তারিখ : ১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

স্বামীর দেয়া কেরোসিনের আগুনে দগ্ধ গৃহবধু পপি

স্বামীর দেয়া কেরোসিনের আগুনে দগ্ধ গৃহবধু পপি
[ভালুকা ডট কম : ২৩ মে]
যৌতুকলোভী স্বামীর দেয়া কেরোসিনের আগুনে দগ্ধ গৃহবধু পপি দীর্ঘ দেড়মাস যাবৎ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের এইচডিওয়াই সেকশনের দ্বিতীয় তলার ১৮নং বেডে  মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন । তাঁর শরীরের ৪২শতাংশই  পুড়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলেছেন তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। দরীদ্র পিতা মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে।

অগ্নিদগ্ধ  নিহারিকা আক্তার পপি গাজীপুর জেলাধীন  কালিয়াকৈর উপজেলার বরিয়াবহ গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় গোলাম নবী হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল কেরানী  আব্দুস সামাদ মিয়ার মেয়ে । এঘটনায় পপির বাবা আব্দুস সামাদ বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানায় স্বামী রমজান আলীসহ ছয় জনের নামে একটি অভিযোগ মামলা দায়ের করেন। নানা নাটকিয়তার পর মহাপুলিশ পরিদর্শকের নির্দেশে থানায় মামলা রেকর্ড হলেও দীর্ঘ একমাসেও আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বাদীর দাবী  প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও অজ্ঞাত রহস্যজনক কারণে পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করছে না।

অগ্নিদগ্ধ পপির পরিবার সূত্রে জানা যায়,  গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বরিয়াবহ গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় গোলাম নবী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের কেরানী আব্দুস সামাদ মিয়ার মেয়ে পপির প্রেমের সূত্রধরে ২০১৫ সালে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার সাড়াতৈল গ্রামের সিরাজুল ইসলামের পুত্র রমজান আলীর সঙ্গে বিয়ে হয়।প্রেমের বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই পপির পিতার কাছে একটি সরকারী চাকুরি অথবা  ছয় লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে স্বামী রমজান আলী। কিন্ত দরীদ্র স্কুল কেরানী পপির বাবা আব্দুস সামাদ মেয়ের স্বামীর দাবীকৃত যৌতুকের টাকা এবং একটি সরকারী চাকুরি যোগার করে দিতে পারেনি। এজন্য  প্রতিনিয়তই পপির উপর নেমে আসে শারিরিক ও মানুষিক নিযার্তনের স্টিমরোলার। মেয়েকে নির্যাতন করার ঘটনায় পপির বাবা আব্দুস সামাদ গাজীপুর আদালতে  নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌতুক নিরোধ আইনে দু’টি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া জয়দেবপুর থানায় ৪টি ও কালিয়াকৈর থানায় ৩টি সাধারণ ডায়েরি করেন। ওই সব মামলায় পুলিশ রমজান আলীকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর কোর্ট হাজতে প্রেরণ করে।এদিকে রমজান আলী গ্রেপ্তার হওয়ার পর রমজানের পরিবার কৌশলে  পপিকে বুঝিয়ে গাজীপুর আদালত থেকে রমজানকে  জামিনে মুক্ত করে নিয়ে যায়। ওই সময় স্ত্রীকে আর নিযার্তন করবে না বলে আদালতে একটি মুচলেকা দেয় স্বামী রমজান আলী। এরপর স্ত্রী পপিকে নিয়ে রমজান আলী তার গ্রামের বাড়ীতে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হতে না হতেই সেই ছয় লাখ টাকা যৌতুকের দাবীতে আবার পপির উপর সীমাহীন নির্যাতন শুরু করে স্বামী রমজান আলী। পপির বাবার অভিযোগ নির্যাতনের একপর্যায়ে ৩১ মার্চ রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় পপির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে  স্বামী রমজান আলী ও তার পরিবার।

এসময় পপির চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থল থেকে অগ্নিদগ্ধ  পপিকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রমজান আলীর পরিবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করে মূমূর্ষ অবস্থায় বাড়ি নিয়ে যান। পপিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার খবর পেয়ে পপির বাবা আব্দুস সামাদ স্ত্রীকে নিয়ে ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জের পপির শশুর বাড়ী যান। সেখানে পপির বাবা মায়ের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে স্বামী রমজান আলী ও তার পরিবার। একপর্যায় তাদের কাছ থেকে দুইটি  মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে জোরপুর্বক বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। অসহায় পিতা আব্দুস সামাদ ও পপির মা অগ্নিদগ্ধ মেয়েকে উদ্ধারের জন্য বেলকুঁচি থানায় গিয়ে পুলিশের সহায়তা চান। বেলকুচি থানা  পুলিশ অগ্নিদগ্ধ পপিকে ঘটনাস্থল থেকে  উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। ওই সময় পপির বাবা  বেলকুঁচি থানায়  মামলা করতে চাইলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা তাদের  সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে মামলা গ্রহণ না করে একটি মুচলেকায় স্বাক্ষর রেখে বাবা আব্দুস সামাদের কাছে অগ্নিদগ্ধ পপিকে বুঝিয়ে দেন। পরে  ওই দিন রাতেই পপিকে মূর্মূষ অবস্থায়  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্নইউনিটে ভর্তি করেন। এর পর থেকে স্বামী বা স্বামীর বাড়ীর কেউ পপি কিংবা তার পরিবারের সঙ্গে কোন প্রকার যোগাযোগ করেনি।

অগ্নিদগ্ধ পপির বাবা আব্দুস সামাদ মিয়া বলেন,  দাবীকৃত যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় পপির স্বামী ও তার পরিবার আমার মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে। আমি মামলা করতে চাইলে বেলকুচি থানা পুলিশ প্রথমে আমার মামলা না নিয়ে আমাদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে। একপর্যায়ে একটি মুচলেকায় স্বাক্ষর রেখে আমার মেয়েকে আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়। এব্যপারে মহাপুলিশ পরিদর্শক বরাবরে আমি একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। মহাপুলিশ পরিদর্শকের নির্দেশে ঘটনার ১৭দিন পর   বেলকুচি থানা পুলিশ আমার মামলা গ্রহণ করে। মামলা গ্রহণ করলেও  অজ্ঞাত রহস্যজনক কারণে  পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করছে না।

এবিষয়ে বেলকুঁচি থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এঘটনায় অগ্নিদগ্ধ পপির বাবা আব্দুস সামাদ বাদী হয়ে বেলকুচি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। #



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অপরাধ জগত বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই