তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

গৌরীপুরের কৃতি সন্তান গোলাম সামদানী কোরায়শীকে স্বাধীনতা পদকে ঘোষণা

গৌরীপুরের কৃতি সন্তান গোলাম সামদানী কোরায়শীকে স্বাধীনতা পদকে ঘোষণা
[ভালুকা ডট কম : ১৬ ফেব্রুয়ারী]
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০১৭ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি/১৭) স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনিতদের তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিশিষ্ট সাহিত্যিক সাংবাদিক ইতিহাসবিদ অনুবাদক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক গৌরীপুরের কৃতি সন্তান গোলাম সামদানী কোরায়শী মরণোত্তর এ পদককে ঘোষিত হওয়ায় সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে উল্লাসে ফেটে পড়েন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৩ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মনোনীতদের কাছে এ পুরস্কার তুলে দেবেন। এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিচ্ছে সরকার।

গোলাম সামদানী কোরায়শীর বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের বীরআহাম্মদপুর গ্রামে। মাতুলালয় কেন্দুয়া উপজেলার কাউরাটে জন্ম নেন ১৯৩০সনের ৫এপ্রিল। বাবার নাম মৌলভী বাবু শেখ আবু আছল মোঃ আব্দুল করিম কোরায়শী আর মায়ের নাম আলতাবেন্নেছা। সহধর্মিণী সায়িদা কোরায়শী। দাম্পত্য জীবনে ছিলেন ৫ পুত্র ও ২ কন্যার জনক।

স্বাধীনতা পদকে ঘোষণার পরপরই অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রাবন্ধিক লেখক রণজিৎ কর, অধ্যাপক আরশাদ আলী, গৌরীপুর লেখক সংঘের সভাপতি ছড়াকার আজম জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক মোশারফ হোসেন সোহেল, গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ফকির, যুগান্তর প্রতিনিধি মোঃ রইছ উদ্দিন, গৌরীপুর পৌর স্বজনের সভাপতি শ্যামল ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক আর ইমরান মুক্তা, কবি শামীমা খানম মীনা, সেলিম আল রাজ।  

গোলাম সামদানী কোরায়শী ভাষাতত্ত্ববিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর আগ্রহে তিনি ১৯৬১সনের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির আঞ্চলিক বাংলা ভাষার অভিধান রচনায় সহকারি সম্পাদক হিসাবে যোগ দেন।  তাঁর ১ম অনুবাদ গ্রন্থ ‘কালিলা ও দিমনা’ এরপরে ইবনে খালদুন-এর আল-মুকাদ্দিমা (১ও ২খন্ড), হেজাজ-এর সওগাত ও তারিখ-ই-ফিরোজশাহী অনুবাদ করেন।

আরবি সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস-সাহিত্য ও ঐতিহ্য, ইসলাম ও আমেরিকা নামে প্রবন্ধ গ্রন্থ, ঐতিহ্য অন্বেষা, পিতৃভাষা, আসামির কাটগড়ায়, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইসলাম নামে সংকলিত প্রবন্ধ, স্বর্গীয় অশ্রু, মহাপ্লাবন, পুত্রোৎসর্গ, চন্দ্রাতপ নামে উপন্যাস, ছোটদের দুদু মিয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নামে জীবনীগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। গবেষণামূলক গ্রন্থ তোহফা-এর অনুবাদ ও সম্পাদনা, ‘টাপুর টুপুর’ এর নিয়মিত লেখক ছিলেন। ১৯৬৮সনে তিনি ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন।

আত্মজীবনীমূলক অসমাপ্ত রচনা ‘সিন্ধুর এক বিন্দু’ ২০০০সনে সূচীপত্র প্রকাশন প্রকাশ করে। তিনি ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সদস্য ও সাহিত্যে অবদানের জন্য সাহিত্য পদক ছাড়াও বিভিন্ন পদকে ভূষিত হন। ১৯৯১সনের ১১ অক্টোবর মৃত্যু বরণ করেন।

প্রবন্ধ-উপন্যাস-শিশু সাহিত্য প্রভৃতি মৌলিক রচনা সমূহে চড়িয়ে ধিরেন মূল্যবান চিন্তাধারা-এভাবে বিদ্যাজগতে তাঁর কর্ম অধিষ্ঠান। বুদ্ধিজীবি সংগ্রাম পশিবির (মুক্তিযুদ্ধকালীন) সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সহ অসংখ্য সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নেতৃত্বের মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্বও পালন করেন। ধর্মকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত টাইটেল পাশ মৌলানা থেকে যাঁর উত্তরণ ঘটলো একজন ধর্মনিরপেক্ষ মুক্তবুদ্ধির মানুষে, আরজ আলী মাতুব্বর থেকে জ্যাঁ পল সার্ত্রে, এঁদের কাতারে দাঁড়িয়ে যিনি উপলদ্ধি করলেন জীবনকে, এরকম একটি জীবনের বিকাশ বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায় ‘সিন্দুর এক বিন্দু’তে। এ গ্রন্থটি সমস্ত দ্বিধা দ্বন্ধ কাটিয়ে সচেতন ঋদ্ধ পাঠককে পৌঁছে দেয় গোলাম সামদানী কোরায়শী’র জীবন ও ওই সময়।

‘গৌরীপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ গ্রন্থে গোলাম সামদানী কোরায়শীর সাহিত্যকর্মের পরিচিতিতে রয়েছে প্রবন্ধগ্রন্থ ঃ আরবি সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, সাহিত্য ও ঐতিহ্য, এবং ইসলাম ও আমেরিকা।। সঙ্কলিত প্রবন্ধের বই ঃ ঐতিহ্য অন্বেষা, পিতৃভষা, আসামির কাটগড়ায়, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইসলাম ইত্যাদি। উপন্যাস ঃ স্বর্গীয় অশ্রু, মহাপ্লাবন, পুত্রোৎসর্গ, চন্দ্রাতপ। উল্লেখ্য সেমিটিক মিথলজি অবলম্বনে রচিত উপন্যাসগুলো বেশ সুখপাঠ্য। জীবনীগ্রন্থ ঃ ছোটদের দুদু মিয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। দুটি বইয়েরই প্রকাশক শিশু একাডেমি। তাছাড়া চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত মিশু সাহিত্য পত্রিকা ‘টাপুর টুপুর’ এ তিনি নিয়মিত লেখক ছিলেন। গবেষণামূলক গ্রন্থ ঃ তোহফা-এর অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন।

‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্ষেত্রে এবার ৬ জন স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন-গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) শামসুল আলম (বীরউত্তম), আশরাফুল আলম, শহীদ মো. নজমুল হক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী মরহুম সৈয়দ মহসিন আলী, শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ এবং শহীদ এনএমও নাজমুল আহসান। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবার বিমানবাহিনীকে স্বাধীনতা পুরস্কার নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

চিকিৎসা বিদ্যায় অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী, সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন রাবেয়া খাতুন ও মরহুম গোলাম সামদনী কোরায়শী, সংস্কৃতিতে অধ্যাপক ড. এনামুল হক এবং ওস্তাদ বজলুল রহমান বাদল, সমাজসেবায় খলিল কাজী ওবিই, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক ড. ললিতমোহন নাথ (প্রয়াত) এবং জনপ্রশাসনে পুরুস্কার পাচ্ছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।

স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আঠার ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা, ৩ লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেয়া হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ব্যাক্তিত্ব বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই