তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

জয়ীতা শিরিনের অভাবকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার গল্প

জয়ীতা শিরিনের অভাবকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার গল্প
[ভালুকা ডট কম : ২০ নভেম্বর]
অভাব-অনটন একজন পরিশ্রমী ও উদ্দ্যোমী মানুষকে সমাজে এগিয়ে নিয়ে যেতে পাথেয় হিসেবে কাজ করে। তারই এক দৃষ।টান্তর স্থাপন করেছে জয়ীতা শিরিন। নিন্ম মধ্যবৃত্ত এক কৃষক পরিবারে বেড়ে উঠা শিরিন সুলতানা। দুই ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। অভাবের সংসারেও মা শাহানা বানুর প্রবল ইচ্ছা মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করা। কিন্তু বাবা ঈসমাইলের ইচ্ছে মেয়েকে যেটুকু পড়ানো হয়েছে তা আর কম কিসের। তাই তো মায়ের ইচ্ছে পুরন না করেই স্বামীর সংসারে পাড়ি জমাতে হয়েছে শিরিনকে।

বাবার বাড়ি দিনাজপুর জেলার বিরামপুর থানার মোহনপুর গ্রামে হলেও স্বামীর বাড়ি নওগাঁর রাণীনগরের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। বর্তমানে স্ব পরিবারে নওগাঁ শহরের পোষ্ট অফিস পাড়ায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন। শত অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে নিজ চেষ্টায় আজ তিনি সফল জয়ীতা। গত বছর উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়ীতাদের মধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে তিনি প্রথম নির্বাচিত হয়েছেন। এখন তার অধীনে প্রায় শতাধিক নারীকর্মী কাজ করে আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হচ্ছেন।

১৯৯৫ সালে বিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৯৮ সালে বিরামপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন শিরিন সুলতানা। ওই কলেজে ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশুনা করা অবস্থায় ২০০৩ সালে পারিবারিক ভাবে নওগাঁর রাণীনগরের প্রত্যন্ত গোনা গ্রামের ইদ্রিস আলী মোল্লার সাথে বিয়ে হয়। স্বামীর পরিবারের অবস্থা অনেকটাই শোচনীয়। বলতে গেলে বাড়িটুকুই সম্পদ। তবে ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ও নম্র ভদ্র হওয়ায় বিয়ে দেয়া হয়। শ্বশুরের পরিবারে মোট ৯সদস্য হওয়ায় অনেকটা কষ্ট করে চলতে হয়। এক দিকে বেকার স্বামী অপরদিকে সংসারে দৈন্যদশা। শিরিন হাতের কিছুটা কাজ জানা থাকায় প্রতিবেশীদের জামা কাপড় সেলাইয়ের কাজ করে আয় করা শুরু করেন। এরমধ্যে বিয়ের প্রায় দেড় বছর পর স্বামীর ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক পদে চাকরি হলে নওগাঁ শহরের চলে আসেন।

২০০৬ সালে এক ছেলে (আল কাফি স্বাক্ষর) সন্তানের মা হন। ২০০৭ সালে ‘রুপমাধুরী বিউটি পার্লার’ থেকে ৩ মাসের একটা প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাড়া বাসার তিনটি ঘরের মধ্যে একটা ঘরে নিজেই বিউটি পার্লার খুলে বসেন। বাসাতে বিউটি পার্লার হওয়ায় মানুষ কম আসতো। এরপর তিনি অন্য কিছু করার পরিকল্পনা করেন। ২০০৯ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সেলাইয়ের উপর প্রশিক্ষণ নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর ২০১৩ সালে নওগাঁ সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন থেকে এক পরিচিত বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ভর্তি হয়ে সেলাই ও ব্লক বাটির উপর ৩ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি।

প্রশিক্ষণ শেষে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ২৫হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বুটিকসের এবং বিউটি পার্লারের প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে কার্যক্রম শুরু করেন। এছাড়া যুব উন্নয়ন থেকেই ভ্রাম্যমান প্রশিক্ষক হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দুই বছরের মধ্যে তিনি বুটিকসের আয় থেকে ঋণ পরিশোধ করে আবারও ৫০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালে তার প্রতিষ্ঠান ‘সেজ্যোতি বিউটি পার্লার এন্ড বুটিক ফ্যাশন’ এর রেজিস্ট্রেশন করেন। তার এ প্রতিষ্ঠান থেকে ঢাকা, দিনাজপুর, রংপুর, সৈয়দপুর এবং রাজশাহী থেকে পাইকাররা এসে পোশাক কিনে নিয়ে যান।

অর্থনৈতিক ভাবে সফলতা অর্জনকারী শিরিন সুলতানা বলেন, এক সময় অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেড়ে উঠেছি। এরপর স্বামীর বাড়িতে এসেও যুদ্ধ। আল্লাহর অশেষ কৃপায় এখন আর্থিক দিক দিয়ে স্বচ্ছলতা অর্জন করতে পেরেছি। আমার অধীনে প্রায় শতাধিক নারী কর্মী বুটিকসের কাজ করে প্রতিমাসে তারা ৩-৮ হাজার টাকা আয় করছেন। প্রতিমাসে প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকার মতো থ্রী পিচ, জামা, শাড়ি, পাঞ্জাবি সহ ব্লক বাটিকের তৈরীকৃত অন্যান্য পোশাক বিক্রি হয়ে থাকে। যা থেকে সব খরচ বাদে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকার মতো লাভ আসে। এছাড়া বিউটি পার্লার থেকে মাসে আসে প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, এ কাজে স্বামীর সার্বিক সহযোগীতা ও উৎসাহ পেয়েছি। তার চাকরি এবং আমার ব্যবসা দুজনে পরিশ্রম করেছি। গত ২০১৮ সালে নওগাঁ মুখীবধির বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হয়েছি। আমার কর্মজীবনের আয় দিয়ে বাবার বাড়িতে প্রায় দেড় বিঘা জমি কিনেছি। এছাড়া শহরে বসবাসের মতো একটা বাড়ি তৈরী করেছি। ছেলেকে ভাল প্রাইভেট স্কুলে পড়াশুনা করাচ্ছি।

তরুনদের উদ্যেশে তিনি বলেন, আমি যেভাবে কষ্ট করে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন নতুন যদি কেউ বুটিকসে আসতে চায় তাদেরকে কষ্টটা কম করতে হবে। কারণ এ কাজটা শিখানোর মানুষ তখন কম ছিল। বর্তমানে যারা আসবে/আসতেছে তারা ইন্টারনেট পারদর্শী। তারা অনলাইনেও ব্যবসা করতে পারবে। যা আমরা তখন পারিনি। তবে চাকরির পেছনে না ঘুরে ওই টাকা যদি ব্যবসার কাজে লাগাই তবে বেশি সফলতা আসবে বলে মনে করি। তবে ধৈর্য্যরে সাথে লেগে থাকতে হবে।

স্বামী ইদ্রিস আলী মোল্লা বলেন, স্ত্রী যখন এ কাজ শুরু করতে চেয়েছিল তখন আমার পরামর্শ চেয়েছিল। সংসার ও সন্তান সামলিয়ে যদি কাজ করতে পারো তাতে আমার কোন আপত্তি নাই। কারণ এ কাজটা খুবই কঠিন ও ঝামেলাপূর্ন। এরপর সে কাজ শুরু করে। এছাড়া আমার চাকরির সামান্য বেতনে সংসার ঠিকমতো চালানো যেত না। এরপর ভাবলাম তার ব্যবসা ও আমার চাকরির বেতনে দু’জনে টাকায় সংসারে উন্নয়ন হবে। স্ত্রীকে এ কাজে যথেষ্ট সহযোগীতা করে থাকি।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

নারী ও শিশু বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই