তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁয় বন্ধ মিলে সরকারি চাল দেওয়ার অভিযোগ

নওগাঁয় বন্ধ মিলে সরকারি চাল দেওয়ার অভিযোগ
[ভালুকা ডট কম : ১৯ আগস্ট]
মেসার্স বেঙ্গল চালকল। নওগাঁ সদর উপজেলার ইলশাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত। ওই চালকলটি ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এজন্য চালকলের মালিককে বিদ্যুৎ বিলের সর্বনিন্ম চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে। এরপর চালকলটি অনত্র ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন গো-খাদ্য (ফিড) ও চালানি (এলাকাবাসীর খাবারের ধান ভাঙা) করা হয়।

ওই চালকলের মালিক সেখানে গরুর খামারও করেছেন। নওগাঁ সদর উপজেলার বোরো/২০১৮ চাল সংগ্রহের মেসার্স বেঙ্গল চালকলের মালিক মো: সাদ্দাম হোসেন সিদ্ধ চাল বরাদ্দের বিভাজন পত্রে সিরিয়াল নম্বর ২১৪। তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন ১৬ দশমিক ৩৮০ মেট্রিক টন এবং ইতোমধ্যে তা সরবরাহ করা হয়েছে।

মেসার্স বেঙ্গল চালকলের মালিক মো: সাদ্দাম হোসেন বলেন, গত তিন বছর থেকে চালকলটি বন্ধ ছিল। ১০ মাস হয়েছে অন্য জনকে ভাড়া দিয়েছি। তবে প্রতি বছরই এ মিলের জন্য বরাদ্দ আসে। যেহেতু চালকল বন্ধ এবং কোন চাল উৎপাদন হয় না। সেহেতু বাহির থেকে চাউল কিনে জুলাই মাসে সরকারি গুদামে সরবরাহ করা হয়েছে। এজন্য কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। চাল ভাল বা খারাপ যায় হোক না কেন ঘুষ দিতেই হবে। চালকলের লাইসেন্স টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করা হয়েছে।

নওগাঁ সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি চাল ৩৮ টাকা দরে চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। বোরো চাল সংগ্রহ অভিযানে ৩৫১ জন চালকল মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। আর এ উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৯ হাজার ৭১৭ মেট্টিক টন। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ অভিযান চলবে।

খাদ্য বিভাগের কিছু কর্মকর্তা আর চালকল মালিকদের একটি সিন্ডিকেটে প্রতি মৌসুমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। দীর্ঘদিন ধরে এ দূর্নীতি উপজেলা খাদ্য বিভাগে চলে এলেও, তা প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ সিন্ডিকেটে সাধারণ চালকল মালিকরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। আবার যেসব চালকল থেকে চাউল উৎপাদন হয় না, তারা বাহির থেকে নিন্মমানের চাউল কিনে খাদ্যগুদামে সরবরাহ করছেন। ফলে সরকারি চাল সংগ্রহে তুঘলকি কান্ড শুরু হয়েছে। তবে চালকল মালিকরাও মিল বন্ধ থাকার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন।

মেসার্স আনোয়ার হোসেন চালকল। নওগাঁ সদর উপজেলার খাট্টা-সাহাপুরে অবস্থিত। দীর্ঘদিন চালকলটি বন্ধ ছিল। গত ছয় মাসে আগে ভাড়া দেয়া হয়েছে আহসান হাবিব নামে এক ব্যক্তিকে। আহসান হাবিব ওই চালকলে ‘এইচএ ইন্ডাষ্ট্রি’ নামে একটি প্লাস্টিক সপ তৈরীর কারখানা করেছেন। মেসার্স আনোয়ার হোসেন চালকলের মালিক মো: আনোয়ার হোসেন সিদ্ধ চাল বরাদ্দের বিভাজন পত্রে সিরিয়াল নম্বর ২৯০। তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন ১৭ দশমিক ৮৮০ মেট্টিক টন। ইতোমধ্যে তিনি সরবরাহ করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বরাদ্দকৃত অধিকাংশ চালকলে চালের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেসব মিলে গত কয়েক বছর থেকে কোন চাল উৎপাদন করা হয়নি। এসব মিলের অধিকাংশ এখন প্লাস্টিক ও ফিড তৈরীর কারখানা। আবার অনেক চালকল মালিক চালাতে না পেরে চালকলটি ভাড়া দিয়েছেন।

বন্ধ চালকলগুলোর মধ্যে রয়েছে, খাট্টা-সাহাপুরের মেসার্স আনোয়ার হোসেন চালকল, খিদিরপুরের মেসার্স তাহেরা চালকল, মেসার্স মামুনি চালকল, বলিরঘাটের মেসার্স রকিম উদ্দিন চালকল, বরুনকান্দির মেসার্স নাহার চালকল, কোমাইগাড়ীর মেসার্স সমতা চালকল, মেসার্স সোহেল চালকল, দীঘাতে মেসার্স রাখি চালকল। অন্যান্য চালকলগুলোর একই অবস্থা। অর্থ্যাৎ অনিয়মের মাধ্যমে অধিকাংশ বন্ধ চালকলের নামে বরাদ্দ করে গুদামে চাউল সরবরাহ করা হয়েছে।

আবার বরাদ্দকৃত অনেক চালকলের অস্বিস্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরমধ্যে কোমাইগাড়ীর মেসার্স রুপালি চালকল, মেসার্স বন্ধু চালকল, মেসার্স শ্যামলী চালকল, উকিল পাড়ার মেসার্স আসকার চাউল কল, মেসার্স বরেন্দ্র চাউল কল, মেসার্স আরাফাত ফুডস লি: চালকল, বাঁঙ্গাবাড়িয়ার মেসার্স ফেরদৌ চাউল কল, মেসার্স কোমাইগাড়ী  চাউল কল, মেসার্স আমিন চাউল কল।মেসার্স আনোয়ার হোসেন চালকলের মালিক মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার চালকলটি চালুছিল। এজন্য বরাদ্দ পেয়েছি এবং সরবরাহ করা হয়েছে। সবেমাত্র চাতালটি ভাড়া দেয়া হয়েছে।

মেসার্স রুহুল আমিন চালকলের প্রোপাইটর জিল্লুর রহমান বলেন, বিগত কয়েক বছর থেকে লোকসান করে সরকারকে চাউল দিচ্ছি। এবছর কিছুটা লাভ থাকবে। গুদামে চাল দিতে গেলে কর্মকর্তাদের কিছু কমিশন দিয়ে চাউল ঢুকাতে হয়। নইলে ঝামেলা পোহাতে হয়। যেসব বন্ধ চালকলের নামে বরাদ্দ হয়েছে তারা বাহির থেকে চাল কিনে দিয়েছে। তারপরও এটি সমিতির বিষয়। সমিতি যা করবে আমাদের মেনে নিতে হবে।

মেসার্স নাহার চালকলের মালিক শামসুল হক বলেন, গত এক বছর থেকে চালকলটি বন্ধ আছে। বরাদ্দের সময় বিদ্যুৎ বিলের কাগজ দেখিয়ে বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। বাহির থেকে চাউল কিনে সরকারি গুদামে সরবরাহ করেছি। এতে সমস্যার কিছু নাই।

নওগাঁ সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: দুলাল উদ্দিন খান অনিয়মের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন, শতভাগ চালকল চালু আছে। কারণ বিদ্যুৎ বিলের কাগজ দেখে চালের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চাউল সে উৎপাদন করছে কিনা সেটা ভিন্ন ব্যাপার। আর যদি কোন বন্ধ চালকলের নামে চাল বরাদ্দ হয়ে থাকে, তাহলে আগামী বছর থেকে তার চাল বরাদ্দ দেয়া বন্ধ করে দেয়া হবে।

নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ধান-চাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি মুশতানজিদা পারভীন বলেন, অনিয়মের মধ্য দিয়ে যে চাল সংগ্রহ হচ্ছে সে বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, যেসব চালকলের বৈধ লাইসেন্স আছে এবং চাল উৎপাদনের ক্ষমতা আছে তারাই বরাদ্দ পেয়েছেন। যখন চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছিল তখন চালকলগুলো সচল ছিল। চাল দেয়া শেষে এখন হয়তো চালকলগুলো বন্ধ আছে। তবে তিনি দূর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকার বাইরে বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই