তারিখ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

গরীবদের একবেলা করে ফ্রি খাওয়ান হোটেল ব্যবসায়ী

গরীবদের একবেলা করে ফ্রি খাওয়ান হোটেল ব্যবসায়ী আলী আজগর
[ভালুকা ডট কম : ১৫ অক্টোবর]
সপ্তাহের বৃহস্পতিবার গরীব মানুষদেরকে দুপুরের খাবার ফ্রি খাওয়ান হোটেল ব্যবসায়ী আলী আজগর। চেষ্টা শ্রম এবং সাধনার মাধ্যমে জয় করা যায় অনেক কিছুই সেটাই প্রমান করেছেন নওগাঁর আলী আজগর হোসেন (৪৭)। চার বোন এবং ছয় ভাইয়ের মধ্যে আজগর আলী সবার ছোট।

অভাবের সংসারে পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় নুন-আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। এরই মাঝে ২৪বছর বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় আজগর আলী। এক বছর পর তার ঘরে জন্ম নেয় একটি ছেলে সন্তান তখন পরিবারে নেমে আসে আরও অভাব। অভাবের সংসারে নানা বিষয়ে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। এরই জেরে ২২বছর পূর্বে পরিবারের উপর ওপর অভিমান করে ৬মাসের সন্তান ও স্ত্রী কে নিয়ে নিজ জেলা ছেড়ে নওগাঁতে চলে আসেন। এরপর শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আদালতের সামনে মল্লিকা হোটেলে ২৫ টাকা বেতনে হোটেল বয় হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর সেই হোটেল বয় আজ হাজী নজিপুর হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউসের মালিক আলী আজগর হোসেন।

তার বাড়ি নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার মহেষচন্দ্রপুর গ্রামে হলেও বর্তমানে জমি কিনে নওগাঁ শহরের চকরাচন্দ্র মহল্লায় বসবাস করছেন এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে। নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আদালত চত্বর। আদালত গেটের প্রধান ফটকের বিপরীতে রাস্তার পশ্চিম পাশে ‘হাজী নজিপুর হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউস’।

যেখানে সপ্তাহে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। হোটেল মালিক সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে ৩০০ থেকে ৪০০ জন গরীব শ্রেণীর বিশেষ করে ভিক্ষুকদের পেট পুরে ফ্রিতে খাওয়ান। এছাড়াও অন্যন্যা দিনে যদি কোন গরীব অসহায় মানুষ আসে তবে তাদেরও টাকা না নিয়ে খাওয়ান তিনি।

যেখানে খাবার মেন্যুতে থাকে মাছ, মাংস, ডিম, ভরতা, সবজি ও ডাল। হোটেলের সামনে চেয়ার-টেবিলে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমে দেখলে মনে হতে পারে কোনো ছোটো-খাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এভাবে মানুষদের একবেলা খাবার দিয়ে আসছেন আলী আজগর হোসেন।

হোটেল মালিক আলী আজগর হোসেন জানান, আমাদের পরিবারে খুব অভাবের মধ্য দিয়েও কোনে রকমে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। তার পর আর পড়তে পারিনি। আমার বাবা দটি বিয়ে করেন প্রথম পক্ষের চারটি মেয়ে এবং দ্বিতীয় বিয়ে আমার মাকে করেন। অমার মায়ের আমরা ছয় ছেলে সন্তান। ছয় ভাইয়ের মধ্যে আমি সাবার ছোট। আমার বয়স যখন ১৫ বছর তখন আমার বাবা মারা যান। এর পর ২৪বছর বয়সে আমি বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হই। বিয়ের এক বছর পর আমাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। অভাবের সংসার অন্যদিকে আমাদের যৌথ পরিবারে ভাই বোনদের নিয়ে পারিবারিক নানা কলহ লেগেই থাকতো। এর এক পর্যায়ে ১৯৯৭ সালে মা এবং ভাই-বোনদের উপর অভিমান করে স্ত্রী ও ৬মাসের সন্তানকে নিয়ে নওগাঁতে এসে হোটেলে ২৫ টাকা দিনে কাজ শুরু করি। বেশ কয়েক বছর হোটেলে কাজ করলাম। হঠাৎ একদিন হোটেল মালিক আলীম উদ্দিন তার ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে গ্রামের বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলাতে চলে যান।পরে হোটেল মালিককে বুঝিয়ে নিয়ে আসি এবং তার দোকান চালানোর জন্য অনুমতি নেই। মালিক বললেন, যদি দোকান চালাতে পারো তাহলে চালাও। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

আলী আজগর হোসেন আরও বলেন, এরপর ২কেজি, ৫কেজি গরুর মাংস বিক্রি থেকে শুরু করে এর পর অনেক কষ্ট করে আজ পুরোদমে আমি প্রতিষ্ঠিত খাবার হোটেলের মালিক। বর্তমানে আমার হোটেলে ৩৫ জন কর্মচারী সকাল-বিকেল দুই সিফটে কাজ করে। আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। শহরের মাথা গোজার মতো একটু জায়গা হয়েছে। দুই মেয়ে ও এক ছেলে পড়াশোনা করছে। আমার মায়ের অনেক বয়স হয়েছে তবে মাঝে মধ্যে মাকে নওগাঁতে আমার বাসায় এনে রাখি।

হোটেলে খেতে আসা জাহেরা বেওয়া বলেন, আমি খুব গরীব মানুষ বাপো পরিবার থাকা হামাক কেউ দ্যাখে না। ভিক্ষা করা খাই আর বৃহস্পতিবার আসা আজগর বাপোর হোটেলত পেট ভরা খাই কোন ট্যাকা লেওনা। আজগর বাপের জন্য অনেক দোয়া করি যার ভালো থাকে।

বয়োজ্যেষ্ঠ সেফালি বেগম ও তাহের অলীসহ বেশ কয়কেজন বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ভিক্ষা করে ভালোমন্দ খেতে পারি না। ৩-৪ বছর ধরে এ হোটেলে নিয়মিত খেতে আসি। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করে বৃহস্পতিবার দুপুরে এসে কখনও গোস্ত ও কখনও মাছ দিয়ে পেট পুরে খাবার খাই। আল্লাহ যেন তার মঙ্গল করেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই