তারিখ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁ বিএমসি সরকারী মহিলা কলেজে নানা সমস্যায় জর্জরিত

নওগাঁ বিএমসি সরকারী মহিলা কলেজে নানা সমস্যায় জর্জরিত
শিক্ষক স্বল্পতা, ৯৭৬ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতের পথে
[ভালুকা ডট কম : ১৪ নভেম্বর]
নওগাঁর সরকারি বিএমসি মহিলা কলেজ নানা সংকটে রুগ্ন হয়ে পড়েছে। শিক্ষকের অভাবে ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। এর ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দুটি বিভাগের ৯৭৬ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ।

সরজমিনে জানা গেছে, এলাকার নারী শিক্ষার বিকাশে ১৯৭২ সালে নওগাঁয় একমাত্র মহিলা কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় বিএমসি কলেজ। প্রথম দিকে ইন্টারমিডিয়েট কলেজ হিসেবে পাঠদান শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে স্নাতক ও সম্মান কোর্স চালু হয়। ১৯৮৫ সালে কলেজটি সরকারীকরনের পর থেকেই চলছে শিক্ষক স্বল্পতা। এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষকের অভাবে পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আশঙ্কায় আছেন শিক্ষার্থীরা।

 কলেজ সুত্রে জানা গেছে, কলেজে মোট ১২টি বিষয়ে পাঠদান চালু আছে। এর জন্য ৩৬ জন শিক্ষক প্রয়োজন। সে তুলনায় রয়েছেন অর্ধেক। আর পদার্থ বিদ্যা ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ চলছে শিক্ষক ছাড়াই। অফিস সহকারী সাজেদুর রহমান লিটন জানান, ২০০৭-০৮ইং শিক্ষাবর্ষে কলেজটিতে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হলেও এর জন্য দেয়া হয়নি নতুন কোন শিক্ষক। অন্যদিকে ২০০৮ সাল থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে ও ২০১০ সাল থেকে পদার্থবিদ্যা বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হলেও ক্লাশ নেয়ার মত শিক্ষকও নেই।

এ দুটি বিষয়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৯৭৬ জন। সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তানিয়া জানান, ভর্তির পর থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে ১ দিনও ক্লাশ হয়নি। তাই পরীক্ষা সামনে রেখে ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাতে হচ্ছে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অর্পিয়া বলেন, কলেজটি পরিণত হয়েছে একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে। সারা বছরই এখানে লেগে আছে একাডেমিকসহ বিভিন্ন চাকরির কোনো না কোন পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, কলেজ থেকে কোন সুযোগ সুবিধাই পান না তারা। নেই খেলাধুলা ও বিনোদন ব্যবস্থাও। আবাসিক দুটি হল থাকলেও অব্যবস্থাপনার কারনে ডাইনিংয়ে নেই খাবার পরিবেশ। হলের রুগ্ন রুমগুলোর অধিকাংশেই নেই বৈদ্যুতিক আলো। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কিনতে হয় বেড, টেবিলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। হলসুপারকে বলেও কোন লাভ হয়না। তারা আরও জানান, অব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা ব্যবস্থার করুন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা অনেকেই কলেজে আসা ছেড়ে দিয়েছেন। তারা কেবল পরীক্ষায় অংশ নিতেই কলেজে আসেন।

আবাসিক হল দুটির অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে হোস্টেল সুপার আসলাম উদ্দীন জানান, আবাসিক হলের অধিকাংশ ছাত্রীই ভর্তির পর আর হলে থাকতে চায় না। তাই ছাত্রীদের ব্যবস্থাপনায় ডাইনিং চালাতে হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ১০০ আসন করে দুটি হোস্টেল নির্মাণ হয়েছে। যা দিয়ে চাহিদা পূরন হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৬০ ভাগ আসে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। এদের প্রথম চাহিদা থাকে আবাসিকে থাকার। কিন্তু হোস্টেলে সিট না থাকায় নানা সমস্যায় পড়তে হয় তাদের।

 কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান বলেন, কলেজটি সরকারি হওয়ার পর থেকেই চলছে শিক্ষক শূন্যতা। সম্প্রতি এ বিষয়টি ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। শিক্ষার্থী বাড়লেও বাড়েনি শিক্ষক। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়বে কলেজটি। এদিকে ছাত্রীদের অভিযোগ গুলো স্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সাবরীনা শাহনাজ চৌধুরী বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক না থাকায় খণ্ডকালীন কয়েকজন শিক্ষক দিয়েই ক্লাশ চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কলেজের এসব সমস্যার কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। শিক্ষক স্বল্পতার কারনে অনেক সময় অভিভাবকদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

ঐতিহ্যবাহী নওগাঁ সরকারি বিএমসি মহিলা কলেজের লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক, ক্লাশরুম ও আবাসিক সমস্যার সমাধান জরুরি। এসব সমস্যা দ্রুত নিরসন করা না হলে কলেজটি স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই