তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী সমতির সম্পদ বন্টনের দাবী

নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমতির কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ সঠিক বন্টনের দাবী
[ভালুকা ডট কম : ০৯ সেপ্টেম্বর]
নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সদস্যদের অর্থ ও সম্পদের সুষ্ঠ বন্টনের দাবী জানিয়েছেন সমিতির সদস্যরা। দেশের একমাত্র গাঁজা চাষের জেলা ছিল নওগাঁ। চাষীরা গাঁজা উৎপাদন করার পর সরকারের কাছে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করার পরে দেশের বাইরে সেই গাঁজা রপ্তানী করতো সরকার। রপ্তানীর অন্যতম দেশ ইংল্যান্ড, জার্মানী, ভুটান, নেপাল এসব দেশে গাঁজা পাঠানো হতো বলে সদস্যদের কাছে জানা গেছে।

সরকারিভাবে গাঁজা চাষকে প্রসারিত করতে বৃটিশ আমলে এখানে 'গাঁজা কাল্টিভেটরস কো-অপারেটিভ সোসাইটি' নামে একটি সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭সালে গাঁজা চাষ নিষিদ্ধ হবার পর স্থবির হয়ে পড়ে সমিতির কার্যক্রম। নওগাঁ জেলায় অবস্থিত এশিয়ার প্রাচীন ও বৃহত্তম সমবায় সমিতি নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের অস্তিত্ব প্রায় বিলীনের পথে। গাঁজা মহলের সেই স্বর্ণালী দিনগুলো এখন শুধুই যেন এক স্মৃতি। ঠিক মতো দেখভাল করার অভাবে নষ্ট ও বেহাত হতে চলেছে সমিতির কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ইতিমধ্যেই সুযোগ সন্ধানীরা সেই সম্পদের অনেকটাই গ্রাস করে ফেলেছে। মিলবে না আগের সেই হিসাবের খাতা। স্বেচ্ছাচারিতা, ষড়যন্ত্র এবং ব্যক্তি স্বার্থান্বেষীদের দ্বারা গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির গৌরবময় দিনগুলো যেন ধাবিত হচ্ছে ইতিহাসের পাতার দিকে।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাঁজা সোসাইটির যেসব বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর ভাড়া বর্তমানে নওগাঁ শহরে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা। গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির (গাঁজা সোসাইটি) কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন সমিতির সদস্যরা। সমিতির সাবেক নেতাদের বিরুদ্ধে সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করেছের গাঁজা উৎপাদনকারী একাধীক সদস্যরা। সংগঠনটির জন্ম ব্রিটিশ আমলে। তখন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নওগাঁয় বাণিজ্যিকভাবে গাঁজার চাষ হতো। প্রায় ১০হাজার হেক্টর জমি ছিল গাঁজা চাষের আওতায়। এতে যুক্ত ছিলেন গ্রায় সাত হাজার চাষি। জেলার কীর্তিপুর, বক্তারপুর, বর্ষাইল, হাঁপানিয়া ও তিলকপুর ইউনিয়নে এসব গাঁজার চাষ হতো।

নওগাঁর এই গাঁজাচাষিদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯১৭সালে গড়ে তোলা হয় গাঁজা উৎপাদনকারী পুনর্বাসন সমবায় সমিতি লিমিটেড। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪সালে সরকার গাঁজা উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন বন্ধ করার একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮৭সালে নওগাঁয় গাঁজার চাষ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই চাষের ওপর নির্ভরশীল কৃষক পরিবারগুলোর একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায় তাদের সমবায় সমিতি। সেখান থেকে তারা সামান্য ভাতাও পেত। নওগাঁ গাঁজা সোসাইটির সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে জমি ৪০একর, ভবন ১শটি, দিঘি ৭টি, লেক ১টি, উচ্চ বিদ্যালয় ১১টি, মসজিদ ৩টি, মন্দির ১টি, গুদাম ঘর ৪টি, সরাইখানা ১টি, কো-অপারেটিভ ক্লাব ১টি, লাইব্রেরী ১টি, হাসপাতাল ৩টি, দাতব্য চিকিৎসালয় ৩টি।

সমিতির তথ্যানুযায়ী, ৪০ একর জমি, একশ'টি ভবন, ১১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৭ টি দিঘি, ৩টি হাসপাতাল ও ৪ টি গুদাম ঘরসহ গাঁজা সোসাইটি ও গাঁজা মহলের রয়েছে প্রায় শতকোটি টাকার সম্পদ ও স্থাপনা। রহস্যজনক কারনে গাঁজা উৎপাদনকারী সদস্যদের অর্থ সম্পদের সঠিক ভাবে বন্টন করার দাবী জানিয়েছেন একাধীক সদস্যরা।

গাঁজা উৎপাদন সমবায় সমিতির অংশীদার ও বক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জয়নুল আবেদিন বলেন, আমার বাবা -দাদাদের সময়ে গাঁজার ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হয় সে সময় সমিতি গঠন করা হয় যারা চাষাবাদের সাথে যুক্ত চিল তাদের নিয়ে। তার পর চাষের লাভের একটি অংশ কেটে সমিতির ফান্ডে জমা করা হয়। পরবর্তীতে সদস্য সংখ্যা হয় প্রায় সাড়ে ছয় হাজারের মত। আর বর্তমানে গাঁজা চাষ হয়না কিন্তু গাঁজা সোসাইটির অনেক অর্থ ও সম্পদ রয়েছে যা অংশীদার আমরা কিন্তু সেটা এখন বন্টন করা হয়নি। কত অর্থ জমা আছে বা কবে এগুলোর সুরাহা করা হবে জানি না। আমরা জেলা প্রশাসনের নিকট আকুল আবেদন জানাই যারা শেয়ারহোল্ডার আছে তাদের মাঝে জমাকৃত অর্থ বিতরন করা হোক।

অংশীদার আখতারুল ইসলাম বলেন, এই প্রোপাইটির সাথে যারা যুক্ত তারা গাঁজা সোসাইটির অর্থ-সম্পদ ভোগ করার কথা  কিন্তু যারা এটার সাথে সেভাবে জরিত নয় তারা দীর্ঘ দিন থেকে সুবিধা ভোগ করে আসছে। বর্তমানে গাঁজা উৎপাদন হয়না। অনেক সম্পদ আছে কিন্তু অর্থ কি পরিমান আছে সেটা আমরা জানিনা। আর সোসাইটির কমিটি বর্তমানে অচল তাই আমরা যারা কৃষক বা গাঁজা সোসাইটির সদস্য হিসেবে অংশীদার আছি তাদের মাঝে যেন সঠিক ভাবে বন্টন করা সে দাবি জানাচ্ছি। কমিটি গঠন নিয়ে নির্বাচন স্থগিত করার জন্য একটি মামলা চলছে কিন্তু সেটা আলাদা বিষয়। তিনি আরও বলেন বিষয়টি নিয়ে আমরা কয়েকজন জেলা প্রশাসক মহোদয় এর কাছে গিয়েছিলাম তাকে আমরা বলেছি যে গাঁজা সোসাইটির অর্থ-সম্পদ এর মালিকানা সমিতির যারা সদস্য তাদের। তার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহোদয়ের কাছেও গেয়েছিলাম তিনি বলেছেন যেহেতু গাঁজা উৎপাদন হয় না। অর্থ-সম্পদ যা আছে সেটা নিয়ম মাফিক যেটা করলে ভালো হবে সেটাই করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোন উদ্যাগ নেয়া হয়নি।

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুরের অংশীদার ফরহাদ হোসেন, কুমাইগাড়ীর দাউপাড়ার মোছা. ঝর্না, চাকলা গ্রামের জাহিদুল ইসলামসহ বেশ কয়েক জন অংশীদারদের সাথে কথা হলে তারা জানান, গাঁজা উৎপাদন সমবায় সমিতির প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মত সদস্য কিন্তু এখন তো গাঁজা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সকল সদস্য অর্থ সম্পদ ভোগ করার কথা। আমরা এখনও জানিনা কি পরিমান অর্থ জমা রয়েছে আর কারা ভোগ করছে। আমরা অনেক কষ্টের মাঝে দিনাতিপাত করছি। আমরা জেলা প্রশাসন সহ যথাযথ কৃর্তপক্ষের কাছে আকুল আবেদন করছি যারা অংশীদার বা অংশীদারদের পরিবার রয়েছে তাদের মাঝে যেন অর্থগুলো সঠিক ভাবে বন্টনের ব্যবস্থা করা হয়।

এবিষয়ে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মাদ ইব্রাহীম বলেন, গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির নির্বাচন স্থগিত বিষয়ে মামলা, বাড়িভাড়াসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে করা হয়েছে। এখন সেইগুলোর সুরাহা না হলে তো আমরা সিন্ধান্ত নিতে পারছিনা। সরকার আমাদের যতটুকু দায়িত্ব দিয়েছেন সেটা আমরা করছি আর বাঁকি বিষয়গুলোর নিয়ে চেষ্টা করছি কি করা যায়। যারা শেয়ার হোল্ডার আছে তাদের মাঝে সোসাইটির লভাংশ বন্টনের দায়িত্ব নির্বাচিত কমিটির সেটা দায়িত্ব এ্যাডহোক কমিটির নয়।

তিনি আরও বলেন, এগুলো সুষ্ঠু সুরাহার জন্য কমিটি গঠন করতে হবে আর যারা সমিতির সদস্য আছেন তাদের সাথে সমন্ময় প্রয়োজন তাছাড়া অনেক সদস্য বৃদ্ধ বা  মারা গেছেন তাদের পরিবারে পক্ষে কারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন কারা ওয়ারিস হবেন বিষয়গুলো অনেক জটিল প্রক্রিয়া । এখন মামলা গুলো তুলে নিয়ে যদি এই সাড়ে ৬হাজার সদস্য সঠিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিতে চায় তবে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই