তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন,বিলুপ্ত হচ্ছে পশু-পাখি

ভালুকায় নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন খাবার ও আশ্রয় হারিয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে পশু-পাখি
[ভালুকা ডট কম : ২৮ ফেব্রুয়ারী]
ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ ভালুকা রেঞ্জের হবিরবাড়ী ও কাদিগড় বিট  উথুরা রেঞ্জের আঙ্গারগাড়া বন বিট এলাকায় শাল গজারি বন সহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় গাছ কেটে উজাড় হওয়ায় খাবার ও আশ্রয় হারিয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে বহু প্রজাতির পশু পাখি। অপর দিকে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে অক্সিজেনের ঘাটতি ও পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় জনস্বাস্থ্যের হুমকি সহ বিলুপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী।

ভাওয়াল বনের উত্তরাংশ গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার সীমানা ঘেষা শাল গজারী বনাঞ্চল বেষ্টিত ভালুকায় কয়েক বছর পূর্বেও মেছু বাঘ, বনো শুকরের টাক, সজারু, হরিণ, বাঘডাসা, কাঠবিড়ালি, বনবিড়াল, খরগোশ, বেজি, শিয়াল, ওয়াফ, গুইসাপ, অজগর, বানর, হনুমান, লজ্জাবতী বানর সহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যত ছিল। এলাকার সর্বত্র গাছের ডালে ডালে বিশাল আকৃতির মৌচাক থাকায় সাবধানে পথ চলতে হতো। মধুচোর চিল গ্রাম্য ভাষায় হাদাল বলা হতো তিনি মধু খেতে মৌচাকে থাবা লাগিয়ে উড়ে যেতেন আর ক্ষুব্দ মৌমাছিরা বাড়ীঘরে প্রবেশ করে মানুষ,গরু বাছুর যা পেতো সবার শরীরে ইচ্ছেমতো হুল ফুটিয়ে আহত করতেন আর ওই সুযোগে হাদাল পাকি ফিরে এসে মনের সুখে সাথীদের নিয়ে মধু খেতেন। জলাশয়ে পানকৌরি, বালি হাঁসের ঝাক, বিলের ধারে নিমগাছে মাছরাঙা, সাদা বক, কানি বক, বটগাছে বটফল খেতে ঝুলে থাকতো শত শত কালো বাদুর আর ডালে বসতো হরিয়ালির টাক, কড়ই গাছের উঁচু ডালে গলাসাদা চিল, ঈগল, সারস ও হামুককেচারা অবসর সময় কাটাতো।

আকাশে উড়ে ঘুরে নামার বন্দে গৃহস্থের মরাগরু ভোজন শেষে গৃধনি শকুনের দল তালগাছে রাত কাটাতো। গাছের শুকনা ডালে মিস্ত্রি পাখি কাঠকুড়ালী ঠুকুর ঠুকুর গর্ত করে  দিন কাটাতো। ইষ্টি আসছে মিষ্টি নিয়ে কুটুম পাখির বিরামহীন ডাকে বাড়ীর বউ ঝিরা বিরক্ত হতেন। সকাল দুপর সারা বিকাল কৃষাণ কন্যা উদাস হতো বউ কথা কও পাখির ডাকে। ফাগুন এলে শিমুল ডালে কুহু কুহু গান শোনাতো গানের পাখি কালো কোকিল। সন্ধ্যা নামলে বাঁশ বাগানে বানাশপাখি শিষ বাজিয়ে গৃহস্থেরে ঝড় আসবে জানান দিতো। রাতের বেলা বাড়ীর পাশে তমাল গাছের ঝোপে ভূতুম পেঁচার ডাক শোনিয়ে মায়েরা শিশুদের ঘুম পারাতেন। এ সবই যেন এখন রুপ কথার ঠাকুমার ঝুলির গল্প হয়ে গেছে। বেলা ডুবলে দলবাঁধা শিয়ালের হাঁক, বন মোরগের ডাক, গ্রামের প্রচলিত ভাষায় রাতশেষে কুড়–রার ডাক এখন আর শোনা যায়না।

এ ছাড়া গ্রামাঞ্চালে দুপুরে বাড়ীর পাশে কাক ডাকলে গৃহস্থ অমঙ্গলের আশংকা আঁচ করে আতংকিত হতেন আর বলতেন মরার কাক আল্লার নাম নে, যদিও এটিকে কুসংষ্কার হিসেবে প্রচলিত ছিলো। চারিদিকে কাকের কা কা শব্দ এখন আর কানে আসেনা। কোন কিছু না পেয়ে ফিরে আসলে জিজ্ঞেস করলে প্রবাদ হিসেবে বলা হতো কাক পক্ষীটাও চোখে পড়েনি। আম, কাঠাল, জাম, ডেওয়া ফল, আতাফল, সীতাফল আরও অনেক জাতের ফলফলাদি  বন্য পশুপাখিরা খেয়ে বাঁচে। এ অঞ্চলে এসব গাছপালা একেবারেই কমে যাওয়ায় পশুপাখীর খাদ্য ও বাসস্থান না থাকায় বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত প্রায়। বৃক্ষ শুধু পশুপাখির আবাস স্থল বললেই শেষ কথা নয়। আদি কাল থেকেই বৃক্ষ প্রসিদ্ধ কোন স্থানের নামের পরিচয় বহন করে আসছে।

ভালুকা উপজেলার পার্শ্ববর্তী উপজেলা ফুলবাড়ীয়া এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্তস্থান রাধা কৃঞ্চের লীলভূমি গুপ্তবৃন্ধাবন তমালতলা নামে অধিক পরিচিত ও বিখ্যাত। পাশে সাগরদীঘি নামে একটি বিশাল পুকুর রয়েছে যেখানে চৈত্র সংক্রান্তিতে বারুনীস্নানে দেশ বিদেশ হতে হাজার হাজার পুন্যার্থীর সমাগম ঘটে। সাগরদিঘী বারুনী মেলায় বিভিন্ন দেশের হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী পুরুষ শিশু কিশোরের সমাগম ঘটে। কালের বির্বতনে তমাল তলার বিশাল তমাল গাছটি মাত্র কিছুদিন পূর্বে প্রকৃতির প্রতিহিংসার কবলে পরে অস্তিত্ব হারিয়েছে। শুধু হারায়নি গুপ্ত বৃন্ধাবনের তমালতলা নামটি। এ রকম ভালুকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নামে গফরগাঁও সড়কে  রাংচাপড়া গ্রামে মুক্তির আম গাছ নামে একটি বিশাল আকৃতির আম গাছ ছিল যা সম্প্রতি কেটে ফেলা হয়েছে, বটতলা বাজার, শিমুল তলীর ঘাট, জামতলী, শিমুল হাটি গ্রাম ইত্যাদি বহুকাল হতে পরিচিতি বয়ে বেড়াচ্ছে।

ভালুকার হবিরবাড়ী ও কাদিগড় শাল গজারী বনে কিছু টাক ধরা বানর রয়েছে যে গুলি খাদ্যাভাবে বন ছেড়ে প্রায়ই লোকালয়ে চলে আসে খাদ্যের সন্ধ্যানে। কৃষকের ফসল নষ্ট করে খাবার খেয়ে তারা আবার বনে ফিরে যায়। হবিরবাড়ী গ্রামের কৃষকরা জানান খুধাতর্ বানরের পাল ধান, সবজি ও বিভিন্ন ফল ফসলের ক্ষতি সাধন করে থাকে তবু বানরের উপর কেউ অত্যাচার করেন না। প্রবীণ ও সচেতন মহলের অভিযোগ নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে এ অঞ্চলের বহু প্রজাতির পশুপাখি প্রায় সম্পুর্ণ বিলুপ্ত হয়ে ওই প্রবাদটিই যেন বাস্তবে রুপ নিয়েছে। এর কারন হিসেবে বন এলাকায় অসংখ্য অবৈধ করাতকল থাকায় বেপরোয়া কাঠ চুরদল দীর্ঘদিন যাবৎ কাঠকেটে ওইসব করাতকলে চিড়াই করে বন উজার করে চলেছে। কাদিগড় বিটের অন্তরগত বাটাজোর, কাচিনা, তামাট, মল্লিকবাড়ী বাজারে ২০/২৫ টি, উথুরা বিটের চামিয়াদী, কৈয়াদী, হাতিবের, বনকোয়া, ভরাডোবা এলাকায় ৩০/৩৫ টি, আঙ্গারগাড়া বিটের ডাকাতিয়া চৌরাস্তা ও আশপাশে ৮/১০ সহ উপজেলার বনাঞ্চল বেষ্টিত এলাকায় অসংখ্য অবৈধ কড়াতকলে কাঠ চিড়াই করে বন উজার করলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ এদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।বন বিভাগের তথ্যমতে বন এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাত কল স্থাপন নিষিদ্ধ হলেও বনের মধ্যস্থলে কি করে তা বসানো হচ্ছে এর উত্তর কে দিবে। এসব বিষয়ে বরাবরই স্থানীয় বন কর্তারা ব্যবস্থা নিবেন বলে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে এসেছেন।

ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন জানান কাদিগড় জাতীয় উদ্যান এলাকার বনে বসবাসরত পশু-পাখিদের খাবারের জন্য উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, হবিরবাড়িরর জন্যও কিছুদিনের মধ্যে প্রস্তাব পাঠাবেন। এছাড়া বন এলাকায় অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা করাতকলের বিরোদ্ধে তারা  শীঘ্রই মোবাইলকোড এর মাধ্যমে  ব্যবস্থা নেবেন। অবশ্য পূর্বে ও তারও পূর্বের কর্তাও সাংবাদিকদের একই কথা বলেছিলেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই