বিস্তারিত বিষয়
ভালুকার মৃৎ শিল্পী শোভারানী পাল
মাটির তৈজস গড়ে ৬৫ বছর পার করলেন
ভালুকার মৃৎ শিল্পী শোভারানী পাল
[ভালুকা ডট কম : ১৬ নভেম্বর]
আবাহমান বাংলার এক সময়ের নিত্য ব্যবহার্য মাটির তৈজসপত্র নির্মানকারী মৃৎ শিল্পী পাল সম্প্রদায়ের জীবনে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। বিজ্ঞানের আধুনিকায়ন ও উন্নত প্রযুক্তির তৈরী লোহা, এনামেল ও প্লাষ্টিকের দীর্ঘস্থায়ী বাসনপত্র ও সামগ্রীর কাছে মাটির তৈরী ঠুনকো জিনিষের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। তার পরও মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মাটির তৈরী হাড়ি পাতিলের প্রয়োজন একেবারে ফুরিয়ে যায়নি বলে এখনও পাল সম্প্রদায়ের অনেকে সাত পুরুষের আদি পেশা জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ধরে রেখেছেন।
উপজেলার মল্লিকবাড়ী বাজার সংলগ্ন অনেক পুরোনো পালপাড়া। যেখানে দিনভর চলতো মাটিগুলে বাসনপত্র তৈরীর কাজ। মাটি নরম করা, চাকা ঘুড়িয়ে এক খন্ড মাটিতে সুনিপুণ হাত বুলিয়ে তৈরী হতো নানা আকৃতির হাঁড়ি পাতিল। সারাদিন রোদে শুকিয়ে পুইনঘরে কাঠখড় দিয়ে পুড়ে তৈরী হতো টনটনে হাঁড়িপাতিল ও নানা রকম বাসন কোসন। হাটে বাজারে গ্রামে গঞ্জে সেসব বিক্রি করে তাদের ঘরে আসতো সংসার খরচের নগদ অর্থ। ১৫ নভেম্বর মঙ্গলবার সরজমিন মল্লিকবাড়ী পালপাড়ায় গেলে দেখা মিলে হরমোহন পালের স্ত্রী শুভারানী পাল (৮০) সিঁথির সিঁদুর আর হাতের শাঁখায় জানান দেয় তিনি স্বামী সোহাগে পরম পতি ভাগ্যে ভাগ্যবতী। ছেলে কার্তিক পাল ও পুত্রবধু লক্ষীরাণী পালের সাথে পাতিল পুড়ার পুইন সাজানোর কাজ করছেন তিনি।
মুচকি হেসে জানালেন দেশ স্বাধীনের বছর পনের আগে ১৩ কি ১৪ বছর বয়সে শাঁখা সিঁদুর পরে স্বামী শশুরের ভিটায় এসে কাঠের চাকায় নরম মাটি তুলে হাতের কারুকাজে শুরু হয় সংসার জীবনের পথ চলা। তিনি জানান এক সময় গৃহস্থ বাড়ীতে মাটির ডহিতে ভাত তরকারি রান্না করা, মাটির পেয়ালায় (হানকিতে) ভাত খাওয়া, মাটির কলসে পানি রাখা সহ বিভিন্ন কাজে মাটির তৈরী বাসনপত্র ব্যবহার হতো। তখন এত কাজ ছিল যে নাওয়া খাওয়ার সময় পর্যন্ত পেতেন না। মাটির তৈজস পত্র তৈরী করে প্রায় ৬৫ বছরের সংসার জীবনে ৪ ছেলে ২ মেয়ের জননী শুভারাণী পাল এখনও দিব্যি ধরে আছেন সংসারের হাল। নব্বইয়োর্ধ স্বামী হরমোহন দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্য জনিত কারনে শয্যাশায়ী। বড় ছেলে কার্তিক পাল (৫৮) ও পুত্রবধু লক্ষীরাণী পাল (৫০) পৈত্রিক পেশা ধরে রেখেছেন। দ্বিতীয় ছেলে মন্টুপাল মিষ্টি দোকানী, অপর দুই ছেলে সন্তোষ ও পরিতোষ পাল স্বর্ণকারের কাজ করেন।
কার্তিক পাল জানান সারা বছর আগের মত কাজ না থাকায় অনেকেই পেশা বদল করে জীবিকার তারনায় অন্যান্য পেশায় চলে গেছে। বর্তমানে এক খাদি মাটি কিনতে হয় ৬০ টাকায়, এক মণ লাকড়ি ৩০০ টাকা। খরচের তুলনায় আগের মত লাভ পাওয়া যায়না। শীতকাল আসলে পিঠার খোলা, রসের হাঁড়ির মোটামোটি চাহিদা বাড়ে। আর দৈয়ের পেয়ালার কাজ টুকটাক সারা বছর চলে। এক সময় খেলনা পুতুল,হাতি, ঘোড়া, ভাতের পেয়ালা, ভাতের ডহি, পানির হাঁিড় কলস, পিঠার খোলা, খৈ ভাজার পাতিল, গরুর চাড়ি, ধান চাল রাহনের বড় ঝালা, মুটকি, আলো জ্বালানোর মাটির প্রদীপ কতকি তৈরী করতেন তারা। পাইকার ফইরারা বাড়ী থেকে পাতিল নিয়ে যেতেন নৌকা ভরে। এখন আর অত কাজ নাই, মিষ্টির দোকানে দৈএর পেয়ালা আর রসের হাঁড়ি, পিঠার খোলা পাইলা ছারা আর কিছুই চলেনা, পেটের দায়ে সাত পুরুষের কাজ করে কোন রকমে বেঁচে রয়েছেন তারা।
তাদের তৈরী প্রতিটি রসের হাড়ি(কলসী) ৫০ টাকা, খৈ ভাজার ডহি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, দৈয়ের পাতিল ৮ টাকা ও পিঠার খোলা ১০ টাকা করে বিক্রি হয় ফরিয়াদের কাছে। মাটি প্রস্তুত থাকলে সারাদিনে ১০০ দৈয়ের পাতিল তৈরী করতে পারেন।
তিনি জানান চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ আসলে তাদের তৈরী খেলনা সামগ্রী, মাটির বিভিন্ন সাইজের পাতিলের ব্যাপক কাটতি হতো। মাটির পাতিলে করে গ্রামের মেলা থেকে মুড়ি ও গরম গরম জিলিপি কিনে দলবেঁধে বাড়ী ফিরা ছিলো নব বর্ষের উৎসবের চির চেনা বৈশিষ্ট। এখন আর সেই রকম আয়োজন হয়না। মাটির পাতিলের কদর আগের মত না থাকায় তাদের আয় রোজগার একেবারেই কমে গেছে।
পরাণ পাল জানান তাদের তৈরী জিনিষ পত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় আয় রোজগার না থাকায় তিনি এখন দিন মজুরী করে জীবিকা চালাচ্ছেন। এক সময় তাদের তৈরী মাটির আসভাব পত্র বিক্রি করে সারা বছরের সংসার খরচ চালিয়ে দু’পয়সা উপড়ি থেকেছে। অর্থকড়ি নেই যে পেশা বদলিয়ে অন্য ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করবেন। সরকারী সাহায্য সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত। এখনও অনেকে গৃহস্তের কাছ থেকে চড়া দামে এঁটেল মাটি কিনে কিছু কিছু হাঁড়ি পাতিল তৈরী করেন। পাতিল পুড়ার পুঁইন জ্বালানোর লাকড়ির দাম অনেক বেড়ে গেছে। সেই তুলনায় বাজারে মাটির হাঁড়ি পাতিলের দাম পাওয়া যায়না।
এই এলাকায় পাল সম্প্রদায়ের ৩০/৪০ টি পরিবারের মধ্যে ১০/১২ টি পরিবার এখনও বাপ দাদার পেশায় নিয়োজিত থেকে ভিটেবাড়ি আকড়ে ধরে পরে আছে। এদের মধ্যে অনেকেই জীবিকার তারনায় কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে পেশা বদল করেছে। আবাহমান বাংলার গৃহস্থ পরিবারের নিত্য কর্মের সহায়ক চিরচেনা প্রাচীনতম ঐতিয্যভরা মৃৎশিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়াতে তারা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।#
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- ভালুকায় বোরো ধানে চিটা কৃষকের মাথায় হাত [ প্রকাশকাল : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ০২.৩০ অপরাহ্ন]
- ভালুকায় দিনব্যাপী প্রানীসন্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত [ প্রকাশকাল : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ০১.২০ অপরাহ্ন]
- ভালুকায় মুজিব নগর দিবস উদ্যাপন [ প্রকাশকাল : ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ১২.৩০ অপরাহ্ন]
- ভালুকায় পানির স্তর নীচে,খাবার পানি সংকট [ প্রকাশকাল : ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ০১.৩০ অপরাহ্ন]
- ভালুকায় বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে শোভাযাত্রা [ প্রকাশকাল : ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৬.০০ অপরাহ্ন]
- ভালুকায় সংসদ সদস্যর জন্মদিন পালন [ প্রকাশকাল : ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২.৩০ পুর্বাহ্ন]
- ভালুকায় বিরোধের জেরে সীমাণা প্রাচীর ভাঙচুর [ প্রকাশকাল : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২.২০ অপরাহ্ন]
- ভালুকায় যুবদল সভাপতির ইফতার মাহফিল [ প্রকাশকাল : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১২.২০ অপরাহ্ন]
- ভালুকার কাচিনায় ঈদ উপহার দিলেন রফিক [ প্রকাশকাল : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১২.১৫ অপরাহ্ন]
- ভালুকায় ঈদ সামগ্রী বিতরণ হাতেম খানের [ প্রকাশকাল : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১২.১০ অপরাহ্ন]
- ভালুকায় হাতেম খানের ঈদ সামগ্রী বিতরণ [ প্রকাশকাল : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ১২.১০ অপরাহ্ন]
- ভালুকার আশকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি রিপন [ প্রকাশকাল : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- ভালুকায় হাজী রফিকের ঈদ সামগ্রী বিতরণ [ প্রকাশকাল : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- ভালুকায় ঈদ উপহার দিলেন হাজী রফিক [ প্রকাশকাল : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ০১.১০ অপরাহ্ন]
- ভালুকায় বেলাল ফকিরের ঈদ সামগ্রী বিতরণ [ প্রকাশকাল : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ০১.০০ অপরাহ্ন]