তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁয় ধান কাটা-মাড়াইয়ের শ্রমিক-সংকটে কৃষক

নওগাঁয় ধান কাটা-মাড়াইয়ের শ্রমিক-সংকটে কৃষক,জমিতেই নষ্ট হচ্ছে পাঁকা ধান,দেখা দিয়েছে ফলন বিপর্যয়
[ভালুকা ডট কম : ০৯ মে]
নওগাঁর কৃষকরা তীব্র শ্রমিক-সংকটের কারণে মাঠ থেকে ঘরে ধান তুলতে পারছেন না। এদিকে কিছু দিন ধরে বৈরি আবহাওয়ার কারণে ধানে দেখা দিয়েছে কারেন্ট পোকাসহ বিভিন্ন রোগের আক্রমন। অপরদিকে কয়েকদিনের ঝড়ে নুইয়ে পড়েছে মাঠের অধিকাংশ ধান। অনেক খেতে পানি জমে যাওয়ার কারণে জমিতেই ধানে নতুন গাছ জন্ম নিচ্ছে। আর লোকসানের মুখে কৃষকদের মাথায় হাত। একমাত্র অবলম্বন কষ্টের ধান ঘরে তুলতে না পারায় জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা পথে বসতে শুরু করেছে।  বর্তমানে পাঁকা ধান কৃষকদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। এমন সংকট থেকে কৃষকদের বাঁচাতে ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকদের কৃষি ভুর্তকীর আওতায় আনার দাবী জানিয়ে সচেতন মহল।

জেলার রাণীনগর উপজেলার সিংগাড়পাড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন প্রামাণিকের ছেলে আধুনিক কৃষক মোস্তাক আহমেদ। তিনি এবার বোরো মৌসুমে তার নিজস্ব ৩২বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধান চাষ করেছিলেন। মাঠে ধানও ভালো হয়েছে কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে তিনি এখন পর্যন্ত এক শতাংশ জমির ধানও কেটে ঘরে তুলতে পারেননি। এছাড়া প্রায় ৬বিঘা জমির ধানে বৃষ্টির পানি জমে তলিয়ে থাকার কারণে জমিতেই পাঁকা ধানে চারা গাছের জন্ম নিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তিনি পুরো জমির ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি না সেই আশঙ্কায় রয়েছেন। তিনি প্রতিনিয়তই বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শ্রমিকের খোঁজ নিচ্ছেন কিন্তু প্রতি বছরের ন্যায় এবার নওগাঁর উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান কাটার শ্রমিক না আসায় জেলার ১১টা উপজেলায় একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এই সুযোগে অল্পবিস্তর স্থানীয় শ্রমিকরা দ্বিগুন পারিশ্রমিকে কিছু কিছু কৃষকের ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছেন। এতে করে প্রতি বিঘা জমিতে ধান চাষে মোট খরচ পড়ছে ১২-১৫হাজার টাকা আর দেরিতে ধান কাটার জন্য ফলন পাচ্ছে প্রতি বিঘা জমিতে ১৫-২০মন হারে। এতে করে একজন কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে বিঘা প্রতি ৪-৫হাজার টাকা। আবার যেগুলো ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে সেগুলো থেকে ৪ভাগের ১ভাগ ধান পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকদের সরকারের পক্ষ থেকে ভুর্তকির আওতায় না আনলে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক বিশেষ করে বর্গাচাষিরা ধান চাষ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

একই এলাকার কৃষক হিরো বাবু, মহসিন আলীসহ অনেকেই চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেন বর্তমানে এই এলাকার কৃষকরা ধানের পাশে বসে কাঁদছেন। অনেক কষ্টের ফসল আমরা ঠিক ভাবে ঘরে তুলতে পারবে কিনা তা আমাদের জানা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে যদি সহযোগিতা করা না হয় তাহলে প্রান্তি পর্যায়ের কৃষকসহ হাজার হাজার কৃষক দেউলিয়া হয়ে যাবে। পাঁকা ধান এখন আমাদের গলায় মরণ কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে কৃষি অফিস দায়সারা পরামর্শ দিয়েই কেটে পড়ছেন।

রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের যদি চেয়ারম্যান আব্দুর ওহাব চাঁন বলেন, অন্যান্য এলাকার চেয়ে আমার এলাকার কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ্য। এই সব ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকদের সরকারি ভুর্তকির আওতায় না আনা হয় তাহলে আগামীতে দেশ চরম ভাবে ধান উৎপাদনের সংকটে পড়বে।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামসুল ওয়াদুদ বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশ ধান পাকলেও ধান কাটা হয়েছে ২৫ শতাংশ। জেলার বিভিন্ন মাঠের প্রায় ৭০শতাংশ ধান পেকে গেছে। আমরা কৃষকদের দ্রুত মাঠের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকেরা ধান কাটতে পারছেন না এমন কথা শোনা যাচ্ছে। বাইরের জেলার শ্রমিক কম আসায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। অপরদিকে সকল কৃষক এক সঙ্গে ধান কাটা শুরু করায় এই শ্রমিক সংকট সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ।#




সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

কৃষি/শিল্প বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই