বিস্তারিত বিষয়
ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি
ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি
[ভালুকা ডট কম : ১২ আগস্ট]
‘আমার গরুর গাড়ীতে বউ সাজিয়ে.........’ এরকম অনেক গান, কবিতাসহ অনেক সাহিত্যকর্ম রয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ী। কালের পরিক্রমায় আধুনিকতার স্পর্শে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি এখন শুধুই অতীতের স্মৃতি। গ্রামগঞ্জের আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে বয়ে চলা গরুর গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না। যা এক সময় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে প্রচলিত ছিল এবং গ্রামবাংলায় গরুর গাড়িই যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল। এক সময় জনপদের এই বাহনের সরগরম অস্তিত্ব ছিল সর্বত্র কদরও ছিল গরুর গাড়ির। মাত্র দুই যুগ আগেও পণ্য পরিবহন ছাড়াও বিবাহের বর-কনে বহনে বিকল্প কোন বাহন কল্পনাই করা যেত না। যেসব পরিবারে গরুর গাড়ি ছিল তাদের কদরের সিমা ছিল না।
কৃষকরা প্রতিদিন ফজরের আজানের আগে গরুর গাড়িতে কখনো জৈব সার (গোবর সার) কখনো গরুর খাবার ও লাঙ্গল-মই-জোয়াল নিয়ে মাঠে যেত। সু-প্রাচীনকাল থেকে দেশের গ্রামীন জনপদে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে গরুর গাড়ির বহুল প্রচলন পরিলক্ষিত হতো। পায়ে চলার পথে মানুষ পশুর শ্রমে চলিত গরুর গাড়ি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ও বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনে প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহার করত প্রাচীনকাল থেকেই। বাংলা এবং বাঙালির ঐতিহ্য গরুর গাড়ি যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এখন অতীত। বিভিন্ন উৎসব পার্বণে এটি ছিল অপরিহার্য। আগে অনেকেরই এই গাড়ি ছিল উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন। তখন গরুর গাড়ির ব্যাপক চাহিদা ছিল। গ্রামের বউ ঝিদের নাইওর যেতে গরুর গাড়ি ব্যবহৃত হতো অহরহ।
সময়ের বিবর্তনে আজ গরুর গাড়ি চালক (গাড়িয়াল) না থাকায়, হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা গাড়িয়াল ভাইয়ের কণ্ঠে সেই অমৃত মধুর সুরের গান। গাড়ি চালানোর সময় আনন্দে গাড়িয়ালরা গাইতো ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে..’ এখন আর চাইয়া থাকলেও গরুর গাড়ি চোখে পড়ে না। আর গানও গায়না গাড়িয়ালরা। আধুনিকতার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে গাড়িয়াল পেশাও। যা একদা ছিল বংশ পরম্পরায়। সময় অতিবাহিত হবার সাথে সাথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের ধারকবাহক অনেক বাহনেরই আমূল পরিবর্তন, আধুনিকায়ন সাধিত হয়েছে।
আজ শহরের ছেলে-মেয়েরা তো দূরে থাক গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ির সাথে খুব একটা পরিচিত না। ইঞ্জিনের স্পর্শে আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক বাহনই পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক বাহনই হারিয়ে যাচ্ছে দৃশ্যপট থেকে। তেমনি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি প্রকৃতিবান্ধব গরুর গাড়ি বহুবিধ কারনে বর্তমানে হারিয়ে গেছে। কয়েক বছর আগেও কালে-ভাদ্রে দু’একটি গরুর গাড়ির দেখা মিললেও বর্তমানে তা ডুমুরের ফুল। গরুর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। নব্যপ্রস্তর যুগের সময় থেকেই মানুষ এই বাহন ব্যবহার করে আসছে। ফ্রান্সের ফঁতান অঞ্চলে আল্পস পর্বতের উপত্যকায় একটি গুহায় গরুর গাড়ির যে ছবি পাওয়া যায় তা থেকে জানতে পারা যায় খ্রিস্টের জন্মের ৩১০০ বছর আগে ব্রোঞ্জ যুগেও গরুর গাড়ির অস্তিত্ব ছিল। হরপ্পা সভ্যতাতেও যে গরুর গাড়ির অস্তিত্ব ছিল তার সপক্ষে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমান পাওয়া যায়। সেখানেও নানা অঞ্চল থেকে এক অক্ষবিশিষ্ট চাকাওলা নানা খেলনা পাওয়া গেছে। এগুলি থেকে বিশেষজ্ঞদের অনুমান খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০-১৫০০ সালের দিকে সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন শুরু হয়। যা সেখান থেকে ক্রমেক্রমে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে।
জেলার মহাদেবপুর উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের প্রবীন কফিল উদ্দীন, তাহের ও আফজাল হোসেন বলেন, আগে আমাদের এলাকায় গরুর গাড়ির ভূমিকা ছিল অপরিসীম। ২০-২৫ বছর পূর্বে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কম হলেও একটি করে গরুর গাড়ি ছিল। অনেক বিত্তবান পরিবারে ২-৪টি পর্যন্ত গরুর গাড়ি ছিল। সে সময়ে অধিকাংশ নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের আয়ের উৎস ছিল গরুর গাড়ি। এই গাড়ির উপর নির্ভর করে চলত ঐসব পরিবারের সংসার। কিন্তু এখন বাস, মাইক্রোবাস, ভটভটি, ইজিবাইক, ভ্যান, নছিমন, করিমনসহ ইঞ্জিন চালিত নানা গাড়িতে এসব কাজ চলছে।
জেলার রাণীনগর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের আরেক প্রবীণ মকবুল হোসেন জানান, এখন যেমন আমরা নিজেদের ব্যাবহারের জন্য প্রাইভেটকার বা মাইক্রো ক্রয় করে থাকি, ঠিক তেমনি আগে গ্রামের লোকজন গরুর গাড়ি তৈরি করে বাড়িতে রাখতেন। আপদ-বিপদে তা তারা বাহন হিসেবে ব্যবহার করতেন। গরুর গাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি বলেও জানান তিনি।
একই উপজেলার দড়িয়াপুর গ্রামের মাহবুবুজ্জামান সেতু বলেন, গরুর গাড়ি এখন থেকে স্মৃতির জাদুঘরে রূপান্তরিত হচ্ছে। আমরা চাই ইতিহাসের ধারক ও বাহক এই গরুর গাড়ী জাদুঘরে খুব যত্ন ও গুরুত্বের সাথে সংরক্ষণ করা হোক। কারণ আধুনিকায়নের কাছে এটি এখন মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। আগামী প্রজন্মের জন্য এগুলো ইতিহাস হয়ে থাকবে।#
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
লাইফস্টাইল বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- নওগাঁর শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান রিজভী [ প্রকাশকাল : ৩১ মে ২০২৩ ০১.২০ অপরাহ্ন]
- রায়গঞ্জে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে কবরস্থানে বসবাস [ প্রকাশকাল : ২৮ মার্চ ২০২২ ০৫.৪৮ অপরাহ্ন]
- মুক্তিযুদ্ধে দাদার শহীদ হবার গল্প শুনলো নাতী [ প্রকাশকাল : ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৪.৫০ অপরাহ্ন]
- নিষেধাজ্ঞা শেষে তজুমদ্দিনের জেলেরা মাছ ধরতে প্রস্তুত [ প্রকাশকাল : ২৪ অক্টোবর ২০২১ ০৫.১৬ অপরাহ্ন]
- প্রেমের টানে ফরিদপুর থেকে নওগাঁয় কিশোরী,পালিয়ে গেল প্রেমিক [ প্রকাশকাল : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭.৩৬ অপরাহ্ন]
- সখীপুওে ১২ বছর ধরে শিকলে বন্ধি শহিদুল [ প্রকাশকাল : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫.৩৫ অপরাহ্ন]
- শাপলা তোলে জীবিকা নির্বাহ করে শতাধিকবার পরিবার [ প্রকাশকাল : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫.২০ অপরাহ্ন]
- বাধ্য হয়ে বাক্সের অর্ধেক খুলে কাপড়ের পসরা সাজিয়েছেন [ প্রকাশকাল : ০৭ জুলাই ২০২১ ০৫.০৪ অপরাহ্ন]
- জেলে থেকে হ্যাচারির মালিক যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ [ প্রকাশকাল : ২৭ জুন ২০২১ ০৫.১৬ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে গাড়লের খামার করে সফল আব্দুল মান্নান [ প্রকাশকাল : ১৪ জুন ২০২১ ০৪.০০ অপরাহ্ন]
- নওগাঁয় চালের দাম বেড়েছে,নাভিশ্বাসে নিম্ম ও মধ্যবৃত্তরা [ প্রকাশকাল : ০৭ জুন ২০২১ ০৪.৪০ অপরাহ্ন]
- জীবীকার তাগিদে রং মেখে শং সেজে নেচে-গেয়ে [ প্রকাশকাল : ০৪ জুন ২০২১ ০১.০০ অপরাহ্ন]
- যে যেভাবে পারছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটছেন গ্রামে [ প্রকাশকাল : ১১ মে ২০২১ ০৪.১৩ অপরাহ্ন]
- শ্রীপুরে ২ গ্রামে হাতে ভাজা মুড়ি [ প্রকাশকাল : ৩০ এপ্রিল ২০২১ ০৫.০৯ অপরাহ্ন]
- নওগাঁয় মাদ্রাসা সুপারের চাকুরি না থাকলেও বেতন আছে [ প্রকাশকাল : ১৮ এপ্রিল ২০২১ ০৩.০০ অপরাহ্ন]