তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় ফ্যাক্টরীর বিষাক্ত বর্জ্যে খিরু নদীসহ খাল-বিলে মাছের আকাল

ভালুকায় ডায়িং ফ্যাক্টরীর বিষাক্ত বর্জ্যে খিরু নদীসহ খাল-বিলে মাছের আকাল
[ভালুকা ডট কম : ২১ জুলাই]
ভালুকা পৌরএলাকায় অবস্থিত শেফার্ড ডায়িংসহ উপজেলার কাঠালী, মামারিশপুর, ধামশুর, হবিরবাড়ি, জামিরদিয়া মাষ্টারবাড়ি, কাশর ও ভরাডোবা এলাকায় অবস্থিত প্রায় অর্ধশত ডায়িং ফ্যাক্টরী পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পানি শোধন যন্ত্র (ইটিপি) বন্ধ রেখেই তাদের উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ফলে এসব ফ্যাক্টরীর বিষাক্ত বর্জ্যে ভালুকার একমাত্র খিরু নদীসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত খাল-বিলের পানি দূষিত হয়ে প্রকৃতিকভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতীয় মাছ বিলিন হয়ে এ এলাকায় দেশিয় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও স্থানরীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৯০ দশকের আগে বর্ষাকালে ঐতিহ্যবাহি খিরু নদীতে বড় বড় পালতুলা নৌকা ও লঞ্চ চলাচল করতো। ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা নেয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল এই নৌপথ এবং নৌকাই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। কালের আবর্তে এমনকি ডায়িং ফ্যাক্টরীর বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে এই খিরু নদীটি বিলিন হতে চলেছে। গত পনের বছর ধরে খিরু ব্রীজের দক্ষিণপাড়ে প্রতিষ্ঠিত শেফার্ড ডায়িং ফ্যাক্টরীটি পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনের কোন তোয়াক্কা না করেই পানি শোধন যন্ত্র (ইটিপি) বন্ধ রেখেই তাদের উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই শেফার্ড ফ্যাক্টরীর বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে খিরু নদীসহ আশপাশের খাল-বিলের পানি দূষিত হয়ে ইতোমধ্যে বহু পশু পাখি মারা গেছে। এমনকি এই নদীর পানি ব্যবহার করে নদীপাড়ের মানুষদের পেটের পীড়া ও চর্ম রোগসহ বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিবাদ করলে মামলা মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকী পর্যন্ত এলাকাবাসির হযম করতে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষ বলেন, বর্তমানে তাদের বায়োকেমিক্যাল ইটিপি স্থাপন করায় পানি একটু নীল বর্ণ হলেও তা প্রায় ৮০ ভাগ পরিশোধিত।

তেমনি উপজেলার কাঠালী গ্রামে অবস্থিত ইকরাম সুয়েটার লিমিটেডের রাসেল ডায়িং মিল ও শাহান কালার, হাজিরবাজার এলাকায় অবস্থিত এফএম ডায়িং, মাস্টারবাড়ি এলাকায় অবস্থিত বাদশা ফ্যাক্টরী, এমএল ডায়িং, আরিফ ডায়িং, বেলী ইয়াং ডায়িং, স্কয়ার ডায়িং, ভরাডোবা এলাকায় অবস্থিত এক্সপিরিয়েন্সসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় অর্ধশত ডায়িং ফ্যাক্টরী রয়েছে। আর এসব ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষ প্রায় সার্বক্ষনিক ইটিপি বন্ধ রেখেই তাদের উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলার কাঠালী গ্রামের খিরু নদী পাড়ের বাসিন্দা নুর হোসেন (৭০) জানান, এই নদীতের এককালে সারা বছরই পানি থাকতো। একসময় নদী পাড়ের হাজার হাজার লোক তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করতো এই নদী থেকে মাছ মেরে এবং তা বাজারে বিক্রির মাধ্যমে।

জামিরা পাড়া গ্রামের আব্দুল খালেক (৬৫) জানান, চলতি বর্ষাতেও এই নদীটি পানি শূণ্য। অথচ ২০ থেকে ২৫ বছর আগে সারাবছরই নৌকা চলাতো এই নদীতে। যা এখন স্বপ্নের মতোই মনে হয়। আগে এই নদীর টলমলে পানি মানুষ সহসায় পান করে থাকতো কিন্তু বর্তমানে মিল কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে এখন সারাবছরই গাড়ো নীল বর্ণ ধারণ করে থাকে। এই পানি ধানের আবাদে ব্যবহার করলেও ধানের গুছা পঁেচ নষ্ট হয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডায়িং ফ্যাক্টরীর এক কর্মচারী নয়া দিগন্ত বলেন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা পানি শোধন যন্ত্রটি (ইটিপি) সার্বক্ষনিক চালু রাখলে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। তাই স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধূ লোকদের ম্যানেজ করেই ইটিপি বন্ধ রেখে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে কোন অসুবিধা হচ্ছেনা।

শেফার্ড ডায়িং ফ্যাক্টরীর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো: মোখলেছুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই তাদের ফাক্টরীর উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ফ্যাক্টরীর পানি নীল বর্ণ কেনো এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের ফ্যাক্টরীতে বায়োকেমিক্যাল ইটিপি রয়েছে, তাই তাদের বর্জ্যপানি একটু নীল হলেও তা শোধন হয়েই বের হচ্ছে।

ভালুকা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু জানান, আমি দায়িত্ব পালনকালে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচির পালন করেছি। বর্তমানে ভালুকার সর্বস্তরের জনসাধারণ এক হয়ে নিজেদের অস্তিত ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে আন্দোলন সংগ্রাম করে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যেতে হবে।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু জানান, ডায়িং ফ্যাক্টরীর বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে খিরু নদীসহ বিভিন্ন খালবিল মাছশূন্য এমনকি ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতির বিষয়ে বার বার মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিং এর আলোচনায় এনেছি। তাছাড়া আমাদের ভালুকার পরিবেশ রক্ষায় যা যা করনীয় আমরা তা-ই করবো।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সঞ্জয় কুমার পাল জানান, ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ডায়িং ফ্যাক্টরীর বিষাক্ত বর্জ্যে মৎস্য সম্পদ ধ্বংসসহ এই এলাকার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকবার অবহিতও করেছি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা জানান, খিরুনদী ছিল একসময় ভালুকার মানুষের প্রাণ। এই নদীই ছিল মানুষের উপার্জণের একমাত্র পথ। যা বর্তমানে তার ঐতিহ্য বিলিন হওয়ার পথে। সরকারীভাবে খিরুনদী খননসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরীর বিষাক্ত বর্জ্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ কামাল বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি আমরা যথাযথ পালন করে চলেছি। তাছাড়া যদি কোন ফ্যাক্টরীর মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি বা এলাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়, তবে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ফ্যাক্টরীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই