তারিখ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁর ইট ভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে গাছ

নওগাঁর ইট ভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে গাছ,মানা হচ্ছে না আইন,নীরব ভ’মিকায় প্রশাসন
[ভালুকা ডট কম : ১০ এপ্রিল]
নওগাঁর মহাদেবপুর ও আত্রাই উপজেলার ইটভাটাগুলো আইন অম্যান্য করে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে গাছ। উপজেলা শহর ও এর আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠা ইটভাটাগুলো পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর এসব ভাটা বন্ধে তেমন কোনও নিচ্ছে না। ফলে ইটভাটা মালিকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। কিছু কয়লা রাখা হলেও কয়েকটি ভাটায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এর ফলে একদিকে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। অন্যদিকে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। ধংস হচ্ছে তিন ফসলী কৃষি জমি।

মহাদেবপুর উপজেলার চাঁন্দাশ ইউনিয়নের বাগডোব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের পাশেই ফসলী জমি নষ্ট করে তৈরী করা হয়েছে বিশাল ইটভাটা। চারিদিকে বোরো ধানের ক্ষেত। সেসব জমির সাথে লাগোয়া জায়গায় তৈরি কাঁচা ইট শুকানো হচ্ছে। ভাটায় কয়লা থাকলেও চারপাশে জমা করে রাখা হয়েছে হাজার মণ বিভিন্ন গাছের গুড়ি। ভাটার উপরে উঠে দেখা যায় প্রকাশ্য দিবালোকে ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। সেখানে কাজ করা শ্রমিকরা জানালেন, ভাটায় আগুন জ¦ালানোর জন্য কাঠের প্রয়োজন হয়। প্রতিবার আগুন জ্বালাতে সাতশ’ থেকে আটশ’ মণ কাঠ লাগে। জানতে চাইলে তারা জানান, কাঠ পোড়ানো যে অবৈধ তা তারা জানেন। কিন্তু মহাজন সকলকে ম্যানেজ করেই এই ভাটায় কাঠ পোড়ান। মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোকেরা ভাটা পরিদর্শনে আসলেও কোন অসুবিধা হয়না বলেও তারা জানান।

এই ইটভাটাটির নাম আল আমিন ব্রিকস। মালিক মহাদেবপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা ইউসুফ আলী। তিনি বললেন, সকলেই কাঠ পোড়ায়। তাই তিনিও পোড়াচ্ছেন। ইটভাটার কাছেই বাগডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মসজিদ, বাজারসহ অনেক বসতবাড়ি। ভাটার পাশ দিয়েই চলে গেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের মহাদেবপুর-ছাতড়া পাকা সড়ক। ইটভাটার জন্য সামান্য দূর থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলী জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে এনে তা দিয়েই ইট তৈরী করা হচ্ছে। প্রতিদিন মাটিবোঝাই অসংখ্য ট্রাক্টর চলাচলের ফলে সড়কটির সংস্কার কাজ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।

মহাদেবপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও খাজুর ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন বলেন, মহাদেবপুরে ১৭টি ইটভাটার মধ্যে ১০টি উন্নত ঝিকঝাক ভাটা হলেও বাকী ৭টি এখনও ফিক্সড চিমনির ভাটা। এগুলোতে জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা প্রয়োজন হয়। কিন্তু কাঠ পোড়ানোর দায় সমিতির নয়। যারা কাঠ পোড়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভাটা মালিক জানান, তারা বিভিন্ন সময় সরকারি, বেসরকারি, দলীয় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে থাকেন। তাই তাদের কর্মকান্ডে তেমন কোন অসুবিধা হয়না। তাদের মতে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে খাজনার চেয়ে বাজনাই বেশী হয়। ইটভাটা সংক্রান্ত আইন কানুন সহজ করা হলে একদিকে যেমন ব্যবসা পরিচালনা করা সহজ হবে, তেমনি সকলেই আইন মেনে চলতে পারবেন।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিজানুর রহমান মিলন বলেন, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর কোন সুযোগ নেই। ইটভাটাগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে ইটভাটায় গাছ পোড়ানোর অভিযোগে আত্রাই উপজেলার এনবিসি ইট ভাটার ১০হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও থামছে না গাছ পোড়ানোর মতো জঘন্য কাজ। উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের নন্দনালী গ্রাম সংলগ্ন এনবিসি ইট ভাটা ক্রয় করে আশরাফুল ইসলাম এবং সিদ্দিকুর রহমান যৌথভাবে পরিচালনা করে আসছিলেন। এদিকে ভাটায় অবৈধভাবে কাঠ (খরি) পোড়ানো হচ্ছে এবং ইটের আকৃতি (মাপ) নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে না এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

নওগাঁ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মকবুল হোসেন বলেন, জেলার ১১টি উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটাগুলোর কোন পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পত্র নেই। তারই ধারাবাহিকতায় মহাদেবপুরের ১৭ইটভাটার একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। তাদের হাতে বিচারিক ক্ষমতা না থাকায় তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করতে পারেন না। অবৈধভাবে সবকিছু চলছে জেনেও তাদের কিছু করার নেই বলেও তিনি জানান।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই