তারিখ : ১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

যে কারণে বাড়ছে আম্ফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ

যে কারণে বাড়ছে আম্ফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ
[ভালুকা ডট কম : ২০ মে]
শতাব্দীর অন্যতম সুপার সাইক্লোন আম্ফান বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। সাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে । বাংলাদেশকে প্রায়শই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। একে তো করোনাভাইরাস তান্ডব চালাচ্ছে তার সাথে  যুক্ত হয়েছে  ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, পরিস্থিতি খুবি ভয়াবহ ।

পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, এ ধরণের ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক হয়। ঘূর্ণিঝড়ে সাধারণত দুই ধরণের ক্ষতি বেশি হয়। একটা হচ্ছে প্রাণহানি অন্যটি ঘরবাড়ি ও গবাদিপশুর ক্ষতি। মারাত্নক কিছু ঘটবে না এটাই হোক প্রত্যাশা। তবে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও পরিবেশ সংক্রান্ত বহুল আলোচিত আশঙ্কা আজকের বিশ্বের চরম বাস্তবতা। একবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই পৃথিবী জুড়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, মেরুর বরফ গলন, প্রাচীন জীবাণুসমূহের ফিরে আসা, মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়ে আসছিলো। সময় হয়েছে এখন তা মোকাবিলা করার।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে ব্যাপক বন্যা,খরা,অতিবৃষ্টি, প্লাবন,ঘূর্ণিঝড় সহ বিভিন্ন দুর্যোগ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮৭,১৯৮৮,১৯৯৮ সালের বন্যায় দেশের অবকাঠামো, ফসল ও পশুসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল ১,৫০,০০০ মানুষ। ২০০৭ সালের সিডরের ক্ষত এখনো বিরাজমান। এরি ধারাবাহিকতায় পরপর অনেকগুলো দুর্যোগ মোকাবেলায় জনজীবন অস্থির হয়ে আছে। এই মুহূর্তে উদ্ভুত করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সাথে আশঙ্কা হিসেবে যুক্ত হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান।
পৃথিবীর জলবায়ুর গড় তাপমাত্রার লক্ষনীয় বৃদ্ধির পরিমান হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে মানুষ সৃষ্ট কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি ঘটছে। ফলে তৈরি হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন।

ধারণা করা হয় একশো থেকে দুইশো বছরের মধ্যে পৃথিবীর জলবায়ুতে যদি তাপমাত্রা এক ডিগ্রী বা এর চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় তখন তাকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলা হয়।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া। এটি হলো এমন এক বিষয় যা সূর্য হতে আগত তাপশক্তিকে পৃথিবীতে ধরে রাখে। বিশদভাবে  বলা যায় যে, সূর্য রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করার পর এর মোট শক্তির শতকরা হারে ৭০ শতাংশ ভূমন্ডলীয় স্তরে ও অন্যান্য বস্তু দ্বারা শোষিত হয়। বাকি ৩০ শতাংশ বরফ, মেঘ,সমতল এবং বিভিন্ন প্রতিফলক দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়। এক্ষেত্রে আটকে থাকা ৭০ শতাংশ শক্তিও কিন্তু আটকে থাকে না। ভূমন্ডলে বিচরণকারী জীব সম্প্রদায় ও অন্যান্য উপাদান কতৃক ব্যবহৃত হওয়ার পর আহরিত সূর্যের তাপ বিকীরনের মাধ্যমে মহাশূন্যে ফিরে যায়। কিন্তু বিকিরিত তাপের সবটুকু ফিরে যেতে পারে না। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের স্তরে বিদ্যমান কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, জলীয়বাষ্প ও অন্যান্য গ্রীনহাউজ গ্যাসের কারনে তা পৃথিবীতে আবদ্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ যে পরিমান তাপশক্তি প্রবেশ করেছে, ছেড়ে যাচ্ছে তার থেকে কম পরিমাণ। ফলে তা পৃথিবীকে গরম করে তুলছে।

শিল্পায়ন, নগরায়ণ, প্রযুক্তির ব্যবহার ও নানাবিধ কারণে এসব গ্রীনহাউজ গ্যাসের সৃষ্টি হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্পের প্রসার সহ বিভিন্ন কাজের ফলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়ছে। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতেও এখন পরিবেশ দূষণের ঘটনা ঘটে চলছে।  এ নিয়ে অনেক সম্মেলন, চুক্তি, আলোচনা ও পর্যালোচনা হয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যম ও গবেষণার আলোকে বলা আছে বর্তমান বিশ্বের গড় তাপমাত্রা একশো বছর পূর্বের তাপমাত্রার তুলনায় প্রায় ০.৬০ ডিগ্রী সে. বৃদ্ধি পেয়েছে। সে তুলনায় বাংলাদেশে ০.৫০ ডিগ্রী সে.  বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ১.৫-২.০ ডিগ্রী সে. পর্যন্ত বা তারো বেশি।

আইপিসিসি উদ্ভাবিত জলবায়ু মডেলে দেখানো হয়েছে যে, বাংলাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে শতকরা ১০-১৫ শতাংশ অধিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিতে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণতা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা এবং ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাবে।

জানা যায় যে, সমুদ্র পৃষ্ঠে ২৭ ডিগ্রী সে. এর অধিক তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টিতে সহায়ক। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে তাপমাত্রা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে। গবেষণায় বিশেষজ্ঞগণ আলোকপাত করেছেন যে, আগামী ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১.৮ থেকে ৬.৩ ডিগ্রী সে. পর্যন্ত বাড়তে পারে। এতে করে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ০.৫ মিটার বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জনবহুল বদ্বীপ ও উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা, জলোচ্ছ্বাস দেখা যাবে। হারিকেন, ঘূর্ণিঝড়, প্লাবন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ বার বার আঘাত করবে। পাশাপাশি নানান ধরনের মহামারি ও বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে।

টেকসই উন্নয়ন কৌশল সফল করতে হলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষনের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে হবে।

আইপিসিসি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা ১.৫ এ সীমিত রাখতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ২০১০ সালের তুলনায় ৪৫ ভাগ হ্রাস করতে হবে। নেচার সাময়িকীতে বলা হয়েছে যে, উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রী সে. এর মধ্যে স্থির রাখতে হলে পৃথিবীব্যাপী কার্বন নিঃসরণ পূর্ব অপেক্ষা ২৫ শতাংশ সীমিত করতে হবে।
কার্বন নিঃসরণকারী দেশসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ ঠেকাতে শিল্পোন্নত এসকল দেশসমূহের এগিয়ে আসতে হবে,অনুধাবন করতে হবে এবং  কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।  জলবায়ুর বিপর্যয় রোধে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের লাগাম টেনে না ধরলে জলবায়ু বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ যেন জনজীবনে আতঙ্কের কারণ না হয় এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক/বার্তাপ্রেরক
জাহাঙ্গীর আলম তরফদার   
প্রভাষক, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ
সরকারি এম এম আলী কলেজ, টাঙ্গাইল।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

পরিবেশ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই