কেউ ভারতে চলে গিয়েছেন। কেউ আবার ভারতে চলে গেলেও ১৯৭৭ সালের দিকে  পুনরায় অল্প কিছুদিনের জন্যে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

তিনি বলেন-আমি দীর্ঘদিন এই বিলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি জানি এই বিলের প্রকৃত অবস্থাটা কি। এই বিলের দখলকারীদের নিকট পাওয়ার অফ এটর্নি নিয়ে যারা বিক্রি করেছেন তার অধিকাংশই ভুঁয়া। তবে কিছু সম্পত্তি সঠিক রয়েছে। যার মালিক আব্দুর রহিম খান। তিনি দিজেন্দ্র কিশোর ভট্টাচার্যের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন। তার জমিটির কাগজ পত্র সঠিক। এছাড়া আলাউদ্দিন বেগ, সুমেশ সরকারসহ বাকীদের সোনই বিলের জমির কাগজপত্র ভুঁয়া। জানা যায়-যারা ভুঁয়া পাওয়ার অফ এটর্নি সাজিয়ে জমির মালিক হয়েছেন তারাই ১৯৮২ সালে বি.আর.এস রেকর্ডে এই বিপি তালিকাভুক্ত জমি অন্তর্ভুক্তি করিয়েছেন। প্রকৃত পক্ষে এই জমি ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সরকারের অধিনে ছিলো। পরবর্তীতে হিন্দু জমিদারগন মামলা করে তাদের পক্ষে এই সোনই বিলের রায় আসে। পরবর্তীতে হিন্দুরা দেশান্তর হলে তা সরকারের ‘খ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হয়।

এই বিলের বিষয়ে স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলে জানা যায়-  কতিপয় ব্যক্তি অবৈধভাবে এটি দখল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এদের কাছে উক্ত ভুমির কোন কাগজ পত্রও নেই। যদিও কিছু কাগজ থেকে থাকে তাহলে জাল জালিয়াতি করে ভুয়া কাগজ থাকতে পারে। পরে এই বিলের কোন কাগজ পত্র আছে কিনা তা জানতে চাইলে বিল দখলকারীদের একজন শহিদুল ইসলাম সবুজ বলেন, তাদের পক্ষে কিছু কাগজ আছে বললেও দেখাতে ব্যার্থ হয়েছেন। 

এ ব্যাপারে হালুয়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন বলেন- সোনই বিলে সরকারী সম্পত্তি রয়েছে। এ নিয়ে দুদকের একাধিক মামলাও রয়েছে। তিনি বলেন-সোনই বিল উদ্ধারের বিষয়ে অবশ্যই প্রদক্ষেপ গ্রহন করবেন।বিগত সময়ে  একটি মহল মাটি কাটার মেশিন দিয়ে পাড় মেরামত করে দখলের পায়তারা করে আসছিলো। খবর পেয়ে আমি তা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তবে বর্তমানে বর্শী শিকারীদের নিকট টিকিট বিক্রির মাধ্যমে হরিলুট চলছে এই বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। তিনি  বিষয়টি দেখবেন এবং ব্যাবস্থা নিবেন বলে এই প্রতিবেদককে অবহিত করেন। #



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই