তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় বিদ্যুৎ সংযোগের নামে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা

ধার দেনা,ছাগল-গয়না বিক্রি করে দালালদের টাকা দেয়
ভালুকায় বিদ্যুৎ সংযোগের নামে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা   
[ভালুকা ডট কম : ২৯ সেপ্টেম্বর]
ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাঁও ও কাচিনা ইউনিয়নের কাদিগড় নয়াপাড়া গ্রামে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -২ এর আওতায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নাম করে দালাল চক্র তিন শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যুৎ পাওয়ার আশায় গ্রামের সহজ সরল মানুষ ধার দেনা, গরু ছাগল এমনকি গায়ের গয়না পর্যন্ত বিক্রি করে দালালদের হাতে তাদের নির্ধারিত অংকের টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিতে বাধ্য হলেও সংযোগের দেখা পাননি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে বার হাজার থেকে পনের হাজার টাকা পর্যন্ত নতুন সংযোগ দেয়ার নাম করে স্থানীয় দালাল চক্র হাতিয়ে নেয়। চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ গ্রাহক প্রতিবাদ করার সাহস পায়না।  দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও সংযোগ না পাওয়ায় অনেকে হতাশ হয়ে পরেছেন।

পাড়াগাঁও শিরিচালা গ্রামের হেকিম মন্ডলের ছেলে নাজমুল ইসলাম জানান, তিনি নতুন সংযোগের জন্য শিশিরচালা গ্রামের শওকত আলীর ছেলে কফিল উদ্দিনের কাছে সাড়ে তের হাজার টাকা দেওয়ার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সংযোগ পাননি। আনিন্দর স্ত্রী আভা রাণী জানান কফিল উদ্দিনের কাছে তিনি বিদ্যুতের নতুন সংযোগ পাওয়ার জন্য ঋণ করে সাড়ে বার হাজার টাকা দিয়েছেন কিন্তু এখনও সংযোগ পাননি।

শিশিরচালা গ্রামের শওকত আলীর ছেলে কফিল উদ্দিন ও টংগের চালা গ্রামের মেহের আলীর ছেলে মুসাকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য টাকা দিয়েছেন একই গ্রামের রতন মিয়ার স্ত্রী মিল শ্রমীক ফেরদৌসি, শামীম মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা, রফিকুল ইসলাম, কিতাব আলীর ছেলে হাইজুদ্দিন, আজিজুলের স্ত্রী হালিমা সহ এলাকার ভুক্তভোগী তিন শতাধিক গ্রাহক।

এ ব্যাপারে দালাল মুসা মোবাইল ফোনে জানান, তিনি ৩৫ জন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের সংযোগ দিয়েছেন। দালাল কফিল উদ্দিনের বড় ভাই নাজিম উদ্দিন জানান, পাঁচপাই শিরিরচালা গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে হযরত আলী, একই গ্রামের উসমান, আঃ সোবাহানের ছেলে আবুল হোসন,পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদার সিদ্দিক এর মাধ্যমে তিন শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে নতুন সংযোগ দেয়ার নাম করে গ্রাহক প্রতি বার হাজার থেকে পনের হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়। এর মধ্যে কেউ কেউ সংযোগ পেলেও অধিকাংশ গ্রাহকই সংযোগ পাননি। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অপরদিকে উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের কাদিগড় নয়াপাড়া গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে অনেকের কাছ থেকে জনৈক আঃ কাদির দেড় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার ১৮ মাসেও বিজলী বাতির দেখা মেলেনি ওইসব বাড়ীতে। সরজমিন ওই গ্রামে গেলে ভূক্তভোগিরা জানায় ওই গ্রামের সেকান্দর আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম, ও মামারিশপুর গ্রামের জমশের আলীর ছেলে আঃ কাদির পল্লী বিদ্যুতের মিটার সহ সংযোগ দিবে বলে মোহাম্মদ আলী,আঃ হেকিমসহ একাধীক গ্রাহকের নিকট থেকে ১০/১২ হাজার করে টাকা নেয়। এদিকে টাকা নেয়ার পর এক বছর ছয় মাস অতিবাহিত হলেও অধ্যাবধি তাদের বাড়ীঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দুরের কথা খুটিতে তার পর্যন্ত লাগানো হয়নি। তারা ওই সব ব্যাক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে অচিরেই সংযোগ দেয়া হবে বলে কাল ক্ষেপন করে চলেছেন।

এলাকাবাসী জানায় বিদ্যুৎ না থাকায় পানির সমস্যার কারনে তারা ক্ষেত খলায় সেচ দিতে না পারায় ফসল আবাদ করতে পারেননা,খাবার পানির অভাব, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার সমস্যার কথা ভেবে বিদ্যুতের জন্য টাকা দিয়েছেন।

নূরুল ইসলামের স্ত্রী তাছলিমা জানান তিনি দু’টি ছাগল বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন, সফিকুলের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার জানান তিনি গয়না বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন, সবদুল হোসেন জানান তিনি ২৮ হাজার টাকা একটি গরু বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ মিটারের জন্য জমা দিয়েছেন। অনেকে ধার কর্জ ও চড়া সুদে টাকা নিয়ে জমা দিয়েছেন বলে তারা জানান।

টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে আবুল হোসেন জানান তিনি সাথে থেকে কাদিরকে টাকা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এদিকে গত ১৯ আগষ্ট পার্শ্ববর্তী শিরিরচালা গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের লাইন উদ্বোধনকালে স্থানীয় এমপি ডাঃ এম আমান উল্লাহ ও অন্যান্য নেতা কর্মী ও বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের দেয়া বক্তব্য হতে তারা জানতে পারেন বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে গেলে অতিরিক্ত কোন টাকা লাগেনা। এটি জানার পর হতে নয়াপাড়ার ভূক্তভোগিরা টাকা ফেরৎ সহ বিদ্যুৎ লাইনের জন্য বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

এলাকার সাধারণ জনগনের অভিযোগ বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বার বার দালাল চক্রের খপ্পরে পরে বাধ্য হয়ে তাদের ফাঁদে পা দিতে হয় অন্যথায় সংযোগ মিলেনা, কোন না কোন ভাবে ওই দালালদের সর্ম্পক সংযোগ দাতাদের সাথে রয়েছে বলে তারা দাবী করেন।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ এর প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, তারা লাইন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহকদেরকে বলেছন, কাউকে কোন টাকা না দিতে। সদস্য ফি ও মিটার বাবদ ৪৫০ টাকা ছাড়া কোন অতিরিক্ত টাকা নতুন সংযোগে লাগেনা। যদি কেউ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-০২ এর কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি অফিসের কথা বলে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই