তারিখ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় পানির স্তর নীচে,খাবার পানি সংকট

প্রচন্ড তাপদাহে ভালুকায় পানির স্তর নীচে,পুকুরে পানি নেই অধিকাংশ সাবমার্সিবল বন্ধ খাবার পানি সংকট
[ভালুকা ডট কম : ১৫ এপ্রিল]
ভালুকা পৌর এলাকা সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় পুকুর জলাশয় শুকিয়ে অধিকাংশ সাব মার্সিবল নলকূপের পানি বন্ধ হয়ে খাবার পানি সংকটে এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বর্তমানে বিদ্যুতায়িত হওয়ায় পৌর এলাকা সহ উপজেলার প্রায় গ্রামেই মটর চালিত সাবমার্সিবল পানির পাম্পের প্রচলন বেড়ে গিয়েছে। কমেছে চাপ কলের ব্যবহার।

গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড তাপদাহ বয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে অধিকাংশ পানির কলে পানি উঠা বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যা সারাতে লোকজন ভীড় করছেন টিউবওয়েলের দোকানে আর দারস্থ হচ্ছেন টিউবওয়েল মিস্ত্রিদের। গত কয়েক বছর ধরে ভালুকা পৌর এলাকার বাসা বাড়ীতে ব্যবহৃত উপরের লেয়ারে স্থাপনকৃত চাপকল গুলি একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডিপসেট সাবমার্সিবল টিউবওয়েল ব্যবহার শুরু হয়েছে।

টিউবওয়েল মিস্ত্রিদের সাথে কথা বলে জানাযায় ভালুকা পৌর এলাকার মেজর ভিটা, ঢালী ভবন, তোতাখাঁর ভিটায় বর্তমানে পানির স্তর ৭০/৭৫ ফুট নীচে নেমে গেছে। ফলে উপরের লেয়ারে স্থাপিত বেশীরভাগ মোটর চালিত সাবমার্সিবল পানির পাম্পগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। এসব সারাতে তারা দিন রাত বাসায় বাসায় কাজ করছেন। এসব কলের কোনটায় অতিরিক্ত ১০ ফুট কোনটার ২০ ফুট  পাইপ সংযোজন করে পাম্প মোটর নীচে নামিয়ে পানির লেয়ারে স্থাপন করে পানি উঠাতে সক্ষম হচ্ছেন। যাদের ৮০ ফুটের নীচে হাউজিং রয়েছে তাদের পাম্পে পানি উঠছেনা। আর যেসব সাব মার্সিবল ৮০ থেকে ১২০ ফুটের হাউজিং করে মটর স্থাপন করা আছে শুধু মাত্র ওইসব পাম্পে পানি উঠছে।কল মিস্ত্রিরা জানান যদিও চৈত্র মাসে খরার কারনে প্রতি বছর তাদের কাজের চাপ বেড়ে যায় এ বছর তারা প্রচন্ড চাপে রয়েছেন। তারা জানায় গত ৫ বছরের মধ্যে এত নীচে পানির স্তর কখনো নামেনি। এ সময় যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে পানির স্তর আরও নীচে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন পানি সংকট ব্যপক আকার ধারণ করতে পারে বলে তারা আশংকা করছেন।

ভালুকা পৌর এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুনতাছির তরফদার ও আশপাশের সাবমার্সিবল পাম্প এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই পানি উঠা বন্ধ হয়ে যায়। মিস্ত্রি আনার পর জানাগেল সাবমার্সিবল মটরটির কয়েক ফুট নীচে পানির স্তর নেমে গেছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাযায় শতকরা ৬০/৭০ টি পানির কলে একই অবস্থা। স্তর নীচে নামার কারনে পানি উত্তোলনে ব্যঘাত ঘটচ্ছে। যারা ১০০ থেকে ১২০ ফুট নীচে হাউজিং করে মটর স্থাপন করেছেন তাদের কলে মোটামোটি পানি উঠছে। অনেকেই বলছেন এ অঞ্চলে বিগত বছর গুলিতে খরা মৌসুমে পানির স্তর সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ ফুট পর্যন্ত নামলেও তা স্থায়ী হয়নি। কিন্ত এ বছর ৭০ থেকে ৭৫ ফুটের নীচে পানির স্তর নেমে গেছে। কারন হিসেবে অভিজ্ঞরা বলছেন এজন্য পরিবেশ বিপর্যয় একমাত্র দায়ী।

এক সময়ের ভালুকা নদী খাল বিল পুকুর আর বড় বড় বৃক্ষের সমারোহে আদ্রতায় ভরা ছিল আবহাওয়া, জলীয় বাষ্প অনুকূল থাকায় যথা সময়ে বৃষ্টিপাত ও পুকুর খালবিলে প্রচুর পানি থাকার কারনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক উপরে অর্থাৎ ১৫/২০ ফুটের মধ্যে স্থিতাবস্থায় থাকতো। গত কয়েক বছর ধরে নির্বিচারে ছোট বড় বৃক্ষ কর্তনের ফলে ছায়াশুন্য মাটিতে কেবলই বাধাহীন সূর্যের তাপদাহ আর ভরাট হওয়া পানিশুন্য পুকুর নদী খাল বিল গুলি পানিশুন্য হয়ে যেন খা খা করছে। অপরদিকে একশ্রেণীর ভূমিদস্যুরা শিল্পপতিদের মদদপুষ্ট হয়ে স্বল্পমুল্যে জলাভূমি ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারী আইনের তোয়াক্কা না করে মাটি ফেলে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে তাতে দেদার্সে শিল্প কারখানা স্থাপন আর পরিবেশ ধ্বংশ করছেন। যা দেখা বা প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কোন সংশ্লিষ্ট মহল।

এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষি সেচে ব্যবহৃত গভীর নলকূপ ছাড়াও কয়েকশ মিল ফ্যাক্টরীতে শক্তিশালী গভীর নলকূপ দিয়ে দিন রাত পানি উত্তোলন করার কারনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের আরও অবনতি হচ্ছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের পক্ষে ৪০/৫০ হাজার টাকায় একটি সাবমার্সিবল পানির কল স্থাপন সম্ভব নয়। খরা মৌসুমে এসব মানুষের খাবার পানি অন্যের বাড়ী থেকে আনতে হয়। কারন চাপ কল কিংবা টানা কলে এখন আর পানি পাওয়া যায়না। খড়ার কারনে তাপদাহ অব্যাহত থাকলে খাবার পানি ও কৃষিতে সেচ কাজ ব্যহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকেই আশংকা করছেন।

উপজেলার ভরাডোবা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড চাপরবাড়ী গ্রামের হাজী নাজিম উদ্দীন খান (৯২) জানান তাঁদের প্রায় দেড়শ বছরের পুরানো পুকুরটি খড়ার কারনে এখন প্রতি বছর শুকিয়ে যায়। এতে প্রায় ১০/১৫ টি পরিবারের লোকজন গোসল করা ও গবাদি পশু সংরক্ষনের ব্যাপক সমস্যা পোহাতে হয়। তিনি জানান শুকনু মৌসুমে পানি পেতে ভরাট হওয়া শুকিয়ে যাওয়া পুকুর গুলি পুনঃখনন কাজে সরকারী ভাবে আর্থিক সহায়তা পেলে গ্রামের মানুষের হারানো ঐতিয্য ফিরে পাওয়া সহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব। এ ব্যাপারে জানতে ১৫ এপ্রিল সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে গিয়ে দেখা যায় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী তপন অফিসে অবস্থান করছেন। বাকিরা কেউ তখনও আসেননি।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই