তারিখ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁয় ডিস ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়

নওগাঁয় ডিস ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়
[ভালুকা ডট কম : ২৪ ডিসেম্বর]
নওগাঁর রাণীনগরে প্রশাসনের কর্মকর্তা পরিচয়ে কামরুল হাসান (৪০) নামের এক যুবককে অভিনব কায়দায় অপহরন করে মুক্তিপন আদায় করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরের একটি টয়লেটে আটকে রেখে তার থেকে মুক্তিপন আদায় করেন পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ৪ যুবক। কামরুল হাসান নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের চুনিয়াগাড়ী গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে এবং একজন ডিশ লাইন ব্যবসায়ী।

স্থানীয় গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের চুনিয়াগাড়ী মোল্লাপাড়া গ্রামের কামরুল হাসান দীর্ঘদিন যাবত ডিশ ব্যবসা করে আসছেন। ব্যবসার সূত্র ধরে পাশ্ববর্তী চুনিয়াগাড়ী মাদ্রাসাপাড়া গ্রামের সহিদুল ইসলামের স্ত্রী সম্পা বেগমের (২৯) সাথে তার পরিচয়। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় পাশ্বর্তী রাণীনগর উপজেলা সদরে দন্ত চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে যান কামরুল। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পথে সম্পা কামরুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে দেখা করতে বলেন। সেখানে তার সাথে কামরুলের দেখা হলে দুজনের মাঝে কথাবার্তার এক পর্যায়ে পুলিশের এসআই এবং র‌্যাব সদস্য পরিচয়দানকারী ৪ যুবক তাদেরকে ঘেরাও করে। সেখান থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই নারীসহ কামরুলকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি টয়লেটে আটক করে অশ্লীল ছবি এবং ভিডিও চিত্র ধারন করেন যুবকরা। পরে ওই ছবি ও ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে কামরুলের কাছে ১ লক্ষ টাকা মুক্তিপন এবং তার ব্যবহৃত এ্যাপাচী আরটিআর ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল দাবী করা হয়। তাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় কামরুলকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লাঠিসোটা দিয়ে বেদম মারপিট করা হয়। পরে ৫০ হাজার টাকা দিতে চাইলে কামরুলকে তারা কিছুক্ষণের জন্য ছেড়ে দিয়ে টাকা আনতে পাঠায়। সম্মানহানির ভয়ে বাড়ি থেকে ১৫ হাজার টাকা এনে মোট ১৬ হাজার ৫’শ টাকা তাদের হাতে তুলে দেন কামরুল। তবে টাকার পরিমান কম হওয়ায় ক্ষিপ্ত হন এসআই ও র‌্যাব সদস্যের পরিচয়দানকারী যুবকরা। বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানেই তাকে আটকে রেখে লাঠিসোটা দিয়ে মারপিট করা হয়। পরে ঘটনাটি জানাজানি না করার জন্য অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে সেখান থেকে কামরুলকে ছেড়ে দেয় ওই যুবকরা। বিষয়টি ভয়ে শুরুতে কাউকে না বলতে পারলেও তার শরীরে জখমের চিহ্ন থেকে স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা তাকে নানা প্রশ্ন করলে সকলকে জানান তিনি। শুক্রবার পুরো গ্রামে বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামবাসীরা ওই নারীকে জিঞ্জাসাবাদ করলে অপহরন এবং মুক্তিপণের বিষয়ে তার জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

স্থানীয় চুনিয়াগাড়ী গ্রামের আকরাম হোসেন, তুফান হোসেন এবং রাবেয়া খাতুনসহ অনেকেই বলেন, গ্রামের যুবক ছেলেদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদেরকে একটি সন্ত্রাসী বাহীনি দ্বারা জিম্মি করে টাকা আদায়ের অনেক ঘটনার সাথে সম্পার সম্পৃক্ততা রয়েছে। ওই নারী এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। কামরুলকে আটক করে যে টাকা আদায় করা হয়েছে এতে পুরোপুরিভাবে ওই নারী জড়িত। ওই নারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান তারা।

ভূক্তভোগী কামরুল হাসান বলেন, রাণীনগরে দাঁত সিল করতে গেলে আমাকে সেখান থেকে কৌশলে সম্পা ডেকে হাসপাতালের পশ্চিম দিকে পরে থাকা ভাঙা এ্যাম্বুলেন্সের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাবার পর পুলিশের এসআই এবং র‌্যাব সদস্য পরিচয়দানকারী যুবকদের হাতে সম্পা আমাকে তুলে দেয়। ওখানে সম্পার সাথে জোড়পূর্বক আমার অশ্লীল ছবি এবং ভিডিও চিত্র ধারন করে। তাদেরকে দাবীকৃত টাকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদের মূল দাবী ছিলো আমার মোটরাসাইকেল। সেটা না দেওয়ায় সেখানে দুপুর ৩টা পর্যন্ত আমাকে টয়লেটে আটকে রেখে অনেক মারপিট করা হয়েছে। ওদের প্রাণনাশের হুমকির কারনে বিষয়টি কাওকে বলতেও পারছিলাম না। আমি ওই নারীসহ এর সাথে জড়িতদের সঠিক বিচার এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি।

এবিষয়ে অভিযুক্ত সম্পা বেগম বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য গিয়ে সেখানে কামরুলের সাথে দেখা হয়েছিল। দেখা হওয়ার পর কথাবার্তা চলাকালীন হঠাৎই ৪জন এসে আমাদের ঘেরাও করে টয়লেটে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে কামরুলকে মারধর করে টাকা দাবী করে। আমার থেকেও টাকা দাবী করা হয়েছিল। পরে আমি তাদের অনুরোধ করলে সেখান থেকে আমি চলে আসতে সক্ষম হই। সেখানে পরে কি হয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই। হয়তো তারা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এটি ঘটিয়েছে। এর সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) উত্তম কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এবিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক কোন অভিযোগ করেননি। তবে যেহেতু এটি সরকারী হাসপাতালের ভেতরে ঘটেছে বিষয়টি অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থ্যা নেওয়া হবে।=উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইফতেখারুল আলম বলেন, বিষয়টি হাসপাতালের ভেতরে ঘটেছে কি না আমার জানা নেই। এবিষয়ে কেউ কোন লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।#




সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অপরাধ জগত বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই