তারিখ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁ-৬ আসন,বড় দুই দলেই সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের হিড়িক

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসন,বড় দুই দলেই সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের হিড়িক
[ভালুকা ডট কম : ২২ নভেম্বর]
বাজতে শুরু করেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঢামাঢোল। এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ নামে পরিচিত নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসন। এই আসনে বর্তমানে নির্বাচনের হাওয়া খুব জোড়ে-সোড়ে বইতে শুরু করেছে। বড় দুই দলের মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। শেষ সময়ে নিজ নিজ দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য লবিং ও তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।

জেলার রাণীনগর ও আত্রাই দুই উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-৬ ও জাতীয় সংসদের ৫১ নম্বর আসনটি গঠিত। এই আসনে রয়েছে কবি গুরুর স্মৃতি বিজড়িত পতিসরের কাচারী বাড়ি ও মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত গান্ধী আশ্রম। এই আসনে মূলত ভোটের লড়াই হবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও  বিএনপি’র প্রার্থীর মধ্যেই। কোন খবর নেই জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দলের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসন থেকে বড় দুই দল থেকে ১৬জন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানের আলোচিত বিষয়টি হলো বিএনপিতে দুই ভাই চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর ও তারই ছোট ভাই নওগাঁ-৬ আসনের বর্তমান ধানের শীষের কর্ণধার আনোয়ার হোসেন বুলুর মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি।

কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি? জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম নাকি রাজশাহী মহানগর আ’লীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী নাকি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা শেখ মো: রফিকুল ইসলাম নাকি তরুন মুখ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাড. ওমর ফারুক সুমন?  অন্যদিকে কে হচ্ছেন ধানের শীষের রক্ষক? বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু নাকি তারই বড় ভাই চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর নাকি জাতীয় তাঁতি দলের জেলা শাখার সভাপতি আলহাজ্ব এচাহক আলী? রাণীনগর ও আত্রাই এই দুই উপজেলার সর্বত্র এখন চলছে এই গুনঞ্জন।

১৪দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম বলেন, আমি গত ২০০৮ সালে বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বুলুকে পরাজিত করে ও সর্বহারা-জেএমবিদের মোকাবেলা করে প্রথম বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। পরে ২০১৪ সালের ৫জানুয়ারী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। এই জনপদের মানুষের প্রাণের দাবী ছিলো এই জনপদকে সর্বহারা-জেএমবি মুক্ত করে শান্তির বাতাস বয়ে আনা যা আমি নিজের প্রাণ বাজি রেখে করতে সক্ষম হয়েছি। এখন এই জনপদে শান্তির সুবাতাস বইছে। আমি গত ৯ বছরে বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় এলাকার যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেশ ভাল অবদান রাখার চেষ্টা করেছি। নাগর নদীর উপর দুটি ব্রীজ, আত্রাই নদীর উপর একটি ব্রীজ, ছোট যমুনা নদীর উপর দুটি ব্রীজ অত্র এলাকায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের উন্নয়ন হয়েছে। এ ছাড়াও আমি রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অভ’তপূর্ব উন্নয়ন করেছি। রাণীনগর-আত্রাইবাসীর প্রাণের দাবি ছিল পতিসরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। কিন্তু কোন ভাবেই সেই দাবি পুরুন হয়নি। তবে পতিসরে একটি কৃষি ইনষ্টিটিউট স্থাপিত করেছি যে উন্নয়নগুলো কথা এই জনপদের মানুষ কখনো ভাবেনি। তাই আমি এবারও ১৪দলের মনোনয়ন পাবো বলে আশা করছি।

এছাড়াও আ’লীগের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি ওহিদুর রহমানের ছেলে এ্যাড.ওমর ফারুক সুমন, রাণীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: আনোয়ার হোসেন হেলাল, রাণীনগর উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র উপদেষ্ঠা, জেলা আ’লীগের সদস্য ও রাণীনগর উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, জেলা আ’লীগের সদস্য ও রাণীনগর উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো: রেজাউল ইসলাম ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা শেখ মো: রফিকুল ইসলাম।

উপজেলা আ’লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আসাদুজ্জামান পিন্টু বলেন, বর্তমান উন্নয়ন বান্ধব সরকারের সহযোগিতায় ও সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের নেতৃত্বে এই অবহেলিত ও সর্বহারা অধ্যুষিত জনপদের সর্বক্ষেত্রে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা কল্পনার বাহিরে। এই উন্নয়নের কথা এই জনপদের মানুষ কখনোই ভাবতেও পারেনি। এছাড়াও ইসরাফিল আলম দীর্ঘদিন ধরে নেতাকর্মী, শুভানুধায়ী এবং এলাকার জনগনের সঙ্গে থেকে জনসভা ও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে আসছেন। আশা করি দল এবারও তাকে মূল্যায়ন করবে। হঠাৎ করে আগমনের সব হাইব্রিড অতিথি নেতারা তো এই জনপদের মানুষকে চিনেই না। তাই আগামীতেও এই জনপদের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য এলাকার জনগন ইসরাফিল আলমকে নৌকার মাঝি হিসেবে দেখতে চায়।

অপরদিকে বিএনপিতেও চলছে মনোনয়ন যুদ্ধ। বর্তমানের আলোচিত বিষয়টি হলো বিএনপিতে দুই ভাই চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর ও তারই ছোট ভাই বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বর্তমানে এই আসনের ধানের শীষের কর্ণধার আনোয়ার হোসেন বুলুর মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি। তবে দীর্ঘ ১৫বছর পর হঠাৎ করে রাজনীতির মাঠে এসে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি করেছেন তৎকালীন সর্বহারা ও জেএমবির মদদদাতা আলমগীর কবির।

এছাড়াও বিএনপি থেকে এই আসনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তালিকায় রয়েছেন বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা লে. কর্ণেল (অব:) আব্দুল লতিফ খাঁন, তাঁতি দল নওগাঁ শাখার সভাপতি আলহাজ্ব এচাহক আলী, রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল হক বেলাল, জেলা বিএনপি’র সাবক সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, বিএনপি নেতা ফৌজদার বেলাল, রেজাউল ইসলাম রেজু, ব্যবসায়ী বায়েজিদ হোসেন পলাশসহ আরো অনেকে।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু বলেন, আমার ভাই গত ২০০৬ সালে নিজেকে বাঁচানোর জন্য যখন এই অঞ্চলের ধানের শীষকে পানিতে ভাসিয়ে এলডিপিতে যোগ দেয় তখন আমি এসে ধানের শীষের হাল ধরি। তখন থেকেই আমি এই জনপদে ধানের শীষের হয়ে কাজ করছি। আমি গত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিয়ে ভোট করি। কিন্তু আমার ভাইয়ের সৃষ্টি করা সর্বহারা আর জেএমবির সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য আ’লীগের কাছে পরাজিত হই। আমি বিএনপি’র ক্রান্তিকালে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম এবং এলাকার দলীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণসহ নির্যাতিত অসহায় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছি এবং দলকে সব সময় চাঙ্গা করার জন্য তৃনমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সকল নেতাকর্মীদের উৎসাগ যুগিয়ে আসছি। বর্তমানে এই জনপদের মানুষ দখলবাজ, চাঁদাবাজ ও অত্যাচারিত শাসকের শাসন থেকে মুক্তি চায়। তাই বিএনপি’র ক্রান্তিকালকে মূল্যায়ন ও এলাকায় জনপ্রিয়তার জরিপের ভিত্তিতে অবশ্যই আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদি।

তাঁতি দল নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি আলহাজ্ব এচাহক আলী বলেন, বর্তমানে এই জনপদের মানুষ অত্যাচারি রাজার শাসনে অতিষ্ঠ। ঘুষ বাণিজ্য, দখলবাজ ও চাঁদাবাজির বেড়া জালে আটকে পড়েছে এই আসনের মানুষ। আমি তাদেরকে মুক্ত করতে চাই। বিএনপি’র ক্রান্তিকালে নির্যাতিত ও হামলা-মামলার শিকার নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম এখনও আছি। তাই আমি মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদি।

রাণীনগর থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক প্রভাষক একেএম জাকির হোসেন বলেন, ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে আলমগীর কবির নিজেকে বাঁচানোর জন্য এলডিপিতে যোগ দেন। একই বছরে এলডিপি থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি বর্তমানে জন বিচ্ছিন্ন একজন নেতা। তারই সৃষ্টি ছিলো গলাকাটা সন্ত্রাসী বাহিনী সর্বহারা। সম্প্রতি তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেছেন।

প্রায় ১২ বছর যাবত তার ছোট ভাই বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু এই দুই উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিভাবক হিসেবে শক্ত হাতে দলের হাল ধরে রেখেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বীরমুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলুকে মনোনয়ন দেয়া হলে জয় নিশ্চিত। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনের বিএনপি’র সমর্থকরা ধানের শীষের রক্ষক হিসেবে আনোয়ার হোসেন বুলুকে চায় এবং বুলুর নেতৃত্বে তারা উৎসব ও আনন্দ মুখর পরিবেশে ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করতে চায়। #



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

রাজনীতি বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই