তারিখ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

করোনাকালে দেশের স্বাস্থ্যখাতে ভঙ্গুরদশা

করোনাকালে দেশের স্বাস্থ্যখাতে ভঙ্গুরদশা
[ভালুকা ডট কম : ১৯ জুন]
আজ (শুক্রবার) সাপ্তাহিক ছুটির দিনও করোনা পরীক্ষার জন্য রাজধানীর সরকারি হাসপাতাল  ঢাকা মেডিকেল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল ও মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভিড় করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা। তবে অনেকেই অভিযোগ করেন ২-৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও মেলেনি পরীক্ষার টিকিট। নমুনা দিতে আসা বেশিরভাগ মানুষই স্বাস্থ্য বিধি বা সামাজিক দূরত্বের বিধান মানতে পারেনি ভিড়ের কারণে। ফলে পরীক্ষা করার লাইনে এসেও করোনা আক্রান্ত হবার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

ওদিকে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নমুনা পরীক্ষার কিটের অভাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে। আগের দিন পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় নতুন কিটের অপেক্ষা করছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ।

করোনার এই সংকটকালে সকল সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে সবধরনের চিকিৎসা দেবার সরকারি নির্দশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে অনেক সংকটাপন্ন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার সুযোগ পাবার আগেই মৃত্যুবরণ করছেন।

এছাড়াও, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল রোগীরা রাজধানীর নামকরা হাসপাতালে ভর্তির জন্য অপেক্ষায়  থাকেন কখন একটি আইসিইউ বেড খালি হবে। সেখানে চিকিৎসা ব্যয় নিয়েও রোগীদের প্রশ্ন রয়েছে। তবে এসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, চিকিৎসা সেবার মান ধরে রাখতে হলে মূল্য বেশি দিতেই হবে।

স্বাস্থ্যখাতের বিপন্ন অবস্থা অত্যন্ত প্রকট-বিএনপি
এদিকে বিএনপি বলেছে, করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময়ে স্বাস্থ্যখাতের বিপন্ন ও ভঙ্গুরদশা অত্যন্ত প্রকটভাবে প্রকাশ হয়ে পড়েছে।আজ (শুক্রবার) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারান্সে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিশ্রুতিকে ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে; গোয়ালে নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন।

রিজভী বলেন,করোনাভাইরাসে মানুষ বিপর্যস্ত ও আতঙ্কিত। মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রতিদিন। হাসপাতালগুলোতে ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা সারা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭টি জেলাতেই আইসিইউ নেই। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে। ল্যাবে নমুনার স্তুপ জমা হয়ে আছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের বর্তমান দুর্দশায় প্রমাণিত হয়েছে, এই সরকার জনগণের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে ধাপ্পাবাজি করেছে।

সরকার চরমভাবে ব্যর্থ-জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদ
ওদিকে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের গতকাল (১৮ জুন) এক ভিডিও কনফারেন্সে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে চরম ব্যর্থতার দায়ে অভিযুক্ত করেছে।সংগঠনের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিমের সঞ্চালনায় কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা হারুন অর রশিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা রওশন আরা, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদ সংগঠক অনুপ কুন্ডু ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সংগঠক সামিউল আলম।

বৈঠকে কোভিড-১৯ রুগীর চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত ডাক্তারদের প্রতিদিন মৃত্যু সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, স্বাস্থ্যখাতে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অদক্ষতা এই ডাক্তারদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। নকল মাস্ক, নিম্নমানের পিপিই সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করার জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বৈঠকে বলা হয়, করোনা মহামারিকে যারা ব্যবসা বানিয়েছে সরকার তাদের মদদ করে চলেছে।

বৈঠকে বলা হয়, প্রথম থেকেই কোভিড-১৯ চিকিৎসায় প্রত্যেক হাসপাতালে ট্রেয়াজ পদ্ধতি চালু করে কোভিড-নন কোভিড রুগীদের চিকিৎসা সেবার পৃথক ব্যবস্থা চালু করা কর্তব্য ছিল। তা হলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিনা চিকিৎসায় রোগী মারা যেত না।বৈঠকে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে হাসপাতালগুলোকে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য প্রস্তত করার দাবী জানিয়ে বলা হয়, অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।

বৈঠকে দিন দিন করোনা আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, সারাদেশে দৈনিক এক লাখ টেস্ট করতে হবে। অবিলম্বে র‍্যাপিড টেস্ট কিটের ব্যবস্থা করতে হবে। গণস্বাস্থ্যের র‍্যাপিড কিট নিয়ে সরকারের গণবিরোধী আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

এসময় সবকিছু খুলে দিয়ে জনগণের প্রতি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার সরকারি আহ্বানকে প্রতারণামূলক বলে অভিহিত করেছেন বিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারীরা। তারা অভিমত দেন, সাভার গাজীপুর টঙ্গী প্রভৃতি শিল্পাঞ্চলগুলোতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার ঘটে চলেছে। এসব এলাকার অনেক কারখানায় স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করা হচ্ছে না। আবার প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস হতে শ্রমিকদের জীবন রক্ষার জন্য এসব এলাকায় হাজার শয্যার কোনো ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়নি। শ্রমিক এলাকায় প্রতিদিন ২০ হাজার টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়নি। কোভিড-১৯ আক্রান্ত শ্রমিক রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে কারখানা মালিকরা আক্রান্তদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে। এইভাবে গ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার হচ্ছে।

বৈঠকে ঢাকায় ২০ হাজার, চট্টগ্রামে ১০ হাজারসহ সারাদেশে জেলা পর্যায়ে এবং বৃহৎ শিল্প এলাকায় ১ হাজার শয্যা সম্বলিত ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণের জোর দাবি জানিয়ে বলা হয়, প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে অধিগ্রহণ করে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা দিতে হবে।বৈঠকে কোভিড-১৯ টেস্ট পরীক্ষার গুণগত মান রক্ষার দাবি জানিয়ে বলা হয়, এর ফলে সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

বৈঠকে জাতীয় সংসদে পেশকৃত বাজেট ২০২০-২০২১-এ কোভিড-১৯ সৃষ্ট ভয়াবহ জাতীয় দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব না দেয়ার সমালোচনা করে বলা হয়, সরকার জনগণকে রক্ষার বিষয়টি উপেক্ষা করে চলেছে। আর জাতীয় সংসদ পরিণত হয়েছে ব্যবসায়ীদের ক্লাবে। এরা মহামারিকে ব্যবসা হিসেবে দেখছে।

বৈঠকে নিজেদের দায়িত্বহীনতা ব্যর্থতাকে আড়াল করতে সরকার শাসক শ্রেণী কর্তৃক জনগণ ও ডাক্তারদের মুখোমুখি করার চক্রান্ত সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট চিকিৎসাকর্মী ও গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানানো হয়।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই