তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ফি দিয়ে কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ কমেছে

নওগাঁয় ফি দিয়ে কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ কমেছে
[ভালুকা ডট কম : ২৬ জুলাই]
ফি দিয়ে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা সংগ্রহ শুরুর পর থেকে নওগাঁয় মানুষের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে। এছাড়া ফি দিয়ে নমুনা দেয়ায় হতদরিদ্র ও নিম্মৃবৃত্তদের জন্য অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। মানুষ এখন একান্ত প্রয়োজন ছাড়া নমুনা দিচ্ছেন না। সরকারের সুদৃষ্টি কামনায় ফ্রিতে (মাগনা) নমুনা সংগ্রহ সহ জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবী জানানো হয়েছে।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় গত ৩ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৭ টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সে হিসেবে দিনে গড়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১০৬ দশমিক ৭৮টি। গত ১ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ফি দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১ হাজার ৬৭৫ টি। অর্থ্যাৎ দিনে গড়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৭৬ দশমিক ১৪টি।

করোনা ভাইরাস শুরুর পর থেকেই গোটা বিশ্ব আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। কয়েকটি দেশ ভ্যাকসিন আবিস্কারে ঘোষণায় আশার বাণি দিলেও এখন পর্যন্ত বাজারে আসা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। এক সময় করোনাভাইরাসের নমুনা দেয়ার জন্য হাসপাতালের করোনা ইউনিট গুলোতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়তো। প্রয়োজন ছাড়াও একাধিকবার অনেকে নমুনা দিয়েছেন। কিন্তু ফি দিয়ে নমুনা সংগ্রহের পর থেকে অনেকটা চাপ কমে গেছে। ফি নির্ধারণ করার পর থেকে নিম্মৃবৃত্ত ও সাধারনদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সচেতনরা।

নওগাঁ সদর উপজেলার রজাকপুর গ্রামের গৃহবধু সুমাইয়া আক্তার বলেন, তার স্বামী মাইক্রোবাসের চালক। বাহির থেকে আসার পর সচেতনতার জন্য পোশাক অন্য ঘরে রাখাসহ নিজের পরিস্কার করে নেয়। তার কয়েক দিন থেকে সর্দি। মুখে সাদ নেই। কি খাচ্ছে তার গন্ধ পাচ্ছেনা। আমরা হেল্পলাইনে ফোন দিয়ে পরামর্শ নেয়া হলে তরকারি হিসেবে কাচাকলা, সি সমৃদ্ধ খাবার ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খেতে বলা হয়। এরমধ্যে ছেলেমেয়ের জেদে স্বামীকে বাড়িতে রেখে বাবার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ৩/৪ ছিলাম। বাড়িতে আসার পর গ্রামের লোকজন ভেবেছে স্বামীর করোনাভাইরাস হয়েছে। বাড়ী লকডাউন করে দেয়া হবে বিভিন্ন কটু কথাসহ সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হতে হয়েছে। এতে করে স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন রেজা বলেন, পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোন জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে রাষ্ট্র টাকা দিয়ে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যেটা বাংলাদেশে হচ্ছে। যে মানুষ সারাদিনে ১৫০-২০০ টাকা আয় করেন এমনকি যাদের উপসর্গ আছে তারাও নমুনা দিতে যাচ্ছেন। জেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষের বসবাস। যেহেতু গড়ে ৭৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাহলে নমুনা সংগ্রহ করতে দীর্ঘ বছরের প্রক্রিয়া। যারা সাধারন কর্মজীবি ও দিনমজুর যাদের উপসর্গ আছে তাদের ২০০ টাকা জমা দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা কষ্টকর। এজন্য নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এছাড়া যখন ফ্রিতে (মাগনা) নমুনা সংগ্রহ করা হতো তখনও সাধারন মানুষের দিকে স্বাস্থ্য কর্মীদের নজর কম ছিল। যখন আবার টাকা দিয়ে নমুনা সংগ্রহ শুরু হলো তারপর আরো গুরুত্ব কমে গেছে বলে মনে করছেন তিনি।

তিনি বলেন, সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা মনে করছেন করোনা পজেটিভ। কিন্তু টাকার অভাবে নমুনা দিতে পরাছেন না। এছাড়া বিষয়টি প্রচার হলে সামাজিক ভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তারা নমুনা দিচ্ছেন না। আবারো ফ্রিতে (মাগনা) নমুনা সংগ্রহ করা হোক। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব হেলথকমপ্লেক্স আছে সেখানে নমুনা সংগ্রহ করা উচিত। এছাড়া জেলা পর্যায়ে অবশ্যই পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা উচিত।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক  মো. মাহমুদুন নবী বেলাল বলেন, আসলে বাঙ্গালী মাগনা পেলে আলকাতরাও খায়। কথাটা মহামারী করোনা ভাইরাস টেস্টেও প্রমাণ হলো। স্বাভাবিক ভাবে ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকের জ্বর, সর্দি ও কাশি হয়। আর এসময় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই জ্বর হলেই জনগন ফ্রিতে (মাগনা) করোনা টেস্ট করাতেন। সরকার করোনা টেষ্টে ২শ-৫শ টাকা ফি নির্ধারন করার পর থেকে চাপ কমলেও গরীব-অসহায়দের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি ডাক্তারের পরামর্শে টেস্ট করানো হতো তাহলে ঝামেলা কম হবে। সরকার স্বাস্থ্যখাতে অনেক ভুর্তুকি দিয়েছে। নির্ধারিত ফি মওকুফের জন্য সরকারের শুভদৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ করছি। সরকার ইচ্ছে করলেই করোনা পরীক্ষা ফ্রি করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

নওগাঁ ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মোর্শেদ বলেন, ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হয়। কিছুদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে চাপের কারণে পুনরায় ঢাকা থেকে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ফি দিয়ে নমুনা সংগ্রহের আগে অনেকের দরকার নেই, কিন্তু তারপরও নমুনা দিয়েছেন। কিন্তু ফি দিয়ে নমুনা সংগ্রহ শুরুর পর থেকে যাদের একান্ত প্রয়োজন মুলত তারাই নমুনা দিচ্ছেন। এতে দেখা গেছে বিগত দিনের তুলনায় বর্তমানে নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ কমে গেছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই