তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

চলনবিলে মাছ সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুঁটকির চাতাল

চলনবিলে মাছ সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একে একে শুঁটকির চাতাল
[ভালুকা ডট কম : ০৪ নভেম্বর]
মাছের রাজ্য চলনবিলে এবার মাছের আকাল। আগের মত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না বিলে। একারণে চরম মাছ সংকটে পড়েছে চলনবিলের শুঁটকি চাতালগুলো। প্রয়োজনীয় মাছের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুটকি চাতাল।

সরেজমিনে গেলে চলনবিল এলাকার সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি মৎস্য আড়তের পাশে শুঁটকি চাতালের মালিক নান্নু মিয়া বলেন- প্রতি বছর আশিণ-কার্তিক মাসে বিলের পানি নামার সময় প্রচুর টেংরা, পুঁটি, খলসে, বাতাসি, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শোল, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কৈসহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। দামও কম থাকে। তখন এসব মাছ দিয়ে চলে শুটকি তৈরির ধুম। অথচ এবছর বিলে মাছ নেই বললেই চলে। আজ প্রায় ১০/১২ দিন যাবত শুটকি তৈরির কোন রকম মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে চাতাল বন্ধ করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ইত্তেফাককে বলেন- গত বছর প্রায় ৮০ টন শুটকি তৈরি হয়েছিল তার চাতালে। এবছর ১০/১৫ টনও বোধ হয় হবে না। মাছ কম তাই দাম বেশি। শ্রমিক মজুরিও বেশি। তাই এবার নিশ্চিত লোকসান গুনতে হবে বলে তিনি জানান। 

পাবনার চাটমোহরের আলমাস হোসেন, আঃ মতিন, একই এলাকার মোফাজ্জল হোসেন, এখলাছ উদ্দিন ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার শুঁটকি ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর, লাহীড়ি মোহনপুরের হবি শেখ, সাচ্চু মিয়া ও বরাত আলী, সলঙ্গার দেলবর হোসেন, নাটোরের নলডাঙ্গার জাহিদুল ইসলাম, সিংড়ার নিংগইন গ্রামের রজব আলী, গুরুদাসপুরের মাহমুদ শুকুর ও চাতালের নারী শ্রমিক সাবিনা, সাজেদা ও লাইলীসহ কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে একই ধরণের তথ্য মিলেছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে চলনবিল এলাকায় অন্তত: দেড়শ’ চাতাল ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যান্য গুলোও ক্রমশ বন্ধ হওয়ার পথে। বেকার হওয়ার আশংকায় ভূগছেন চলনবিলের প্রায় তিন শতাধিক শুটকি চাতালের অন্তত: ৫ হাজার নারী পূরুষ শ্রমিক। প্রতি চাতালে ১০ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এদের মধ্যে সংখ্যায় নারী শ্রমিক বেশি। আবহাওয়া ভাল থাকলে প্রতি মৌসুমে চাতাল চলে আশিণ-কার্তিক মাস থেকে মাঘ-ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। তিন মণ তাজা মাছ শুকালে এক মণ শুটকি পাওয়া যায়। শুঁটকি তৈরির চাতালগুলোয় কর্মসংস্থান হওয়ায় বিল এলাকার হত দরিদ্র নারী পূরুষ শ্রমিকদের দু’বেলা আহারের সংস্থান হয়। এবার মাছের অভাবে শুরুতেই বন্ধ হতে বসেছে চাতাল গুলো।

পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া চলনবিলে রয়েছে মোট প্রায় ১৭৫৭ হেক্টর আয়তনের ৯৩টি বিল, ৪২৮৬ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট ৩২ টি নদী ও ১২০ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ২২টি খাল এবং অসংখ্য বড় বড় পুকুর জলাশয়। চলনবিল অঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার শুঁটকি মাছ তৈরি ও তা বাজারজাত করার কাজে যুক্ত ছিল। এবার তারা বেকার হয়ে পড়ার আশংকায় ভুগছেন। চলনবিলের সুস্বাদু শুঁটকির চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। কিন্তু প্রতি বছরই মাছের সংকটে এর উৎপাদন ক্রমশ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। চলনবিল অঞ্চলে প্রায় তিন শতাধিক চাতালে তৈরি হতো শুঁটকি মাছ। এসব শুটকি এলাকার চাহিদা মেটানোর পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পরও বিদেশে চালান হত।

তাড়াশের মহিষলুটি এলাকার প্রবীন শুঁটকি শ্রমিক আজগর আলী ও মহিষলুটি মৎস্য আড়তের সভাপতি মজনু সরকার জানান চলনবিল এলাকায় ‘সাবাড় বাহিনী’ বাদাই জাল দিয়ে পানি থেকে ছেঁকে তোলে মাছসহ অসংখ্য ক্ষুদে জলজপ্রাণি। এছাড়াও খরা মৌসুমে অনেকেই সেচে মাছ ধরে। যার কারণে মাছ ও মাছের খাদ্য সমুলে ধ্বংস হচ্ছে। প্রজননকালে যে সকল ক্ষুদে জলজপ্রাণি মাছেরা খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে সেগুলো ধ্বংস হওয়ায় প্রজনন সংকটও তৈরি হচ্ছে। এসব কারণে চলনবিলে এবার মাছ অনেক কম। তাই দাম দ্বিগুন তিন গুণ বেশি। এতে শুঁটকি তৈরির খরচও বেড়ে গেছে। ফলে লাভের বদলে লোকসান হওয়ায় চাতাল মালিকরা শুঁটকি চাতাল বন্ধ করে দিচ্ছেন।

মধ্য চলনবিলের তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মসগুল আজাদ বলেন, চলনবিলে সারা বছর আর পানি থাকেনা। তাই মাছ কম হচ্ছে। তবে বিলের কৃষি জমিতে রাসায়নিক কীটনাশক ও ঘাসমারা বিষ প্রয়োগে কী ধরণের ক্ষতি হচ্ছে তার গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ইত্তেফাককে বলেন-ভরাট হয়ে যাওয়া নদী খাল ও বিল গুলো গভীর করে খনন করতে পারলে চলনবিল আগের স্বকীয়তায় অনেকটাই ফিরে আসতে পারে।

চাটমোহর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, চলনবিলের শুটকির কদর সর্বত্র। এ অঞ্চলে শুটকি মাছ সংরক্ষণে ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবস্থা নিলে শুটকির প্রসার হবে। তবে কয়েক বছর মাছ সংকটে শুটকির উৎপাদন কমে গেছে। #



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই