তারিখ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

স্বাস্থ্য ক্যাডার ছেড়ে ম্যাজিস্ট্রেট সুপারিশ প্রাপ্ত ফাইরুজ

স্বাস্থ্য ক্যাডার ছেড়ে ম্যাজিস্ট্রেট সুপারিশ প্রাপ্ত হলেন ফাইরুজ
[ভালুকা ডট কম : ১৫ জুলাই]
নেত্রকোনার মদন উপজেলার প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সমকাল মদন প্রতিনিধির মোতাহার আলম চৌধুরী ভাগ্না বউ ৩৯তম স্বাস্থ্য ক্যাডার ছেড়ে ৩৮তম প্রশাসনিক ক্যাডার (ম্যাজিস্ট্রেট) সুপারিশ প্রাপ্ত হলেন ডাক্তার ফাইরুজ তাসনিম।

তিনি  রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় বেড়ে ওঠা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরীজীবী বাবা ফয়েজ আহমেদ খান আর গৃহিনী মা রোমানা আক্তারের জেষ্ঠ্য সন্তান ফাইরুজ তাসনিম মৌরী । শৈশব থেকেই মেধার স্বাক্ষর রেখে চলা এই চিকিৎসক এস এস সি ও এইচ এস সি উভয় পরীক্ষায়ই গোল্ডেন এ প্লাসসহ বোর্ড বৃত্তিও লাভ করেছিলেন। সে সময় স্বপ্ন ছিল ম্যাজিস্ট্রেট হবে।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল থেকে এম বিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন করা এ চিকিৎসক জানান, বাবা মায়ের ইচ্ছাতেই চিকিৎসা বিদ্যায় পড়াশোনা করা । অতঃপর চার্টার্ড সেক্রেটারি স্বামী জনাব তৌকির আহমেদ (দিপু) এর অনুপ্রেরণায় তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তার ভাষায় মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা এবং দেশ ও জনগণের সেবা করার প্রত্যয় নিয়েই আমার ডাক্তারি পড়াশোনা করা তথাপি জন মানুষের কল্যাণে আরও কাছাকাছি থেকে তাদের জন্য বৃহৎ পরিসরে তুন কিছু করার তাগিদ থেকেই এই প্রসাশন ক্যাডারে আসা।

বিসিএস পরীক্ষার এই পথচলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিসিএস এর এই পথ চলাটা এত সহজ ছিল না যতটা আমি আশা করেছিলাম।বিসিএস যাত্রার স্মৃতিচারণ করে বলেন,যদিও সফলতা বিষয়টি বড়ই আপেক্ষিক তথাপি আজকে আমার বিসিএস এর সফলতার জন্য যে মানুষটি নিঃসার্থভাবে তার শ্রম আর অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন তিনি আমার অর্ধাঙ্গ, আমার বন্ধু,আমার স্বামী!

সত্যি বলতে যাপিত জীবনের ফেলে আসা সময়টুকু বেশ কঠিনই ছিল আমার জন্য। কারণ বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি আমি বরিশাল থেকে নিয়েছিলাম। আমার  স্থায়ী ঠিকানা ঢাকা ও শ্বশুর বাড়ি ময়মনসিংহে হওয়ায় বরিশাল শহরে আমার পরিবার পরিজন বলতে তেমন কেউই ছিল না। পোস্ট গ্রাজুয়েশন ট্রেনিং ও রোগি দেখার পাশাপাশি একসাথে ৩৮ ও ৩৯ তম বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া আমার জন্য কষ্টসাধ্য ছিল।

সেই কঠিন সময়ে আমার স্বামীকে পাশে পেয়েছি অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে,আমার সব সাহস আর মানসিক দৃঢ়তার উৎস ছিলেন তিনি।রাত জেগে আমার জন্য  তিনি অনলাইন টিউটোরিয়াল সংগ্রহ করে রাখতেন যেন সকালে উঠে পড়তে পারি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার উপযোগী যত শিক্ষামূলক পোস্ট থাকতো সব কপি করে রাখতেন, আমার পেশাগত সকল অনলাইন বই তার ছুটির দিনে প্রিন্ট করে রাখতেন যেন আমার এতটুকু সময় নষ্ট না হয়।

আমার মনে হয় বরিশালে আমার চেয়ে বেশি বিসিএস সংক্রান্ত বই এর কালেকশান খুব কম মানুষেরই ছিল। কারণ বিসিএস সংক্রান্ত বই এর প্রকাশনীর প্রত্যেকটি বই প্রতি বছর নতুন করে তিনি আমার জন্য কিনতেন। সময় সল্পতায় কত বই আজও ছুঁয়েও দেখা হয়নি!

ভাইবার আগে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমার সেই দিনগুলোর কথা মনে হলে আজও ভয় হয় !! দৈনিক তেরোটা করে প্রেসারের ঔষুধ খেয়েও যখন শেষ রক্ষা হলো না ,দশদিনে আমার ওজন কমলো এগারো কেজি, হায়েস্ট ডোজ এ এন্টিহাইপারটেনসিভ নেয়ায় ড্রাগের সাইড এফেক্টে সারা রাত নাইটমেয়ার দেখতে দেখতে আর নাম ঠিক করে রাখা অনাগত পুত্র সন্তান কে হারানোর কষ্টে আমি তখন ছিলাম পুরোই দিশেহারা আর উৎভ্রান্ত....এমন হয়েছিলো যে নিজের পুরো নামটাও সঠিকভাবে মনে করতে কষ্ট হতো ,সেই সময়ও উনিই আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছিলেন।

ডেঙ্গুর ভয়ে আর আমার গাইনিকলজিস্ট এর পরামর্শে ফুল বেডরেস্টে থাকাকালীন সময় শুয়ে শুয়ে পড়ার জন্য উনি আমার জন্য ছোট্ট একটি টেবিল নিয়ে এসেছিলেন যেন বিছানায় শুয়ে শুয়ে হলেও দুই এক লাইন পড়তে পারি।

তখন আমি এমন একটা সময় পার করছিলাম যে বেঁচে থাকাটাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জ মনে হতো, সেখানে ভাইবা দেয়ার কথা ভাবাটাও যেন ছিলো বিলাসিতা। কারণ প্রিঅ্যাকলামশিয়ার ধাক্কা সাথে সারডোপা আর লেবিটোল ঔষধের সাইডইফেক্টে গুছিয়ে শুদ্ধ করে একটা বাক্য বলার ক্ষমতাও সেদিন হারিয়ে ফেলেছিলাম। হাত-পা আর চোখ এতটাই ফুলে গিয়েছিলো যে চোখ খুলে তাকাতে কষ্ট হতো। চিন্তা করে একটা বাক্য শুদ্ধ করে বলার ক্ষমতাটাও সেদিন হারিয়ে ফেলেছিলাম যেখানে ভাইবা হচ্ছে নিজের সেরাটা দিয়ে বোর্ডকে ইমপ্রেস করার পরীক্ষা । সারা রাত চিৎকার করতাম ব্যথায়..বিছানা থেকে নিজে নিজে উঠার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছিলাম।

সেই সময় প্রতিটি মুহূর্ত এই মানুষটি আমাকে আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে। এমনকি টানা প্রায় চার মাস তার সমস্ত পেশাগত কাজ বন্ধ রেখেছিলেন শুধুমাত্র অসুস্থতার সময় আমাকে সেবা করা ও সময় দেয়ার জন্য।

বিসিএস এর প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন-বিসিএস হচ্ছে এক দীর্ঘ অদেখা অন্ধকার টানেলে যাত্রা। যার শুরুটা আশা আর সম্ভাবনার আলোয় উজ্জ্বল হলেও শেষটা কী হবে তা নিয়ে কল্পনার জল্পনা-কল্পনার শেষ থাকে না!

চরম প্রতিযোগিতামূলক এই সময়ে সফলতার জন্য  এক একজন প্রার্থীকে যে কত নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় আর কত শত ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয় তা সেই প্রার্থী ছাড়া অন্যয় কারোও পক্ষে অনুধাবন করা কঠিন।কোন প্রার্থী যদি নিজের মাধ্যমে  প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি,মেধা আর ধৈর্য্য এ তিনটির সমন্বয় সাধন করতে পারেন তবে তার জন্য  সাফল্য  অবশম্ভাবী।আমি সঠিকভাবে এ দায়িত্ব যেন পালন করতে পারি সেই জন্য দেশবাসী সকলের কাছে দোয়া কামনা করি।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৯৩৯১ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই