তারিখ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকা মুক্ত দিবস ,৭ দিন ব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন

ভালুকা মুক্ত দিবস ,৭ দিন ব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন
[ভালুকা ডট কম : ০৭ ডিসেম্বর]
৮ ডিসেম্বর, ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত দিবস। মুজিব শতবর্ষ ও সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ৮ ডিসেম্বর ভালুকা মুক্তদিবসে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন ও ভালুকা উপজেলা পরিষদ চত্তরে ৮ ডিসেম্বর হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দিন ব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মেজর আফসার বাহিনীর কাছে ১৯৭১’র এই দিনে ভালুকা ক্যাম্পের কয়েক হাজার রাজাকার আলবদর ও পাক সেনার আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত হয়। সেদিনের কুয়াশাভরা ভোরে মুক্তিসেনাদের আক্রমনের মুখে পাকসেনা ও রাজাকাররা ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে থাকে। রাজাকার ও পাক সেনারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে গফরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পিছু পিছু যুদ্ধ করতে করতে এগিয়ে যায়। এক সময় রাজাকার ও পাকসেনারা গফরগাঁও রেলষ্টেশনে পৌছে সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে ঢাকা-ময়মনসিংহে পালিয়ে যাওয়ার টেষ্টা করলে বেশীরভাগ রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পরে। পরে তাদেরকে ভালুকায় ফিরিয়ে আনা হয়।

হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা পরিবার পরিজন নিয়ে ভালুকা ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লে জয় বাংলা ধ্বনিতে চারিদিক হতে মিছিলে মিছিলে লোক ছুটতে থাকে ৯ মাসের অবরুদ্ধ ভালুকা হানাদার ক্যাম্পের দিকে। বিজয়ের সেই আনন্দ মিছিলে যোগ দিয়ে গ্রামের বাড়ী ভরাডোবা হতে ৫ কিলোমিটার পথ দৌড়ে গিয়ে শত্রুমুক্ত ভালুকায় স্বাধীনতার প্রথম স্বাদ পাওয়ার সৌভাগ্যের দিনটি আজও স্মৃতিতে গাঁথা রয়েছে। মুক্ত ভালুকায় এল এম জি, এস এল আর, এস এম জি’র ব্রাশ ফায়ারে উল্লাসে মেতে উঠে মুক্তিযোদ্ধারা। আজও চোখের সামনে ভেসে উঠে বুকে কোমড়ে বেল্টে গুলির ছড়া, বিভিন্ন হাতিয়ার কাদে, লুঙ্গি উল্টানো গেঞ্জি গায়ে সেই মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ জয়ের বীরাগমন দৃশ্য।

১৯৭১ সনের ৭ মার্চের ভাষনে উদ্বুদ্ধ হয়ে বৃটিশ ভারত সেনাবাহিনীর (অবঃ) সুবেদার তৎকালীন ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি, বর্তমান এমপি আলহাজ কাজিম আহম্মেদ উদ্দীন ধনুর পিতা আফসার উদ্দীন আহম্মেদ ৭১ এর ১৭ এপ্রিল ১ টি মাত্র রাইফেল ও ৮ জন সদস্য নিয়ে ভালুকার মল্লিকবাড়ী বাজারের খেলু ফকিরের বাড়ীতে মুক্তি বাহিনীর একটি গেড়িলা দল গঠন করেন। পরবর্তীতে ভালুকা থানা দখল করে ১৫/১৬ টি রাইফেল ও একটি এল, এম, জি সহ প্রচুর গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। এর কয়েক দিনের মাথায় কাউরাইদ হতে খীরু নদী দিয়ে ভালুকা থানায় আসার পথে পনাশাইল নামক স্থানে পাক বাহিনীর অস্ত্র ও গোলা-বারুদ সহ একটি নৌকা আটক করে মুক্তিযোদ্ধারা। প্রচুর অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার করে গেরিলা দলটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়।

আফসার উদ্দীনের ৮ সদস্যের দলটি পরবর্তীতে প্রায় সারে ৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার বিশাল বাহিনীতে রুপ নেয়। এফ জে ১১ নং সেক্টরের ময়মনসিংহ  সদর দক্ষিন ও ঢাকা সদর উত্তর সাব সেক্টর অধিনায়ক মেজর আফসার ব্যাটেলিয়ন নামে পরিচিতি লাভ করে। আফসার বাহিনীর যুদ্ধকালীন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার রমজান আলী তরফদারের তত্বাবধানে ৫ জন ডাক্তার ১০ জন সহকারী চিকিৎসক ও ৪ জন নার্সের সমন্বয়ে একটি ভ্রাম্যমান হাসপাতাল পরিচালিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এটি কিছুদিন রেডক্রস সংস্থার সাহায্যে আফসার ব্যাটেলিয়ান হাসপাতাল নামে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে।

৭১ এর ২৫ জুন শুক্রবার সকাল হতে ভালুকা গফরগাঁও সড়কের ভাওয়লিয়াবাজু নামক স্থানে শিমুলিয়া নদীর পাড়ে পাক বাহিনীর সাথে আফসার বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন। দিবা রাত্র দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা একটানা যুদ্ধ স্থায়ী হয়। শুক্রবার সকালে শুরু হওয়া সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর আক্রমনে পাক বাহিনী চারিদিকে পানি বেষ্টিত নদীর পূর্বপারে গোয়ারী যোগীপাড়া নামক স্থানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। শুক্রবার সারাদিন সারারাত তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের মুখে  অনেক পাকসেনা নিহত হয়। পরদিন শনিবার সকাল ১১ টার দিকে ঢাকা হতে আকাশ পথে আসা হানাদার বাহিনি হেলিকপ্টার থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান লক্ষ করে ভাড়ি মেশিনগানের সেলিং শুর করে। মুক্তিযোদ্ধারাও হেলিকপ্টার লক্ষ করে পাল্টা ব্রিটিশ এল এম জি’র সাহায্যে গোলা বর্ষন অব্যাহত রাখলে হেলিকপ্টার পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরে শনিবার সন্ধ্যার দিকে যুদ্ধক্ষেত্রের ৪ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে ধলিয়া গ্রামে ধলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হেলিকপ্টার থেকে পাকসেনা নামিয়ে দিলে মুক্তিযোদ্ধারা ডিফেন্স ছেড়ে চলে আসেন। এই যুদ্ধে আফছার বাহিনীর তরুন যোদ্ধা অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র মল্লিকবাড়ী গ্রামের আঃ মান্নান মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। মজিবর রহমান সহ আহত হয় আরও ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা নদীর পশ্চিম দিক হতে একটানা দুদিন সম্মুখ যুদ্ধ করায় শতাধিক পাক সেনা নিহত হয়। ঐতিহাসিক ওই যুদ্ধের খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অল-ইন্ডিয়া রেডিও ও বিবিসি হতে ফলাও করে সম্প্রচার করা হয়। এই যুদ্ধের পরে ভালুকা থানা ও বাজার এলাকায় পাক বাহিনীর ক্যাম্পটি শক্তিশালী করা হয়। স্থানীয় মুসলিমলীগ নেতারা এখানে গড়ে তোলেন একটি বিশাল রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প। এসব রাজাকার আলবদররা ভালুকার বিভিন্ন গ্রামে দিনের পর দিন মানুষ হত্যা, নারী ধর্ষন,বাড়ীঘরে অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট চালায়। আফসার বাহিনী যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সময়ে একাধিক বার ভালুকা পাক হানাদার ক্যাম্পে আক্রমন চালিয়েছে। এছারা আমলীতলাযুদ্ধ, বল্লা যুদ্ধ, ত্রিশাল,গফরগাঁও,ফুলবাড়ীয়া,শ্রীপুর, মল্লিকবাড়ী, মেদুয়ারী সহ বিভিন্ন স্থানে পাকসেনা ও রাজাকারদের সাথে আফসার বাহিনীর অসংখ্য যুদ্ধ হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের বিভিন্ন যুদ্ধে মেজর আফসার উদ্দীনের পুত্র নাজিম উদ্দীন সহ ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। মুজিব শতবর্ষ ও সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ৮ ডিসেম্বর ভালুকা মুক্তদিবসে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন ও ৭ দিন ব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়েছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই