তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁর কৃষকদের ঘরে নেই ঈদের আনন্দ

ধানের দাম না থাকায় চরম প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে  
নওগাঁর কৃষকদের ঘরে নেই ঈদের আনন্দ
[ভালুকা ডট কম : ০১ জুন]
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের নবীন কৃষক মাসুদ রানা। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে প্রায় ৩৪ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন তিনি। ধান চাষের অধিকাংশ খরচই মহাজনের কাছ থেকে কর্য্য করে, দোকান থেকে সার ও কীটনাশক বাকি নিয়ে করেছিলেন। যে পাওনাগুলো ধান ঘরে তোলার পর বিক্রি করে পরিশোধ করবেন এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি।

আবার মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ঘরের দোরজায় কড়া নাড়ছে। চলতি মৌসুমে ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। তিনি ভেবে ছিলেন ধান বিক্রি করে সকল কর্য্য পরিশোধ করবেন এবং ঈদে বাবা-মাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করবেন কিন্তু দাম নেই ধানের। বিক্রি করতে পারছেন না ধান। তাই আজ মাসুদের ঘরে ঈদের আনন্দ অম্লান হয়ে গেছে। ঈদ যেন মাসুদের জন্য শুধুই কষ্ট ও ব্যথার উৎসবে পরিণত হয়েছে। ধানের দাম মাসুদের সকল স্বপ্ন চ’র্নবিচ’র্ন করে দিয়েছে। একই গ্রামের কৃষক জাবেদ আলী মন্ডল, শেখ হাফিজুলসহ উপজেলার অধিকাংশ কৃষকদের ঘরে নেই ঈদ উৎসবের আনন্দ। ঈদ যেন উপজেলার কৃষকদের কাছে আনন্দ নয় দু:খের বার্তা বয়ে নিয়ে আসছে।

কৃষক মাসুদ রানা আরো বলেন প্রতিমন ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৯শত টাকা কিন্তু বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে সর্ব্বোচ ৭টাকা মন। তার উপর আবার বাজারে নেই পর্যাপ্ত ক্রেতা। যে পাইকাররা ধান কিনছেন তাদের কাছ থেকে টাকা তুলতে ক্ষয় করতে হচ্ছে পায়ের কয়েক জোড়া স্যান্ডেল। আমাদের প্রধান আয়ের উৎস ও সম্বলই হচ্ছে ধান। অথচ সেই ধান এখন আমাদের জন্য আর্শিবাদ নয় গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। ঘরে ধান আছে অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। নিরবে শুধু চোখের পানি ফেলে চলেছি। আমরা কৃষক হয়েছি তাই কি আমাদের অপরাধ। প্রতি মৌসুমে ধান চাষ করে আমাদের চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। অথচ সরকার কৃষকদের দিকে না তাকিয়ে শুধু বিত্তবান ও চাকরীজীবীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা প্রতান করছে। তাহলে আমরা কৃষকরা জমি-জমা ও পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো?

সারা দেশের ন্যায় নওগাঁয় দাম নেই ধানের। উত্তরবঙ্গের শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত নওগাঁ। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় উৎপাদিত চালের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ধানের কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় কৃষকদের ঘরে নেই ঈদের আনন্দ। ধান বিক্রি করতে না পারায় কৃষকদের ঈদের আনন্দ অম্লান হয়ে গেছে। সেই প্রভাব পড়েছে উপজেলার প্রধান প্রধান ঈদ বাজারগুলোতে। ঈদের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে যে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদের বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। ক্রেতা শূন্য উপজেলার অধিকাংশ ঈদ মার্কেটগুলো। অনেক ব্যবসায়ী ও দোকানীরা জানান এই উপজেলার প্রধান ক্রেতাই হচ্ছেন কৃষকরা। ধানের দাম না থাকায় কৃষকরা ধান বিক্রি করতে না পারায় ঈদের কেনাকাটাও করতে পারছেন না তারা। ধানের দামের প্রভাব সকল ক্ষেত্রে চরম ভাবে পড়েছে।

চলতি মৌসুমে ধান উৎপাদন করে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। তাই ধান কৃষকদের ঘরেই পড়ে রয়েছে। অপরদিকে পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় ধান কিনছেন না চাতাল ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও সরকারের দেওয়া বরাদ্দ অনেক কম হওয়াই ধানের বাজারে বাড়ছে না ধানের দাম। যার কারণে এবারের ঈদ কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারছে না। অনেক কৃষক ধান বিক্রি করতে না পারায় এখনো পরিবারের জন্য আসন্ন ঈদে কোন কিছুই কেনাকাটা করতে পারেননি। পরিবারের ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি কাপড়ও কিনতে পারেননি উপজেলার অনেক কৃষক। তাই ঈদ যদি আরো পড়ে হতো তাহলে তাদের জন্য অনেক ভালো হতো বলে জানান কৃষকরা। অনেক কৃষক তাদের ঋণের টাকা ও কীটনাশকের টাকাও পরিশোধ করতে পারছেন না।

রাণীনগর বাজারের এশিয়া টেইলার্সের কাটার মাষ্টার বিপ্লব বলেন ধানের দাম শুধু কৃষকদের জন্যই নয় আমাদের জন্যও চরম ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। আমাদের মূল ব্যবসা হয় শুধু ঈদুল ফিতরের সময়। কিন্তু ধানের দাম শুধু কৃষকদেরই কপাল পড়ায়নি সঙ্গে আমাদেরও কপালও পুড়িয়েছে। কাজের অবস্থা খুবই খারাপ কর্মচারীদের বেতন-ভাতা কোথায় থেকে দিবো তা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

লাইফস্টাইল বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই