তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় এক্সপিরিয়েন্স মিলের দূষিত পানি ধ্বংস করছে ফসল

ভালুকায় এক্সপিরিয়েন্স মিলের দূষিত পানি বছরের পর বছর কৃষকের ফসল ধ্বংস করছে
[ভালুকা ডট কম : ২৪ ফেব্রুয়ারী]
ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা গ্রামের এক্সপিরিয়েন্স মিলের বর্জ মিশ্রিত দূষিত পানিতে স্থানীয় কৃষকদের জমির ফসল নষ্ট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকার কৃষকরা বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, উপ-পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ ও ডিজি পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

বর্তমানে ওই মিলের দূষিত পানি মিলের আশ পাশের কাকাচড়া,খুরুলিয়া, সাধুয়া, ভালুকজানি, গায়লা, তালতলা, কেচুরগোনা, তেইরা, মালন্দিয়া হায়ারা, শিমুলিয়া বিলে নামায় সারা বছর জলা বদ্ধতার কারনে ধান চাষ সম্পুর্ণ রুপে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ভরাডোবা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা প্রতি মৌসুমে হাজার হাজার মন ধান আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছারা এসব খাল বিলে সারা বছর প্রকৃতির দেয়া বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো যা কৃষক পরিবারের খাদ্যের পুষ্টি যোগাতেন, বিষাক্ত কালো পানি তাও কেড়ে নিয়েছে। পানি দূষিত হওয়ায় বিলে হাঁসের খামার করা বন্ধ হয়ে গেছে ।

বছরের পর বছর দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত পানি জমে থাকায় বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি সাধন সহ বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে এলাকাবাসী আক্রান্ত হচ্ছে। ২২ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার সরজমিন ভরাডোবা ও পুরুড়া গ্রামে গেলে অনেকেই অভিযোগ করেন ভরাডোবা পাকিস্তানী নামে পরিচিত এক্সপিরিয়েন্স মিলের বিষাক্ত বর্জ পানি দিনরাত  খালে বিলে নাময় আশ পাশ সহ ভরাডোবা, পুরুড়া, ভাঁটগাঁও, রাংচাপড়া, চাপরবাড়ী,গ্রামের অসংখ্য খাল বিলে নামায় বর্জ মিশ্রিত কালো পানিতে প্রতি বছর জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। বিষাক্ত পানিতে নামলে তাদের শরীরে চুলকাতে চুলকাতে ফুসকার মতো পরে। ক্ষেত রোপনের পর কিছুদিনের মধ্যে ধান গাছের গোরা পচতে শুরু করে। দীর্ঘদিন যাবৎ কালোপানি নেমে মাটি কালো কিচকিচে আলকাতরার মত হয়ে গেছে। এই সব এলাকার টিউবওয়েলের পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে খাবার অযোগ্য হয়ে যায়। এসব পানি পান করে এলাকার লোকজন এমনকি বেশীরভাগ শিশু ডায়রিয়া সহ নানা রকম পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয় ।

জানাযায় ওই মিলের দূষিত পানি বন্ধের দাবিতে এলাকার কৃষক নারী পুরুষ সম্মিলিত ভাবে বেশ কয়েকবার ঢাকা ময়মনসিংহ মহা সড়ক অবরোধ করে রাখে। ওই সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আশ্বাসে কৃষকরা অবরোধ তুলে নেয়। পরবর্তীতে কৃষকের অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি বিশেষ দল ভরাডোবা এলাকায় এসে ওই মিল হতে ক্ষেত খলায় নির্গত পানি পরিক্ষার জন্য নিয়ে যান। এর কিছুদিন পর এলাকার কৃষকরা আবার মহা সড়ক অবরোধ করে। পরবর্তীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সম্যান্ট এন্ড মনিটরিং) মোহাম্মদ মুনির চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল পুলিশের সহযোগিতায় ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ওই মিলে অভিযান চালিয়ে ইটিপি অকার্যকর দেখতে পান। পরে তিনি ও তার দল আশপাশে ঘুরে দূষিত পানিতে ফসল নষ্ট ও জীব বৈচিত্রের ক্ষতি সাধন সহ পরিবেশের দূষনচিত্র দেখতে পান। ওইদিন পরিবেশ অধিদপ্তরের দল মিলে প্রবেশ করে মিল কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষনিক মিল বন্ধের নির্দেশ দিয়ে ২ কোটি ২৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ক্ষতিপুরন দন্ড ধার্য করেন। ইটিপি ত্রুটিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত মিল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

পরবর্তীতে ২০১১ সালে মিল কর্র্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপুরন দেন। কিছুদিন মিলটি বন্ধ রাখার পর পুনরায় একই কায়দায় চালু হলে কৃষি জমিতে আবারো দূষিত পানি নেমে ফসল হানি শুরু হয়। এরই মধ্যে ভরাডোবা হতে ভালুকা থানারমোড় ক্ষীরু নদী পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার লম্বা একটি পাইপ লাইন মিল কর্র্তৃপক্ষ অপরিকল্পিত স্থাপন করলেও তাতে ঠিকমত বর্জ নামেনা বলে কৃষকদের অভিযোগ। তদানিন্তন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আজম খান কৃষকের অভিযোগের ভিত্তিতে সরজমিন ভরাডোবা ও আশপাশের গ্রামে গিয়ে ফসলী জমিতে পাকিস্তানী মিলের দূষিত বর্জ পানি দেখতে পান, এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

ভরাডোবা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহ আলম তরফদার জানান অনুমান ৯/১০ বছর যাবৎ এক্সপিরিয়েন্স মিলের বর্জ মিশ্রিত দূষিত কালো পানি মিলঘেষা কাকাচড়া, সাধুয়া ও খুরুলিয়া বিলে সারা বছর দুর্গন্ধযুক্ত কালে পানি জমে থাকে তাতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে জন স্বাস্থ্যের ব্যপক ক্ষতি সাধন করছে। তার ইউনয়নের কয়েকটি গ্রাম সহ পাশের বিরুনিয়া ইউনিয়নের কৃষকের ফসল ও গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে। এলাকার কৃষকদের পক্ষ হতে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে, কৃষকের ফসলি জমি বাঁচাতে ও পরিবেশ রক্ষায় মিলের বর্জ মিশ্রিত দূষিত পানি বন্ধের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহনে এলাকাবাসীর পক্ষ হতে তিনি সংলিষ্ট কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি দাবী করেছেন। এ ব্যাপারে ওই মিল কর্তৃপক্ষ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই