তারিখ : ১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁয় দাদন ব্যবসায়ীর ছোবলে ৪ জনের আত্নহত্যা

নওগাঁয় দাদন ব্যবসায়ীর ছোবলে ৪ জনের আত্নহত্যা,এলাকা ছেড়েছে অনেকে,প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা এলাকাবাসীর
[ভালুকা ডট কম : ১৫ নভেম্বর]
নওগাঁয় অসাধু দাদন ব্যবসায়ীদের চড়া সুদের ফাঁদে পড়ে একের পর এক পরিবার নিস্ব হয়ে পড়ছে। এমনকি অসাদু সুদ ব্যবসায়ীদের চড়া সুদের টাকা দিতে না পেরে জেলা সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নেই আত্নহত্যা করছেন ৩ জন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক লোকজন সুদ ব্যবসায়ীদের চড়া সুদের টাকা দিতে না পেরে আত্মীয়-স্বজন ও বাড়ি ঘড় ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

এছাড়াও সুদ ব্যবসায়ীদের চাহিদামত টাকা দিতে না পারায় অনেকের বিরুদ্ধেই সুদারুরা চেকের মামলা দেয়ায় একদিকে মামলার কারণে হচ্ছে হয়রানীর শিকার ও অপরদিকে চড়া সুদ টানতে গিয়ে জায়গা-জমি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়ছেন একের পর এক পরিবার।

জেলা সদরের বলিহার ইউনিয়নের অনেকেই জানান, গত বছর থেকে চলতি জুলাই মাসের মধ্যেই এ ইউনিয়নের ফারাদপুর ও বলিহার গ্রামে সুদ ব্যবসায়ীদের চাহিদামত চড়া সুদের টাকা দিতে না পেরে এবং তাদের চাপের মুখে আত্নহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ৩ জন। এছাড়া সুদখোড় ব্যবসায়ীদের চাহিদা মত টাকা দিতে না পেরে পরিবারের লোকজন ও আত্বীয়-স্বজন কে ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আরো ৯ জন এবং ইতিমধ্যেই চড়া সুদের টাকা আদায় করতে চেকের মামলায় হয়রানীর শিকারও হচ্ছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

তারা আরো বলেন, যদি কোন ব্যক্তি একবার সুদ ব্যবসায়ীদের পাল্লায় পড়েন তাহলেই ঐ ব্যক্তি কোন ভাবেই সুদ ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে আর রক্ষা পান না। কারণ সুদ ব্যবসায়ী ও তাদের লোকজন অর্থ সংকটে থাকা বিপদগ্রস্থ লোকজনের অভাব ও সরলতার সুযোগ নিয়ে টাকা দেওয়ার সময়ই টাকা গ্রহিতার কাছে থেকে (টাকা ও তারিখের স্থান ফাঁকা রেখে) ব্যাংকের চেকে শুধুমাত্র স্বাক্ষর নেয়াসহ টাকা গ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্ডের ফটোকপি ও সুযোগ পেলে ফাঁকা ষ্ট্যাম্পে ও স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন সুদখোররা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু’জন জানান, বর্তমানে নয়া কৌশলে সুদখোড়রা তাদের চড়া সুদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা নিজেদের প্রশাসনের কাছে থেকে রক্ষা করতে নয়া কৌশল হিসেবে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের বিশেষ করে সমবায়ের নিবন্ধন নিয়ে (সমবায় সমিতির সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে) অন্তরালে প্রতি ১০ হাজার টাকার বিপরীতে প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার টাকা সুদ নিচ্ছেন।এতে দেখা যাচ্ছে মাত্র ১০ হাজার টাকা সুদের উপর লাগিয়ে বছরে ৫২ সপ্তাহে ৫২ হাজার টাকা সুদ আদায় করার পর ও আসল ১০ হাজার টাকা ও আদায় করছেন। এক কথায় সুদখোড়দের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনানুগ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় দিনদিন সুদখোড়দের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে এখন এলাকায় জমজমাটভাবে চলছে চড়া সুদের ব্যবসা।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটামোড় বাজার এলাকার সহ জেলার বেশ কয়েকজন সুদখোড় বা দাদন ব্যবসায়ীরা নওগাঁ সদরের বলিহার এলাকার অভাবী ও নিরীহ লোকজনের সরলতার সুযোগ নিয়ে জমজমাটভাবে প্রকাশে চালিয়ে যাচ্ছেন চড়া সুদের ব্যবসা। প্রায় সব সুদ ব্যবসায়ীরাই ১০ হাজার টাকায় প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার টাকা সুদ নেয়।

এলাকার অনেকেই চড়া সুদ টানতে গিয়ে জায়গা-জমি বিক্রি করে সর্বশান্ত হয়ে পড়ার পরও সুদ ব্যবসায়ীদের দায়েরকৃত চেকের মামলা বা সুদ ব্যবসায়ী ও তাদের লেলিয়ে দেয়া লোকজনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যে বলিহার ইউনিয়নেই সুদ ব্যবসায়ী ও তাদের লেলিয়ে দেয়া লোকজনের ভয়ে ও চাপের মুখে গলায় দড়ির ফাঁস ও গ্যাস বড়ি খেয়ে গত বছর থেকে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ৩ জন আত্নহত্যা করেছে এবং একজন বিধবা নারীসহ ৯ জন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও একজন ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

চৌমাশিয়া গ্রামের আনিছুর রহমান জানান, আমার মেয়ের বিয়ে দেয়ার সময় টাকা সংকট দেখা দেওয়ায় এবং জরুরী ভাবে টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আমি এলাকার একজন সুদ ব্যবসায়ীর কাছে থেকে মাত্র ২০ হাজার টাকা গ্রহন করলেও সেই সুদের টাকা টানতে গিয়ে আমার ২ বছরের সব টাকা সুদ ব্যবসায়ীদের দেয়ার পরও আমি রক্ষা পায়নি। অবশেষে সুদ ব্যবসায়ীদের হাতে পায়ে ধরে ও রক্ষা না পেয়ে শেষে আমার শুধুমাত্র থাকার ঘড়টি রেখে ঘড়ের সামনের জায়গা (খলিয়ান) পর্যন্ত বিক্রি করে সুদ ব্যবসায়ীদের দেওয়ার পরেই রক্ষা পেয়েছি।

একই গ্রামের এনামুল হক জানান, হঠাৎ করেই স্ত্রী অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় আমি বে-কায়দায় পড়ে প্রথমে একজন সুদ ব্যবসায়ীর কাছে থেকে প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার টাকা সুদ দেয়ার শর্তে ১০ হাজার টাকা গ্রহন করি কিন্তু আমি দিনমজুরী ও ট্রাক্টরে শ্রমিকের কাজ করে অল্প কিছু টাকা সংসার খরচ বাদদিয়ে সব টাকা সুদ ব্যবসায়ীকে দিয়েও আমি তাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছিলাম না পরে অপর এক সুদ ব্যবসায়ীর কাছে থেকে একই শর্তে সুদের টাকা নিতে বাধ্য হই এবং সেই টাকা দেয়ার পরও প্রথম সুদ ব্যবসায়ী আরো টাকা দাবী করে এভাবেই আমি সুদের বেড়াজালে জড়িয়ে পরি এক পর্যায়ে মাঠের একমাত্র সম্বল ১২ কাঠা আবাদী জমি বন্দক রেখে সব টাকা সুদ ব্যবসায়ীদের দেয়ার পরও তারা আরো দেড়-দু লাখ টাকা আমার কাছে দাবি করলে সুদখোড় ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে এক সময় স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের রেখে পালিয়ে থাকাকালে আমার স্ত্রীর বড় ভাইয়েরা আমার সাথে যোগাযোগ করে ঘটনাটি জানার পর স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে বসে ফের নগদ ১ লাখ টাকা দেয়ার পরই আমার চেক, ষ্ট্যাম্প ও জাতীয় পরিচয়পত্র ফেরত পেয়েছি। তিনি আরো বলেন যত বড় বিপদ বা অর্থ সংকট এ হোক না কেন ভুল করেও আমার মত কোন মানুষ ঐ দাদন বা সুদখোড় ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে সুদের উপর যেন কোন টাকা গ্রহন না করেন।

এলাকার সচেতন মহলের দাবী অতিদ্রুত যদি প্রশাসন এই দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে এই অবৈধ দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে গ্রামের অসহায়-গরীব মানুষরা সর্বশান্ত হয়ে পড়বে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই