তারিখ : ১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

প্রকৃতির সাথে অত্যাচারী আচরণের অভিশাপে অভিশপ্ত হচ্ছি

প্রকৃতির সাথে অত্যাচারী আচরণের অভিশাপে অভিশপ্ত হচ্ছি
[ভালুকা ডট কম : ০৪ মে]
প্রকৃতির রয়েছে নিজস্ব সত্ত্বা। প্রকৃতি তার নিজস্ব আইন মেনে পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়। মানব কল্যাণের নিমিত্তে প্রকৃতি সর্বদা সজীব থাকার প্রত্যয়ে দূষণ মুক্ত পরিবেশ দাবী করে। মানব সৃষ্ট ও অন্যান্য কারণে প্রকৃতি ধীরে ধীরে সজীবতা হারাচ্ছে। দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। চাপিয়ে দেওয়া দূষণ ও বিভিন্ন অত্যাচারের কারণে প্রকৃতি বিরূপ আকার ধারণ করে। ফলে কখনো জলোচ্ছ্বাস, ঝড়, সিডর, আইলা, ফনীর মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে প্লেগ,বসন্ত,ইনফ্লুয়েঞ্জা ও করোনার মতো মহামারি আমাদেরকে কেবল প্রকৃতি ও পরিবেশের কথা মনে করিয়ে দেয়। মানুষ ও প্রকৃতি পরস্পর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হবে।

প্রাচীন সভ্যতায় যেদিন প্রথম আগুন আবিষ্কৃত হলো,সেদিন থেকেই সৃষ্ট ধোঁয়া বায়ুদূষণের কাজটি শুরু করলো । তবে ঐ সময়ে পর্যাপ্ত বনাঞ্চল থাকায় পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছিলো। প্রকৃতির ভূমিকা হিসেবে একটি উদাহরণ হলো  ‘আমাজন রেইন ফরেস্ট’ । ধরিত্রির ফুসফুস নামে খ্যাত এই বন প্রতিবছর এক বিলিয়ন টণ সমপরিমাণ কার্বনডাই-অক্সাইড গ্যাস শোধন করে বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্যাস নিঃসরণ করে। এ পরিমাণ হলো পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের দশ শতাংশের সমান। এরকম অনেক বনাঞ্চল রয়েছে। যেমন,বাংলাদেশের ফুসফুস হলো ‘সুন্দরবন’।
বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। এ অক্সিজেন গ্যাস ও মানবদেহের অভ্যন্তরস্থ দূষিত কার্বনডাই-অক্সাইড গ্যাসের বিনিময়ের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র হলো ফুসফুস। বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ ২১ শতাংশ। কোনো কারণে বায়ুমন্ডলে গ্যাসীয় উপাদান সমূহের নির্ধারীত পরিমাণের ঘাটতি ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান বেড়ে গেলে বায়ুদূষণ হয়। গত কয়েক দশক যাবত বিশেষজ্ঞগণ শতর্ক করছেন যে, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে বায়ুদূষণ এর মাত্রা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে । প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারাচ্ছে ফলে ঝুঁকি বাড়ছে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা দীর্ঘস্থায়ী অবরোধক ফুসফুসীয় রোগের ।

শিল্পকারখানা নির্গত রাসায়নিক উপাদান মানব ফুসফুসের স্বাভাবিক টিস্যুর ক্ষতি করে। বাতাসে কার্বনমনোক্সাইড ও সালফার ডাই অক্সাইড এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ফুসফুসের প্রদাহ বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা আছে দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ। বিবিসি এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশ মারা যায় পরিবেশ দূষণ জনিত অসুখ বিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দূষণের কারনে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান লরেন্স বের্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি এর তথ্যানুসারে রাসায়নিক মিশ্রণ সম্বলিত দুষিত বায়ুর সংস্পর্শে চোখ,নাক,বা গলার সংক্রমণ বা ক্ষতির কারণ হতে পারে। ফুসফুসের নানা জটিলতা, ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া, মাথাব্যথা, অ্যাজমা এবং অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে শ্বসনতন্ত্রের কোষগুলো ফুলে উঠে,  ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভাইরাস অণুগুলো ফেটে চারপাশে থাকা অন্য কোষগুলোতে ছড়িয়ে  সংক্রমণ ঘটায় । এই সংক্রমণ দ্রুত ব্রঙ্কিওলে  ছড়িয়ে যায়। এই সময় শুরু হয় গলাব্যথা আর শুকনো কাশি।

সংক্রমণ আরও বাড়লে ভাইরাসের অণুগুলো ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে ফুসফুসের মিউকাস স্তরে । ফুসফুসের পরিধী অংশ থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে শ্বাসনালীর উপরে ট্রাকিয়ার দিকে। এভাবেই ফুসফুসের সক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়, যুগপৎভাবে কার্বনডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়তে থাকে। অর্থাৎ শ্বসনকার্য সঠিকভাবে না হওয়ায় দেহে গ্যাসের বিনিময় যথাযথ হয় না। এমতাবস্থায় দেহের অন্যান্য অঙ্গাণু ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হতে থাকে। এক্ষেত্রে ফুসফুসের শক্তি ও শারীরিক সুস্থতা কতটা জরুরী তা অনুমেয়।

পরিবেশ দূষণের কারণে শুধুমাত্র ফুসফুসের সমস্যাই নয় বরং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা  যায়। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগ হচ্ছে।পরিবেশ দূষণের কারণে দেশের অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মানুষ বিকল্পের দিকে ধাবিত হচ্ছে ফলে রাসায়নিকের অপব্যবহার ও ভেজালের ব্যবহার বাড়ছে। এভাবে জনস্বাস্থ্য আরো ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। তাই প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে,পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। এ লক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের  বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ গুলো প্রশংসার দাবিদার। সরকারি নির্দেশনা মেনে চলে আমাদের সবাইকে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে।

প্রকৃতির সাথে অত্যাচারী আচরণ করার অভিশাপে আমরা বারবার অভিশপ্ত হয়েছি। কিন্তু কোনো শিক্ষা গ্রহণ করিনি। করোনাভাইরাস হয়তো সবাইকে আবার মনে করিয়ে দিতে এসেছে, প্রকৃতির প্রয়োজন বুঝতে হবে। প্রকৃতিকে ভালবাসতে হবে, প্রকৃতি ও পরিবেশের আইন মেনে চলতে হবে, নইলে প্রকৃতি নিজেই তার নিজস্বতা ফিরিয়ে নিবে।

বার্তা প্রেরক
জাহাঙ্গীর আলম তরফদার
প্রভাষক, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ
সরকারি এম এম আলী কলেজ, টাঙ্গাইল।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

পরিবেশ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই