তারিখ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় এক যুবকের নিজ গৃহে মানবেতর বন্দী জীবন

ভালুকায় এক যুবকের নিজ গৃহে মানবেতর বন্দী জীবন
[ভালুকা ডট কম : ০৬ জুন]
ভালুকা উপজেলার ভালুকা ইউনিয়নের বাঁশিল গ্রামে দীর্ঘদিন যাবৎ চার দেয়ালের পাকা ঘরে লোহার গ্রীলে তালাবদ্ধ মানবেতর বন্দী জীবন কাটাচ্ছে ফজলুল হকের ছেলে জিয়াউল হক (২৬) নামে এক য্বুক।

সরজমিন ওই গ্রামে গেলে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ওই বাড়ীর সন্ধ্যান মেলে। বাড়ীর বসতঘর লাগুয়া বাইরের অংশে একটি ছোট আকারের পাকা দালান জানালা বিহিন চার দেয়ালের একদিকে মোটা রডদিয়ে গ্রীল করা দরজায় উপর নীচে বড় বড় দুটি তালা ঝুলছে। গ্রীলের নীচের অংশে অনুমান ৬ ইঞ্চি প্রস্থ ও দেড় ফুট লম্বা একটি ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে খাবারের থালা বাহির থেকে ভিতরে দেওয়ার জন্য। দেখতে হুবুহু হাজতখানার মত। ঘরটিতে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা থাকলেও সুইচবোর্ড বাহিরে লাগানো।

শিকের বেড়ার কাছে খালি গায়ে লুঙ্গি পরা ময়লাযুক্ত শরীরে জিয়াউল হক কৌতুহল ভরা দৃষ্টি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। পায়ের কাছে মেঝেতে একটি থালায় খাবার দেয়া রয়েছে। ছোট কক্ষটির একপাশে মেঝের উপর বিছানা পাতা। দেখতে পুরোটাই জেলখানার কয়েদীদের এক কক্ষ বিশিষ্ট বন্দীশালার মত। আশপাশের লোকজন জানায় মাসের পর মাস চার দেয়ালে তালাবদ্ধ জিয়াউল হক মানুষ দেখলেই চিৎকার করে বলে তাকে বের করার জন্য সে পাগল নয়।

জিয়াউল হকের বড়ভাই স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক বিপ্লব জানান পরিবারের ও আশ পাশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য অনেক টাকা খরচ করে আলাদা দালান ঘর বানিয়ে তাকে ওই অবস্থায় রাখা হয়েছে। তিনি জানান এক সময় নেশাগ্রস্ত ও মানষিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারনে পরিবারের লোকজনকে মেরে আহত করা, ঘরের জিনিষপত্র ভাংচুর করা সহ নানা রকম অত্যাচার শুরু করলে তাকে শিকলে বেঁধে রাখতেন। শিকলমুক্ত হয়েই যাকে পেতো তাকেই মারধোর শুরু করতো। তাকে সুস্থ্য করার জন্য মানষিক ও মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি রাখা হয়েছে। কিছুদিন ভাল আচরণ করে পুনরায় মানুষকে মারধোর শুরু করলে তাকে আইনের সাহায্য নিয়ে কিছুদিন জেল হাজতে রেখে নিজেরাই ছাড়িয়ে এনেছেন। পরবর্তীতে বাড়ীতে আনার পর কয়েক দিনের মধ্যেই পূর্বের রুপ ধারণ করে বাড়ীর মেয়ে ছেলে সহ বিভিন্ন জনকে মারপিট শুরু করে। উপায়ান্ত না দেখে ইটের দেয়াল ঘেরা লোহার গ্রীলের ঘরটিতে তাকে রাখা হয়েছে। ঘরের ভিতর টয়লেট ও গোসলের ব্যবস্থা করা আছে সময় মত খাবার দেয়া হয়। তিনি জানান চিকিৎসার কোন ত্রুটি রাখেননি। তাকে সুস্থ্য করার জন্য ভবিশ্যতে আরও চিকিৎসা করবেন।

কিন্ত ভিন্ন কথা বলছে গ্রামের লোকজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিবেশী জানান,জিয়াউল হককে জেলখানার কয়েদীর মত রাখা হয়েছে, সে নেশা করে গ্রামের কাউকে মারধোর করেছে এমনটা তারা শোনেননি। বরং পরিবারের লোকজন তাকে বিভিন্ন সময়ে শারিরিক নির্যাতন ও বিভিন্ন অভিযোগ দিয়ে একাধিকবার জেল হাজতে পাঠিয়েছে। সে লিগ্যাল এইডের সহায়তায় জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ী ফিরেছে। অনুমান ৩/৪ বছর পূর্বে জিয়াউল হক বিয়ে করার কিছুদিনের মধ্যেই পারিবারিক কলহের কারনে তার স্ত্রী ডিবোর্স নিয়ে চলে যায়। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে জিয়াউল হকের সাথে ছোট ভাই দীপুর ডিস ব্যবসা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তার প্রতি এহেন অমানবিক আচরনের জন্য এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে তারা অমুখ তমুখের ভয় দেখিয়ে শাঁসিয়ে দেয়। আশ পাশের কোন লোকজনকে ওই যুবকের ঘরের কাছে যেতে দেয়া হয়না। এলাকার সচেতন মহল মনে করেন জিয়াউল হকের প্রতি পরিবারের লোকজনের আচরণ মানবাধিকার লংগনের সামিল।

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে ভালুকা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শিহাব আমিন খানের সাথে কথা বললে তিনি জানান বিষয়টি তার জানা নেই তিনি খোঁজ নিবেন। প্রচলিত নিয়মের পরিপন্থি নির্জন বন্দীশালা হতে জিয়াউল হককে মুক্ত করে প্রকৃত কারন উদঘাটনের মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসা দ্বারা শারিরিকি ও মানষিক সুস্থ্যতা অর্জন ও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবী করছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই