তারিখ : ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁয় চামড়া নিয়ে বিপাকে ক্রেতা-বিক্রেতা

নওগাঁয় চামড়া নিয়ে বিপাকে ক্রেতা-বিক্রেতা,পাচার হওয়ার আশঙ্কা
[ভালুকা ডট কম : ১৪ আগস্ট]
নওগাঁয় চামড়া নিয়ে দারুণ বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। অন্য ঈদে কোরবানি পশুর চামড়া কেনার জন্য গ্রামে-গঞ্জে ক্রেতার সমাগম থাকলেও এবারে ঈদুল আযহায় কোরবানি পশুর চামড়া বিক্রিতে দুর্গতি দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো এলাকা ছিল ক্রেতা শূন্য। পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পারায় বঞ্চিত হয়েছেন হত দরিদ্ররাও। অপরদিকে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি কোরবানিকৃত ছাগল-ভেড়ার চামড়া মূল্য ১০/২০ টাকা এবং প্রতিটি গরুর চামড়া ভেদে ৫০/১০০/২০০ টাকা বিক্রি করাও ছিল দুষ্কর। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন চামড়ার হাটে বকরি ১০-১৫ টাকা, খাসি ৪০-৫০ টাকা, বকনা গরু ও ষাড় ১০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছাগলের খাজনা ৫ টাকা এবং গরুর ২০ টাকা। ছাগলের চামড়া ১০ টাকায় বিক্রি করে দিতে হয়েছে ৫ টাকা খাজনা। অনেকে ছাগলের চামড়া বিক্রি না করে ফড়িয়াদের মাগনা দিয়েছেন। অনেকে আবার চামড়া বিক্রি করতে না পারায় মাটির নিচে পুতে রেখেছেন। এই কোরবানী ঈদে নওগাঁয় ৫০-৬০হাজার গরু, ৩০-৪০হাজার ছাগল ও ১০-২০ হাজার ভেড়ার চামড়া ক্রয় করা হয়েছে বলে জানান জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি।

জেলার মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর বাজারের বাচ্চু মিয়া বলেন, ৪৮হাজার টাকা দামের বকনা গরু দিয়ে এবার কোরবানি দিয়েছেন। ভাল দামের আশায় ৫ কিলোমিটার দুর থেকে দেলুয়াবাড়ী হাটে চামড়া নিয়ে এসেছিলেন। দাম রাখছিলেন ৪শ টাকা। কিন্ত ফড়িয়ারা ১২০ টাকা চামড়ার দাম বলেন। অবশেষে ওই দামে বাচ্চু মিয়াকে চামড়া দিতে হয়েছে।

চককানু গ্রামের ফরহাদ হোসেন বলেন, ছাগল কোরবানি দিয়ে হাটে চামড়া বিক্রি করতে এসেছেন। ফড়িয়ারা চামড়া দাম ১০ টাকা বলায় তিনি হতবাক হয়ে যান। খাজনা দিতে হবে ৫ টাকা। এজন্য তিনি ফ্রিতে চামড়া ফড়িয়াদের দিয়ে দিয়েছেন।

কালীসফা গ্রামের রেজাউল ইসলাম বলেন, ছাগলের চামড়া ১০-১৫ টাকা দাম। ওই দামে চামড়া কিনে লবন ও শ্রমিক দিয়ে আরো ১০ টাকাসহ মোট ২০ টাকা খরচ হবে। কিন্তু সেই দামে তো আমরা বিক্রি করতে পারব না। অনেকে ছাগলের চামড়া ফ্রি দিয়েছেন।

মান্দার পাকুড়িয়া গ্রামের মৌসুমি ব্যবসায়ী সিদ্দিক বলেন, এবার চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন। বড় ব্যবসায়ীরা না হাটে না আসায় চামড়া দাম পানির দর। ষাড়ের চামড়া ৩শ টাকা করে কিনে ২০০-২৫০ টাকা বিক্রি করতে হয়েছে।

জেলার রাণীনগর উপজেলার পূর্ব বালুভরা গ্রামের আনছার আলী জানান, আমার ৩০বছরের জীবনে কোরবানীর চামড়ার এমন করুনদশা দেখিনি। এবার কোরবানির চামড়ার ক্রেতা নেই। ক্রেতা না থাকায় আমার ছাগলের চামড়া কেউ না নেওয়ার কারণে চামড়া আমি মাটির নিচে পুতে রাখতে বাধ্য হয়েছি।

চামড়া ব্যবসায়ী ফরিদ আক্তার বলেন আমরা বর্তমানে কঠিন দুর্দশার মধ্যে আছি। গত কয়েক বছরের চামড়ার দাম ট্যানারী মালিকরা এখনোও পরিশোধ করে নাই। চামড়া জাতীয় সম্পদ তাই এবছরও আমরা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে, এনজিও থেকে ঋন নিয়ে চামড়া কিনছি। আমরা জানি না এবছরও কোন কোম্পানী চামড়া কিনবে, তারা কি চামড়া নিয়ে দাম দিবে কিনা। আমরা সরকারের কাছে অনেকবার আবেদন করেছি আমাদের পাওনা টাকা আদায় করার বিষয়ে কিন্তু সরকার ট্যানারী মালিকদের পক্ষে আমাদের মতো ছোট-খাটো ব্যবসায়ীদের পক্ষে সরকার নয় তাই আমরা কোন সুফলও পাচ্ছি না। আমরা প্রতিবছরই আশায় বুক বাধি যে এবছর হয়তো বা ট্যানারী মালিকরা আমাদের পাওনা কিছুটা হলেও পরিশোধ করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যায় বাস্তবে পরিণত হয় না। তাদের বিরুদ্ধে কিছু করাও যায় না কারণ সকল কিছু তাদের সিন্ডিকেটের মধ্যে।

চামড়া ব্যবসায়ী শেখ আজাদ হোসেন বলেন এই চামড়া ব্যবসা বাপ-দাদার ব্যবসা তাই পথে বসলেও ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অনেকেই চামড়া ব্যবসা করে আজ পথের ফকির হয়েছে, কেউ বাড়ি-ঘর বিক্রি করে দেউলিয়া হয়েছে, কেউ হুতাশে না ফেরার দেশে চলে গেছে, কেউ মানুষের দেনা পরিশোধ করতে না পারায় দেশান্তর হয়েছে শুধুমাত্র ট্যানারী মালিকদের জন্য। তারা বড় বড় কথা বলে আমাদের কাছ থেকে চামড়া নিয়ে যায় অথচ পরে আর টাকাও পরিশোধ করে না কথাও বলে না। তাদের কাছ থেকে টাকা কিছু পেলেও কয়েক জোড়া স্যান্ডেল ক্ষয় করতে হয়। আজ টাকার চিন্তায় আমার ওপেন হার্ট সার্জারী করতে হয়েছে। আমার অন্যান্য ছোট-খাটো ব্যবসা আছে বিধায় এই ব্যবসায় লাভের আশায় বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে আসছি।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপ সমিতির সভাপতি মোমতাজ হোসেন বলেন আমরা চামড়া কিনে করবো কী? সরকার তো আমাদের মতো ছোট-খাটো চামড়া ব্যবসায়ীদের পক্ষে নয়। সরকার বড় বড় শিল্পপতি ট্যানারী মালিকদের পক্ষে। ট্যানারী মালিকরা চামড়া নিয়ে বছরের পর বছর আমাদের টাকা পরিশোধ করছে না তার দিকে সরকারের নজর নেই। অথচ সরকার চামড়া রপ্তানী বন্ধ করে সেই সব গুটিকয়েক ট্যানারী মালিকদের বিনা শর্তে কোটি কোটি টাকা ঋন দিয়ে আসছে। তারা সেই ঋনের অর্থ চামড়া খাতে না লাগিয়ে, আমাদের বছরের পর বছরের পাওনা পরিশোধ না করে অন্য ব্যবসায় প্রয়োগ করছে। তারা তো ভালোই আছেন আর মরছি আমরা যারা জেলা পর্যায়ের ছোট-খাটো চামড়া ব্যবসায়ীরা।

তিনি আরো বলেন তবে দেশের এই ঐতিহ্যবাহী চামড়া শিল্পটাকে আবার চাঙ্গা করার লক্ষে সরকারের উচিত ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়া। তাছাড়া আমাদের পার্শ্ববর্তি দেশেও চামড়ার অনেক দাম। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে চামড়া পাচার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে দারুন বিপাকে পড়েছেন। আর মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে সরকারকে চামড়া ব্যবসার উপর একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে তাহলে মাঠ পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও লাভবান হবেন, রক্ষা পাবেন সিন্ডিকেট ট্যানারী মালিকদের হাত থেকে। চামড়া শিল্পর দিকে সরকারের কঠোর নজরদারী করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। কারণ এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে কেউ চামড়া কিনবে না। পঁচে যাবে দেশের জাতীয় অমূল্য সম্পদ।

নওগাঁ পুলিশ সুপার মো: ইকবাল হোসেন পিপিএম বলেন, চামড়াবাহী কোন গাড়ি যেন সীমান্তের দিকে যেতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের কড়া নজরদারি রয়েছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকার বাইরে বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই