তারিখ : ০৯ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

গৌরীপুরে সবজি চাষে ৫ সহস্রাধিক কৃষক দারিদ্রতাকে জয় করেছে

বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস
গৌরীপুরে সবজি চাষে ৫ সহস্রাধিক কৃষক দারিদ্রতাকে জয় করেছে
[ভালুকা ডট কম : ১৬ অক্টোবর]
উৎপাদিত সবজি উপজেলা-জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে যাচ্ছে রাজধানী শহর ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও সিলেটে। সবজি চাষে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ছন-খড়ের বদলে তৈরি হচ্ছে ইট-পাথরের ভবন। সন্তানরাও উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছেন। সবজি বিক্রি, দূর-দুরান্তে রপ্তানির সঙ্গেও জড়িয়ে আছেন সহস্রাধিক মধ্যস্বত্ত্বভোগী।

সোমবার (১৭ অক্টোবর/১৬) বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস। কঠোর পরিশ্রম, আধুনিক যন্ত্রপাতি, উন্নত বীজেই বদলে দিয়েছে ৫ সহস্রাধিক কৃষকে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাদিকুর রহমান জানান, রবি মৌসুমে ৩০ হেক্টর জমিতে ফুলিকপি চাষে ৩৩৫জন কৃষক, ৩২ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি চাষে ৩৭০জন, ৬৬ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষে ১৭৫জন, ১২৮ হেক্টর জমিতে ডাটা চাষে ৪২৮জন, ১১৭ হেক্টর জমিতে মুলা চাষে ৩শ জন, ২০ হেক্টর জমিতে করলা চাষে ১২২জন, ৫০ হেক্টর জমিতে লাউ চাষে ৩৪৮জন কৃষক, ৫০ হেক্টর জমিতে সীম চাষে ৩৯৫জন কৃষক, ৩০ হেক্টর জমিতে লাল শাক চাষে ২শ, ৩ হেক্টর জমিতে পালং শাক চাষে ৫০জন, ২ হেক্টর জমিতে ধনিয়া চাষে ৪০জন, বাদাম চাষে ৩২জন, ১০৩০ হেক্টর জমিতে চল্লিশা আলু চাষে ২হাজার কৃষক ও প্রায় ৮শ কৃষক  শশা চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

মৌসুমী সবজি চাষ। বদলে গেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ৫ সহস্রাধিক কৃষকের পরিবারের জীবনযাত্রা। এবার মৌসুমী শব্দের সামনে যোগ হয়েছে আগাম জাত আর বারোমাসী সবজি উৎপাদনও। বাড়ির পরিত্যক্ত স্থান, ধান ক্ষেতের আইল, পুকুর পাড়, রাস্তার ধারে ভাগ্য বদলে চলছে সবুজের লড়াই। রবি মৌসুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ডাটা, শশা, মুলা, করলা, চল্লিশা আলু, লাউ, সীম, লালশাক, বেগুন চাষের মাধ্যমে এসব কৃষক জয় করেছেন দারিদ্র্যতা।

এক সময় শুধুমাত্র শীতকালীন সবজি হিসাবে পরিচিত ছিলো লাউ! দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে কৃষি গবেষণার মাধ্যমে এ সবজি এখন বর্ষাকালেও চাষ হচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল ইসলাম জানান, অনুকূল আবহাওয়া, সঠিক সময়ে বীজ ও সার প্রয়োগ, কৃষি বিভাগের নিয়মিত তদারকিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। আনসিজনে হওয়ায় ভোক্তাদের মাঝে ক্রয়ের আগ্রহ বাড়ায় দাম বেড়েছে। স্বল্প সময়ে অধিক লাভের কারণে বাড়চ্ছে লাউ চাষ।

একখন্ড জমিতে লাউ করেন হাবিব উল্লাহ। মাচায় লাউ, মাটির নিচে বাড়ছে মুখী আর মুখী গাছের ফাঁকেফাঁকে নানা সবজি। তিনি উপজেলার তাতিরপায়া গ্রামের জাহেদ আলীর পুত্র। এলাকায় আদর্শ কৃষক। শীতকালে হাইব্রিড জাতের লাউ চাষ করে তাক লাগিয়ে দেন। লাউয়ের ভারে মাচাটা নুয়ে পড়ছে। অসময়ে লাউ ক্রেতা পেয়ে খুবই খুশি, দামও বেশি বলে জানান কৃষক হাবিব উল্লাহ। থাকতেন খড়ে ঘরে। ৪/৫বছর ধরে লাউ চাষ করে সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতার ঝিলিক। বদলে গেছে খড়ের ঘর, বানিয়েছেন টিনের ঘর। তিনি জানান, দুই মেয়ে জাহানারা বেগম ও ইয়াসমিন আক্তারের বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়ে শারমিন আক্তার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তিনি আরও জানান, ১০শতাংশ জমিতে ১৬হাজার টাকার বিক্রি হয়েছে আরও ৬/৭হাজার টাকার লাউ বিক্রি করা যাবে। শাক বিক্রি হয়েছে ১৭০০টাকার। রামগোপালপুর ইউনিয়নের আব্দুল বারেক, ডৌহাখলার নবী নেওয়াজ, আব্দুস সাত্তার, নওয়াব আলী, ভাংনামারী ইউনিয়নের খালেদ মিয়া, রফিকুল ইসলাম, গৌরীপুর ইউনিয়নের আঃ মোতালিবের ঘরেও স্বাদের লাউ এনে দিয়েছে স্বচ্ছলতার এক ঝিলিক হাঁসি।

উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের দারিয়াপুর গ্রামের মৃত আছিম উদ্দিনের পুত্র। চলতি মৌসুমে ৫শতাংশ জমিতে নারিকেলি জাতের কচু চাষ করেন। উৎপাদনে বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪শ কচু প্রায় ১৭হাজার বিক্রি করেন। আরও ৪/৫হাজার টাকা বিক্রি হবে। খরচ হয়েছে মাত্র ১৬শ টাকা। এ জমিতে ১১শ টাকা খরচ করলে ২৮শ টাকার ধান উৎপাদন হতো। ধানের চেয়ে সাড়ে ১১গুন লাভবান হয়েছে বলে জানান কৃষক আব্দুস সালাম। সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ভোলানাথ সরকার জানান, এই পানি কচুর বৈজ্ঞানিক নাম ঈড়ষড়পধংরধ. এটি ঈড়ষড়পধংরধ বংপঁষবঃধ (খ) ঝপযড়ঃঃ প্রজাতির। ডাটা ও শাকে রয়েছে প্রচুর আইরন। তাই রক্তস্বল্পতা ও শূন্যতা পূরণে কার্যকরী। সর্বঙ্গ খাওয়া যায়। নিজ সন্তানদেরও চান উন্নত ফসলের ন্যায় আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়তে। ছেলে ইয়াসিন আহাম্মেদ ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছে। মেয়ে সালমা আক্তার নিজ গ্রামের বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়চ্ছে। দু’সন্তানের আদর্শ জননী পান্না বেগম স্বামীর ন্যায় পরিশ্রমী সারর্থী।

সূর্য্য তখনো উঠেনি। ভোররাত। কৃষকের ক্ষেতে বেজে উঠে বেল (ঘন্টাধ্বনি)। এসেছে সবজির ভ্যান। ঘুম ভাঙ্গে কৃষাণ-কৃষাণীর। কুয়াশা মাড়িয়ে শুরু হয় সবজি উত্তোলন ধুমদাম উৎসব। ব্র‏‏হ্মপুত্র নদের চরে বালুর উপরে তৈরি করেছে পলির প্রলেপ। আজ সবুজে চেয়ে গেছে পুরো চরাঞ্চল। এ অঞ্চলের কৃষকের আয়ের প্রধান উৎস সবজি চাষ। তবে কৃষকের আর সবজি নিয়ে বাজারে যেতে হয় না। ক্রেতা আর বিক্রেতাদের সেতুবন্ধনের কাজেও জড়িয়ে আছে সহস্রাধিক ভ্যানগাড়ি চালক। যাঁরা গ্রামে ‘কৃষকবন্ধ’ু আর শহরে ‘ভ্যানগাড়ীওয়ালা’ নামে পরিচিত।

দু’পায়ে ভর দিয়ে চলাও কষ্টকর ছিল। সেই উত্তপ্ত বালুর চরে পানি দিয়ে সবুজে ভরে দেয়ার সংগ্রাম আজ পরিশ্রান্ত উদ্যোগী কৃষকরা জয়ী। বালি মাটিকে পলিতে রূপান্তর করার জন্যে বাড়ির আবর্জনা পঁচা কম্পোষ্ট সার, গোবর, ছাই আর কত কিছুই না দিয়েছেন কৃষক। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বালুময় চরাঞ্চলে আজ ভুলে গেছে অতীতের চেহারা। সকালের শিশির ভেজা সবজি ক্ষেতের অপরূপ দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। চরনিলক্ষীয়ার আব্দুল কাদির (৫২) বলেন, ধানে অনেক সময় লাগে সবজি চাষে ২০দিনের মধ্যে হাতে টাকা আসে। ভাংনামারী ইউনিয়নের নাওভাঙ্গার চরের কৃষাণী খোদেজা আক্তার জানান, আগে তিনবেলা ভাতই খেতে পাইতাম না। এখন ভিক্ষা দেই।

৪র্থ শ্রেণীর লাইলীও এখন পড়ার ফাঁকে চলে আসে সবজি ক্ষেতে। ২ছেলে আর ১মেয়ের সংসার মজিবুর রহমানের। বালুর চরে পানি দিয়ে সবুজে ভরে দেয়ার জন্যে চালান অক্লান্ত প্রচেষ্টা।   বালুর চরে ৩টি সন্তানের মতো আদর দিয়ে লাউ গাছ গুলোর যত্ন নিচ্ছেন। আর আদরে লাউ ডগা লিকলিক করে বাড়াচ্ছে। আর লাউ গাছের ডগায় নূতন পাতায় জন্ম নেয়া লাউ বড় হচ্ছে। ফুটফুটে শিশুর মতো ফুঙ্গাযুক্ত পাপড়ী আর লাউ স্পর্শে খুবই সতর্ক মজিবুর। আজ তার সংসারে হাঁসি ফুটেছে। সাড়ে ৯শতাংশ জমির লাউ বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩০হাজার টাকা আর শাক সাড়ে ৬হাজার টাকা। বাচ্চু মিয়ার পুকুরপাড়ে, বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তার ধারে রোপন করে লাউ আর শাক বিক্রি করেছে ২২হাজার টাকার। ভ্যানগাড়ী চালকদের মাধ্যমেই শহরের প্রতিটি দুয়ারে দুয়ারে এখন তৈরি করেছে সবজির হাট।

চরনিলক্ষীয়ার মোঃ জহরুল মিয়ার পুত্র ফারুক মিয়া (৪০)। ৬/৭বছর ভ্যানগাড়ী চালিয়ে সংসারের হাঁসি ফুটিয়েছে। কৃষকের সাথে শহরের মানুষের সেতুবন্ধনের কাজ করেন। ভ্যানগাড়ী চালিয়ে সংগ্রামের জয়ীর প্রতিশ্রতিতে তাঁর ছেলের নামও রেখেছেন বিজয়। সে ২য় শ্রেণিতে পড়ছে। মানুষের উপকারী আর মহৌষধখ্যাত গাছের নামের সঙ্গে মিল রেখেই মেয়ের নাম রেখেছেন নিম। সে প্লে-তে পড়ছে। ফারুক জানায়, ৬/৭হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে ভোরে কৃষকের ক্ষেতে যান আর সকালে শহরের প্রত্যেকে দুয়ারে হাজির হন। আয় ৪/৫শ টাকা উপার্জন। একই গ্রামের মজিদের পুত্র হানিফ। ৩সন্তানের জনক। তার বড় পুত্র নাজিরুল ইসলাম ৪র্থ শ্রেণি ও খাদিজা আক্তার ৫ম শ্রেণিতে পড়ছে। কথা হয় আরেক ভ্যানগাড়ী চালক আঃ মান্নানের পুত্র আব্দুল খালেক। তিনিও ৩ সন্তানের জনক। বড় ছেলে রায়হান ৫ম শ্রেণিতে পড়ছে। দু’সন্তানের নাম ওমর ফারুক ও খোকা বাবু। তিনি জানান, চরাঞ্চলের সবজি বাজারজাত করণে এসব পরিবারে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

কৃষি/শিল্প বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই