তারিখ : ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

রাণীনগরে পরিত্যক্ত পড়ে আছে ইউনিয়ন কৃষি ভবনগুলো

রাণীনগরে পরিত্যক্ত পড়ে আছে ইউনিয়ন কৃষি ভবনগুলো,নষ্ট হচ্ছে সরকারি কোটি টাকার সম্পদ
[ভালুকা ডট কম : ০১ নভেম্বর]
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে স্থাপন করা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের ইউনিয়ন ও ব্লক পর্যায়ের কোয়ার্টারগুলো বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকদের ঘরে ঘরে কৃষি বিষয়ে পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে কিছু কোয়ার্টার দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ও কিছু কোয়ার্টার দেশ স্বাধীনের পর সরকারি ভাবে জমি কিনে নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বছরের পর বছর কর্তৃপক্ষ এই ভবনগুলো মেরামত না করায় বর্তমানে ওই ভবনগুলো ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। সঠিক নজরদারীর অভাবে সরকারের কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বেদখল হয়ে যাচ্ছে।

আবার অনেক ইউনিয়নের ভবনগুলো স্থানীয়রা নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন। শুধুমাত্র সদর ইউনিয়নের কোয়ার্টারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের দুইজন কর্মচারী বসবাস করছেন। তাছাড়া অবশিষ্ট ইউনিয়নের কোয়ার্টার ও জায়গাগুলো অবৈধ দখলের শিকার। যদি কর্তৃপক্ষ এই জায়গাগুলো উদ্ধারসহ সীমানা নির্ধারন করে নতুন ভাবে কোয়ার্টারগুলো নির্মান করতো তাহলে নিজ নিজ ইউনিয়নে কর্মরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা ওই ভবনগুলোতে বাস করতো এবং যে কোন সময় ওই এলাকার কৃষকদের সঙ্গে ২৪ঘন্টাই যোগাযোগ রক্ষা করতে পারতো। কৃষকরাও যে কোন সময় ওই কর্মকর্তার বাসায় গিয়ে কৃষি বিষয়ে যে কোন পরামর্শ ও সহযোগিতা নিতে পারতো। কোন কৃষককে আর কষ্ট করে উপজেলা কৃষি অফিসে ছুটে যেতে হতো না। এছাড়া কৃষকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত সকল কৃষি উপকরনগুলো খুব সহজেই ইউনিয়ন পর্যায়ে এই কোয়ার্টার কাম অফিস থেকে বিতরন করা সম্ভব হতো। এতে করে কৃষকরা হয়রানীর হাত থেকে রক্ষা পেতো।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদর ইউনিয়নের বালুভরা মৌজায় বিজয়ের মোড়ে ৮শতাংশ জায়গার উপর নির্মাণ করা কোয়ার্টারের অবস্থা জরাজীর্ন হলেও তার আশেপাশের সকল জায়গা বর্তমানে অবৈধ দখল হয়ে গেছে। কাশিমপুর ইউনিয়নের এনায়েতপুর মৌজায় এনায়েতপুর গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন স্থানে ৮শতাংশ জমি, গোনা ইউনিয়নের ঘোষগ্রাম মৌজায় বেতগাড়ী বাজার সংলগ্ন স্থানে ৮শতাংশ জমি, পারইল ইউনিয়নের পারইল মৌজায় পারইল বাজার সংলগ্ন স্থানে ৮শতাংশ জমি, বড়গাছা ইউনিয়নের গহেলাপুর মৌজায় গহেলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ সংলগ্ন স্থানে ৮শতাংশ জমি, কালিগ্রাম ইউনিয়নের রাতোয়াল মৌজায় রাতোয়াল বাজার সংলগ্ন স্থানে ৮শতাংশ জমি, একডালা ইউনিয়নের যাত্রাপুর মৌজায় একডালা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন স্থানে ১৪শতাংশ জমি ও মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা মৌজায় আতাইকুলা জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে ৬শতাংশ জমিসহ কোয়ার্টারগুলো বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কোয়ার্টার সবগুলোর অবস্থা খুবই জরাজীর্ন। বছরের পর বছর এই ভবনগুলোতে মেরামত কিংবা সংস্কারের কোন ছোঁয়া স্পর্শ না করায় সেগুলো বর্তমানে মাদক, জুয়াড়ী ও অন্যান্য অপকর্মের মানুষদের জন্য অভয়ারন্যে পরিণত হয়েছে।

ভবনগুলোর দরজা, জানালা অনেক আগেই নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে দেয়াল-ছাদও খুলে খুলে পড়ছে। যার কারণে নিজ নিজ ইউনিয়ন ও ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা নিজ এলাকা ছেড়ে শহরে কিংবা অন্যান্য স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে কৃষকরা তাৎক্ষণিক কৃষি পরামর্শসহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন যুগের পর যুগ। তাই স্থানীয় কৃষকরা তাদের হাতের কাছে থাকা কীটনাশকের দোকানে গিয়ে হাতুড়ে পরামর্শ নিয়ে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে আসছেন।

যাত্রাপুর গ্রামের কৃষক রমিজ উদ্দিন বলেন উপজেলা কৃষি অফিসের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ার কারণে সব সময় সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। আর উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদেরও সব সময় পাওয়া যায় না। তাই পরিত্যক্ত এই ১৪শতাংশ জায়গায় যদি নতুন করে আধুনিক মানের ভবন নির্মাণ করা হয় তাহলে কর্মকর্তারা এখানে বসবাস করতো। আমরা আমাদের সুবিধামতো কৃষি বিষয়ে যে কোন সমস্যায় পড়লে সেই কর্মকর্তার কাছে গিয়ে সহজেই পরামর্শ নিতে পারতাম। এতে করে আমরা অনেক লাভবান হতাম।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন পরিত্যক্ত এই জায়গাগুলোকে অবৈধ দখলের হাত থেকে রক্ষা করে যদি নতুন করে কর্মকর্তাদের থাকার জন্য ভবন তৈরি করা হতো তাহলে কেউ নিজ নিজ এলাকা ছেড়ে বাহিরে ভাড়া থাকতো না। এতে করে স্থানীয় কৃষকরা অনেক উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি সবধরনের ফসলের ফলনও দ্বিগুন হতো। কীটনাশকের দোকানদারের হাতুড়ে পরামর্শ নিয়ে ও নিম্মমানের কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হতো না। প্রতিটি এলাকার কৃষি বিভাগ আরো উন্নত ও আধুনিক হতো।

তিনি আরো বলেন আমি একাধিকবার এই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছি কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন সুখবর পাওয়া যায়নি। তবে এই জায়গাগুলো যদি দ্রুত সীমানা প্রাচীর দিয়ে কাজে লাগানো না যায় তাহলে কোন একদিন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করে ফেরবে। তাই কোটি টাকার এই সম্পদগুলো রক্ষা করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই